পাকস্থলীর ক্যানসারের কারণ ও ভয়াবহতা

ডা. মো. তৌছিফুর রহমান
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ০৭

বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর পঞ্চম সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ পাকস্থলী ক্যানসারে আক্রান্ত হয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ পাকস্থলী ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করেন। দেখা যায়, জাপান, কোরিয়া, চায়না, আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা ও ইস্টার্ন ইউরোপে মানুষের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। পঞ্চাশোর্ধ মানুষের মধ্যে পাকস্থলী ক্যানসার বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত পুরুষের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ২০২০ সালে পৃথিবীতে ১০৮৯১০০ (৫.৬%) আক্রান্ত হন এবং ৭৬৮৭৯৩ (৭.৭%) মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। একই সালে বাংলাদেশে ৫০৮৫ (৫.৮%) জন পুরুষ এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

পাকস্থলী ক্যানসারের কারণ কী কী?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কারণ জানা যায় না। তারপরও যে কারণগুলো রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো

১. প্রথমত, খাদ্যাভ্যাসের জন্য দায়ী। যেসব মানুষ নাইট্রেট, নাইট্রাইটসমৃদ্ধ খাবার, অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার, ধোঁয়াযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত মসলাজাতীয় খাবার বেশি খান।

২. হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে পেপটিক আলসার হলে। এপস্টেন বার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে গ্যাস্ট্রিক লিম্ফোমা হতে পারে।

৩. জেনেটিক : পারিবারিক ইতিহাস থাকলে। P53, APC জিন মিউটেশন হলে। দেখা যায়, বেশির ভাগ পাকস্থলীর ক্যানসারেই এই দুধরনের মিউটেশন থাকে।

৪. গ্যাস্ট্রিক পলিপ থাকলে : গ্যাস্ট্রিক পলিপ কয়েক ধরনের হতে পারে। এর মধ্যে কিছু ইনফ্লামেটরি, হাইপারপ্লাস্টিক, অ্যাডেনোমাটাস, সিসাইল পলিপ অন্যতম। ইনফ্লামেটরি পলিপ ছাড়া যেকোনো পলিপেই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৫. পাকস্থলীর অপারেশন হয়েছে, এমন মানুষের ক্ষেত্রেও ১৫-২০ বছর পর ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন : আগে পেপটিক আলসাসের জন্য পার্সিয়াল গ্যাস্ট্রেকটমি অপারেশন করা হতো, যা পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করত।

৬. যারা Chronic Gastritis, Pernicious Anemia, Chronic Gastric ulcer-এ আক্রান্ত তাদেরও উচ্চঝুঁকি রয়েছে।

৭. ধূমপান : অন্যতম কারণ, ধূমপায়ীদের মধ্যে উচ্চঝুঁকি রয়েছে।

৮. জেনেটিক সিনড্রোম : FAP (Familial Adenomatous Polyposis), HNPCC (Hereditary Nonpolyposis Colon Cancer), Peutz jeghars syndrome পরিবারে কারও যদি এসব সিনড্রোম থাকে, তাহলে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত অন্যদেরও। কারণ এ ক্ষেত্রে প্রায় ৭০-৮০ ভাগ সম্ভাবনা থাকে, অন্যদেরও পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার।

৯. বিকিরণে উন্মুক্ত হলে : অল্প বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হলে এবং বিকিরণ দিয়ে চিকিৎসা করা হলে। যেমন : লিম্ফোমার চিকিৎসায় বিকিরণ দিলে পরবর্তীকালে পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন।

পাকস্থলী ক্যানসারের উপসর্গ কী কী?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ উপসর্গগুলো হলো :

* রক্ত কমে যাওয়া।

* অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা।

* ক্ষুধামান্দ্য থাকতে পারে।

* বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া।

* বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

* পেটের ওপরের দিকে ব্যথা, যা সাধারণত খাবার খেলে বাড়ে।

* ওপর পেটে চাকা হওয়া, অতিরিক্ত দুর্গন্ধযুক্ত ও আলকাতরার মতো পায়খানা হওয়া।

এ ছাড়া ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে

* পেট ফুলে যাওয়া। পেটে পানি আসার কারণে।

* শ্বাসকষ্ট হওয়া। ফুসফুসের চারপাশে পানি জমার কারণে।

* মাথাব্যথা।

* মেরুদ্বণ্ডের হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।

শনাক্তকরণের পদ্ধতি : বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এন্ডোস্কপি বায়োপসি পরীক্ষার মাধ্যমে পাকস্থলীতে ক্যানসার ও তার ধরন জানা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সিটি গাইডেড বায়োপসি পরীক্ষার মাধ্যমে ও নির্ণয় করা হয়। রোগটি কতটুকু ছড়িয়েছে দেখার জন্য বুক ও পেটের সিটিস্ক্যান, পেট সিটিস্ক্যান পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া কিছু সাধারণ রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম ও টিউমার মার্কার পরীক্ষা করা হয়।

আসুন জেনে নিই চিকিৎসা কী কী?

চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে–

* কেমোথেরাপি

* রেডিওথেরাপি

* সার্জারি

* টার্গেটেড থেরাপি

* ইমিউনোথেরাপি

এমনিতেই এবং চিকিৎসা চলাকালে অবস্থায়ও একজন পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত ব্যক্তির তীব্র অপুষ্টিজনিত ওজনহীনতা দেখা দিতে পারে। সুতরাং তার শরীরের পুষ্টি ঠিক রাখতে বিকল্প পন্থায় খাওয়ার জন্য অনেক সময় সার্জারি করা হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগীদের অল্প অল্প করে বারবার খাবার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

প্রতিরোধের উপায় কী কী?

উপরোক্ত ঝুঁকিগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতি ঠিক রাখতে হবে। যাদের পলিপের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে, তারা নিয়মিত স্ক্রিনিং করবে ও কিছু ওষুধ আছে, যা খেলে পলিপ অনেকাংশে দূর হয়ে যায় এবং পাকস্থলীর ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

পাকস্থলীর ক্যানসার খুবই আগ্রাসী একটা ক্যানসার। এর ভয়াবহতা থেকে মুক্ত থাকতে হলে সচেতন হতে হবে। গ্যাসের সমস্যা মনে করে লক্ষণগুলো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না, বরং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কারণ উদঘাটন প্রাথমিক অবস্থায় করতে পারলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।

ফলাফল : পাঁচ বছর বাঁচার সম্ভাবনা–

স্টেজ ১ – ৮০%

স্টেজ ২ – ৫০%

স্টেজ ৩ – ২০%

স্টেজ ৪ < ১০%

কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে ঢাকায় বিক্রি, ৩ নারী গ্রেপ্তার

সাব-জেলে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা, সরকারের কাছে যে আহ্বান জানালেন ব্যারিস্টার আরমান

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত