পায়ের পাতা ব্যথার কারণ ও সমাধান

ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২: ৪৩

পা মানবশরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যার পা নেই সেই বুঝে পায়ের মর্মকথা। আর যাদের পা থেকেও সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না, তাদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। সেলিম রহমান একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন কোমরব্যথায় ভুগছিলেন। নিয়মিত চিকিৎসা ও চিকিৎসকের নির্দেশমতো ব্যায়াম করে ভালোই ছিলেন। কিন্তু ইদানীং ঘুম থেকে উঠে ফ্লোরে পা রাখতেই পায়ের তলায় তীব্র ব্যথা হয়। আবার অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে থাকার পর উঠে দাঁড়াতেই পায়ের তলায় তীব্র ব্যথা হয়। একটু হাঁটাহাঁটি করলে ব্যথা কিছুটা কমে আসে।

বিজ্ঞাপন

সেলিম রহমান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জানতে পারলেন তার প্লান্টার ফ্যাসাইটিস হয়েছে।

মানবদেহে পায়ের গোড়ালিতে যেসব কারণে ব্যথা হয় তার মধ্যে প্লান্টার ফ্যাসাইটিসই অন্যতম। দীর্ঘদিন এই সমস্যা চলতে থাকলে পায়ের তলায় স্পার বা কাঁটার মতো হাড় বৃদ্ধি পায়। এটাকে ডাক্তারি ভাষায় ক্যালকেনিয়াল স্পার বলা হয়। তা ছাড়া পায়ের হাড় ভেঙে গেলে ব্যথা হয়। গেটেবাত, ওস্টিওমাইলাইটিস, স্পন্ডাইলো আথোর্প্যাথি, বার্সাইটিস, টেনডিনাইটিস, রিট্রোক্যালকেনিয়াল স্পার, স্পোর্টস ইনজুরি, হেমার টো, মর্টনস নিউরোমা, নার্ভের প্রদাহ, ডায়াবেটিস, কেলুলেস, পায়ের গঠনগত ভুল প্রভৃতি রোগে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে।

ব্যথা বাড়ার লক্ষণ

১. পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হবে। সাধারণত হাঁটলে সেটা আরও বেড়ে যায়।

২. গোড়ালি কখনো কখনো ফুলে যেতে পারে।

৩. খালি পায়ে শক্ত জায়গায় হাঁটলে সাধারণত ব্যথা বেশি বাড়ে।

৪. পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা সকালে বেশি থাকে এবং তা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু কমে আসে।

৫. অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসার পর পা ফেলতে কষ্ট হয়।

৬. কখনো কখনো গোড়ালি শক্ত মনে হয়।

৭. আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে ও গরম অনুভূত হয়।

৮. পায়ের পাতা একটু অবশ বা প্যারালাইসিসের ভাব হয়।

এর চিকিৎসা

রোগ নির্ণয় জরুরি, সঠিক চিকিৎসার প্রথম শর্ত সঠিক রোগ নির্ণয়। তাই অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে হবে। বিশ্রাম, ঠান্ডা সেক, কম্প্রেশন, উঁচু করে রাখা প্রাথমিক চিকিৎসা, নির্দিষ্ট ওষুধ, সাপ্লিমেন্টারি ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন। জুতা পাল্টানো প্রয়োজন, যেমন—নরম সোল ব্যবহার, হিল কুশন ব্যবহার, আর্চ সাপোর্ট দেওয়া, গোড়ালির কাছে ছিদ্র করে নেওয়া প্রভৃতি। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। ক্যালকেনিয়াল স্পার হলে কখনোই অপারেশন করানো উচিত হবে না। নরম সোলের জুতা ব্যবহার করবেন। চিকিৎসকের নির্দেশমতো পায়ের ব্যায়াম নিয়মিত করবেন। প্রত্যহ ১০ মিনিট কুসুম গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন।

লেখক : বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ

ডিপিআরসি, শ্যামলী, ঢাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত