সিজনাল জ্বর ইনফ্লুয়েঞ্জা

ডা. মো. কামরুজ্জামান কামরুল
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৯

ইনফ্লুয়েঞ্জা হলো একটি ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মৌসুমি মহামারি সৃষ্টি করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

* কারণ

• Influenza virus

• টাইপ A → সবচেয়ে গুরুতর, মহামারি ঘটায় (Pandemic)

• টাইপ B → মৌসুমি সংক্রমণ, সাধারণত হালকা

• টাইপ C → খুব হালকা সংক্রমণ, মহামারি ঘটায় না

* সংক্রমণ

• কাশি, হাঁচি, কথা বলার সময় droplet infection

• সংক্রমিত পৃষ্ঠ বা হাত → মুখ/নাক/চোখে গেলে

• ইনকিউবেশন পিরিয়ড। সাধারণত এক থেকে চার দিন

বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) সংক্রমণের পরিসংখ্যান ও বিস্তৃতি-সংক্রান্ত epidemiology-র কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে উপস্থাপন করা হলো—

* ঋতুগত ধরন

• IEDCR ও icddr,b-এর ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিচালিত মানব হাসপাতাল-ভিত্তিক জাতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ তত্ত্বাবধান (surveillance) অনুযায়ী, ইনফ্লুয়েঞ্জা সারা বছরই ছড়িয়ে থাকে। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

• আরো গভীর বিশ্লেষণে (২০১০–২০১৯), জুন থেকে জুলাই হলো সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময়।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য তুলনামূলক গবেষণায়ও দেখা যায়, জুন থেকে অক্টোবর মূল ফ্লু সিজন, যেখানে বাংলাদেশে >৬০% সংক্রমণ জুন-নভেম্বর মাসে হয় ।

নজরদারি ব্যবস্থা ও নীতিকাঠামো

• ২০০৭ সালে icddr,b ও IEDCR CDC ও WHO-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশে হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরদারি সিস্টেম চালু করে। পরে এটি ৯-১০টি টারশিয়ারি ও জেলা হাসপাতালজুড়ে বিস্তৃত করে।

• IEDCR বাংলাদেশে National Influenza Centre (NIC) হিসেবে কাজ করে, গ্লোবাল Influenza Surveillance and Response System (GISRS)-এ তথ্য পাঠায় এবং vaccine strain নির্ধারণে অবদান রাখে।

• কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি’র সংক্রমণ নজরদারি ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল। এর ফলে ২০২০ সালে দ্রুত A(H3N2) ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত ও তা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল।

* ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ

• হঠাৎ জ্বর (৩৮°–৪০°C)

• শুকনো কাশি

• গলাব্যথা, নাক বন্ধ বা সর্দি

• মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, প্রচণ্ড দুর্বলতা

• শিশুদের ক্ষেত্রে বমি/ডায়রিয়া হতে পারে

* বেশি ঝুঁকিতে কারা?

• শিশু (বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সিরা)

• বয়স্ক (যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি)

• গর্ভবতী নারী

• ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, হাঁপানি রোগী

• দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষ

* জটিলতা

• নিউমোনিয়া (secondary bacterial infection)

• ব্রঙ্কাইটিস

• অ্যাজমা বৃদ্ধি

• হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি

• শিশু ও বয়স্কদের মৃত্যুঝুঁকি

* চিকিৎসা

• সাধারণত Supportive Care

• বিশ্রাম

• তরল জিনিস বেশি খাওয়া

• জ্বর/ব্যথায় প্যারাসিটামল

• অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (যেমন Oseltamivir, Zanamivir) → ঝুঁকিপূর্ণ রোগী বা গুরুতর সংক্রমণে

• প্রয়োজনে অক্সিজেন ও হাসপাতালে ভর্তি

* প্রতিরোধ

• বার্ষিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন (সবচেয়ে কার্যকর)

• নিয়মিত হাত ধোয়া

• কাশি/হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখা

• অসুস্থ হলে ভিড় এড়িয়ে চলা

• স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম

* প্রস্তাবিত টিকা কখন নিতে হবে?

• বিপুল তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে ফ্লু টিকা নেওয়ার সর্বোচ্চ সুবিধা হবে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে, যাতে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মৌসুমে সুরক্ষা থাকে।

  • বিশেষভাবে বয়স্ক, স্বাস্থ্যকর্মী ও দীর্ঘস্থায়ী (chronically ill) রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে।

* শেষ কথা

ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি মৌসুমি ভাইরাস সংক্রমণ, যা অনেক ক্ষেত্রে হালকা হলেও গুরুতর জটিলতা ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ভ্যাকসিন ও সচেতনতা এ রোগ প্রতিরোধের মূল উপায়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, পালমনোলজি বিভাগ

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত