বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায় উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পে তীব্র ঝাঁকুনিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা কেঁপে ওঠার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরও তিনবার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে।
আর মোট চারটি ভূমিকম্পের মধ্যে তিনটিরই উৎপত্তিস্থল হলো ঢাকার কাছেই নরসিংদী জেলার দুটি উপজেলা আর একটির উৎপত্তিস্থল খোদ রাজধানী ঢাকারই বাড্ডা এলাকা বলে জানায় বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল হলো ঢাকা থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে নরসিংদীর জেলার মাধবদী উপজেলায় মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে।
এটিকে বাংলাদেশে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হিসেবে বর্ণনা করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগও। এর তীব্র ঝাঁকুনিতে দেশজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিলো এবং বিভিন্ন জায়গায় মারা গেছে অন্তত দশ জন।
আবহাওয়া বিভাগ প্রথমে এটিকে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার উল্লেখ করলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ইউএসজিএসকে উদ্ধৃত করে ভূমিকম্পটি ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ছিলো বলে ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে।
এরপর শনিবার সকালে আবারও যে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিলো ৩ দশমিক ৩, যার উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলারই পলাশ উপজেলা।
ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া বিভাগ বলছে, এর একটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদী আর অন্যটির উৎপত্তিস্থল ঢাকার বাড্ডা।
এর মধ্যে বাড্ডার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে, যার মাত্রা ছিলো রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৭। আর এক সেকেন্ডের মধ্যেই আরেকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল নরসিংদী। রিখটার স্কেলে এটির মাত্রা ছিলো ৪ দশমিক ৩।
কী ইঙ্গিত দিচ্ছে এসব ভূমিকম্প
বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকটনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে- পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তরদিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার শনিবারই বলেছিলেন যে, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশান জোনের তৈরি হয়েছে।
এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে, বলেন তিনি ।
তার মতে, এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিলো। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুললো বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে ।
মাধবদীর ভূমিকম্পের পর ঘটনাস্থল ঘুরে এসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন।
তার মতে, একটি ভূমিকম্পের পর এ ধরনের শক স্বাভাবিক এবং মাধবদী ভূমিকম্পের পর যে তিনটি 'আফটারশক' হয়েছে তার মাত্রা ছিলো আগের দিনের ভূমিকম্পের চেয়ে কম।
কোনো একটি জায়গায় ভূমিকম্প হলে স্বভাবতই পরে কয়েক মিনিটি, ঘণ্টা বা দিনের মধ্যে ছোটো ছোটো বা অল্প শক্তি সম্পন্ন কম্পন অনুভূত হয়। যে ফল্ট থেকে প্রথম ভূমিকম্প হয়েছে সেখানে এডজাস্টমেন্টের জন্য হওয়া এসব ছোটো কম্পনগুলো বোঝাচ্ছে যে সেখানে স্টেবল কন্ডিশনে আসতেছে, বলেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে তার ২৯০ দিনের মধ্যে ৫০ কিলোমিটার রেডিয়াসের মধ্যে ওই মাত্রার নীচের ভূমিকম্প হলে সেগুলো হবে ওই ভূমিকম্পের আফটারশক।
আবার এর তিন বছরের মধ্যে ১১০ কিলোমিটার রেডিয়াসের মধ্যে ৮ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে তখন আগেরগুলো হবে ফোরশক (বড় ভূমিকম্পের আগে হওয়া ছোটো ভূ কম্পন)।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

