কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব কমাবে জাবি শিক্ষকদের তৈরি ‘লিকুইড ট্রি’

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ২১: ০২

বিশ্বব্যাপী বাড়ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব। এর ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রতিবছরই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন। এর মাঝে স্বস্তি নিয়ে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। দেশীয় অ্যালগি (শৈবাল) দিয়ে তৈরি করেছে লিকুইড ট্রি। যা পরিবেশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের শোষণ করবে এবং অক্সিজেন নিঃসরণ করবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োরিসোর্সেস টেকনোলজি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োটেকনোলজি ল্যাবে আরআইসি এর তত্ত্বাবধানে সরকারের একটি প্রজেক্টের আওতায় সম্পূর্ণ দেশীয় অ্যালগি (শৈবাল) এবং নিজস্ব প্রযুক্তিতে উদ্ভাবন করেছে লিকুইড ট্রি প্রটোটাইপ। এই লিকুইড ট্রি একই সাথে ইনডোর ও আউটডোর উভয় পরিবেশে কার্বনডাই অক্সাইডের দূষণ মোকাবিলায় সক্ষম বলে জানায় গবেষকরা। লিকুইড ট্রি হলো এক ধরনের ফোটোবায়োরিয়্যাক্টর যেখানে মাইক্রোঅ্যালগি (ক্ষুদ্র শৈবাল) ব্যবহার করা হয়। বাইরের লিকুইড ট্রি সূর্যের আলো এবং বদ্ধ জায়গারটি কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণ চালায়। এর ফলে তারা ঠিক প্রাকৃতিক গাছের মতো কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন নির্গত করতে সক্ষম হয় এই লিকুইড ট্রি।

বিজ্ঞাপন

গবেষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দু’ধরনের লিকুইড ট্রি তৈরি করেছে তারা। একটি বাসার অভ্যন্তরে অন্যটি খোলা জায়গায় ব্যবহার উপযোগী। প্রতিটি লিকুইড ট্রি তৈরিতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে এর খরচ অনেক কমে আসবে।

গবেষকদের সূত্রে জানা যায়, পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই তুলনায় আমাদের দেশে গাছ লাগানোর পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এর ঘাটতি পূরণ করবে আমাদের লিকুইড ট্রি কাজ করবে। এছাড়াও আমাদের দেশে অনেকে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি করতে আগ্রহী। তাদের জন্য এই লিকুইড ট্রি খুবই সহায়ক হবে।

এই উদ্ভাবনের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. গোলাম মঈনুদ্দিন জানান, ‘এটিতে দেশীয় শৈবাল ব্যবহার করা হয়েছে। এটি আট থেকে নয় মাস থাকবে। এরপর পরিবর্তন করতে হবে। ব্যবহার শেষে অ্যালগি সার হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। প্রতিবার অ্যাগলি পরিবর্তন করতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হবে। আমাদের দেশে ১০০ বেশি অ্যালগি পাওয়া যায় তবে আমরা এখনো সবগুলো পরীক্ষা করতে পারিনি। তবে যে অ্যালগিটা সবচেয়ে বেশি দিন সার্ভিস দিবে আমরা সেটাকে ব্যবহার করব।’

এই প্রযুক্তির ঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, যে কোনো নতুন প্রযুক্তির মতো লিকুইড ট্রিতেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। তবে সম্ভাবনার বিশালতা অনেক। এর জন্য প্রয়োজন উপযোগী স্থানীয় অ্যালগি প্রজাতি উন্নয়ন। বৃত্তাকার অর্থনীতির সুযোগ সার ও বায়োফুয়েল উৎপাদন। এ ছাড়াও নগর নকশায় একীভূত করার সুযোগ আছে। আমরা বিশ্বাস করি এই নতুন প্রযুক্তি নতুন কর্মসংস্থান ও সবুজ অর্থনীতির বিকাশে অবদান রাখবে। সঠিক বাস্তবায়ন তৈরি করতে পারে লিকুইড ট্রি নিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নেতৃত্বের সুযোগ। কারণ বাংলাদেশের মতো দ্রুত নগরায়ণের দেশে লিকুইড ট্রি শুধু প্রতীকী উদ্ভাবন নয়, বাস্তব সমাধান। বিশেষ করে ইনডোর মডেলের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পথপ্রদর্শক হতে পারে। এটি শুধু স্বাস্থ্য রক্ষায় নয়, শিক্ষার পরিবেশ ও কর্মস্থলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিল্পকারখানা, প্রতিষ্ঠানসমূহের জিরো কার্বন এমিসন বা গ্রিন-এস্টাবলিশমেন্ট সেটআপ করার জন্য আমাদের লিকুইড ট্রি ব্যবহার করা যেতে পারে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত