ইনফ্লুয়েঞ্জা হলো একটি ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং মৌসুমি মহামারি সৃষ্টি করতে পারে।
* কারণ
• Influenza virus
• টাইপ A → সবচেয়ে গুরুতর, মহামারি ঘটায় (Pandemic)
• টাইপ B → মৌসুমি সংক্রমণ, সাধারণত হালকা
• টাইপ C → খুব হালকা সংক্রমণ, মহামারি ঘটায় না
* সংক্রমণ
• কাশি, হাঁচি, কথা বলার সময় droplet infection
• সংক্রমিত পৃষ্ঠ বা হাত → মুখ/নাক/চোখে গেলে
• ইনকিউবেশন পিরিয়ড। সাধারণত এক থেকে চার দিন
বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) সংক্রমণের পরিসংখ্যান ও বিস্তৃতি-সংক্রান্ত epidemiology-র কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে উপস্থাপন করা হলো—
* ঋতুগত ধরন
• IEDCR ও icddr,b-এর ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিচালিত মানব হাসপাতাল-ভিত্তিক জাতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ তত্ত্বাবধান (surveillance) অনুযায়ী, ইনফ্লুয়েঞ্জা সারা বছরই ছড়িয়ে থাকে। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
• আরো গভীর বিশ্লেষণে (২০১০–২০১৯), জুন থেকে জুলাই হলো সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময়।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য তুলনামূলক গবেষণায়ও দেখা যায়, জুন থেকে অক্টোবর মূল ফ্লু সিজন, যেখানে বাংলাদেশে >৬০% সংক্রমণ জুন-নভেম্বর মাসে হয় ।
নজরদারি ব্যবস্থা ও নীতিকাঠামো
• ২০০৭ সালে icddr,b ও IEDCR CDC ও WHO-এর সহযোগিতায় বাংলাদেশে হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরদারি সিস্টেম চালু করে। পরে এটি ৯-১০টি টারশিয়ারি ও জেলা হাসপাতালজুড়ে বিস্তৃত করে।
• IEDCR বাংলাদেশে National Influenza Centre (NIC) হিসেবে কাজ করে, গ্লোবাল Influenza Surveillance and Response System (GISRS)-এ তথ্য পাঠায় এবং vaccine strain নির্ধারণে অবদান রাখে।
• কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বি’র সংক্রমণ নজরদারি ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল। এর ফলে ২০২০ সালে দ্রুত A(H3N2) ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শনাক্ত ও তা সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল।
* ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ
• হঠাৎ জ্বর (৩৮°–৪০°C)
• শুকনো কাশি
• গলাব্যথা, নাক বন্ধ বা সর্দি
• মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, প্রচণ্ড দুর্বলতা
• শিশুদের ক্ষেত্রে বমি/ডায়রিয়া হতে পারে
* বেশি ঝুঁকিতে কারা?
• শিশু (বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সিরা)
• বয়স্ক (যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি)
• গর্ভবতী নারী
• ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, হাঁপানি রোগী
• দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষ
* জটিলতা
• নিউমোনিয়া (secondary bacterial infection)
• ব্রঙ্কাইটিস
• অ্যাজমা বৃদ্ধি
• হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি
• শিশু ও বয়স্কদের মৃত্যুঝুঁকি
* চিকিৎসা
• সাধারণত Supportive Care
• বিশ্রাম
• তরল জিনিস বেশি খাওয়া
• জ্বর/ব্যথায় প্যারাসিটামল
• অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ (যেমন Oseltamivir, Zanamivir) → ঝুঁকিপূর্ণ রোগী বা গুরুতর সংক্রমণে
• প্রয়োজনে অক্সিজেন ও হাসপাতালে ভর্তি
* প্রতিরোধ
• বার্ষিক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন (সবচেয়ে কার্যকর)
• নিয়মিত হাত ধোয়া
• কাশি/হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখা
• অসুস্থ হলে ভিড় এড়িয়ে চলা
• স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম
* প্রস্তাবিত টিকা কখন নিতে হবে?
• বিপুল তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে ফ্লু টিকা নেওয়ার সর্বোচ্চ সুবিধা হবে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে, যাতে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মৌসুমে সুরক্ষা থাকে।
- বিশেষভাবে বয়স্ক, স্বাস্থ্যকর্মী ও দীর্ঘস্থায়ী (chronically ill) রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে।
* শেষ কথা
ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি মৌসুমি ভাইরাস সংক্রমণ, যা অনেক ক্ষেত্রে হালকা হলেও গুরুতর জটিলতা ও মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ভ্যাকসিন ও সচেতনতা এ রোগ প্রতিরোধের মূল উপায়।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, পালমনোলজি বিভাগ
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

