দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব ও কার্যকারিতা

রিফাত রহমান
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ০৮: ০০

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence – AI) একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিপ্লবী প্রযুক্তি, যা উৎপাদন, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় গভীর পরিবর্তন আনছে। বৈশ্বিকভাবে উন্নত রাষ্ট্রগুলো ইতোমধ্যে এআই প্রযুক্তির সুনির্দিষ্ট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো, জনসেবা ও গবেষণা কার্যক্রমে দ্রুততা ও নির্ভুলতা অর্জন করছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে এআই-এর গুরুত্ব বহুমাত্রিক। আমাদের জনসংখ্যা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং প্রশাসনিক জটিলতার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হতে পারে একটি পরিবর্তনের হাতিয়ার, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরের পথে সহায়ক হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এআই-এর গুরুত্ব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে

সরকারি নথিপত্র পরিচালনা, নাগরিক আবেদন মূল্যায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কিংবা ভূমি রেকর্ড হালনাগাদের মতো কাজগুলোয় স্বয়ংক্রিয় ও ডেটাভিত্তিক বিশ্লেষণ ব্যবস্থার প্রয়োজন। এআই এসব কাজে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে, ফলে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে বৈশ্বিক চাকরির বাজারের উপযোগী করে তোলা সম্ভব। Data Science, Machine Learning, Robotics—এসব খাতে দক্ষতা তৈরি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ রপ্তানিযোগ্য মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পারে। এআইনির্ভর সমাধান, যেমন কৃষিতে ড্রোন পর্যবেক্ষণ, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সেন্সরভিত্তিক সিস্টেম, বা স্বাস্থ্যসেবায় চ্যাটবট—সবকিছুই একবার স্থাপন করলে সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর ও অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হয়।

এআই প্রয়োগক্ষেত্রে দেশে সম্ভাবনা

রিমোট এলাকায় চিকিৎসক-স্বল্পতা সমাধানে চ্যাটবট ও ইমেজ অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। স্বাস্থ্য ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে রোগের প্রাদুর্ভাব আগেভাগে শনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। জমির ধরন অনুযায়ী ফসল নির্বাচন, বৃষ্টিপাত বা রোগের পূর্বাভাস, অটোমেটেড সেচ ও সার প্রয়োগ ব্যবস্থায় এআই ব্যবহার করে কৃষকের খরচ কমিয়ে লাভ বাড়ানো সম্ভব। শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স অনুযায়ী কনটেন্ট সাজানো (Adaptive Learning), ভাষাভিত্তিক চ্যাটবট দিয়ে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা সহায়তা, অটোমেটেড পরীক্ষামূলক মূল্যায়ন ও অগ্রগতির ট্র্যাকিং, এআইভিত্তিক স্মার্ট ট্রাফিক লাইট, রাইড-শেয়ারিং অপ্টিমাইজেশন, দুর্ঘটনার পূর্বাভাস ও সড়ক পরিকল্পনা বিশ্লেষণ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস পূর্বাভাস, স্যাটেলাইট ডেটা ও সেন্সরের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির আগাম ধারণা, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার নির্ভুল শনাক্তকরণ, বিশাল সরকারি ডেটা বিশ্লেষণ করে নীতিনির্ধারণ, দুর্নীতির প্রবণতার পূর্বাভাস, নাগরিক অভিযোগ ও সেবার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করা যায়।

কিছু বড় চ্যালেঞ্জ

  • পর্যাপ্ত গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেটের ঘাটতি
  • নীতিমালার অভাব, বিশেষ করে ডেটা গোপনীয়তা ও নৈতিক ব্যবহারের ক্ষেত্র
  • ভাষাভিত্তিক সীমাবদ্ধতা, কারণ অধিকাংশ এআই মডেল ইংরেজিভিত্তিক
  • গ্রামীণ অঞ্চলে ডিজিটাল অবকাঠামোর দুর্বলতা

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একাডেমিয়া, সরকার ও প্রযুক্তিশিল্পের মধ্যে কার্যকর অংশীদারত্ব প্রয়োজন।

বাংলাদেশের মতো একটি উচ্চ জনসংখ্যা ও দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনীতির দেশে এআই শুধু একটি প্রযুক্তিগত বিকল্প নয়, বরং একটি রূপান্তরকারী শক্তি। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হতে পারে দেশের টেকসই উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত