মাহির কাইয়ুম, ঢাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকেলে আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেয়।
এদিকে রিট শুনানিতে হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেছে— ক্যাম্পাসে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে বিকাল পৌনে ৫টায় হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করার খবর এলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গত ২৮ আগস্ট ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন। রিট শুনানিটি মঙ্গলবার হওয়ার কথা থাকলেও রিটকারী আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন দুপুর আড়াইটায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারকরা এজলাসে ওঠেন। বিভিন্ন মামলার শুনানির পর দুপুর ২টা ৪০ মিনিট থেকে এ রিটের শুনানি শুরু হয়। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করার আদেশ দেয়। রুলে ফাহমিদা আলমকে এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়। আর কোন প্রক্রিয়ায় ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন, বাছাই ও চূড়ান্ত করা হচ্ছে এবং ভোটের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া কী—এ বিষয়ে জানতে চায় হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, সেটি ছিল অনেকটা নজিরবিহীন। কারণ রিটকারী নিজেই রিটে ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চাননি।
স্থগিতাদেশের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালত। ফলে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা রইল না।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, নিয়মিত সিভিল পিটিশন না করা পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব-এর চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেয়।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা গত ২৬ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। তালিকায় এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে করা রিটে তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ করা হয়।
হাইকোর্টের আদেশের পর বিক্ষোভ
হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করার পর গতকাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে জমায়েত হয়। এতে ভিপি-জিএস প্রার্থীরা বক্তব্য দেন। দুপুরেই বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর ও রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত ষড়যন্ত্রকারীদের প্রভাবিত রায়। ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিদ্যমান এবং নির্বাচন কমিশনও ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
এ সময় তারা স্লোগান দেন— এক দুই তিন চার, ডাকসু আমার অধিকার, ডাকসু নিয়ে ষড়যন্ত্র মানি না মানব না, ৯ তারিখ ডাকসু দিতে হবে দিতে হবে ইত্যাদি।
এ সময় ডাকসু নির্বাচন কমিশন প্রধান অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে কাজ চালাচ্ছিলাম। ক্যাম্পাসে কোথাও কোনো সংঘাত নেই। হাইকোর্ট হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কিসের ভিত্তিতে দিল তা স্পষ্ট নয়।
বিক্ষোভে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, নির্ধারিত সময়েই ডাকসু নির্বাচন হতে হবে। ৯ তারিখ নির্বাচন হবেই হবে, ডাকসু নির্বাচন আটকানোর সাধ্য কারো নেই। ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে বিশাল মিছিল করে।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বরই হবে। হতেই হবে। জুলাইয়ের অঙ্গীকার, ডাকসু হবে প্রতিবার। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নির্বাচনি পরিবেশ বিরাজ করছে সে অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বরই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকেও ক্যাম্পাসে মিছিল হয়।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ডাকসু নির্বাচন ৯ তারিখে হতেই হবে। হাইকোর্টের এমন সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যাচেষ্টার শামিল।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হবে, হাইকোর্ট থেকে নয়। ডাকসুকে বানচালের ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। আজ যে ষড়যন্ত্র দেখলাম শিক্ষার্থীরা তাতে লালকার্ড দেখিয়েছেন।
তবে হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার আদালতে স্থগিত হওয়ায় পরিস্থিতি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বদলে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, তারা সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।
জুলাই বিপ্লবে নীরব ছিলেন রিটকারী ফাহমিদা
ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী ফরহাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেন বামপন্থি সংগঠনসমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম। তবে রিটের চেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে জুলাই অভ্যুত্থানকালে তার নীরবতা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রম।
তখন সারা দেশে আন্দোলনের ঝড় বইলেও ফাহমিদার পক্ষ থেকে কোনো সরাসরি অবস্থান দেখা যায়নি। শুধু ৩০ জুলাই তিনি ভাঙা কাঁচের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন, যা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, তিনি মেট্রোরেল ভাঙচুরের ঘটনাকেই ইঙ্গিত করেছেন। যদিও সোমবার প্রেস ব্রিফিংয়ে ফাহমিদা দাবি করেন, ছবিটি চারুকলায় তোলা একটি শিল্প-ফটোগ্রাফ এবং এর মাধ্যমে তিনি ‘হৃদয়ভাঙা ও মৃত্যুর প্রতিবাদ’ প্রকাশ করেছিলেন।
শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, তিনি জুলাই আন্দোলন কিংবা ডাকসুর প্রচারণাকালে ভাঙচুর ও নারী প্রার্থীদের ছবি বিকৃতির ঘটনায়ও নীরব ছিলেন। বরং চারুকলা সেরা ও চারুকলায় হবে না মৌলবাদের ঠিকানা লিখে উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাহমিদাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি আন্দোলনের সময় নীরব ছিলেন অথচ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ফরহাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন।
অন্যদিকে ফাহমিদা যুক্তি দিয়ে বলেন, এস এম ফরহাদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পদে ছিলেন এবং পদত্যাগের প্রমাণ নেই। তাই তিনি এখনো সেই সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফাহমিদার কাছে প্রমাণ চাইলে তিনি বলেন, আমার সামনে যে তথ্য এসেছে সেটি নিয়েই আমি রিট করেছি।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে জমজমাট প্রচারণা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। আর স্বাধীনতার পর মাত্র সাতবার হয় ডাকসু নির্বাচন। যার মধ্যে সবশেষ ভোটগ্রহণ হয় ২০১৯ সালে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকেলে আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেয়।
এদিকে রিট শুনানিতে হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেছে— ক্যাম্পাসে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে বিকাল পৌনে ৫টায় হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করার খবর এলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গত ২৮ আগস্ট ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন। রিট শুনানিটি মঙ্গলবার হওয়ার কথা থাকলেও রিটকারী আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন দুপুর আড়াইটায় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারকরা এজলাসে ওঠেন। বিভিন্ন মামলার শুনানির পর দুপুর ২টা ৪০ মিনিট থেকে এ রিটের শুনানি শুরু হয়। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করার আদেশ দেয়। রুলে ফাহমিদা আলমকে এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে বলা হয়। আর কোন প্রক্রিয়ায় ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন, বাছাই ও চূড়ান্ত করা হচ্ছে এবং ভোটের প্রস্তুতির প্রক্রিয়া কী—এ বিষয়ে জানতে চায় হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, সেটি ছিল অনেকটা নজিরবিহীন। কারণ রিটকারী নিজেই রিটে ডাকসু নির্বাচন স্থগিত চাননি।
স্থগিতাদেশের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালত। ফলে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে কোনো বাধা রইল না।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, নিয়মিত সিভিল পিটিশন না করা পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব-এর চেম্বার জজ আদালত এই আদেশ দেয়।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা গত ২৬ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। তালিকায় এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে করা রিটে তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ করা হয়।
হাইকোর্টের আদেশের পর বিক্ষোভ
হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করার পর গতকাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে জমায়েত হয়। এতে ভিপি-জিএস প্রার্থীরা বক্তব্য দেন। দুপুরেই বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর ও রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত ষড়যন্ত্রকারীদের প্রভাবিত রায়। ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের মতো গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিদ্যমান এবং নির্বাচন কমিশনও ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
এ সময় তারা স্লোগান দেন— এক দুই তিন চার, ডাকসু আমার অধিকার, ডাকসু নিয়ে ষড়যন্ত্র মানি না মানব না, ৯ তারিখ ডাকসু দিতে হবে দিতে হবে ইত্যাদি।
এ সময় ডাকসু নির্বাচন কমিশন প্রধান অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে কাজ চালাচ্ছিলাম। ক্যাম্পাসে কোথাও কোনো সংঘাত নেই। হাইকোর্ট হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কিসের ভিত্তিতে দিল তা স্পষ্ট নয়।
বিক্ষোভে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, নির্ধারিত সময়েই ডাকসু নির্বাচন হতে হবে। ৯ তারিখ নির্বাচন হবেই হবে, ডাকসু নির্বাচন আটকানোর সাধ্য কারো নেই। ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে বিশাল মিছিল করে।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন, ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বরই হবে। হতেই হবে। জুলাইয়ের অঙ্গীকার, ডাকসু হবে প্রতিবার। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নির্বাচনি পরিবেশ বিরাজ করছে সে অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বরই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকেও ক্যাম্পাসে মিছিল হয়।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ডাকসু নির্বাচন ৯ তারিখে হতেই হবে। হাইকোর্টের এমন সিদ্ধান্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যাচেষ্টার শামিল।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হবে, হাইকোর্ট থেকে নয়। ডাকসুকে বানচালের ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। আজ যে ষড়যন্ত্র দেখলাম শিক্ষার্থীরা তাতে লালকার্ড দেখিয়েছেন।
তবে হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার আদালতে স্থগিত হওয়ায় পরিস্থিতি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বদলে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, তারা সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর।
জুলাই বিপ্লবে নীরব ছিলেন রিটকারী ফাহমিদা
ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী ফরহাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেন বামপন্থি সংগঠনসমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম। তবে রিটের চেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে জুলাই অভ্যুত্থানকালে তার নীরবতা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রম।
তখন সারা দেশে আন্দোলনের ঝড় বইলেও ফাহমিদার পক্ষ থেকে কোনো সরাসরি অবস্থান দেখা যায়নি। শুধু ৩০ জুলাই তিনি ভাঙা কাঁচের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন, যা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, তিনি মেট্রোরেল ভাঙচুরের ঘটনাকেই ইঙ্গিত করেছেন। যদিও সোমবার প্রেস ব্রিফিংয়ে ফাহমিদা দাবি করেন, ছবিটি চারুকলায় তোলা একটি শিল্প-ফটোগ্রাফ এবং এর মাধ্যমে তিনি ‘হৃদয়ভাঙা ও মৃত্যুর প্রতিবাদ’ প্রকাশ করেছিলেন।
শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, তিনি জুলাই আন্দোলন কিংবা ডাকসুর প্রচারণাকালে ভাঙচুর ও নারী প্রার্থীদের ছবি বিকৃতির ঘটনায়ও নীরব ছিলেন। বরং চারুকলা সেরা ও চারুকলায় হবে না মৌলবাদের ঠিকানা লিখে উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাহমিদাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি আন্দোলনের সময় নীরব ছিলেন অথচ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ফরহাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন।
অন্যদিকে ফাহমিদা যুক্তি দিয়ে বলেন, এস এম ফরহাদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পদে ছিলেন এবং পদত্যাগের প্রমাণ নেই। তাই তিনি এখনো সেই সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ফাহমিদার কাছে প্রমাণ চাইলে তিনি বলেন, আমার সামনে যে তথ্য এসেছে সেটি নিয়েই আমি রিট করেছি।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে জমজমাট প্রচারণা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৩৭ বার। আর স্বাধীনতার পর মাত্র সাতবার হয় ডাকসু নির্বাচন। যার মধ্যে সবশেষ ভোটগ্রহণ হয় ২০১৯ সালে।
সংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
২১ মিনিট আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
১ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
২ ঘণ্টা আগেসমাবেশে জোবায়েদের সহপাঠী সজল খান বলেন, “পুলিশ এখনো বর্ষার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। শুধু বর্ষা ও মাহির নয়, এই ঘটনায় বর্ষার পরিবারও জড়িত। গতকাল আদালতে আমাদের সঙ্গে পুলিশের আচরণ ছিল অমানবিক। আমাদের এক বান্ধবী ভিডিও করতে গেলে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”
২ ঘণ্টা আগে