বিড়াল বনাম বিন্নি

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ৪৭
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫: ০০

বিন্নি ছুটি কাটাতে বাবা-মাসহ পৌঁছে গেল সমুদ্র শহরটায়। সেখান থেকে সানসেট ও সান রাইজ দুই-ই দেখা যায়। পৌঁছেই আনন্দে ডগমগ বিন্নি—ওয়াও!

বিজ্ঞাপন

হুম্‌, উঠতে পারবি ভোরে? মায়ের সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। প্রায় দিন স্কুলে যাওয়ার জন্য ঠেলেঠুলে তোকে ঘুম থেকে ওঠাতে হয়, আর তুই কিনা সূর্যোদয় দেখবি?

বিন্নি চোখ পাকায়... ও মা, মাঝেমধ্যে দেরি হতেই পারে! তাই বলে সান রাইজ দেখা মিস? টেনশন ফ্রি থাকো।

ওরা উঠেছে সুসজ্জিত ছোট্ট একটা প্রাইভেট কটেজে। বাবা বললেন, কিছুটা এয়ার বিএনবি’র মতো, তা-ই না? আমেরিকায় এয়ার বিএনবিতে থাকার অভিজ্ঞতা আছে বাবা-মায়ের। লস এঞ্জেলেসে বেড়াতে গিয়ে এয়ার বিএনবিতে থাকা হয়েছিল তাদের। আর লেক হেমেট ক্যাম্প করতে গিয়ে রাতে থেকেছিল কাঠের কটেজে। বিন্নির প্রিয় বই ‘লিটল হাউস ইন দ্য প্রেইরি’র মতো।

বিন্নিরা সঙ্গে আনা খাবার কটেজের মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করে খেয়ে শুয়ে পড়ল। লং জার্নিতে সবাই ক্লান্ত। আগেভাগে ঘুমিয়ে সময়মতো জাগতে হবে।

বিন্নির ঘরের জানালার বাইরে লম্বা একটা তালগাছে বাদাভর্তি তাল। বিন্নির মনে ছড়া এলো... ‘তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে…’ অনেকগুলো পাকা তাল পড়েও আছে গাছতলায়।

এসির ঠান্ডায় পাতলা ব্ল্যাংকেট গায়ে বিন্নি মুহূর্তে ঘুমে বিভোর হলেও গভীর রাতে ঘুম ভাঙল কান্নার শব্দে, মনে হয় বাইরে কোনো বাচ্চা কাঁদছে। থেমে থেমে কান্না চলছেই। ওর ভয় করে। জানালার বাইরেই তালগাছটা। সে জানে তালগাছে জ্বিন, পরী, ভূত, পেত্নীরা থাকে। হঠাৎ ধুপধাপ শব্দে কেঁপে ওঠে বিন্নি। এত শব্দ করে তাল পড়ে?

বিন্নি পাশের রুমে গিয়ে বাবা-মাকে ডাকবে ভাবল। কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে হয় বাবার মাথাব্যথা করছিল। মায়েরও ব্লাড প্রেশার কম ছিল। তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো উচিত হবে না। তাই কম্বল দিয়ে মুখ ঢাকে বিন্নি। কিন্তু তাতে কি রক্ষা হয়? ওয়াও ম্যাও ওয়াও ম্যাও—ইনিয়ে-বিনিয়ে কান্না চলছেই। সমালতালে ধুপধাপ শব্দ, যেন গাছের সব তালই পড়ে যাচ্ছে। সারারাত সেভাবে ঘুমই হয় না বেচারির। এরই মধ্যে আবছা ভোরে বাবা-মা জেগেছেন। দ্রুত রেডি হয়ে সূর্যোদয় দেখতে যাওয়া। রাতের ভয়ের অভিজ্ঞতা বলার সুযোগ ও পরিবেশ পায় না বিন্নি।

বাইরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন দেখে বাবার আক্ষেপ—দেখা যাবে না সূর্যোদয়। তবুও তারা এলো সমুদ্রতীরে। ততক্ষণে টিপটিপ বৃষ্টিও শুরু হয়েছে। তাই নিরাশ হয়ে ফিরে আসা। কিছু পরে বৃষ্টি শেষ, তখন সানরাইজও হয়েই গেছে। তাই সারাদিন অন্য স্পটগুলো দেখে গেল রাখাইন পাড়ায়ও। রাখাইনরা তাঁতে কাপড় চমৎকার বোনে।

অনেক ব্যস্ত একটা দিন শেষে সন্ধ্যা—সান সেটের সময়। এরপর সাগরতীরে চমৎকার সূর্যাস্ত দেখে মুগ্ধ মনে ফিরে এলো তারা।

পরদিনই ভোরে ফিরে যাওয়ার কথা। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া। রাতে আগেভাগে শুয়ে পড়ার আগে বাবা বললেন, কালও সূর্যোদয় দেখা যাবে না সম্ভবত। গুগলে ক্লাউডিই দেখাচ্ছে।

কিন্তু রাতে আবারও গতকালের ঘটনাই ঘটে। শিউরে ওঠে বিন্নি। আগের মতোই একই রকমভাবে বাচ্চার কান্না। আর তাল পড়ার দুমদুম শব্দ। বিন্নি যত রকম দোয়া-দরুদ জানে মনে মনে পাঠ করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছে।

ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। ভোরে ঘন মেঘে আকাশ দেখে আশাহত তারা। আহা এ যাত্রায় সানরাইজ দেখা হলো না। সময়মতো ঢাকাগামী বাসে উঠে বসে তারা।

পরদিন রাতে মাকে সে শেয়ার করে তার ভীতিকর অভিজ্ঞতার কথা। সেসব শুনে মা বললেন, মন দিয়ে শোনো। আমি তখন তোর মতো ছোট। ঠিক ২২ বছর আগে গিয়েছিলাম গ্রামের মতো কুয়াকাটায়। তখন এমন উন্নত হয়নি। এত প্রাইভেট হোটেল-মোটেলের ছড়াছড়ি ছিল না। আমরা উঠেছি পর্যটনের মোটেলে। বাবার অফিসের ভলভো বোটে করে লোহালিয়া, আন্ধার মানিক, আগুনমুখো প্রভৃতি নদী পথে মহিপুর ঘাটে এসে নির্ধারিত পাজেরো জিপে করে এলাম। ব্যস, রাতে গেল ইলেকট্রিসিটি চলে। অমাবস্যার পরের দিন সেটা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে অসম্ভব ভয় পাই, তেমনই বারান্দায় দাঁড়িয়ে দূরে নিকষ অন্ধকারের রূপ দেখে হই মুগ্ধও। আব্বু বললেন, যেন শরৎচন্দ্রের অন্ধকারে রূপ নিজে দেখলাম। সে যা-ই হোক, সেরাতে আমিও এমন বাচ্চার ওয়াও কান্নাকাটি শুনে ভয়ে কাহিল। তাল পড়ার শব্দ না থাকলেও মনে হয় ঘরে কে যেন সশব্দে চেয়ার-টেবিল টানছে। পরদিন সব বললাম, আব্বু-আম্মু শুনে হেসেই আকুল, আররে ব্যস! ওই কান্না তো বাচ্চা বেড়ালের। আর ঠিক ওপরের ফ্লোরে কেউ কিছু টানলে ঠিক এভাবেই শব্দ নিচে চলে আসে। বুঝলি? বলেই তোর নানুর কী হাসি! এবার মাও হাসলেন, হুম্‌, এখন তুইও তবে বোঝ বিন্নি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত