চার ঘণ্টা পর চালু ডায়ালাইসিস, কাল থেকে স্থায়ী বন্ধের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৫, ১৯: ১৭

জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (নিকডু) ও হাসপাতালে ছয় মাস ধরে বেতন পান না ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিসেস বিডি প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মীরা। বেতন আটকে থাকায় ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ রেখে চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। এতে চরম ভোগান্তিতে পরেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কিডনি রোগীরা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন স্যান্ডোরের কর্মীরা। এরপর শর্তসাপেক্ষে কাজে ফেরেন তারা। একই সঙ্গে আগামীকাল মঙ্গলবারের বকেয়া বিল পরিশোধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হলে ডায়ালাইসিস সেবা পুরোপুরি বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিকডুর সঙ্গে সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্পের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস সেবা দিয়ে আসছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডোর। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসের বিল একসঙ্গে দেওয়া কথা। সে অনুযায়ী গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের বিল চলতি বছরের জানুয়ারি দিকে পেয়ে পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটি এখনো দিতে পারেনি সরকার। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সেন্টার মিলে কোম্পানিটির সরকারের কাছে বকেয়া সাত কোটি টাকা।

স্যান্ডোর কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাভাবিক সময়ে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই বকেয়া বিল দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে কর্মীদের বেতনের পাশাপাশি ডায়ালাইজার কিনতেও সমস্যা হচ্ছে। এতে করে সেবা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।

সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্যানডোরের কনসালটেন্ট ডা. শামসুন্নাহার আমার দেশকে জানান, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে সরকারের কাছে আমাদের পাওনা সাত কোটি টাকা। কোম্পানি টাকা না পেলে আমাদের বেতন দিতে পারে না। আগে কোম্পানি মাল না কিনে বাকিতে নিত। কিন্তু এখন নগদে আনতে হয়। ফলে কোম্পানি নিজে থেকে বেতন দিতে পারছে না। আমি নিজেও কর্মবিরতিতে আছি। দু-চার দিন হলে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু মাসের পর মাস হলে চলা কঠিন হয়ে যায়। এখানে সবার পরিবার আছে, বেতন ছাড়া কেউই চলতে পারে না। আমরা বার বার বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘দুই সেন্টার মিলে দুই শতাধিক ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মী রয়েছে। সরকারের কাছে থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস আমরা পাইনি। রোগীদের কথা চিন্তা করে চার ঘণ্টা পর আবারও চালু রাখা হয়েছে। তবে আগামীকাল সরকারের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পেলে কর্মীরা পুরো সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকবে বলে জানিয়েছে।’

তবে বিল আটকে যাওয়ার এমন জটিলতা নতুন কিছু নয়। বিগত বছরগুলোতেও সরকারের নীতি নির্ধারকদের গুরুত্বের অভাবে বহুবার ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

জানতে চাইলে নিকডুর উপপরিচালক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘স্যানডোরের কর্মীরা হঠাৎ করে দুপুর ১২টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করে। এতে ডায়ালাইসিস সেবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পরে রোগীদের দুর্ভোগ বিবেচনায় তারা আজকের মতো কাজ শুরু করে।’

তিনি জানান,‘এই আর্থিক সংকটের দায় হাসপাতালের নয়। স্যানডোর সরকারের কাছে টাকা পায়, আর কর্মীরা তাদের কাছে। বিষয়টি পুরোপুরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে, অর্থ বিভাগের মাধ্যমে বরাদ্দ ছাড়ের বিষয়। আমরা জেনেছি, ফাইল অর্থ শাখায় গিয়েছিল, কিন্তু অডিট আপত্তির কারণে তা আটকে গেছে। আজ আবার তা অর্থ বিভাগে যাওয়ার কথা।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত