সাক্ষাৎকারে বিন ইয়ামিন মোল্লা

দখলদারমুক্ত একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলব

মাহির কাইয়ুম, ঢাবি
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৮

আমার দেশকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেছেন, ‘আমি প্রথম বর্ষ থেকে স্বপ্ন দেখতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একদিন আধিপত্যের রাজনীতি উৎখাত হবে, পেশিশক্তির দখলদারিত্ব থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কখনো ফ্যাসিবাদের রাজনীতি ফিরতে পারবে না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দখলদারমুক্ত একাডেমিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করব।’

বিজ্ঞাপন

বিন ইয়ামিন মোল্লা ছাত্র অধিকার পরিষদ মনোনীত প্যানেলের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। সম্প্রতি আমার দেশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে তার পরিকল্পনা ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান প্রধান সংকটগুলোর বিষয়ে বিন ইয়ামিন বলেন, “আমার দৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান প্রধান সংকটগুলোর মধ্যে আবাসন সংকট অন্যতম। এটিকে পুঁজি করে বিগত সময়গুলোয় দখলদারিত্বের রাজনীতি তৈরি হয়েছিল। গেস্টরুম, গণরুম কালচার তৈরি হয়েছিল। সে কারণে আমাদের মূল অঙ্গীকার হলো ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান বেড, ওয়ান টেবিল।’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে আবাসন সংকট নিরসনে আমরা বিশেষ নজর দেব।”

বিন ইয়ামিন বলেন, ‘এর পাশাপাশি মানহীন খাবার, লাইব্রেরি ও গবেষণা ফ্যাসিলিটি সংকট, সেকেলে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং সিস্টেম, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সংকট। আমরা নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটগুলো সমাধানে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাব।’

কেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চানÑএমন প্রশ্নে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমি এমন একটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখি, যেখানে শিক্ষার্থীরা আত্মমর্যাদা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারবে। নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবে। ক্যাম্পাসে থাকবে রাজনৈতিক সহাবস্থান। ডান, বাম, মধ্যপন্থিÑসবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করে যাবে।

তিনি বলেন, একাডেমিক শিক্ষার্থীরা গবেষণামুখী হবে। তাদের চিন্তার স্বাধীনতা থাকবে। তারা আরো বেশি সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকবে। সর্বোপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি একাডেমিক এক্সিলেন্সির বিশ্ববিদ্যালয় হবে। শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় পাবে, যেখানে কোনো ভয়-ডরের পরিবেশ থাকবে না।

বিগত ডাকসুগুলোর তুলনায় এবারের ডাকসু নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ কি নাÑএমন প্রশ্নের উত্তরে এই ভিপি প্রার্থী বলেন, প্রতিটি ডাকসু নির্বাচনই খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালের যে ডাকসু নির্বাচন ছিল, তা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পটভূমিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই ডাকসুর মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের স্বৈরাচার পতনের পটভূমি তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, সেবারের নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভয়ে অনেকে প্রার্থী হতে পারেননি। আমরা সে সময় আতঙ্কে থাকতাম, ভয়ে থাকতাম। আর এবারে নির্বাচনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছে। সবাই দল-মত নির্বিশেষে নির্বাচনে লড়াই করছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এটিই এবারের নির্বাচনের আলাদা বৈশিষ্ট্য। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’

বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত হলে রেজিস্ট্রার অফিসের সব কাজ অটোমেশনের আওতায় এনে এটাকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসে রূপান্তর করব। শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক উন্নতির জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা চালু করব এবং তাদের জন্য অন-ক্যাম্পাস পার্টটাইম জব চালুর ব্যবস্থা করব। অনেকেই টিউশনি করার কারণে নিজের পড়া বা গবেষণায় যথাযথভাবে মনোনিবেশ করতে পারে না। এগুলোর ফলে তারা উপকৃত হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতি চিরতরে নির্মূল করবেন জানিয়ে বিন ইয়ামিন বলেন, ‘হলে সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অপসংস্কৃতির পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এবং প্রথম বর্ষ থেকেই যাতে শিক্ষার্থীরা সিট পায়, তা নিশ্চিত করব। শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে প্রস্তুত করতে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনমাফিক মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করার চেষ্টা করব।’

নিজেদের প্যানেল নিয়ে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আমাদের প্যানেল নিয়ে পুরোপুরি আশাবাদী। কেননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ রাজনীতি সচেতন। তারা হুজুগে কাউকে ভোট দেবে না। ভোট দেওয়ার আগে প্রার্থীর বিগত দিনের কার্যক্রম মূল্যায়ন করবে, পর্যবেক্ষণ করবে।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমাদের প্যানেলের প্রার্থীরা বিগত দিনে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল। তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে সব সময় পাশে ছিল। তাই শিক্ষার্থীরা আমাদের প্যানেলের ওপর ভরসা রাখবে বলে মনে করি।’

আপনি যদি নির্বাচিত নাও হন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আপনার ভূমিকা কেমন হবেÑএমন প্রশ্নের উত্তরে বিন ইয়ামিন বলেন, আগামী দিনগুলোয় আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। নির্বাচনে জিতলে যেমন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করব, না জিতলেও একই ভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়েই সচেষ্ট থাকব। ফলাফল যাই হোক, শিক্ষার্থীরা সর্বদা যে কোনো প্রয়োজন কিংবা ন্যায্য দাবির আন্দোলনে আমাকে তাদের পাশেই পাবে। আমার কাছে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সবার আগে।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত