মোহনা জাহ্নবী
নাইমা খাতুন। স্কুলে যাওয়ার বয়স থেকেই তাকে লড়াই করতে হয়েছে জীবনের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে। অনেক ঝড় পেরিয়ে আলোর মশাল হয়ে জ্বলে উঠেছেন তিনি। সাফ গেমস ও সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সিলভার পদকজয়ী এবং বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে কারাতে দ্বিতীয় ড্যান অর্জনের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এই নারীকে নিয়ে লিখেছেন মোহনা জাহ্নবী
সংগ্রামের গল্প
তিন কন্যাসন্তানের মধ্যে নাইমা দ্বিতীয়। তার বয়স যখন মাত্র ১২ বছর, তখন তার বাবা অন্যত্র বিয়ে করে, বাড়িঘর বিক্রি করে চলে যান। যাদের কাছে বাড়ি বিক্রি করেছিলেন, তারা নাইমাদের বের করে দেয়। বাধ্য হয়ে সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন নাইমার মা। সেই পরিবারের অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। পড়াশোনা না-জানা নাইমার মা জীবন-জীবিকার জন্য জুট মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। নাইমা বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার বয়স থেকেই সংসারে অভাব দেখে এসেছি। কিন্তু কখনো মাকে হারতে দেখিনি, শুধু লড়তে দেখেছি অভাব আর সমাজের নিষ্ঠুর বাস্তবতার সঙ্গে। মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি কীভাবে লড়তে হয়, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে হয়।’
ঘরে-বাইরে সব জায়গায় পরিশ্রম করতে করতে নাইমার মা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যেতেন। কিন্তু অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা চিকিৎসা নিতে পারতেন না। এদিকে তিনি কাজে না যেতে পারলে টাকাও আসতো না। তাই অনেক সময় তাদের না খেয়ে থাকতে হতো। মায়ের কষ্ট দেখে তাকে সহযোগিতা করার জন্য ছোট বয়সেই দর্জির দোকানে কাজ করতে শুরু করেন নাইমা। শার্ট, ব্লাউজ ইত্যাদিতে বোতাম লাগানো, হেম করা এসব কাজ করে সপ্তাহে ১০০ টাকা করে পেতেন তিনি। ছোট হওয়ার দরুন তেমন কিছু করতে পারতেন না, কিন্তু সেই কঠিন সময়ে মায়ের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাই ছিল সবচেয়ে বড় কাজ।
তার মায়ের ইচ্ছে ছিল মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর। তাই কষ্ট করে হলেও মেয়েদের পড়াতেন। নাইমা পায়ে হেঁটে দূরের স্কুলে যাতায়াত করতেন। স্কুল থেকে ফিরে যতটা সম্ভব বাড়ির কাজ করে, আবার দর্জি দোকানের জমানো কাজ করতেন রাত জেগে।
স্বপ্ন দেখার শুরু
স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে মার্শাল আর্ট শেখাতে দেখতেন নাইমা। তার আগ্রহ তৈরি হলে তিনি মাকে জানান। এরপর সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ভালোভাবে কারাতে শিখলে ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় পদক অর্জন করতে পারলে আনসার অথবা আর্মিতে চাকরি পাওয়া যাবে। এ কথা শুনে আশার আলো দেখতে পান নাইমা। কিন্তু খরচের কথা ভেবে ঘাবড়ে যান। ঠিক তখনই তার এক বন্ধু তাকে ‘বাংলাদেশ ইয়াং কিং কারাতে সেন্টার’-এর খোঁজ দেন, যেখানে এতিম, গরিব এবং আদিবাসী ছেলেমেয়েদের কারাতে শিখতে কোনো টাকা পয়সা খরচ হয় না। ব্যস্, নাইমা লেগে পড়লেন কারাতে শিখতে আর নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে।
বন্ধুর পথ
অর্থাভাবে নাইমাকে সব জায়গায় যেতে হতো পায়ে হেঁটে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ত। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, সাইকেল চালানো শিখবেন। কারাতে ও সাইকেল চালানো নিয়ে তাকে সমাজ থেকে অনেক বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। সাইকেল চালানোর সময় ছেলেরা তার পিছু নিতো, খারাপ কথা বলত। কিছু মানুষ বলত, ‘এসব শিখিয়ে লাভ হবে না, এগুলো না শিখিয়ে বিয়ে দিয়ে দাও, পরে বিয়ে হবে না।’
এসএসসি পাস করে পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হন নাইমা। ততদিনে সেলাইয়ের কাজ তার আয়ত্তে, পাশাপাশি পার্লারের কাজ শিখে পার্টটাইম কাজ করতে শুরু করেন পার্লারে। না হলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হয়তো সম্ভব হতো না।
পলিটেকনিক থেকে কিছু টাকা পেয়ে একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে ইউটিউব দেখে হ্যান্ড পেইন্টিং শিখতে শুরু করেন। নানা ধরনের কাজের চাপে নিয়মিত অনুশীলন না করায় পিছিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বাধ্য হয়ে পার্লারের কাজ ছেড়ে দিয়ে অনুশীলনে মনোযোগ দেন।
নাইমা বলেন, ‘কারাতে প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের জন্য আমাকে প্রায়ই ঢাকায় যাতায়াত করতে হতো। এটা নিয়েও তখন এলাকায় নোংরা আলাপ শুরু হলো, এমনকি আমাদের একঘরে করে দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হলো। আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশীরা কথা বলত না, এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলে আমাদের দাওয়াত করত না।’
আলোর দেখা
এত কিছুর পরও নাইমা মেনোবল হারাননি। জেলাপর্যায়ে ভালো ফলাফল করে ন্যাশনালে চান্স পান। ২০১৬ সালের সেই আসরে তিনি হেরে যান। পরেরবার ২০১৮ সালে ন্যাশনালে খেলে সিলভার পদক অর্জন করেন । ২০১৯-এ সাফ গেমসে খেলার সুযোগ পেয়ে সেখানেও সিলভার পদক পান। একই বছর সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক পান। এরপর তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় । বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ আনসার থেকে চাকরির অফার পান। তিনি বাংলাদেশ আনসারকে বেছে নেন, কারণ সেখানে চাকরির পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করা এবং পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ আছে।
আনসারে ঢোকার পর খেলাধুলায় আরো ভালো ফলাফল করতে থাকেন নাইমা। চাকরি হওয়ার সুবাদে পরিবারের পুরো দায়িত্বও নিয়ে নেন। তত দিনে তার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ হলেও বিএসসিতে আর ভর্তি হননি, সংসার চালানোর প্রয়োজনে। ২০২২ সালে সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দুটো সিলভার পদক পান এই অদম্য নারী এবং ২০২৩ সালে অর্জন করেন কারাতের দ্বিতীয় ড্যান।
নাইমা বলেন, ‘আমি এখন আনসারের চাকরি করার পাশাপাশি যে ক্লাবে কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম, সেই ক্লাবে মহিলা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। যে সংগঠন আমাকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে কাজ করে আমার মতো অনেক নাইমাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করতে চাই। পাশাপাশি আমি একজন উদ্যোক্তা হয়েও উঠেছি, অতীতে যেসব কাজ শিখেছিলাম সেগুলো নিয়ে ।’
সম্প্রতি রাঁধুনি কীর্তিমতী সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ পান এই হার-না-মানা নারী।
শেষ কথা
দৃঢ়চেতা এই সাহসী নারী আরো বলেন, ‘যে মানুষগুলো আমাকে উপহাস করত, ছোট করত, তাদের কাছে আমি এখন উদাহরণ হয়ে গেছি। তারা এখন নিজেদের ছেলেমেয়েকে আমার কাছে আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠায়। ভাবতে খুব অবাক লাগে, যে মানুষগুলো আমাকে এত নিগ্রহ করেছে, আজ তারা আমাকে খুব ভালোবাসে, সম্মান করে। আমার মাকে এখন এলাকার লোকেরা বলে, আমাদের ছেলেসন্তান হয়েও আমাদের জন্য যা করতে পারেনি, তোমার মেয়ে তার থেকে অনেক বেশি কিছু করে দেখিয়েছে। এই সফলতা আসার পর ২০২৩ সালে আমার বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতেও আমার কারাতে করা নিয়ে আপত্তি ছিল, কিন্তু জীবনসঙ্গী আমার লড়াইকে এবং আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে, ভালোবাসে, যার ফলে এখন ধীরে ধীরে পরিবারের অন্যরাও আমার খেলাধুলা ও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তারা এখন আমাকে সমর্থন করে এবং গর্ববোধ করে।’
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা জানিয়ে এই মার্শাল আর্টিস্ট সবশেষে বলেন, ‘দেশের পতাকা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পেরে আমি গর্বিত। আমার প্রথম কোচ সেন্সি মো. ফরমান আলী, আনসারের কোচ সেন্সি জসীম এবং জাপানি কোচ সিহান কিতাম্বুরা তেতসিরোসহ যারা আমাকে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রত্যেককে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ। তাদের এই ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না, কিন্তু দেশের জন্য খেলে ভবিষ্যতে আরো পদক নিয়ে এসে তাদেরকে ও প্রিয় স্বদেশকে উপহার দিতে চাই।’
নাইমা খাতুন। স্কুলে যাওয়ার বয়স থেকেই তাকে লড়াই করতে হয়েছে জীবনের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে। অনেক ঝড় পেরিয়ে আলোর মশাল হয়ে জ্বলে উঠেছেন তিনি। সাফ গেমস ও সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সিলভার পদকজয়ী এবং বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে কারাতে দ্বিতীয় ড্যান অর্জনের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী এই নারীকে নিয়ে লিখেছেন মোহনা জাহ্নবী
সংগ্রামের গল্প
তিন কন্যাসন্তানের মধ্যে নাইমা দ্বিতীয়। তার বয়স যখন মাত্র ১২ বছর, তখন তার বাবা অন্যত্র বিয়ে করে, বাড়িঘর বিক্রি করে চলে যান। যাদের কাছে বাড়ি বিক্রি করেছিলেন, তারা নাইমাদের বের করে দেয়। বাধ্য হয়ে সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন নাইমার মা। সেই পরিবারের অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। পড়াশোনা না-জানা নাইমার মা জীবন-জীবিকার জন্য জুট মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। নাইমা বলেন, ‘স্কুলে যাওয়ার বয়স থেকেই সংসারে অভাব দেখে এসেছি। কিন্তু কখনো মাকে হারতে দেখিনি, শুধু লড়তে দেখেছি অভাব আর সমাজের নিষ্ঠুর বাস্তবতার সঙ্গে। মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি কীভাবে লড়তে হয়, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে হয়।’
ঘরে-বাইরে সব জায়গায় পরিশ্রম করতে করতে নাইমার মা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যেতেন। কিন্তু অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা চিকিৎসা নিতে পারতেন না। এদিকে তিনি কাজে না যেতে পারলে টাকাও আসতো না। তাই অনেক সময় তাদের না খেয়ে থাকতে হতো। মায়ের কষ্ট দেখে তাকে সহযোগিতা করার জন্য ছোট বয়সেই দর্জির দোকানে কাজ করতে শুরু করেন নাইমা। শার্ট, ব্লাউজ ইত্যাদিতে বোতাম লাগানো, হেম করা এসব কাজ করে সপ্তাহে ১০০ টাকা করে পেতেন তিনি। ছোট হওয়ার দরুন তেমন কিছু করতে পারতেন না, কিন্তু সেই কঠিন সময়ে মায়ের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টাই ছিল সবচেয়ে বড় কাজ।
তার মায়ের ইচ্ছে ছিল মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর। তাই কষ্ট করে হলেও মেয়েদের পড়াতেন। নাইমা পায়ে হেঁটে দূরের স্কুলে যাতায়াত করতেন। স্কুল থেকে ফিরে যতটা সম্ভব বাড়ির কাজ করে, আবার দর্জি দোকানের জমানো কাজ করতেন রাত জেগে।
স্বপ্ন দেখার শুরু
স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশে মার্শাল আর্ট শেখাতে দেখতেন নাইমা। তার আগ্রহ তৈরি হলে তিনি মাকে জানান। এরপর সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ভালোভাবে কারাতে শিখলে ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় পদক অর্জন করতে পারলে আনসার অথবা আর্মিতে চাকরি পাওয়া যাবে। এ কথা শুনে আশার আলো দেখতে পান নাইমা। কিন্তু খরচের কথা ভেবে ঘাবড়ে যান। ঠিক তখনই তার এক বন্ধু তাকে ‘বাংলাদেশ ইয়াং কিং কারাতে সেন্টার’-এর খোঁজ দেন, যেখানে এতিম, গরিব এবং আদিবাসী ছেলেমেয়েদের কারাতে শিখতে কোনো টাকা পয়সা খরচ হয় না। ব্যস্, নাইমা লেগে পড়লেন কারাতে শিখতে আর নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে।
বন্ধুর পথ
অর্থাভাবে নাইমাকে সব জায়গায় যেতে হতো পায়ে হেঁটে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ত। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, সাইকেল চালানো শিখবেন। কারাতে ও সাইকেল চালানো নিয়ে তাকে সমাজ থেকে অনেক বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। সাইকেল চালানোর সময় ছেলেরা তার পিছু নিতো, খারাপ কথা বলত। কিছু মানুষ বলত, ‘এসব শিখিয়ে লাভ হবে না, এগুলো না শিখিয়ে বিয়ে দিয়ে দাও, পরে বিয়ে হবে না।’
এসএসসি পাস করে পলিটেকনিক্যালে ভর্তি হন নাইমা। ততদিনে সেলাইয়ের কাজ তার আয়ত্তে, পাশাপাশি পার্লারের কাজ শিখে পার্টটাইম কাজ করতে শুরু করেন পার্লারে। না হলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া হয়তো সম্ভব হতো না।
পলিটেকনিক থেকে কিছু টাকা পেয়ে একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে ইউটিউব দেখে হ্যান্ড পেইন্টিং শিখতে শুরু করেন। নানা ধরনের কাজের চাপে নিয়মিত অনুশীলন না করায় পিছিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বাধ্য হয়ে পার্লারের কাজ ছেড়ে দিয়ে অনুশীলনে মনোযোগ দেন।
নাইমা বলেন, ‘কারাতে প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের জন্য আমাকে প্রায়ই ঢাকায় যাতায়াত করতে হতো। এটা নিয়েও তখন এলাকায় নোংরা আলাপ শুরু হলো, এমনকি আমাদের একঘরে করে দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হলো। আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশীরা কথা বলত না, এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলে আমাদের দাওয়াত করত না।’
আলোর দেখা
এত কিছুর পরও নাইমা মেনোবল হারাননি। জেলাপর্যায়ে ভালো ফলাফল করে ন্যাশনালে চান্স পান। ২০১৬ সালের সেই আসরে তিনি হেরে যান। পরেরবার ২০১৮ সালে ন্যাশনালে খেলে সিলভার পদক অর্জন করেন । ২০১৯-এ সাফ গেমসে খেলার সুযোগ পেয়ে সেখানেও সিলভার পদক পান। একই বছর সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক পান। এরপর তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় । বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ আনসার থেকে চাকরির অফার পান। তিনি বাংলাদেশ আনসারকে বেছে নেন, কারণ সেখানে চাকরির পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করা এবং পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ আছে।
আনসারে ঢোকার পর খেলাধুলায় আরো ভালো ফলাফল করতে থাকেন নাইমা। চাকরি হওয়ার সুবাদে পরিবারের পুরো দায়িত্বও নিয়ে নেন। তত দিনে তার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ হলেও বিএসসিতে আর ভর্তি হননি, সংসার চালানোর প্রয়োজনে। ২০২২ সালে সাউথ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দুটো সিলভার পদক পান এই অদম্য নারী এবং ২০২৩ সালে অর্জন করেন কারাতের দ্বিতীয় ড্যান।
নাইমা বলেন, ‘আমি এখন আনসারের চাকরি করার পাশাপাশি যে ক্লাবে কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম, সেই ক্লাবে মহিলা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। যে সংগঠন আমাকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে কাজ করে আমার মতো অনেক নাইমাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করতে চাই। পাশাপাশি আমি একজন উদ্যোক্তা হয়েও উঠেছি, অতীতে যেসব কাজ শিখেছিলাম সেগুলো নিয়ে ।’
সম্প্রতি রাঁধুনি কীর্তিমতী সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ পান এই হার-না-মানা নারী।
শেষ কথা
দৃঢ়চেতা এই সাহসী নারী আরো বলেন, ‘যে মানুষগুলো আমাকে উপহাস করত, ছোট করত, তাদের কাছে আমি এখন উদাহরণ হয়ে গেছি। তারা এখন নিজেদের ছেলেমেয়েকে আমার কাছে আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠায়। ভাবতে খুব অবাক লাগে, যে মানুষগুলো আমাকে এত নিগ্রহ করেছে, আজ তারা আমাকে খুব ভালোবাসে, সম্মান করে। আমার মাকে এখন এলাকার লোকেরা বলে, আমাদের ছেলেসন্তান হয়েও আমাদের জন্য যা করতে পারেনি, তোমার মেয়ে তার থেকে অনেক বেশি কিছু করে দেখিয়েছে। এই সফলতা আসার পর ২০২৩ সালে আমার বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতেও আমার কারাতে করা নিয়ে আপত্তি ছিল, কিন্তু জীবনসঙ্গী আমার লড়াইকে এবং আমাকে যথেষ্ট সম্মান করে, ভালোবাসে, যার ফলে এখন ধীরে ধীরে পরিবারের অন্যরাও আমার খেলাধুলা ও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তারা এখন আমাকে সমর্থন করে এবং গর্ববোধ করে।’
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা জানিয়ে এই মার্শাল আর্টিস্ট সবশেষে বলেন, ‘দেশের পতাকা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পেরে আমি গর্বিত। আমার প্রথম কোচ সেন্সি মো. ফরমান আলী, আনসারের কোচ সেন্সি জসীম এবং জাপানি কোচ সিহান কিতাম্বুরা তেতসিরোসহ যারা আমাকে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রত্যেককে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ। তাদের এই ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না, কিন্তু দেশের জন্য খেলে ভবিষ্যতে আরো পদক নিয়ে এসে তাদেরকে ও প্রিয় স্বদেশকে উপহার দিতে চাই।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেছেন, ছাত্রদল নেতা ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—কেউ যেন আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ বেরিয়ে না যায়।
২২ মিনিট আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোরকা ও পর্দাশীল নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।
১ ঘণ্টা আগেসমাবেশে জোবায়েদের সহপাঠী সজল খান বলেন, “পুলিশ এখনো বর্ষার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। শুধু বর্ষা ও মাহির নয়, এই ঘটনায় বর্ষার পরিবারও জড়িত। গতকাল আদালতে আমাদের সঙ্গে পুলিশের আচরণ ছিল অমানবিক। আমাদের এক বান্ধবী ভিডিও করতে গেলে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।”
১ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ আইনের মামলায় বুয়েটের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জামিনের বিষয়ে অধিকতর শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন বিচার
২ ঘণ্টা আগে