কাশির কারণ ও চিকিৎসা

ডা. আরজুমান শারমিন
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ২২
ছবি: সংগৃহীত

কাশি একটি সাধারণ শারীরিক প্রক্রিয়া, যা আমাদের শ্বাসনালি থেকে অবাঞ্ছিত পদার্থ যেমন কফ, ধুলোবালি বা অন্য কোনো বিরক্তিকর উপাদান পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তবে, দীর্ঘস্থায়ী কাশি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই কাশি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা জরুরি।

কাশি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সাধারণ সর্দি-কাশি ভাইরাসের কারণে হয়। এটি কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। ফ্লু একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা সাধারণ সর্দি-কাশির চেয়ে বেশি গুরুতর হতে পারে। ব্রংকাইটিস হলো শ্বাসনালির প্রদাহ, যা সাধারণত ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয়। নিউমোনিয়া এটি ফুসফুসের সংক্রমণ, যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের কারণে হতে পারে। অ্যাজমা হলো শ্বাসনালির দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, যা কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং বুকে সাঁইসাঁই শব্দ সৃষ্টি করে। অ্যালার্জি পরাগরেণু, ধুলোবালি বা পশুর লোমের মতো অ্যালার্জেন কাশি সৃষ্টি করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ পেটের এসিড খাদ্যনালি দিয়ে ওপরে উঠে এলে কাশি হতে পারে। ধূমপান শ্বাসনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দীর্ঘস্থায়ী কাশি সৃষ্টি করে। পোস্টনাসাল ড্রিপ নাকের পেছন থেকে শ্লেষ্মা গলায় পড়লে কাশি হতে পারে। হুপিং কাশি একটি অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ। কাশি একটি সংক্রামক রোগ ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম। তাই কাশি দেওয়ার সময় কিছু শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত। যেমন : কাশি দেওয়ার সময় মুখ ও নাক টিস্যু বা রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখুন। যদি টিস্যু বা রুমাল না থাকে, তাহলে কনুইয়ের ভাঁজে মুখ ঢেকে কাশি দিন। ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন। নিয়মিত হাত ধুয়ে নিন। অন্যদের থেকে দূরে থাকুন, বিশেষ করে অসুস্থ হলে। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

কাশির চিকিৎসা

কাশির চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণের ওপর। কয়েকটি সাধারণ চিকিৎসার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো। শরীরকে সুস্থ করতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। প্রচুর তরল পান করা যেতে পারে। পানি, ফলের রস বা গরম স্যুপ পান করুন। গরম পানির ভাপ নেওয়া যেতে পারে। এটি শ্বাসনালি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। মধু কাশি কমাতে সাহায্য করে। তাই মধু খাওয়া যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কফ সিরাপ বা লজেন্স ব্যবহার করুন। ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে কাশি হলে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। আর যদি অ্যালার্জির কারণে কাশি হয়, তাহলে অ্যান্টিহিস্টামিন বা অন্যান্য অ্যালার্জির ওষুধ ব্যবহার করুন। এ ছাড়া অ্যাজমার কারণে কাশি হলে ইনহেলার ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় বা এর সঙ্গে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা রক্তযুক্ত কফ থাকে, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

লেখক : উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

বিষয়:

কাশি
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত