স্মৃতিময় সাইকেল ভ্রমণ

রাসেল মাহমুদ
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৪: ১৯

সকাল ৯টায় আখাউড়া স্থলবন্দরে চলে গেলাম। আমার ও মিলন ভাইয়ের সাইকেলে ভারত ভ্রমণ শুরু হলো। হাতে সময় কম ছিল তাই আমরা খুব বেশি জায়গা ঘুরে দেখতে পারিনি। যা দেখার সাইকেল চালানো অবস্থাতেই দেখেছি, উপভোগ করেছি। দুপুর ৩ টার দিকে খাবার খেয়ে নিলাম আইসিএফএআই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মোহনপুরে।

সাইকেল চালিয়ে চলে গেলাম খোয়াই, এখানেই আমাদের ভারতে প্রথম রাতটি অতিবাহিত হলো। রাত-দিন মিলিয়ে প্রায় ২শ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে এসেছি। শরীর তখন ক্লান্ত। তাই সব ঠিকঠাক করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন ভোরে বেরিয়ে পড়লাম। এবার হাইওয়ে বাদ দিয়ে এলাকার রাস্তা বেছে নিলাম। কুমারঘাটে এসে সকালের খাবার খেলাম। সেখান থেকে পানিসাগরের পথে চলে এলাম। চড়ুইবাড়ি চেকপোস্ট পার করে ত্রিপুরা থেকে আসামে ঢুকলাম। আজকের এই রাস্তা অনেক উপভোগ করছি, কারণ রাস্তায় অনেক ঢাল । কখনো উপর দিকে উঠছি আবার কখনো নিচের দিকে নামছি । কখনও এমন হয়েছে নিচের দিকে নামার গতি দিয়েই আবার উপরে উঠেছি। আশেপাশে কোন থাকার হোটেল নেই। খোঁজ নিয়ে জানলাম, সামনে পেট্রোল পাম্প আছে। ওখানে গিয়ে পাম্প কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে থাকার অনুমতি পেয়ে গেলাম।

সকালে খুব ভোরেই বের হয়ে গেলাম। একটু পরেই করিমগেঞ্জে পৌঁছালাম। পাহাড়ের উপর দিকে উঠতে আমাদের গতি থাকে মাত্র ৫ বা ৬ কিলোমিটার ঘন্টায়। রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।

আসামের সীমানা পেরিয়ে চলে এসেছি মেঘালয়। যাচ্ছি লামসাং। এখানকার সৌন্দর্য্য সত্যিই অসাধারণ। আমরা যারা সমতলে থাকি পাহাড় যে তাদের কতটা ভালো লাগে তা শুধু তারাই জানে। সবকিছু মিলিয়ে আমি সত্যিই খুব খুশি।

আজকে সকালের সূর্যটা একটু অন্য রকম। মনে হচ্ছে পাহাড়ের কোল ঘেষে সূর্যটা উপরের দিকে উঠছে। ডাউকি থেকে শিলং পুরোটাই উপরের দিকে উঠতে হবে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে শিলংয়ের গড় উচ্চতা ১৪৯৬ মিটার আর সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৯৬৬ মিটার। পরদিন ভোরে বাইরে অনেক ঠান্ডা ও বাতাস বইছে। তাই একটু দেরি করেই বের হতে হলো। আমাদের আজকের পরিকল্পনা গুহাটিতে গিয়ে কলকাতার ট্রেন ধরব। বেলা থাকতেই যেতে হবে গুহাটি ট্রেন স্টেশনে। শিলং পর্যন্ত যেতে পারলে বাকি পথটুকুতে তেমন সময় লাগবে না। কারণ শিলং থেকে গুহাটি পর্যন্ত নিচের দিকে যেতে হয়। অবশেষে শিলং শহরে চলে এলাম সাইকেলে। সকালের খাবার খেয়ে নিলাম। শিলং শহরে গিয়েছি ঠিকই কিন্তু শহরটা আর ঘুরে দেখা হলো না সময়ের অভাবে। খেয়েই গুহাটি এর দিকে এগুলাম। শিলং থেকে গুহাটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার। ট্রেনে উঠে পড়লাম কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। রাতে ঘুমিয়ে সকালের দিকে বেরিয়ে পড়লাম কলকাতা শহর ঘুরে দেখতে। প্রথমে ট্রেন তার পর মেট্রোরেলে করে কলকাতা শহরে গেলাম। এই প্রথম আমার মেট্রোরেল ভ্রমণ। এসেই আগে সকালের খাবার খেলাম। ওখান থেকে আলিপুর চিড়িয়াখানা, ভিতরে অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি । যা যা ছিল সব কিছু দেখি আর ছবি তুলি। এখানে একটি বিষয় খুব ভালো লেগেছে তা হলো বাঘকে একদম কাছ থেকে দেখালাম। রাতে ঘুমিয়ে উঠলাম ভোর ৫ টার দিকে। মিল্টন দাদাকে বিদায় দিয়ে বারাসাত স্টেশনের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। সেখান থেকে ট্রেন ধরে বনগাঁ স্টেশন এ যাব। ট্রেন ধরতে পারলে আমরা অনেক তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসতে পারব, নয়তো অনেক দেরি হবে। এজন্য আমরা ৬টার মধ্যে বারাসাত স্টেশন এ চলে আসি। তারপর ট্রেনে বনগাঁ। সাইকেল চালিয়ে চলে গেলাম পেট্রাপোলে। এরপর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাতে চলে এলাম। এখানেই রোমাঞ্চকর যাত্রার সমাপ্তি।

সভাপতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটি

বিষয়:

সাইকেল
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত