ব্যারোমিটার

মোহাম্মদ সাফির সাফিউন
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৫০

যে যন্ত্র দিয়ে বাতাসের চাপ মাপা হয় সে যন্ত্রকে ব্যারোমিটার (Barometer) বলে। ব্যারোমিটারের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী টরেসেলি। তার এই আবিষ্কারের পেছনে একটি গল্প প্রচলিত আছে। বলা হয়, একবার এক ব্যক্তি তার বাড়িতে কুয়ো খুঁড়ছিলেন। সে সময় মাটির নিচ থেকে যে পানি উঠে আসছিল তা একটি পাম্প মেশিন দিয়ে তুলে ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু একসময় দেখা গেল পাম্প মেশিন সচল থাকার পরও পানি উঠছে না।

বিজ্ঞাপন

সমস্যা কোথায় তা জানার জন্য সেই ব্যক্তি মহাবিজ্ঞানী গ্যালিলিওর কাছে যান। সে সময় গ্যালিলিও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার পক্ষে কাজ করা সম্ভব ছিল না । তাই তিনি তার শিষ্য টরেসেলিকে সমস্যা খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন। কুয়োর ভেতর একটি দড়ি ফেলে টরেসেলি দেখতে পান কুয়োটি ৩৪ ফুট কাটা হয়েছে। এবার একটা বালতিতে পানি রেখে পাম্প মেশিনের পাইপটিকে বালতির ভেতর রেখে দেন। তারপর মেশিন চালিয়ে দেখতে পান মেশিন পানি তুলতে পারছে। কিন্তু সমস্যা হলো, বালতিটাকে সামান্য নামিয়ে ‍দিলেই পাম্প মেশিনটি আর পানি তুলতে পারছে না! এ কাণ্ড দেখে টরেসেলি বুঝতে পারলেন ৩৪ ফুটের বেশি নিচ থেকে পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এর পেছনে কী কারণ আছে? তবে কি এজন্য বাতাসের চাপ দায়ী? বাতাসই কী পানিকে ৩৪ ফুটের ওপরে উঠতে দিচ্ছে না? আসল কারণটা বের করতে হবে।

বাড়িতে ফিরে এসে টরেসেলি এক মিটার লম্বা ও এক মিটার খোলা কাচের নল নিয়ে তার ভেতর পানির চেয়ে সাড়ে ১৩ গুণ ভারি তরল পারদ ঢুকিয়ে নলটিকে একটি পাত্রে উপুড় করে রাখেন। অবাক কাণ্ড! তিনি দেখতে পান নলের ভেতরের পারদ ধীরে ধীরে নেমে ২৯ ইঞ্চি বা ৭৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় এসে স্থির হয়ে আছে, পারদ আর নামছে না।

এ পরীক্ষার মাধ্যমে টরেসেলি একটি কথা বুঝতে পারেন, বায়ুমণ্ডলের চাপ ৭৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পারদকে ধরে রাখতে পারে। যেহেতু পারদ পানির চেয়ে ১৩.৬ গুণ ভারী, তাই বায়ুমণ্ডল প্রায় ২৯ᳵ১৩.৬=৩৯৪৪ ইঞ্চি বা ৩৪ ফুট পর্যন্ত পানিকে ধরে রাখতে পারে এবং ৩৪ ফুটের মধ্যে কার্যক্ষম থাকে।

টরেসেলি ছিলেন বুদ্ধিমান। তিনি ভাবেন, এমন একটি যন্ত্র বানিয়ে ওটাকে বায়ুমণ্ডলের চাপ পরীক্ষা করার কাজে লাগানো যেতে পারে। সে উদ্দেশ্যে তিনি উন্নত মানের কাঁটাওয়ালা একটি যন্ত্র তৈরি করে সেটির নাম দেন ব্যারোমিটার । বায়ুমণ্ডলের চাপ মাপার জন্য ব্যারোমিটারকে এখনো নির্ভরতার সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাতাসের চাপ সব সময় স্থির থাকে না। কখনো চাপ বাড়ে আবার কখনো কমে। এর একমাত্র কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্প কম-বেশি হওয়া। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে বাতাসের চাপ কমে যায় এবং ব্যারোমিটারের কাঁটার ওঠানামা থেকে তা বোঝা যায়। বাতাসের চাপ কমলে বুঝতে হবে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাতাসের চাপ বাড়লে আবহাওয়া পরিষ্কার হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত