ডা. ফাতেমা ইয়াসমিন
ঘুম আমাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয় । আর আমরা জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ঘুমিয়ে কাটাই, যা আমাদের কর্মজীবনের বাকি দুই-তৃতীয়াংশের জন্য উপযোগী করে তোলে। আমরা ঘুমিয়ে গেলেও আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমাগত নিয়মতান্ত্রিকভাবেই চলতে থাকে। ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস কখনো বন্ধ থাকে না। কারণ আমাদের মস্তিষ্কের রেসপিরেটরি সেন্টার সব সময় কাজ করতে থাকে। ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো একটি জটিল সমস্যা হলো স্লিপ অ্যাপনিয়া। এই রোগটি কোনো বিরল রোগ নয় বরং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ৪ ভাগ লোক এই রোগে ভুগে থাকেন।
পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, শতকরা ২৫ ভাগ মধ্যবয়সী পুরুষ ও শতকরা ৯ ভাগ মধ্যবয়সী নারী স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ১০ সেকেন্ড থেকে কিছু মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। আর এ সমস্যায় ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়, যা কি না একটি প্রাণঘাতী বিষয়। শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রভাব প্রথমে পড়ে আমাদের মস্তিষ্কের ওপর। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক জেগে ওঠে এবং ঘুম ভেঙে যায়।
এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা ঘুম ভাঙার পর শ্বাস নেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। খুবই জটিল অবস্থায় সারারাত বারবার শ্বাস বন্ধ ও ঘুম ভাঙা এই চক্রটি চলতে থাকে। ফলে ঘুমিয়েও ঘুম পূরণ হয় না। এই ঘটনাগুলো যেহেতু গভীর ঘুমের মধ্যে ঘটছে, তাই রোগী তার এ সমস্যা বুঝতে পারে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে হয়তো তাদের মনেও থাকে না। যেহেতু বারবার ঘুম ভাঙার ফলে ঘুমিয়ে কখনো ঘুম পূরণ না হওয়ার ফলে সারা দিন ঘুম ঘুম ভাব থাকে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে যদি মস্তিষ্কের রেসপিরেটরি সেন্টার থেকে নির্দেশ আসে না, তখন একে বলা হয় সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া। এ সমস্যা হলে মস্তিষ্কের নির্দেশ না আসার কারণে ওই সময়ের শ্বাস কাজটি শুরু হয় না। মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই বিভ্রাট ঘটে। আবার দেখা যায়, মস্তিষ্কের নির্দেশ ঠিকমতোই আসছে কিন্তু শ্বাসনালির প্রবেশপথে বাধা, তখন একে বলা হয় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াতে শ্বাসনালির প্রবেশপথটি স্বাভাবিকের চেয়ে সরু অথবা গলার মাংসপেশি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শিথিল আবার এই দুটি একসঙ্গে ঘুমের সময় শ্বাসনালির প্রবেশপথটি বন্ধ করে দেয়। আবার কখনো কখনো সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া ও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া দুটো একসঙ্গে দেখা দেয়, তখন একে বলা হয় মিক্সড স্লিপ অ্যাপনিয়া।
এ সমস্যাগুলোয় ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। আমাদের মস্তিষ্ক অক্সিজেন ছাড়া বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। অক্সিজেন কমে যাওয়ার প্রভাবে মস্তিষ্ক জেগে ওঠে ও ঘুম ভেঙে যায় এবং ঘুম ভাঙার পর শ্বাস নিতে শুরু করে। হঠাৎ মস্তিষ্ক জেগে ওঠার প্রভাবে শরীর আপৎকালীন হরমোন বা স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে দেয়।
একটি পরিতৃপ্তিদায়ক ঘুম আমাদের কর্মদীপ্ত ও কাজে মনোযোগী করে তোলে। কিন্তু স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঘুম হলো জীবনের শেষ সময়ের আপদের মতো। হঠাৎ জেগে ওঠা ও স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবে অসংযত হার্টবিটের হার বেড়ে যায় ও ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যায়, দুর্বল হার্টের তরঙ্গের সমস্যাও দেখা দেয়। স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোনটি আমাদের খাদ্য গ্রহণ করার চাহিদাও বাড়িয়ে দেয়। এরই প্রভাবে শরীর মেদবহুল হয়ে পড়ে। প্রদাহ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কারণে বিভিন্ন রোগের আবির্ভাব হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৯০ ভাগের স্ট্রোক, ৭৭ ভাগের ব্লাডপ্রেশার, বুকে ব্যথা ও অসংযত হার্টবিটসহ হার্টের সমস্যা দেখা দেয়, যা কি না হার্টঅ্যাটার্কের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৩০ ভাগের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া ডিপ্রেশন, মাথাব্যথা, মানসিক রোগগুলো বেড়ে যায়। দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব থাকার জন্য গাড়ি চালানো বা কাজের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ৬০-৮০ ভাগ গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ হলো গাড়ি চালানো অবস্থায় ঘুম আসা। ঘুম আসার অন্যতম কারণ হলো স্লিপ অ্যাপনিয়া।
এ ছাড়া গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৭০ ভাগ অতিরিক্ত ওজনে ভোগে। এ ছাড়া স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগ মধ্যবয়সী পুরুষ যৌন দুর্বলাতেও ভোগে। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নাক ডাকার প্রবণতা দেখা যায়। নাক ডাকতে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ থেমে আবার নাক ডাকতে শুরু করে, যারা রোগীকে এ অবস্থায় দেখেছেন, তারাই বলতে পারেন। দীর্ঘসময় বিছানায় থাকার পরও ঘুম পুরো হয় না, সারা দিন ঝিমানো ভাব থাকে। কখনো কখনো খাবারের কাগজ পড়তে পড়তে বা টেলিভিশন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা গাড়িতে উঠলে ঘুমিয়ে পড়ে প্রায়ই।
দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম পায়, যার প্রভাবে অপ্রত্যাশিত ও অনিয়ন্ত্রিত ঘুমিয়ে পড়ার দরুন কর্মক্ষেত্রে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমের প্রভাব কাটানোর জন্য অনেকে আবার অতিরিক্ত চা, কফিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা অনুভব করা, হতাশা লাগা, হঠাৎ রাগ হয়ে যাওয়া। এর সঙ্গে আরও দেখা দেয় কথা ভুলে যাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতা, সারা দিন কাজে মনোযোগী হতে পারে না। ক্লাসে মনোযোগ কমে যায় এবং ছাত্ররা ক্লাসে খারাপ করতে শুরু করে ।
স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিগুলো
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি: পলিসমনোগ্রাফি অথবা স্লিপ টেস্ট একটি অন্যতম পদ্ধতি, যার মাধ্যমে খুব সহজেই এই রোগটি শনাক্ত করা যায় । স্লিপ টেস্টের মাধ্যমে ঘুমের মধ্যের পরিবর্তনগুলো ব্যাপকভাবে ধারণ করা হয়। এই পরীক্ষাটি দ্বারা ঘুমের মধ্যে কখন, কতবার এবং কী ধরনের শ্বাস বন্ধ হচ্ছে, তা বোঝা যায়। ঘুমের কোন স্তরে এবং কতক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল শ্বাস বন্ধ, তাও জানা যায়। তবে রোগীর পাশে যে ঘুমান অথবা যারা রোগীকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেন, তাদের রোগ নির্ণয়ের বর্ণনা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়া ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি শরীরে কতবার অক্সিজেনের মাত্রার কী রূপ পরিবর্তন হয়েছে, এবং কতটা ব্যাপক আকার ধারণ করছে, তাও নির্ণয় করা হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরের কার্বন ডাই-অক্সাইড কী পরিমাণ বাড়ল, তাও বোঝা যায়। এই টেস্টটি রাতব্যাপী স্লিপ ল্যাবে হয়ে থাকে কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে বাসায় ও স্লিপটেস্টও হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি। এই টেস্টটি দিয়ে অ্যাপনিয়া-হাইপো অ্যাপনিয়া ইনডেক্স দেখে রোগের মাত্রা (মৃদু, মাঝারি বা ব্যাপক আকার) নির্ণয় ও চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
চিকিৎসা: সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ জীবন পায়, চিকিৎসা না নিলে দেখা দেয় মারাত্মক সমস্যা যেমনÑ ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যাওয়া, বুকে ব্যথা অনুভব করা, অসংযত হার্টবিট, হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক, ঘুমের মধ্যে মারা যাওয়া, ডিপ্রেশন ইত্যাদি । ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে রোগটি কত জটিল আকার ধারণ করেছে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন করলে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার উপক্রম কমে যায়।
বিশেষায়িত চিকিৎসাগুলো
আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় বহুল প্রচলিত চিকিৎসা হলো কিছু ডিভাইসের ব্যবহার। এই মেশিনটি দ্বারা ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ সমস্যাটি দূর করা যায়। দুই ধরনের ডিভাইস আছে, একটি সিপিএপি আর একটি বিপিএপি। সিপিএপি মেশিনটি দ্বারা একটি নির্দিষ্ট চাপে বাতাস প্রবাহ হয়, যা রোগীর নাক বা নাক-মুখ দিয়ে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে বাধা দেয়।
বিপিএপি মেশিনটি দ্বারা দুই ধরনের চাপে বাতাস প্রবাহিত হয়। একটি অক্সিজেনের ঘাটতি কমাতে ও অন্যটি কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করতে সহায়তা করে। তবে কোন রোগীর জন্য কোন ডিভাইসটি প্রয়োজন, সেটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নির্ধারণ করবেন।
অন্য চিকিৎসাগুলো
আজকাল ডেন্টিস্টরা মুখে রাখার কিছু ছোট ডিভাইস তৈরি করে দেন, যা স্লিপ অ্যাপনিয়া কমাতে সাহায্য করে। আবার স্লিপ অ্যাপনিয়ায় কিছু সার্জারি করার প্রয়োজন পড়ে, যেমন : বাচ্চাদের যদি বড় টনসিল ও অ্যাডিনয়েড থাকে, তবে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের সার্জারি করলে উপকার পাওয়া যায়। আবার যাদের চোয়াল অথবা ওপরের তালু বিকৃত হয়, তাদের জন্য অন্য সার্জারির প্রয়োজন পড়তে পারে। কোন চিকিৎসাব্যবস্থা কোন রোগীর জন্য প্রযোজ্য, সেটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
লেখক: স্লিপ কনসালট্যান্ট, ইনজিনিয়াস হেলথ কেয়ার লিমিটেড
ঘুম আমাদের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য একটি বিষয় । আর আমরা জীবনের এক-তৃতীয়াংশ ঘুমিয়ে কাটাই, যা আমাদের কর্মজীবনের বাকি দুই-তৃতীয়াংশের জন্য উপযোগী করে তোলে। আমরা ঘুমিয়ে গেলেও আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রমাগত নিয়মতান্ত্রিকভাবেই চলতে থাকে। ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস কখনো বন্ধ থাকে না। কারণ আমাদের মস্তিষ্কের রেসপিরেটরি সেন্টার সব সময় কাজ করতে থাকে। ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো একটি জটিল সমস্যা হলো স্লিপ অ্যাপনিয়া। এই রোগটি কোনো বিরল রোগ নয় বরং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ৪ ভাগ লোক এই রোগে ভুগে থাকেন।
পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, শতকরা ২৫ ভাগ মধ্যবয়সী পুরুষ ও শতকরা ৯ ভাগ মধ্যবয়সী নারী স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত। স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস ১০ সেকেন্ড থেকে কিছু মিনিটের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। আর এ সমস্যায় ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়, যা কি না একটি প্রাণঘাতী বিষয়। শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রভাব প্রথমে পড়ে আমাদের মস্তিষ্কের ওপর। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক জেগে ওঠে এবং ঘুম ভেঙে যায়।
এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা ঘুম ভাঙার পর শ্বাস নেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। খুবই জটিল অবস্থায় সারারাত বারবার শ্বাস বন্ধ ও ঘুম ভাঙা এই চক্রটি চলতে থাকে। ফলে ঘুমিয়েও ঘুম পূরণ হয় না। এই ঘটনাগুলো যেহেতু গভীর ঘুমের মধ্যে ঘটছে, তাই রোগী তার এ সমস্যা বুঝতে পারে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে হয়তো তাদের মনেও থাকে না। যেহেতু বারবার ঘুম ভাঙার ফলে ঘুমিয়ে কখনো ঘুম পূরণ না হওয়ার ফলে সারা দিন ঘুম ঘুম ভাব থাকে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগে যদি মস্তিষ্কের রেসপিরেটরি সেন্টার থেকে নির্দেশ আসে না, তখন একে বলা হয় সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া। এ সমস্যা হলে মস্তিষ্কের নির্দেশ না আসার কারণে ওই সময়ের শ্বাস কাজটি শুরু হয় না। মস্তিষ্কের বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই বিভ্রাট ঘটে। আবার দেখা যায়, মস্তিষ্কের নির্দেশ ঠিকমতোই আসছে কিন্তু শ্বাসনালির প্রবেশপথে বাধা, তখন একে বলা হয় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াতে শ্বাসনালির প্রবেশপথটি স্বাভাবিকের চেয়ে সরু অথবা গলার মাংসপেশি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শিথিল আবার এই দুটি একসঙ্গে ঘুমের সময় শ্বাসনালির প্রবেশপথটি বন্ধ করে দেয়। আবার কখনো কখনো সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া ও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া দুটো একসঙ্গে দেখা দেয়, তখন একে বলা হয় মিক্সড স্লিপ অ্যাপনিয়া।
এ সমস্যাগুলোয় ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও কমে যায়। আমাদের মস্তিষ্ক অক্সিজেন ছাড়া বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। অক্সিজেন কমে যাওয়ার প্রভাবে মস্তিষ্ক জেগে ওঠে ও ঘুম ভেঙে যায় এবং ঘুম ভাঙার পর শ্বাস নিতে শুরু করে। হঠাৎ মস্তিষ্ক জেগে ওঠার প্রভাবে শরীর আপৎকালীন হরমোন বা স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে দেয়।
একটি পরিতৃপ্তিদায়ক ঘুম আমাদের কর্মদীপ্ত ও কাজে মনোযোগী করে তোলে। কিন্তু স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঘুম হলো জীবনের শেষ সময়ের আপদের মতো। হঠাৎ জেগে ওঠা ও স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবে অসংযত হার্টবিটের হার বেড়ে যায় ও ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যায়, দুর্বল হার্টের তরঙ্গের সমস্যাও দেখা দেয়। স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়। এই স্ট্রেস হরমোনটি আমাদের খাদ্য গ্রহণ করার চাহিদাও বাড়িয়ে দেয়। এরই প্রভাবে শরীর মেদবহুল হয়ে পড়ে। প্রদাহ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কারণে বিভিন্ন রোগের আবির্ভাব হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৯০ ভাগের স্ট্রোক, ৭৭ ভাগের ব্লাডপ্রেশার, বুকে ব্যথা ও অসংযত হার্টবিটসহ হার্টের সমস্যা দেখা দেয়, যা কি না হার্টঅ্যাটার্কের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৩০ ভাগের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া ডিপ্রেশন, মাথাব্যথা, মানসিক রোগগুলো বেড়ে যায়। দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব থাকার জন্য গাড়ি চালানো বা কাজের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ৬০-৮০ ভাগ গাড়ি দুর্ঘটনার কারণ হলো গাড়ি চালানো অবস্থায় ঘুম আসা। ঘুম আসার অন্যতম কারণ হলো স্লিপ অ্যাপনিয়া।
এ ছাড়া গবেষণায় আরও দেখা গেছে, স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের শতকরা ৭০ ভাগ অতিরিক্ত ওজনে ভোগে। এ ছাড়া স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগ মধ্যবয়সী পুরুষ যৌন দুর্বলাতেও ভোগে। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নাক ডাকার প্রবণতা দেখা যায়। নাক ডাকতে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ থেমে আবার নাক ডাকতে শুরু করে, যারা রোগীকে এ অবস্থায় দেখেছেন, তারাই বলতে পারেন। দীর্ঘসময় বিছানায় থাকার পরও ঘুম পুরো হয় না, সারা দিন ঝিমানো ভাব থাকে। কখনো কখনো খাবারের কাগজ পড়তে পড়তে বা টেলিভিশন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা গাড়িতে উঠলে ঘুমিয়ে পড়ে প্রায়ই।
দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম পায়, যার প্রভাবে অপ্রত্যাশিত ও অনিয়ন্ত্রিত ঘুমিয়ে পড়ার দরুন কর্মক্ষেত্রে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমের প্রভাব কাটানোর জন্য অনেকে আবার অতিরিক্ত চা, কফিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা অনুভব করা, হতাশা লাগা, হঠাৎ রাগ হয়ে যাওয়া। এর সঙ্গে আরও দেখা দেয় কথা ভুলে যাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতা, সারা দিন কাজে মনোযোগী হতে পারে না। ক্লাসে মনোযোগ কমে যায় এবং ছাত্ররা ক্লাসে খারাপ করতে শুরু করে ।
স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিগুলো
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি: পলিসমনোগ্রাফি অথবা স্লিপ টেস্ট একটি অন্যতম পদ্ধতি, যার মাধ্যমে খুব সহজেই এই রোগটি শনাক্ত করা যায় । স্লিপ টেস্টের মাধ্যমে ঘুমের মধ্যের পরিবর্তনগুলো ব্যাপকভাবে ধারণ করা হয়। এই পরীক্ষাটি দ্বারা ঘুমের মধ্যে কখন, কতবার এবং কী ধরনের শ্বাস বন্ধ হচ্ছে, তা বোঝা যায়। ঘুমের কোন স্তরে এবং কতক্ষণ স্থায়ী হয়েছিল শ্বাস বন্ধ, তাও জানা যায়। তবে রোগীর পাশে যে ঘুমান অথবা যারা রোগীকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেন, তাদের রোগ নির্ণয়ের বর্ণনা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়া ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি শরীরে কতবার অক্সিজেনের মাত্রার কী রূপ পরিবর্তন হয়েছে, এবং কতটা ব্যাপক আকার ধারণ করছে, তাও নির্ণয় করা হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরের কার্বন ডাই-অক্সাইড কী পরিমাণ বাড়ল, তাও বোঝা যায়। এই টেস্টটি রাতব্যাপী স্লিপ ল্যাবে হয়ে থাকে কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে বাসায় ও স্লিপটেস্টও হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি। এই টেস্টটি দিয়ে অ্যাপনিয়া-হাইপো অ্যাপনিয়া ইনডেক্স দেখে রোগের মাত্রা (মৃদু, মাঝারি বা ব্যাপক আকার) নির্ণয় ও চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
চিকিৎসা: সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ জীবন পায়, চিকিৎসা না নিলে দেখা দেয় মারাত্মক সমস্যা যেমনÑ ব্লাডপ্রেশার বেড়ে যাওয়া, বুকে ব্যথা অনুভব করা, অসংযত হার্টবিট, হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক, ঘুমের মধ্যে মারা যাওয়া, ডিপ্রেশন ইত্যাদি । ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে রোগটি কত জটিল আকার ধারণ করেছে।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন করলে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার উপক্রম কমে যায়।
বিশেষায়িত চিকিৎসাগুলো
আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় বহুল প্রচলিত চিকিৎসা হলো কিছু ডিভাইসের ব্যবহার। এই মেশিনটি দ্বারা ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ সমস্যাটি দূর করা যায়। দুই ধরনের ডিভাইস আছে, একটি সিপিএপি আর একটি বিপিএপি। সিপিএপি মেশিনটি দ্বারা একটি নির্দিষ্ট চাপে বাতাস প্রবাহ হয়, যা রোগীর নাক বা নাক-মুখ দিয়ে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে বাধা দেয়।
বিপিএপি মেশিনটি দ্বারা দুই ধরনের চাপে বাতাস প্রবাহিত হয়। একটি অক্সিজেনের ঘাটতি কমাতে ও অন্যটি কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করতে সহায়তা করে। তবে কোন রোগীর জন্য কোন ডিভাইসটি প্রয়োজন, সেটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নির্ধারণ করবেন।
অন্য চিকিৎসাগুলো
আজকাল ডেন্টিস্টরা মুখে রাখার কিছু ছোট ডিভাইস তৈরি করে দেন, যা স্লিপ অ্যাপনিয়া কমাতে সাহায্য করে। আবার স্লিপ অ্যাপনিয়ায় কিছু সার্জারি করার প্রয়োজন পড়ে, যেমন : বাচ্চাদের যদি বড় টনসিল ও অ্যাডিনয়েড থাকে, তবে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের সার্জারি করলে উপকার পাওয়া যায়। আবার যাদের চোয়াল অথবা ওপরের তালু বিকৃত হয়, তাদের জন্য অন্য সার্জারির প্রয়োজন পড়তে পারে। কোন চিকিৎসাব্যবস্থা কোন রোগীর জন্য প্রযোজ্য, সেটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
লেখক: স্লিপ কনসালট্যান্ট, ইনজিনিয়াস হেলথ কেয়ার লিমিটেড
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, শাকসু বানচালের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যদি আগামী সোমবার ভিসি এসে নির্বাচন কমিশন গঠন করে রোডম্যাপ ঘোষণা না করেন, তাহলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের...
২ ঘণ্টা আগেসংগঠনের তথ্য, উপহার প্রদান, অনুভূতি বক্স এবং মেহেদি দেওয়ার জন্য উৎসবের ছাউনিতে চারটি আলাদা বুথ। সেখানে ছিল নারী শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আয়োজকরা নতুন সদস্য আহ্বান ও প্রচারপত্র বিলি করেন। ফটকের সামনে একটি ব্যানারে লেখা, ‛প্রিয় ভাইয়েরা, ভেতরে প্রবেশ ও উঁকি মারা থেকে বিরত থাকুন।’
২ ঘণ্টা আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
৩ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
৪ ঘণ্টা আগে