বাবা অন্যরকম বন্ধু

সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ১৪: ০৪

বৃহস্পতিবার, স্কুল তাড়াতাড়িই ছুটি হয়ে যাবে। তাই আমি, মিনা এবং ফারহান মিলে টিফিনের ফাঁকে একটা প্লেন করেছি। আজ ছুটির পর মিনাদের বাড়ির পাশে বড় পুকুরে কিছুক্ষণ মজা করে গোসল করব।

তবে ভয় হচ্ছে বাবা যদি কোনোভাবে জেনে ফেলেন, তাহলে তো পিঠের চামড়া...!!! কারণ একদিন একটু পুকুরে গোসল করেছিলাম আর চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছিল, তাই বাবার কাছ থেকে অনেক বকা শুনতে হয়েছে। বাবা বলেছেন, আমার নাকি জ্বর আসবে, ঠান্ডা লাগবে এবং ময়লাপানি চোখে যাওয়ার কারণে চোখের পাওয়ার কমে যাবে, আরো কত কী...! যা হোক, আজ গোসল করবই।

বিজ্ঞাপন

যেই কথা, সেই কাজ। ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াহুড়া করে ব্যাগ গুছিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হতেই দেখি আস্ত দানবের মতো বাবা স্কুলমাঠে দাঁড়িয়ে আছেন। এ কী, বাবা কি কোনো ভূত নাকি!! আমাদের সব প্লেন জেনে গেলেন কীভাবে!! ধ্যাত সব প্লেন মাটি হয়ে গেল।

অবশেষে বাবার হাত ধরে বাড়ির পথে রওনা হলাম। গেটের সামনে মিনা আর ফারহান দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাবা যে আজ কেন নিতে এসেছেন! এই ভাবতে ভাবতে কিছু পথ যেতেই দেখা হয়ে গেল বড় চাচার সঙ্গে। বাবা বললেন, রাফি তোমার চাচাকে সালাম দাও। আমি সালাম দিয়ে চাচার দিকে তাকালাম, চাচাকে আজ অন্যরকম লাগছে। খেয়াল করে দেখি চাচার মোটা গ্লাসের পাওয়ার চশমাটা আজ আর দেখা যাচ্ছে না। চাচা, আপনার চশমা কোথায়?

চাচা বললেন আর বলো না বাবা, গতকাল আমার মেয়েটা বাড়িতে এসেছে। তার ছেলের সঙ্গে খেলতে গিয়ে চশমাটা ভেঙে গেছে। এখন বাজারে যাচ্ছি!

বাবা বললেন, সাবধানে যেও। তোমার চশমা নেই, তাই সমস্যা হতে পারে…

চাচাকে বিদায় দিয়ে আমরা বাড়িতে এসে পড়লাম।

বিকালবেলা খেলাধুলায় কাটিয়ে সন্ধ্যাবেলায় পড়ার টেবিলে বসেছি কিন্তু আজ পড়তে মন চাইছে না আর বাবাও বাড়িতে নেই। তাই টেবিল থেকে উঠে এক পা, দুপা করে রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি মা খুব মনোযোগ দিয়ে রান্না করছেন। যাক এই সুযোগে মোবাইল দেখা যাবে, তাই মোবাইলটা হাতে নিয়ে খাটে বসে দেখতে শুরু করলাম বোতল ভূতের গল্প। হঠাৎ এক ভূত বের হয়ে হাউমাউ করে উঠল। আমি ভয়ে কুঁচকে গেলাম আর বুকটা কেঁপে উঠল । খুব ভয় হচ্ছে, এমন সময় হঠাৎ চোখ পড়ল দরজার দিকে। দেখি ভূত না বাবা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ।

আমি মোবাইলটা বিছানায় রেখে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম, বাবা! ভুল হয়ে গেছে, মাফ করে দাও। আর কোনো দিন এ সময় মোবাইল হাতে নেব না ।

বাবা মিষ্টি হেসে বললেন, যাও অজু করে এসো। আমার সঙ্গে নামাজ পড়তে যাবে।

আমি অজু করে বাবার সঙ্গে এশার নামাজের জন্য রওনা হলাম। তখন বাবা বললেন, সবসময় মোবাইল দেখলে চোখের পাওয়ার কমে যায়। আমার চাই তুমি অনেক বড় হবে, তাই আর কোনো দিন পড়ায় ফাঁকি দেবে না, ঠিক আছে?

আমি কথা না বলে মাথা নেড়ে উত্তর দিলাম আর এতক্ষণে আমরা মসজিদে এসে পড়েছি…।

বিষয়:

ছুটিবাবা
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত