কম্পিউটারের জন্য কোনটা ভালো : SSD না HDD

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৪৬

কম্পিউটারের পারফরম্যান্স, গতি ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। প্রসেসর, র‍্যাম, গ্রাফিকস কার্ডের মতো উপাদানের পাশাপাশি স্টোরেজ ড্রাইভও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমান যুগে স্টোরেজের দুনিয়া মূলত দুই ভাগে বিভক্ত HDD (Hard Disk Drive) এবং SSD (Solid State Drive)। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোনটি ব্যবহার করলে আপনার কম্পিউটার দীর্ঘদিন ভালো পারফরম্যান্স দেবে এবং টেকসই থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের জানতে হবে এই দুই ধরনের ড্রাইভের গঠন, কার্যপ্রণালি এবং বাস্তব ব্যবহারের পার্থক্যগুলো।

প্রথমেই আসি ঐতিহ্যবাহী হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ বা HDD-এর কথায়। এটি অনেকটা ছোট আকারের ঘূর্ণনশীল ডিস্কের মতো। যেখানে একটি চুম্বকীয় প্লাটারে তথ্য সংরক্ষিত হয় এবং একটি মেকানিক্যাল হেড সেই তথ্য পড়া ও লেখা করে। অর্থাৎ HDD একটি মেকানিক্যাল ডিভাইস। যেখানে ঘূর্ণন, স্পিন এবং চলমান অংশ রয়েছে। এর সুবিধা হলো, তুলনামূলকভাবে সস্তা দামে বেশি স্টোরেজ পাওয়া যায়। যেমন : একই দামে ১ টেরাবাইটের SSD-এর বদলে ৪ টেরাবাইটের HDD কেনা সম্ভব। তাই বড় ডেটা সংরক্ষণ, ব্যাকআপ বা সার্ভার ব্যবহারে HDD এখনো জনপ্রিয়।

বিজ্ঞাপন

তবে সমস্যাটাও এখানেই। যেহেতু HDD-তে চলমান যান্ত্রিক অংশ রয়েছে। তাই তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হতে শুরু করে। ধুলো, ঝাঁকুনি, অতিরিক্ত তাপ বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে HDD সহজেই নষ্ট হতে পারে। অনেক সময় পড়ে যাওয়ার ধাক্কায় হার্ডড্রাইভের প্লাটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পুরো ডেটাই অচল হয়ে যায়। গতির দিক থেকেও HDD তুলনামূলক ধীর। যেখানে SSD বুট হতে কয়েক সেকেন্ড লাগে। সেখানে HDD-তে সময় লাগে কয়েক গুণ বেশি।

অন্যদিকে, SSD সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এখানে কোনো ঘূর্ণনশীল ডিস্ক বা মেকানিক্যাল হেড নেই। বরং তথ্য সংরক্ষিত হয় ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপে। যেমনটা আমরা পেনড্রাইভ বা স্মার্টফোনে দেখি। ফলে এটি অনেক দ্রুত, হালকা ও শক্তি সাশ্রয়ী। কম্পিউটার অন করার মুহূর্তেই SSD কাজ শুরু করে। সফটওয়্যার লোড হয় ঝটপট এবং সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া গতি চোখে পড়ার মতো।

স্থায়িত্বের দিক থেকেও SSD অনেক এগিয়ে। যেহেতু এতে কোনো মুভিং পার্ট নেই। তাই পড়ে যাওয়া বা ঝাঁকুনিতে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। দীর্ঘ সময় ব্যবহারের পরও পারফরম্যান্স প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। এছাড়া SSD তাপ কম উৎপন্ন করে। ফলে পিসির অন্যান্য হার্ডওয়্যারের ওপর চাপ কম পড়ে, যা পুরো সিস্টেমের আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে দেয়।

তবে SSD-এর একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো দাম। প্রতি গিগাবাইটে SSD এখনো HDD-এর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি দামি। ফলে যারা বিশাল পরিমাণ ডেটা সংরক্ষণ করতে চান। তাদের জন্য শুধু SSD ব্যবহার করা কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে। আবার SSD-এর Write Cycle সীমিত। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা লেখার পর এটি ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে শুরু করে। যদিও আধুনিক SSD-তে এই সীমা এত বেশি যে, সাধারণ ব্যবহারকারীর পক্ষে তা ছোঁয়া প্রায় অসম্ভব।

অনেকে এখন দুটি ড্রাইভ একসঙ্গে ব্যবহার করছেন। অপারেটিং সিস্টেম ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টল করা হচ্ছে SSD-তে। আর বড় ডেটা, ভিডিও বা ব্যাকআপ রাখা হচ্ছে HDD-তে। এভাবে গতি ও স্টোরেজ দুটোই পাওয়া যায়, খরচও থাকে নিয়ন্ত্রণে।

সবদিক বিচার করলে বলা যায়। কম্পিউটার দীর্ঘদিন ভালো রাখতে SSD-ই সবচেয়ে উপযোগী। এটি গতি বাড়ায়, ঝুঁকি কমায় এবং ডিভাইসকে ঠান্ডা রাখে। তবে যাদের বড় ডেটা সংরক্ষণের প্রয়োজন, তারা চাইলে SSD ও HDD দুটোর মিশ্র ব্যবহার করতে পারেন। যাকে বলে ‘হাইব্রিড সেটআপ’।

এক কথায়, HDD হলো বড় গুদামঘর আর SSD হলো দ্রুতগামী হাইওয়ে। বড় গুদাম দরকার, কিন্তু দ্রুত চলাচলও গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, নিজের প্রয়োজন ও ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী সঠিক ভারসাম্য বজায় রেখে ড্রাইভ নির্বাচন করা। কারণ আজকের দিনে কম্পিউটার শুধু একটি যন্ত্র নয়। এটি আমাদের সময়, কাজ ও সৃষ্টিশীলতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর সেই সৃষ্টিশীলতাকে ধরে রাখতে চাইলে, সঠিক ড্রাইভ বেছে নেওয়াই প্রথম পদক্ষেপ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত