ভার্টিগো হলে করণীয়

ডা. মইনুদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ৩৮

ভার্টিগো হলো নড়াচড়া বা ঘোরানোর অনুভূতি, যাকে প্রায়ই মাথা ঘোরা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ভার্টিগোতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মনে হয় যেন তারা আসলে ঘুরছে বা নড়াচড়া করছে, অথবা পৃথিবী তাদের চারপাশে ঘুরছে।

বিজ্ঞাপন

অনেক রোগীই এই সমস্যায় ভোগেন। কারো জীবনের কোনো এক সময় হয়, কারো বারবার হয়। ভার্টিগো হলে রোগীর প্রায় সময়ই বমি হয়, কষ্ট হয়; রোগী দাঁড়াতে পারে না, কোনো কাজ করতে পারে না। এটি আসলে কোনো রোগ নয়, বরং বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়।

ভার্টিগো কেন হয়?

মানুষের ভারসাম্য রক্ষার জন্য শরীরের বেশ কিছু অঙ্গ একত্রে কাজ করে। এই সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে উভয় কানের অভ্যন্তরীণ অংশ। ভেস্টিবুলার বা অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভ ও মস্তিষ্কের ব্রেন স্টেম ও সেরিবেলাম—এগুলোর যেকোনোটির সমস্যা হলে ভার্টিগো হতে পারে। মস্তিষ্কের বাইরের অংশের কারণে ভার্টিগো হলে এটিকে পেরিফেরাল বা বাহ্যিক ভার্টিগো আর মস্তিষ্কের ভেতরের কোনো কারণে ভার্টিগো হলে এটিকে সেন্ট্রাল বা কেন্দ্রীয় ভার্টিগো বলে। ভার্টিগোর রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই পেরিফেরাল ভার্টিগোর রোগী।

সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অন্তঃকর্ণের সমস্যা, যাকে বলা হয়, পেরিফেরাল ভার্টিগো; যেমন BPPV (Benign Paroxysmal Positional Vertigo)। এতে ক্যালসিয়ামের ছোট কণিকা (otolith) ভুল জায়গায় চলে গিয়ে কানের অভ্যন্তরের তরলের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করে। এ ছাড়া কানে অতিরিক্ত তরল জমা হওয়ার কারণে Meniere’s Disease হয়। ভাইরাস সংক্রমণের ফলে ভেস্টিবুলার নার্ভে প্রদাহ দেখা দেয়, যা Vestibular Neuritis। মস্তিষ্কের সমস্যা (যেমন স্ট্রোক বা টিউমার) থেকেও ভার্টিগো হতে পারে, যাকে বলা হয় সেন্ট্রাল ভার্টিগো।

চিকিৎসা : এই রোগের জন্য বাজারে কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। কিন্তু যাদের প্রায়ই মাথা ঘোরে, তাদের শুধু ওষুধ দিয়ে ভার্টিগো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাদের ওষুধের পাশাপাশি কিছু এক্সারসাইজ করতে হয়, যাকে বলা হয় vestibular strengthening exercises । রোগীর মস্তিষ্কের vestibule নামে একটা জায়গা আছে, যা আমাদের শরীরের ব্যালেন্সকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেই জায়গাটাকে strengthen করার জন্য এই এক্সারসাইজ করা হয়। এগুলো করলে ভার্টিগো থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

ব্যায়াম করার নিয়ম

-প্রথমে এক হাতের একটা আঙুল নিয়ে মুখের সামনে ধরব, এরপর চোখের দৃষ্টি আঙুলের দিকে স্থির রেখে মাথাকে দুপাশে ঘোরাব। এভাবে অন্তত ২০ বার করব।

-এর পরের ধাপে একইভাবে এক হাতের একটা আঙুল নিয়ে মুখের সামনে ধরব, কিন্তু এবার মাথা সোজা আঙুলের দিকে স্থির রেখে দুই চোখকে দুপাশে ঘোরাতে থাকব। এটাও অন্তত ২০ বার করব।

-এরপর মাথা স্থির রেখে চোখকে ওপরে ও নিচে ঘোরাতে থাকব অন্তত ২০ বার।

-তার পরের ধাপে চোখ স্থির রেখে মাথাকে ওপরে ও নিচে ঘোরাতে থাকব অন্তত ২০ বার।

-এরপরের ব্যায়ামটা হলো accommodation ঠিক করা। প্রথমে মাথা স্থির রেখে সামনে একটা আঙুল ধরব। এরপর সেই আঙুলকে একবার চোখের খুব কাছে এনে দেখব, একবার দূরে নিয়ে দেখব। এভাবে অন্তত ২০ বার করব।

-এর পরের ব্যায়ামটা হলো ওঠা ও বসা। চেয়ারের হাতল ধরে একবার উঠবেন আরেকবার বসবেন। এভাবে অন্তত ২০ বার করব।

এই ব্যায়ামগুলো করার সময় অবশ্যই একটা হাতলবিশিষ্ট চেয়ারে বসতে হবে, কারণ রোগীরা শুরুতে এই ব্যায়ামগুলো করতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন। আর ব্যায়াম করার সময় যদি মাথা ঘোরা শুরু হয়, তা হলে আপনি ওই মুহূর্তে ব্যায়াম বন্ধ করে দিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন এবং তারপর আবার ব্যায়াম শুরু করবেন। এই ব্যায়ামগুলো প্রতিদিন দুবেলা করবেন—সকালে প্রতিটা ব্যায়াম ২০ বার করে, বিকালেও প্রতিটা ব্যায়াম ২০ বার করে। এভাবে করলে আপনার vestibular system শক্তিশালী হবে এবং শরীরের ব্যালেন্স বাড়বে এবং ঘনঘন মাথা ঘোরার প্রবণতাও কমে যাবে।

সুতরাং, ওষুধের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে রোগীদের এই ব্যায়ামগুলো করা উচিত। এতে করে দীর্ঘমেয়াদিভাবে মাথা ঘোরার সমস্যা থেকে বাঁচা সম্ভব। আর এই ব্যায়ামগুলো শুধু যে ভার্টিগোর রোগীরাই করবেন, তা নয়। বরং একজন সুস্থ মানুষও চাইলে এই ব্যায়ামগুলো করতে পারেন। এতে করে তার আর কখনো মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেবে না।

লেখক : মেডিসিন ও লিভার রোগবিশেষজ্ঞ

কুড়িগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল

বিষয়:

ভার্টিগো
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত