ইংরেজি ভয় কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস গড়ার গল্প

মো. আশিকুর রহমান
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ১২: ১৩

সকালবেলা কলেজে ইংরেজি ক্লাস চলছে। শিক্ষিকা হঠাৎ বললেন, ‘Can you please introduce yourself in English?’ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মেয়ে রাবেয়া খাতুন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুখ দিয়ে শব্দই বের হলো না। পাশে বসা সহপাঠীরা ফিসফিস করে হাসছেন। কান লাল হয়ে উঠল লজ্জায়। ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনা তখন হয়তো অনেকের কাছে সাধারণ মনে হলেও রাবেয়ার কাছে ছিল জীবনের সবচেয়ে লজ্জার মুহূর্ত। তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন—আর নয়। ইংরেজিকে ভয় নয়, এবার শেখা শুরু করতেই হবে। এই হতাশার মধ্যেই তিনি ফেসবুকে খুঁজে পান ইংলিশ থেরাপি নামের একটি প্ল্যাটফরম। নিজের মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট ব্যবহার করে শুরু করেন শেখা। আজ সেই রাবেয়াই স্থানীয় এক এনজিওতে কমিউনিকেশন অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। এই এক রাবেয়ার গল্প নয়—বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন হাজারো তরুণ-তরুণীর জীবন বদলে দিচ্ছে ইংলিশ থেরাপি।

নতুন আশার নাম : ইংলিশ থেরাপি

২০১৮ সালে তরুণ প্রশিক্ষক সাইফুল ইসলাম শুরু করেন ইংলিশ থেরাপি। শুরুটা ছিল ছোট পরিসরে, কিন্তু আজ এটি হয়ে উঠেছে একটি জাতীয় পর্যায়ের ভাষা-উন্নয়ন উদ্যোগ। ৪৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সরাসরি এই প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে ইংরেজির ভয় কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন। আর ফ্রি অনলাইন কনটেন্ট ব্যবহার করেছেন এক কোটির বেশি মানুষ। শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও আজ এই প্ল্যাটফরমের সুবিধা পাচ্ছেন। ইংরেজিকে আর ভয় নয়—বরং শেখার সুযোগে রূপান্তর করছেন তারা।

ভাষা শেখা মানেই শুধু গ্রামার নয়

ইংলিশ থেরাপির বিশেষত্ব হচ্ছে—এখানে শুধু ইংরেজি শেখানো হয় না, শেখানো হয় কীভাবে ভয় কাটিয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে হয়। অনলাইন লাইভ ক্লাস, ভিডিও টিউটোরিয়াল, গ্রুপচর্চা আর অফলাইন সেশন—সব মিলিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজের গতিতে শিখতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে এবং ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস গড়তে পারে। শুধু মুখস্থভিত্তিক নয়—এখানে শেখানো হয় ভাবনায় ইংরেজি আনার কৌশল, যাতে বাস্তব জীবনে তা কাজে লাগে।

ভয়ের দেয়াল ভেঙে জীবন বদলে ফেলা

অনেকেই পেয়েছেন উচ্চ IELTS স্কোর, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স বা করপোরেট চাকরি। সবচেয়ে বড় অর্জন—ভয়ের জায়গা থেকে সাহসের জায়গায় পৌঁছানো। সিলেটের রফিকুল ইসলাম আগে নিজের নামটাও ঠিকমতো ইংরেজিতে বলতে পারতেন না। এখন তিনি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। ইংলিশ থেরাপির শেখানো স্পোকেন ইংলিশ আর প্রেজেন্টেশন স্কিলই তার ক্যারিয়ারে গতি এনেছে। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু ইংরেজি শেখাতে চাই না, আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষার্থী নিজের ওপর আস্থা রাখুক—ভাষা হোক তাদের সাহসের অস্ত্র।’

আজ যারা ইংলিশ থেরাপির শিক্ষার্থী, তারা শুধু ইংরেজি শেখেননি। তারা শিখেছেন কীভাবে নিজের ভয় কাটিয়ে সামনে এগোতে হয়, কীভাবে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হয়। রাবেয়ার মতো গল্প এখন হাজারো। ৪৫ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণী এর মধ্য দিয়ে নিজেদের জীবন বদলে ফেলেছেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখনো যাত্রা শুরু করেনি—তবে ইংলিশ থেরাপি তাদের সেই পথ দেখাচ্ছে। ইংরেজি আর ভয়ের ভাষা নয়—এখন এটি আত্মবিশ্বাসের দরজা।

বিষয়:

ইংরেজি
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত