হেরিটেজ তকমায় অবহেলা, মঙ্গলাবাসে শিক্ষার্থীদের দুর্দশা

জবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ৩১

পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের মোহিনী মোহন দাস লেনে অবস্থিত শতবর্ষী মঙ্গলাবাস প্রাসাদ আজ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার পথে। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর এই ভবনই কবি নজরুল সরকারি কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাস, যেখানে প্রায় পাঁচ দশক ধরে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বসবাস করছে সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পানির সংকট, খাবারের নিম্নমান ও ভগ্নদশা ভবনের মধ্যে দিন কাটানো এখন তাদের কাছে টিকে থাকার যুদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

ব্রিটিশ আমলে জমিদার যতীন্দ্র কুমার সাহা এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় চলে গেলে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকে ভবনটি কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ শিক্ষার্থী শামসুল আলমের নামে নামকরণ হয় শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাস। কিন্তু ঐতিহ্যের বাহক এই ভবন আজ ভগ্নদশায় ধুঁকছে অবহেলার কারণে।

এখনো শিক্ষার্থীরা নির্ভর করছে কুয়ার পানির উপর। পানি সরবরাহে ঘনঘন সমস্যা দেখা দিলে গোসল, হাতমুখ ধোয়া কিংবা প্রাথমিক প্রয়োজন মেটাতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। মাত্র একটি ফিল্টার দিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীর চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য আছে মাত্র ৪টি শৌচাগার, যেগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহার অনুপযোগী। আবর্জনার স্তূপ ও দুর্গন্ধে পরিবেশ অসহ্য হয়ে উঠেছে। ডাইনিং থাকলেও সেখানে অস্বাস্থ্যকর খাবার সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

Mongalbas-2

বৃষ্টির সময় ছাত্রাবাসের প্রতিটি কক্ষ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ায় রাতভর বালতি ও হাঁড়ি দিয়ে পানি সরাতে হয়। ভিজে যায় বিছানা-বইপত্র, খসে পড়ে দেয়ালের পলেস্তারা। দুর্ঘটনা এড়াতে অনেকে বিছানার ওপর প্লাস্টিক টাঙিয়েছেন।

আসন সংকটে অনেককে মেঝেতে ঘুমাতে হয়। এক কক্ষে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী থাকায় দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান মারুফ বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন বেঁচে থাকাই চ্যালেঞ্জ। খাবারের মান খারাপ, পানি নেই, নিরাপত্তা নেই—তবুও উপায় না থাকায় থাকতে হচ্ছে।’

আরেক শিক্ষার্থী বিপ্লবের আক্ষেপ, ‘এটা ছাত্রাবাস নয়, টিকে থাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।’

দুরবস্থার কারণে গত ১৯ মে শিক্ষার্থীরা ৭ দফা দাবিতে ডিসি অফিস ঘেরাও করেন। অধিগ্রহণের আশ্বাস মিললেও কার্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। কলেজ প্রশাসন ভবনটি কবি নজরুল কলেজের নামে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছে, তবে সেটি এখনো ঝুলে আছে।

কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২৫ আগস্ট এ বিষয়ে শুনানির তারিখ রয়েছে। ভবনটি কলেজের নামে বরাদ্দ হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন ভবন নির্মাণে উদ্যোগ নেবে।’

ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ জানান, ‘অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় কলেজ প্রশাসন লিজের আবেদন করেছে। বর্তমানে যাদের লিজ আছে তাদের বাতিল হলে কলেজকে লিজ দেওয়া সম্ভব।’

অবহেলায় জীর্ণ মঙ্গলাবাস প্রাসাদ কেবল একটি ছাত্রাবাস নয়, দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রতিদিনের জীবন সংগ্রাম। তাদের প্রশ্ন—স্থায়ী সমাধান কবে? দেড় শতাধিক জীবনের মূল্য কি হেরিটেজের তকমার কাছে এতটাই তুচ্ছ?

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত