রায়হান আহমেদ তামীম
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর মধ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে জেন-জিখ্যাত কিশোর প্রজন্ম। বিশ্ব অবাক হয়েছে বাংলাদেশে তারুণ্যের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দেখে। বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে তারা। যাদের আত্মদানে সৃষ্টি হয়েছে দেশের স্মরণীয় ইতিহাস তাদের কয়েকজনের কথা নিয়ে এবারের আয়োজন।
গোলাম নাফিজ: জন্ম ঢাকার মহাখালীতে। নাফিজ ছিলেন পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠতম। বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি (সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নৌবাহিনী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ফার্মগেট-খামারবাড়ী এলাকায় পৌঁছান। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪টায় গুলিবিদ্ধ হন। সহযোদ্ধারা তাকে রিকশায় তুলে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। নাফিজ তখন অচেতন হলেও জীবিত ছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রিকশাটি রাস্তায় বাধা দিলে তার হাসপাতালে যাওয়ার সময় বিলম্ব হয়। হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার ছবি ধারণ করেন চিত্রসাংবাদিক জীবন আহমেদ। যেখানে নাফিজ রিকশার পাদানিতে শোয়া, বাংলাদেশের পতাকা মাথার চারপাশে বাঁধা এবং বাহু ও পা ছড়ানো অবস্থায় ছিল। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। নাফিজের মৃত্যু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তোলে। নাফিজের স্মরণে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ একটি ভবনের নামকরণ করেছে। যে রিকশাটি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল, সেটিও জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে রাখা হয়েছে।
ফারহান ফাইয়াজ: ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় হলেও পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস করতেন। বাবা শহিদুল ইসলাম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত এবং মা ফারহানা দিবা আর ছোট বোন ফারিন। ১৮ জুলাই ধানমন্ডি এলাকায় আন্দোলনের সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়েন। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট বুকে ও মুখে আঘাত করে। হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং আন্দোলনকে আরও গতিশীল করে।
নাফিসা হোসেন: বাবা-মা বাধা দেবেন, এজন্য বাসায় না জানিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়েছিলেন নাফিসা হোসেন । ছিলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ফলাফল প্রকাশিত হয় মৃত্যুর পর, নাফিসা জিপিএ-৪.২৫ পেয়ে পাস করেন। নাফিসার বাবা আবুল হোসেন পেশায় চা-দোকানি। ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন টঙ্গীতে ভাড়া বাসায়। আর্থিক অনটনের কারণে বছর দুয়েক আগে মা কুয়েতে যান কাজ করতে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্মুখভাগে থেকে আন্দোলন করেছেন নাফিসা। শুরুতে তিনি উত্তরায় আন্দোলনে যোগ দেন। বাবা বিষয়টি জানতে পেরে নাফিসাকে নিষেধ করেন। মেয়ে যাতে আন্দোলনে না যায়, সেজন্য মামার বাড়িতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। নাফিসা চলে যান সাভারের বক্তার-পুর এলাকায় মামার বাড়িতে। সেখানেও আন্দোলনে যুক্ত হন। ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন নাফিসা । সহপাঠীরা উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে বাবা লাশ নিয়ে আসেন টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায়। রাতেই দাফন করা হয়। নাফিসার মৃত্যুর পর বাবা আবুল হোসেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকেন কবরের পাশে। মেয়ের প্রিয় জবা ফুল এনে জড়ো করেন । কখনও কখনও চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন তিনি।
শাহারিয়ার খান আনাস: পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া আদর্শ একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বাবা সাহরিয়া খান ব্যবসায়ী এবং মা সানজিদা খান দীপ্তি গৃহিণী। তিন সন্তানের মধ্যে আনাস ছিলেন সবার বড়। ছোট দুই ভাই পাঁচ বছর বয়সী সাফওয়ান ও দুই বছর বয়সী সুফিয়ান। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুরুতেই মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মায়ের কাছে মমস্পর্শী ভাষায় চিঠি লেখেন আনাস। এরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন। সেদিন দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হন আনাস। বুকে ও মাথায় তিনটি বুলেটের আঘাতে শাহাদাতবরণ করেন। ঢাকা মিটফোর্ড হসপিটালে লাশ পাওয়া যায় এবং জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুর পর তার লেখা চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন: মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার জন্ম ঢাকায়, পিতৃনিবাস কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানায়। বাবা মো. মহিউদ্দিন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ইয়ামিন ছোট। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ১৮ জুলাই দুপুরে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ইয়ামিন আহত হন এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নির্মমভাবে পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে সাধারণ মানুষ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আন্দোলনে তৈরি হয় নবজোয়ার। শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের স্মরণে সাভারের পাকিজা মোড়ে শহীদ ইয়ামিন চত্বর এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল গেটসংলগ্ন ফুট ওভারব্রিজের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ আসহাবুল ইয়ামিন ওভারব্রিজ’।
মাহামুদুর রহমান সৈকত: সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরিবারের স্নেহ ও ভালোবাসার পরিবেশে বেড়ে ওঠা সৈকত মা, বাবা ও দুই বোনের সঙ্গে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকতেন। আন্দোলনের সহিংসতার মধ্যে থাকা অন্য শিক্ষার্থীদের দুর্দশা তাকে মানসিকভাবে আহত করত। একপর্যায়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছে, আর আমি অথর্ব হয়ে বাসায় বসে আছি।’ ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে মিছিলে সৈকত নেতৃত্ব দেন। ছয় ফুটের বেশি উচ্চতার জন্য তিনি মিছিলের সামনের সারিতে দৃশ্যমান ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশের লক্ষ্যবস্তু হয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। মাহামুদুর রহমান সৈকতের স্মরণে সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরির নামকরণ করা হয় ‘শহীদ সৈকত স্মৃতি লাইব্রেরি’।
তাহমিদ ভুঁইয়া তামিম: নরসিংদীর নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। জন্ম নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে। তিন সন্তানের মধ্যে তাহমিদ বড়। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ১৮ জুলাই বিকালে তাহমিদ নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলাকালে রাবার বুলেটের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাহমিদের মৃত্যুর পর লাশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় পুলিশ আবার গুলি চালালে তাহমিদের লাশেও গুলি লাগে। এই নির্মম ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দেয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর মধ্যে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে জেন-জিখ্যাত কিশোর প্রজন্ম। বিশ্ব অবাক হয়েছে বাংলাদেশে তারুণ্যের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দেখে। বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছে তারা। যাদের আত্মদানে সৃষ্টি হয়েছে দেশের স্মরণীয় ইতিহাস তাদের কয়েকজনের কথা নিয়ে এবারের আয়োজন।
গোলাম নাফিজ: জন্ম ঢাকার মহাখালীতে। নাফিজ ছিলেন পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠতম। বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি (সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নৌবাহিনী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ফার্মগেট-খামারবাড়ী এলাকায় পৌঁছান। স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪টায় গুলিবিদ্ধ হন। সহযোদ্ধারা তাকে রিকশায় তুলে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। নাফিজ তখন অচেতন হলেও জীবিত ছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রিকশাটি রাস্তায় বাধা দিলে তার হাসপাতালে যাওয়ার সময় বিলম্ব হয়। হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার ছবি ধারণ করেন চিত্রসাংবাদিক জীবন আহমেদ। যেখানে নাফিজ রিকশার পাদানিতে শোয়া, বাংলাদেশের পতাকা মাথার চারপাশে বাঁধা এবং বাহু ও পা ছড়ানো অবস্থায় ছিল। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। নাফিজের মৃত্যু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তোলে। নাফিজের স্মরণে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ একটি ভবনের নামকরণ করেছে। যে রিকশাটি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল, সেটিও জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে রাখা হয়েছে।
ফারহান ফাইয়াজ: ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় হলেও পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস করতেন। বাবা শহিদুল ইসলাম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত এবং মা ফারহানা দিবা আর ছোট বোন ফারিন। ১৮ জুলাই ধানমন্ডি এলাকায় আন্দোলনের সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়েন। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট বুকে ও মুখে আঘাত করে। হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং আন্দোলনকে আরও গতিশীল করে।
নাফিসা হোসেন: বাবা-মা বাধা দেবেন, এজন্য বাসায় না জানিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়েছিলেন নাফিসা হোসেন । ছিলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ফলাফল প্রকাশিত হয় মৃত্যুর পর, নাফিসা জিপিএ-৪.২৫ পেয়ে পাস করেন। নাফিসার বাবা আবুল হোসেন পেশায় চা-দোকানি। ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন টঙ্গীতে ভাড়া বাসায়। আর্থিক অনটনের কারণে বছর দুয়েক আগে মা কুয়েতে যান কাজ করতে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্মুখভাগে থেকে আন্দোলন করেছেন নাফিসা। শুরুতে তিনি উত্তরায় আন্দোলনে যোগ দেন। বাবা বিষয়টি জানতে পেরে নাফিসাকে নিষেধ করেন। মেয়ে যাতে আন্দোলনে না যায়, সেজন্য মামার বাড়িতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। নাফিসা চলে যান সাভারের বক্তার-পুর এলাকায় মামার বাড়িতে। সেখানেও আন্দোলনে যুক্ত হন। ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন নাফিসা । সহপাঠীরা উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে বাবা লাশ নিয়ে আসেন টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকায়। রাতেই দাফন করা হয়। নাফিসার মৃত্যুর পর বাবা আবুল হোসেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকেন কবরের পাশে। মেয়ের প্রিয় জবা ফুল এনে জড়ো করেন । কখনও কখনও চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন তিনি।
শাহারিয়ার খান আনাস: পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া আদর্শ একাডেমির দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বাবা সাহরিয়া খান ব্যবসায়ী এবং মা সানজিদা খান দীপ্তি গৃহিণী। তিন সন্তানের মধ্যে আনাস ছিলেন সবার বড়। ছোট দুই ভাই পাঁচ বছর বয়সী সাফওয়ান ও দুই বছর বয়সী সুফিয়ান। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুরুতেই মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট মায়ের কাছে মমস্পর্শী ভাষায় চিঠি লেখেন আনাস। এরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন চানখারপুল এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন। সেদিন দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হন আনাস। বুকে ও মাথায় তিনটি বুলেটের আঘাতে শাহাদাতবরণ করেন। ঢাকা মিটফোর্ড হসপিটালে লাশ পাওয়া যায় এবং জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুর পর তার লেখা চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন: মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার জন্ম ঢাকায়, পিতৃনিবাস কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানায়। বাবা মো. মহিউদ্দিন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ইয়ামিন ছোট। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ১৮ জুলাই দুপুরে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ইয়ামিন আহত হন এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নির্মমভাবে পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে সাধারণ মানুষ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। আন্দোলনে তৈরি হয় নবজোয়ার। শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনের স্মরণে সাভারের পাকিজা মোড়ে শহীদ ইয়ামিন চত্বর এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল গেটসংলগ্ন ফুট ওভারব্রিজের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ আসহাবুল ইয়ামিন ওভারব্রিজ’।
মাহামুদুর রহমান সৈকত: সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরিবারের স্নেহ ও ভালোবাসার পরিবেশে বেড়ে ওঠা সৈকত মা, বাবা ও দুই বোনের সঙ্গে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকতেন। আন্দোলনের সহিংসতার মধ্যে থাকা অন্য শিক্ষার্থীদের দুর্দশা তাকে মানসিকভাবে আহত করত। একপর্যায়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছে, আর আমি অথর্ব হয়ে বাসায় বসে আছি।’ ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে মিছিলে সৈকত নেতৃত্ব দেন। ছয় ফুটের বেশি উচ্চতার জন্য তিনি মিছিলের সামনের সারিতে দৃশ্যমান ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশের লক্ষ্যবস্তু হয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। মাহামুদুর রহমান সৈকতের স্মরণে সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের লাইব্রেরির নামকরণ করা হয় ‘শহীদ সৈকত স্মৃতি লাইব্রেরি’।
তাহমিদ ভুঁইয়া তামিম: নরসিংদীর নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। জন্ম নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামে। তিন সন্তানের মধ্যে তাহমিদ বড়। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ১৮ জুলাই বিকালে তাহমিদ নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলাকালে রাবার বুলেটের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাহমিদের মৃত্যুর পর লাশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় পুলিশ আবার গুলি চালালে তাহমিদের লাশেও গুলি লাগে। এই নির্মম ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের জন্ম দেয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের পর স্থগিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আগামী ২৭ অক্টোবর পালিত হবে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
৫ ঘণ্টা আগে১৮৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী দিন। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এক রোগীর শরীরে ব্যথাহীন অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। দাঁতের চিকিৎসক ডা. উইলিয়াম মর্টন রোগী গিলবার্ট অ্যাবটের মুখে ইথার গ্যাস শ্বাসের মাধ্যমে প্রয়োগ করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী
৫ ঘণ্টা আগেকরোনা ভ্যাকসিনের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে রয়েছে নানা ভুল ধারণা এবং অন্ধবিশ্বাস। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্ক্যাবিসসহ কিছু সংক্রামক চর্মরোগ মহামারির আকার ধারণ করেছে। বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে। আবার
৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগবালাই আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশে হেমন্তকালের শেষের দিকে শীতকাল খুব কাছাকাছি চলে আসে। ঋতু পরিবর্তনের এ সময় তাপমাত্রার ওঠানামা ও শুষ্ক বাতাসের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বরসহ অন্যান্য রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
৬ ঘণ্টা আগে