জকসু নির্বাচনে কমিশন গঠন, ক্যাম্পাসে উচ্ছ্বাস

লিমন ইসলাম, জবি
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৭

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন। এ উপলক্ষে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা হাসান। বাকি চার নির্বাচন কমিশনাররা হলেন—আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কানিজ ফাতেমা কাকলী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জুলফিকার মাহমুদ এবং ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনিসুর রহমান ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদসমূহের গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা ২০২৫’-এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে এ কমিশন গঠন করা হয়।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, শিগগির বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সময়মতো ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ শুরু করেছে।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঘোষিত জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপে আগামী ২৭ নভেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। রোডম্যাপ অনুযায়ী, গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা থাকলেও বিধি অনুমোদনের বিলম্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ৭ অক্টোবর অধ্যাপক মোস্তফা হাসানকে আহ্বায়ক ও সহযোগী অধ্যাপক আনিসুর রহমানকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের জকসু নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে গত সোমবার জকসুর সংবিধি চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে গত ২৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় জকসুর খসড়া সংবিধি গৃহীত হয়।

সংবিধি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে প্রফেশনাল কোর্স, বিশেষ ডিগ্রিধারী বা অন্য প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের আওতায় থাকবেন না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আনন্দঘন নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা থাকলে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারব।

এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জকসু নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্ব বিকাশে নতুন অধ্যায় খুলবে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষণার পর জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যাশা করি—‘নীলক্ষেত মার্কা নির্বাচন’ যেন না হয়। সবার জন্য যেন সমান সুযোগ থাকে এবং সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা হয়।

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন, আমরা তার প্রতি আস্থা রাখব, কোনো ক্ষমতার কাছে যেন তিনি তার নৈতিকতা নষ্ট না করেন। যদি তিনি এমনটা করেন, তবে তাকে আমরা অক্ষম বলে বিবেচিত করব। তবে আমরা আশা রাখি, তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। তফসিল ঘোষণা হলেই ছাত্রশিবির তাদের প্যানেল ঘোষণা করবে বলে জানান তিনি।

ছাত্র অধিকার পরিষদ জবি শাখার সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, আমরা আশা করি, কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোনো বিতর্ক যেন না হয়।

জাতীয় ছাত্রশক্তি জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, আমরা কমিশনের কাছে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। শিক্ষার্থীরা যেন নির্ভয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যেন এমফিল শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা না হয়। কারণ আমরা চাই ক্যাম্পাসের বর্তমান শিক্ষার্থীরাই ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব প্রদান করুক।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত