আরিফুন নেছা সুখী
‘মা’ একটি অক্ষর, একটি বর্ণ, একটি শব্দ। যদি বলি মা মানে একটি পৃথিবী, একটি বিশ্ব, একটি জগৎ—ভুল হবে না এতটুকু। কেননা ঠিকই তো জন্মের আগে একটি শিশুর বসবাস, বেড়ে ওঠা, সে তো মায়ের জঠরেই। তাহলে মা কেন পৃথিবী নয়, বিশ্ব নয়, নয় জগৎ। ‘মা’ এমনই একটি শব্দ, যার কোনো বিশেষণ লাগে না, যাকে বলে একাই একশ। সেই মায়ের জন্য বিশ্বজুড়ে নির্ধারণ করা হয়েছে একটিমাত্র দিন, যা মোটেই জুতসই নয়। নিদেনপক্ষে অন্তত সাত দিন ধরে মা দিবস পালিত হওয়া উচিত, থাক না একটা দিন বিশেষভাবে। মা দিবস পালিত হোক পুরো মে মাস জুড়ে।
বছরের পুরোটা সময়জুড়ে অপেক্ষায় থাকি—কবে আসবে মা দিবস। ডায়েরির পাতাজুড়ে লিখি, ‘মা, তোমাকে মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে, ভীষণ মনে পড়ে।’ মা আমার স্বর্গলোকের বাসিন্দা। তাই বলে কি আমার বা আমার মতো মা-হারাদের মা দিবস থাকবে না? অবশ্যই না। মায়ের জন্য হৃদয় খুলে দোয়া করব। আর দুচোখ বন্ধ করে স্বপ্নে মায়ের কোলে মাথা রেখে হারিয়ে যাব স্বপ্নলোকে।
সকালবেলা ঘুম ভাঙল মোবাইলের শব্দে। চোখ মেলে দেখি বোনের মেয়ে আফসানার মেসেজ; লিখেছে, ‘আম্মু, তোমাকে খুব ভালোবাসি।’ ও আমাকে ছোটবেলা থেকেই ‘আম্মু’ বলে ডাকে। আর ওর মা মানে আমার বড় বোনকে ডাকে ‘মা’ বলে। মায়ের জন্য সে নিজ হাতে গিফট কার্ড তৈরি করেছে। সপ্তম শ্রেণির আফসানা এভাবেই পালন করবে এবারের মা দিবস।
মায়ের জন্য একটা সুদৃশ্য মগ কিনেছে হলিক্রস কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বিলকিছ। তার সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, তার বাবা নেই, মা-ই তার পৃথিবী। সে মাকে খুব ভালোবাসে। মা মোগলাই খেতে পছন্দ করেন, তাই মায়ের জন্য মোগলাই কিনবে। আর এই মগটা দেবে, মা খুব খুশি হবেন।
আঁখি সিটি কলেজের বিবিএর ছাত্রী। সে মায়ের জন্য শাড়ি কিনেছে। আঁখি মনে করে, মা দিবস কয়েক দিনব্যাপী হওয়া উচিত। আর বিশ্বে প্রায় সব দেশেই রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই বিশেষ দিনগুলো রোববার নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের জন্য একটু সমস্যা, কেননা রোববার অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজ খোলা থাকে। ইচ্ছা থাকলেও মাকে সময় দেওয়া যায় না, আমার ভাইয়া যেমন আসতে পারেনি। ও মানিকগঞ্জে চাকরি করে। তাই মা দিবস শুক্রবার হওয়া উচিত। আমাদেরটা আমাদের মতো হবে।
‘মা দিবস’ মানে অনেকে মনে করেন, একদিন মা দিবস পালন করা। একটু কেমন আদেখলেপনা। মা দিবস, এটা আবার কী কথা? কিন্তু সত্যি কি মা দিবস থাকা উচিত নয়। ময়না ইডেন কলেজের ভূগোলের ছাত্রী। তিনি জানান, অবশ্যই মা দিবস থাকা উচিত; অন্তত একটি দিন মায়ের জন্য বরাদ্দ—মাকে নিয়ে দুটো কথা বলা, মায়ের জন্য কিছু কেনা। এই দিনটা একটা উৎসব। মা দিবসে ফ্যাশন হাউসগুলো বিশেষ আয়োজন করে। মায়েদের নিয়ে বিভিন্ন গিফট কার্ড ও মগ তৈরি করা হয়, যা সত্যি অসাধারণ। মা দিবস যুগ যুগ ধরে থাকবে এবং এর প্রসার দিন দিন বাড়বে।
বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্পের ছাত্র গাজী মুনছুর আজিজ মা দিবসের কথা উঠতেই বললেন, আমার মা তেমন শিক্ষিত নন। ঘড়ির ব্যবহার জানেন না। তবুও তিনি আমার পরীক্ষার সময় প্রতিদিন ভোরবেলা ঠিক ৫টার সময় ডেকে দিতেন, এক মিনিটও এদিক-ওদিক হতো না। চা বানিয়ে দিতেন, মুড়ি মাখিয়ে দিতেন। আমার সঙ্গে তিনিও জেগে থাকতেন। আবার আমার পরীক্ষার দিনে মা রোজা রাখতেন। এই আমার মা। আমি প্রতি বছর মা দিবসে মাকে নিজ হাতে তৈরি করা উপহার দিই, সঙ্গে শাড়ি কিনে দিই। মা দিবসে সবারই উচিত মায়ের কাছে থাকার চেষ্টা করা। তাই এই দিনটা সরকারি ছুটি ঘোষণা করলে আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠত।
‘মাকে কখনো বলা হয়নি—মা, তোমাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি। মা দিবস সেই সুযোগটা তৈরি করে দেয়,’ বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিহাব। তার মতে, মাকে মনে করা, মাকে উপলব্ধি করা, মাকে শুভেচ্ছা জানানো, মাকে সরি বলা—সব মিলিয়ে শুধুই মা। মনটা আনমনে গেয়ে ওঠে—‘মা, আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল/ সকলই ফুরায়ে যায় মা...।’ সবকিছু শেষ হয়ে যায়, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা অনিঃশেষ, নিঃস্বার্থ। তাই তো একজন প্রতিবন্ধী শিশুকেও কতটা মমতায় আপন করে নেন মা। গানের ভাষায়—‘ল্যাংড়া আঁতুড় কানা খোঁড়া হলে পরে ছেলে/ অঞ্চলে ধুলা মুছাইয়া টান দিয়া নেয় কোলে...।’ মা যেন একটা সমুদ্র। তাকে দেখে শেষ হয় না, চোখ জুড়িয়ে যায় মায়ের মুখের দিকে চেয়ে—মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে...। কিন্তু বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে আমরা হয়ে উঠি অতি নির্মম। ব্যস্ততার অজুহাতে ভুলে যাই মাকে। ‘কেমন আছ’ জিজ্ঞেস করা হয় না। স্বামী-স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখসঙ্গে মেতে থাকি। ভুলে যাই মা আমার খোলা আকাশে চেয়ে তারা গোনেন—রাত যায় দিন যায়, ছেলে-মেয়ে তার কাছে আসে না।
কুমার বিশ্বজিৎ গেয়েছেন—‘তুমি কত লিটার দুধ করেছ পান/ মা জননীর/ এক বাটি দুধ হাতে নিয়ে/ মা জননীর কাছে গিয়ে/ কখনো কি বলিয়াছ/ মাগো আপনি খান...।’ সত্যি বলা হয়নি, বা বলা হয়ে ওঠে না। মা তো আমারই, তাকে আবার নতুন করে আয়োজন করে বলতে হবে, ‘মা আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ কিন্তু বললে ক্ষতি কিছু তো নেই। মায়ের কোলে মাথা রাখলে মা যদি আপনার কপালে চুমু দেন, আপনি কেন মায়ের কপালে দেবেন না।
হিমশীতল ঠান্ডা শরীরটায় হাত দিয়েই চমকে উঠে বলি, ‘মায়ের না জ্বর, তাই থার্মোমিটার পাঠালাম; মায়ের শরীরটা এত ঠান্ডা কেন? এরপর আর কিছু বলতে পারিনি। এক টুকরো পাথরের মতো বসে থেকেছি মায়ের শরীরের পাশে, মা আমার কোনো কথা বলেননি।
ঠিক মাস খানেক আগে যেদিন মা ঢাকায় গেলেন, সেদিনও কিছু বলে যাননি আমাকে। আমি ছিলাম হোস্টেলে, চলছিল ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা। কিছুই জানানো হয়নি আমাকে। বিকালবেলা হঠাৎ করে কান্নায় ভেঙে পড়ি আমি। বারবার বলতে থাকি, মায়ের কাছে যাব। সন্ধ্যায় আব্বা আসেন আমাকে দেখতে। আব্বাকে জড়িয়ে ধরেও একইভাবে কাঁদতে থাকি। আব্বা তো পুরো অবাক, কী এমন হলো মেয়ের! আমি বারবার বলতে থাকি, আমি মায়ের কাছে যাব। তখন আব্বা বলেন, তোমার মাকে তো ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আমার আর মায়ের সঙ্গে দেখা হবে না। আব্বা বোঝান, তোমার মায়ের চিকিৎসা হয়ে গেলেই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু মন বলছিল, আমার আর মায়ের সঙ্গে দেখা হবে না। সত্যি সত্যি আর দেখা হয়নি। এই অসাড় দেহটার সঙ্গে দেখা হওয়াটাকে কি দেখা হওয়া বলে! মা একবার মোবাইলে আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। অভিমানী আমি কথা বলিনি তার সঙ্গে। ভেবেছিলাম, বাড়ি ফিরলে গলা জড়িয়ে ধরে সব কথা বলব; কিন্তু তা আর হলো কই? তুমি এলে ওপারের বাসিন্দা হয়ে। তোমার আর আমার মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব। মাগো, আজও বড্ড জানতে ইচ্ছে করে—কী বলতে চেয়েছিলে তুমি? জানি বলতে, ‘লক্ষ্মী হয়ে থাকিস, মা আমার। ভাইবোনের কথা শুনিস আর কারো ওপর রাগ করিস না।’ বলো মা, তুমি কি ঠিক এই কথাগুলোই বলতে না! জানা কথা, তবুও বারবার আফসোস হয়—কেন আমি তোমার কথাগুলো শুনলাম না। এভাবে বলছিলেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্রী বেবী।
আমরা অনেকেই মায়ের কথা শুনি না। মাকে কষ্ট দিই। কিন্তু মা ছাড়া যে আমাদের জন্মই হতো না, সে কথা ভুলে যাই অবলীলায়। ব্যস্ত হয়ে উঠি নিজের মতো। একটু বড় হলেই মাকে বলি, ‘তুমি কী বোঝ?’ সত্যি কি মা কিছুই বোঝেন না। কিন্তু আমরা যখন ছোট্ট ছিলাম, কথা বলতে বা হাঁটতে পারতাম না, তখন মা বুঝতেন অনেক কিছু। কেউ যদি কোনো দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কীভাবে বোঝেন ওর খিদে পেয়েছে?’ একগাল হাসি দিয়ে তখন সেই মা বলেন, ‘মা হলে সব বোঝা যায়।’ সত্যি মা আর সন্তানের সম্পর্ক সে যে বিনে সুতার মালা। সন্তান মায়েরই একাংশ। মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন। তাই তো সন্তানের কোনো বিপদ-আপদ হলে মা আগে জানতে পারেন। পৃথিবীর মা জাতির প্রতি রইল সশ্রদ্ধ সালাম।
‘মা’ একটি অক্ষর, একটি বর্ণ, একটি শব্দ। যদি বলি মা মানে একটি পৃথিবী, একটি বিশ্ব, একটি জগৎ—ভুল হবে না এতটুকু। কেননা ঠিকই তো জন্মের আগে একটি শিশুর বসবাস, বেড়ে ওঠা, সে তো মায়ের জঠরেই। তাহলে মা কেন পৃথিবী নয়, বিশ্ব নয়, নয় জগৎ। ‘মা’ এমনই একটি শব্দ, যার কোনো বিশেষণ লাগে না, যাকে বলে একাই একশ। সেই মায়ের জন্য বিশ্বজুড়ে নির্ধারণ করা হয়েছে একটিমাত্র দিন, যা মোটেই জুতসই নয়। নিদেনপক্ষে অন্তত সাত দিন ধরে মা দিবস পালিত হওয়া উচিত, থাক না একটা দিন বিশেষভাবে। মা দিবস পালিত হোক পুরো মে মাস জুড়ে।
বছরের পুরোটা সময়জুড়ে অপেক্ষায় থাকি—কবে আসবে মা দিবস। ডায়েরির পাতাজুড়ে লিখি, ‘মা, তোমাকে মনে পড়ে, খুব মনে পড়ে, ভীষণ মনে পড়ে।’ মা আমার স্বর্গলোকের বাসিন্দা। তাই বলে কি আমার বা আমার মতো মা-হারাদের মা দিবস থাকবে না? অবশ্যই না। মায়ের জন্য হৃদয় খুলে দোয়া করব। আর দুচোখ বন্ধ করে স্বপ্নে মায়ের কোলে মাথা রেখে হারিয়ে যাব স্বপ্নলোকে।
সকালবেলা ঘুম ভাঙল মোবাইলের শব্দে। চোখ মেলে দেখি বোনের মেয়ে আফসানার মেসেজ; লিখেছে, ‘আম্মু, তোমাকে খুব ভালোবাসি।’ ও আমাকে ছোটবেলা থেকেই ‘আম্মু’ বলে ডাকে। আর ওর মা মানে আমার বড় বোনকে ডাকে ‘মা’ বলে। মায়ের জন্য সে নিজ হাতে গিফট কার্ড তৈরি করেছে। সপ্তম শ্রেণির আফসানা এভাবেই পালন করবে এবারের মা দিবস।
মায়ের জন্য একটা সুদৃশ্য মগ কিনেছে হলিক্রস কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বিলকিছ। তার সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, তার বাবা নেই, মা-ই তার পৃথিবী। সে মাকে খুব ভালোবাসে। মা মোগলাই খেতে পছন্দ করেন, তাই মায়ের জন্য মোগলাই কিনবে। আর এই মগটা দেবে, মা খুব খুশি হবেন।
আঁখি সিটি কলেজের বিবিএর ছাত্রী। সে মায়ের জন্য শাড়ি কিনেছে। আঁখি মনে করে, মা দিবস কয়েক দিনব্যাপী হওয়া উচিত। আর বিশ্বে প্রায় সব দেশেই রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তাই বিশেষ দিনগুলো রোববার নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের জন্য একটু সমস্যা, কেননা রোববার অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজ খোলা থাকে। ইচ্ছা থাকলেও মাকে সময় দেওয়া যায় না, আমার ভাইয়া যেমন আসতে পারেনি। ও মানিকগঞ্জে চাকরি করে। তাই মা দিবস শুক্রবার হওয়া উচিত। আমাদেরটা আমাদের মতো হবে।
‘মা দিবস’ মানে অনেকে মনে করেন, একদিন মা দিবস পালন করা। একটু কেমন আদেখলেপনা। মা দিবস, এটা আবার কী কথা? কিন্তু সত্যি কি মা দিবস থাকা উচিত নয়। ময়না ইডেন কলেজের ভূগোলের ছাত্রী। তিনি জানান, অবশ্যই মা দিবস থাকা উচিত; অন্তত একটি দিন মায়ের জন্য বরাদ্দ—মাকে নিয়ে দুটো কথা বলা, মায়ের জন্য কিছু কেনা। এই দিনটা একটা উৎসব। মা দিবসে ফ্যাশন হাউসগুলো বিশেষ আয়োজন করে। মায়েদের নিয়ে বিভিন্ন গিফট কার্ড ও মগ তৈরি করা হয়, যা সত্যি অসাধারণ। মা দিবস যুগ যুগ ধরে থাকবে এবং এর প্রসার দিন দিন বাড়বে।
বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্পের ছাত্র গাজী মুনছুর আজিজ মা দিবসের কথা উঠতেই বললেন, আমার মা তেমন শিক্ষিত নন। ঘড়ির ব্যবহার জানেন না। তবুও তিনি আমার পরীক্ষার সময় প্রতিদিন ভোরবেলা ঠিক ৫টার সময় ডেকে দিতেন, এক মিনিটও এদিক-ওদিক হতো না। চা বানিয়ে দিতেন, মুড়ি মাখিয়ে দিতেন। আমার সঙ্গে তিনিও জেগে থাকতেন। আবার আমার পরীক্ষার দিনে মা রোজা রাখতেন। এই আমার মা। আমি প্রতি বছর মা দিবসে মাকে নিজ হাতে তৈরি করা উপহার দিই, সঙ্গে শাড়ি কিনে দিই। মা দিবসে সবারই উচিত মায়ের কাছে থাকার চেষ্টা করা। তাই এই দিনটা সরকারি ছুটি ঘোষণা করলে আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠত।
‘মাকে কখনো বলা হয়নি—মা, তোমাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি। মা দিবস সেই সুযোগটা তৈরি করে দেয়,’ বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিহাব। তার মতে, মাকে মনে করা, মাকে উপলব্ধি করা, মাকে শুভেচ্ছা জানানো, মাকে সরি বলা—সব মিলিয়ে শুধুই মা। মনটা আনমনে গেয়ে ওঠে—‘মা, আমার সাধ না মিটিল আশা না পুরিল/ সকলই ফুরায়ে যায় মা...।’ সবকিছু শেষ হয়ে যায়, কিন্তু মায়ের ভালোবাসা অনিঃশেষ, নিঃস্বার্থ। তাই তো একজন প্রতিবন্ধী শিশুকেও কতটা মমতায় আপন করে নেন মা। গানের ভাষায়—‘ল্যাংড়া আঁতুড় কানা খোঁড়া হলে পরে ছেলে/ অঞ্চলে ধুলা মুছাইয়া টান দিয়া নেয় কোলে...।’ মা যেন একটা সমুদ্র। তাকে দেখে শেষ হয় না, চোখ জুড়িয়ে যায় মায়ের মুখের দিকে চেয়ে—মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে...। কিন্তু বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে আমরা হয়ে উঠি অতি নির্মম। ব্যস্ততার অজুহাতে ভুলে যাই মাকে। ‘কেমন আছ’ জিজ্ঞেস করা হয় না। স্বামী-স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখসঙ্গে মেতে থাকি। ভুলে যাই মা আমার খোলা আকাশে চেয়ে তারা গোনেন—রাত যায় দিন যায়, ছেলে-মেয়ে তার কাছে আসে না।
কুমার বিশ্বজিৎ গেয়েছেন—‘তুমি কত লিটার দুধ করেছ পান/ মা জননীর/ এক বাটি দুধ হাতে নিয়ে/ মা জননীর কাছে গিয়ে/ কখনো কি বলিয়াছ/ মাগো আপনি খান...।’ সত্যি বলা হয়নি, বা বলা হয়ে ওঠে না। মা তো আমারই, তাকে আবার নতুন করে আয়োজন করে বলতে হবে, ‘মা আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ কিন্তু বললে ক্ষতি কিছু তো নেই। মায়ের কোলে মাথা রাখলে মা যদি আপনার কপালে চুমু দেন, আপনি কেন মায়ের কপালে দেবেন না।
হিমশীতল ঠান্ডা শরীরটায় হাত দিয়েই চমকে উঠে বলি, ‘মায়ের না জ্বর, তাই থার্মোমিটার পাঠালাম; মায়ের শরীরটা এত ঠান্ডা কেন? এরপর আর কিছু বলতে পারিনি। এক টুকরো পাথরের মতো বসে থেকেছি মায়ের শরীরের পাশে, মা আমার কোনো কথা বলেননি।
ঠিক মাস খানেক আগে যেদিন মা ঢাকায় গেলেন, সেদিনও কিছু বলে যাননি আমাকে। আমি ছিলাম হোস্টেলে, চলছিল ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা। কিছুই জানানো হয়নি আমাকে। বিকালবেলা হঠাৎ করে কান্নায় ভেঙে পড়ি আমি। বারবার বলতে থাকি, মায়ের কাছে যাব। সন্ধ্যায় আব্বা আসেন আমাকে দেখতে। আব্বাকে জড়িয়ে ধরেও একইভাবে কাঁদতে থাকি। আব্বা তো পুরো অবাক, কী এমন হলো মেয়ের! আমি বারবার বলতে থাকি, আমি মায়ের কাছে যাব। তখন আব্বা বলেন, তোমার মাকে তো ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আমার আর মায়ের সঙ্গে দেখা হবে না। আব্বা বোঝান, তোমার মায়ের চিকিৎসা হয়ে গেলেই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু মন বলছিল, আমার আর মায়ের সঙ্গে দেখা হবে না। সত্যি সত্যি আর দেখা হয়নি। এই অসাড় দেহটার সঙ্গে দেখা হওয়াটাকে কি দেখা হওয়া বলে! মা একবার মোবাইলে আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। অভিমানী আমি কথা বলিনি তার সঙ্গে। ভেবেছিলাম, বাড়ি ফিরলে গলা জড়িয়ে ধরে সব কথা বলব; কিন্তু তা আর হলো কই? তুমি এলে ওপারের বাসিন্দা হয়ে। তোমার আর আমার মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব। মাগো, আজও বড্ড জানতে ইচ্ছে করে—কী বলতে চেয়েছিলে তুমি? জানি বলতে, ‘লক্ষ্মী হয়ে থাকিস, মা আমার। ভাইবোনের কথা শুনিস আর কারো ওপর রাগ করিস না।’ বলো মা, তুমি কি ঠিক এই কথাগুলোই বলতে না! জানা কথা, তবুও বারবার আফসোস হয়—কেন আমি তোমার কথাগুলো শুনলাম না। এভাবে বলছিলেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্রী বেবী।
আমরা অনেকেই মায়ের কথা শুনি না। মাকে কষ্ট দিই। কিন্তু মা ছাড়া যে আমাদের জন্মই হতো না, সে কথা ভুলে যাই অবলীলায়। ব্যস্ত হয়ে উঠি নিজের মতো। একটু বড় হলেই মাকে বলি, ‘তুমি কী বোঝ?’ সত্যি কি মা কিছুই বোঝেন না। কিন্তু আমরা যখন ছোট্ট ছিলাম, কথা বলতে বা হাঁটতে পারতাম না, তখন মা বুঝতেন অনেক কিছু। কেউ যদি কোনো দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কীভাবে বোঝেন ওর খিদে পেয়েছে?’ একগাল হাসি দিয়ে তখন সেই মা বলেন, ‘মা হলে সব বোঝা যায়।’ সত্যি মা আর সন্তানের সম্পর্ক সে যে বিনে সুতার মালা। সন্তান মায়েরই একাংশ। মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন। তাই তো সন্তানের কোনো বিপদ-আপদ হলে মা আগে জানতে পারেন। পৃথিবীর মা জাতির প্রতি রইল সশ্রদ্ধ সালাম।
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় বিতর্ক সংগঠন জাবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটির কার্যনির্বাহী পর্ষদ নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া খাতুন এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইয়াসির আরাফাত।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হোটেল ও খাবারের দোকানগুলোয় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। খাবার নিম্নমানের হলেও দাম দিন দিন বাড়ছে। বেশি টাকা দিয়েও মানহীন খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
১১ ঘণ্টা আগেসাইবার সিকিউরিটি সম্মেলন ফিনিক্স সামিট ২০২৫ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শুরু হয় এই সম্মেলন। চলবে আগামী ২৪ মে পর্যন্ত।
১৩ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি গুগল এ সংস্করণটি পিক্সেল ইউজারদের জন্য উন্মুক্ত করেছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনগুলো ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে অনেকাংশেই উন্নত করবে।
১৬ ঘণ্টা আগে