সুন্দর সকালের স্বপ্ন

রেজাউল করিম খোকন
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫১
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১০: ৫৫

কয়েক মাস আগে ‘সুন্দর পরিবেশ, সুন্দর পৃথিবী’ বিষয়ে জাতিসংঘ আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল তৃণা। তাদের স্কুল থেকে একমাত্র সেই অংশ নিয়েছিল। এত বড় আয়োজনের কোনো প্রতিযোগিতায় আগে কোনো সময় অংশ নেয়নি সে। সারাদেশ থেকে কয়েক শ ছাত্রছাত্রী এই রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। প্রথম কিছুদিন পাঠানো রচনাটি নিয়ে চিন্তাভাবনা হলেও এরপর প্রায় ভুলতে বসেছিল তৃণা। শত শত ছাত্রছাত্রীর পাঠানো রচনার ভিড়ে তার লেখা রচনা হয়তো কোথায় হারিয়ে গেছে। বিচারকদের মনোযোগই আকর্ষণ করতে পারেনি। দেশের সেরা সব স্কুলের মেধাবী ও চৌকস ছাত্রছাত্রীরা এই প্রতিযেগিতায় অংশ নিয়েছে যেখানে, সেখানে তার মতো অতি সাধারণ মফস্বলের কোনো স্কুলছাত্রী কি পেরে উঠবে প্রতিযোগিতায়—এসব ভেবে ভেবে মন খারাপ হয়েছে তার বেশ কিছুদিন। এরপর প্রায় ভুলেই গিয়েছিল ব্যাপারটা। তৃণা স্কুলের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আবার।

বিজ্ঞাপন

মফস্বল শহরের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে তৃণা। তার বাবা ঢাকায় একটা সরকারি অফিসের সাধারণ চাকুরে। তৃণার একমাত্র বড় ভাই সৌরভ, প্রতিবন্ধী বলে স্কুলে যেতে পারেনি। এ নিয়ে বাবা-মায়ের মনে অনেক দুঃখ। সুস্থ থাকলে সৌরভ এত দিনে ভার্সিটিতে পড়ত। তৃণা তার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখে আসছে বড় ভাই সৌরভের অসুস্থতা আর কত বিড়ম্বনা তাকে নিয়ে। বাবা-মায়ের অসহায়ত্ব তৃণাকে বেদনার্ত করে। সৌরভের অসুস্থতা বাবা-মাকে সবসময় অস্থির করে রাখে। বড় ভাইটির চিকিৎসার পেছনে প্রতি মাসে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। তবে মাঝেমধ্যে বই কেনার জন্য টাকা চায় সে বাবার কাছে। বিভিন্ন বিষয়ের নানা ধরনের বই পড়ায় তৃণার অনেক আগ্রহ। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এনে কিংবা স্কুলের লাইব্রেরি থেকে এনে নিয়মিত বই পড়ে তৃণা। এর বাইরেও কিছু কিছু বই কেনে সে পড়ার জন্য। বাড়িতে একটা ছোটখাটো লাইব্রেরি গড়ে তুলেছে সে এরই মধ্যে।

জাতিসংঘ ঢাকা অফিস আয়োজিত ‘সুন্দর পরিবেশ, সুন্দর পৃথিবী’ রচনা প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে গত সপ্তাহে। ঢাকা থেকে আয়োজক সংস্থা টেলিফোনে এবং ই-মেইলে স্কুলের হেড স্যারের কাছে জানিয়েছে, তৃণার লেখা রচনাটি সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এশিয়া অঞ্চলের আরো ২০টি দেশে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টির ওপর আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। ২০ দেশের সেরা ২০ ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কার নিতে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যেতে হবে। আয়োজক সংস্থা তাদের খরচে পুরস্কারবিজয়ীদের জাতিসংঘে নিয়ে যাবে।

হেডস্যার নিজেই তৃণাদের বাড়ি এসে সুখবরটি দিয়ে গেছেন। পুরো এলাকায় খবরটি ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। সেই থেকে তৃণাদের বাড়ি পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে। সবার মুখে এখন তৃণার এত বড় পুরস্কার অর্জন নিয়ে আলোচনা। সবাই উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। এত কম বয়সে মেয়ে হয়ে দেশের জন্য ও এলাকার জন্য সম্মান বয়ে এনেছে তৃণা। এত বড় প্রাপ্তির কথা ভাবতে পারেনি তৃণা। আনন্দে তার চোখ দুটি ছলছল করে ওঠে।

জাতিসংঘ অফিস থেকে তৃণাকে ডাকা হয়েছে। আমেরিকায় যাওয়ার কাগজপত্র তৈরি করতে বলা হয়েছে। এ জন্য কাল সকালে সে বাবার সঙ্গে ঢাকা যাবে। প্রস্তুতি নেওয়াও শুরু করেছে সে। উপজেলা মার্কেট থেকে তৃণার জন্য একটি সুন্দর ডিজাইনের হাল ফ্যাশনের জামা কিনে এনেছেন মা । এ রকম একটি দামি ও সুন্দর জামা পরে সে ঢাকা যাবে, ভাবতেই অনেক আনন্দে নেচে ওঠে তৃণার মনটা ।

তৃণা তার জন্য কেনা নতুন জামাটি অনেকক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখে। তারপর বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পড়ে। একসময় রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে তৃণার দুচোখে। একটি সুন্দর সকালের স্বপ্নের বিভোর হয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে থাকে সে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত