ডিজেল, বিদ্যুৎ ও ব্যাটারিতে চলে যে ট্রেন

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১৭: ২২
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৯

ইতালির রেল যোগাযোগ পরিবেশবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইউরোপের আঞ্চলিক পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে, ইতালির টাস্কানি অঞ্চলে এখনই সেটা দেখার সুযোগ রয়েছে। সেখানে হিটাচি কোম্পানির ব্যাটারিচালিত ‘ব্লুস' ট্রেন চালানো হচ্ছে।

ইউরোপের আঞ্চলিক পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে, ইতালির টাস্কানি অঞ্চলে এখনই সেটা দেখার সুযোগ রয়েছে। সেখানে হিটাচি কোম্পানির ব্যাটারিচালিত ‘ব্লুস' ট্রেন চালানো হচ্ছে। কোম্পানির প্রতিনিধি মার্কো সাকি বলেন, ইতালির উত্তরে হিটাচি কোম্পানির পিস্টোরিয়ার কারখানায় ব্লুস ট্রেন তৈরি করা হয়। জাপানে কোম্পানির সদর দপ্তরের সহায়তায় সেখানেই এই ট্রেন সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইঞ্জিনিয়ার মার্কো সাকি ও তার টিম করোনা মহামারির সময়ে পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছিলেন। এখনো পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ট্রেন লাইনে নামানো হয়েছে৷ মার্কোর মতে, ব্যাটারি ও ডিজেলের মেলবন্ধনই ছিল মূল চ্যালেঞ্জ। প্রচলিত ডিজেল ট্রেন তৈরি করা তেমন কঠিন কাজ নয়৷ ডিজেলের পাশাপাশি ব্যাটারি চালু করে জ্বালানির ব্যবহার কমানোই ছিল যাকে বলে ‘ডিসরাপটিভ' প্রযুক্তি।

প্রতিটি কামরায় দুটি করে ব্যাটারি বসানো আছে। ফলে প্রচলিত ডিজেল ট্রেনের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কম জ্বালানি ব্যবহার করা হয়৷ ট্রেন চলার সময়েই ব্যাটারি চার্জ করা যায়। এমনকি ইলেকট্রিক গাড়ির মতো ব্রেক থেকে পাওয়া শক্তিও সেই কাজে লাগানো হয়।

লাইনের যে সব অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে, সেখানে ওভারহেড তার থেকে শক্তি আসে। এখনো ডিজেল ইঞ্জিনের প্রয়োজন থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে ট্রেন পুরোপুরি সেই জ্বালানি ছাড়াই চলবে। হিটাচি রেলের কর্মকর্তা লুকা দাকিলা বলেন, সম্ভবত ২০৩০ সালে হয় পুরোপুরি ব্যাটারিচালিত, অথবা হাইব্রিড প্রযুক্তির প্রায় ৩,০০০ নতুন ট্রেন বাজারে আসবে৷ আমাদের কাছে হাইব্রিড সমাধানসূত্র রয়েছে। এবার আমরা বছরখানেকের মধ্যেই পুরোপুরি ব্যাটারিচালিত ট্রেন বাজারে আনবো। যে সব এলাকায় ইলেকট্রিক লাইন নেই, সেখানকার চাহিদা মেটাতে এটা এক ‘স্মার্ট' জবাব হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বিশেষ করে টাস্কানির মতো ইউরোপের গ্রামাঞ্চলে ওভারহেড ইলেকট্রিক তারের অভাব রয়েছে৷ রেল নেটওয়ার্কের বৈদ্যুতিকরণ বেশ ব্যয়বহুল কাজ৷ তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে এমন উদ্যোগের আর্থিক সার্থকতা নেই।

ফ্রোরেন্স শহর থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে বর্জো সান লোরেন্সো নামের টাসকানির ছোট গ্রাম অবস্থিত৷ সেখানকার বেশিরভাগ ট্রেন বিকট শব্দ ও পরিবেশ দূষণ করে৷ কিন্তু কয়েক মাস আগে নতুন ট্রেনগুলি স্টেশনে ঢোকা ও বের হবার সময় ডিজেল ইঞ্জিন বন্ধ করে দিচ্ছে।

এই ট্রেনগুলি যে আরো পরিবেশবান্ধব, টাস্কানির মানুষ সে বিষয়েও সচেতন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় গত বছরের শরৎ কালেই সেই অঞ্চলে বিশাল বন্যা দেখা গেছে। লুকা দাকিলা বলেন, আমাদের মতে, দূষণ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে মাঝারি মেয়াদে ব্যাটারিই সেরা উপায়৷ আমরা জানি, আমাদের প্রতিযোগীরা অন্যান্য সমাধানসূত্রের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে। আমরা খুশিমনে পাল্লা দিতে প্রস্তুত৷ হাইড্রোজেনের মতো কিছু সমাধানসূত্র নিয়ে আমরা জাপানে পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছি।

ব্যাটারির সুবিধা হলো, প্রচলিত ট্রেনেই সেগুলি বসানো যায়। ইন্টারসিটি ট্রেনগুলি অদূর ভবিষ্যতেই ব্যাটারি ব্যবহার করতে চলেছে৷ সেটা উড়ালের বিকল্পও বটে।

শুধু টাস্কানি অঞ্চলে হিটাচি কোম্পানিই নয়, জার্মানির সিমেন্স এবং ফ্রান্সের আলস্তোম এই নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। গোটা ইউরোপে এমন ধরনের ট্রেন দেখতে বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত