ভাষা নিয়ে প্রতিযোগিতা...

মো. আমান উল্লাহ
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫, ১৩: ৩৭

ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়। এটি হতে পারে চিন্তার অস্ত্র, যুক্তির পথনির্দেশক, কৌশল ও প্রতিনিধিত্বের প্রতীক। এমন ভাবনা থেকেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করেছে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগিতা ‘ইন্টার ফ্যাকাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ লিগ-২০২৫’।

বিজ্ঞাপন

শুধু ভাষাগত দক্ষতা নয়, এই আয়োজন ছিল যুক্তিবোধ, বুদ্ধিমত্তা ও দলের সঙ্গে একত্রে কাজ করার অনন্য অভিজ্ঞতা। দুদিনব্যাপী আয়োজনে ছিল একক ও দলীয় সেগমেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ। এতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ নিজ অনুষদের প্রতিনিধিত্ব করেন নানা বুদ্ধিবৃত্তিক খেলায়।

প্রতিযোগিতার প্রথমদিনের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হয় সবচেয়ে জনপ্রিয় সেগমেন্ট ‘ট্রেজার হান্ট’। যেখানে অংশ নেন ৫৪টি দলের ১৬২ জন ছাত্রছাত্রী। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে থাকা ধাঁধা, ছন্দ, সাংস্কৃতিকসংকেত ও ভাষাগত সূত্র ধরে শিক্ষার্থীরা ছুটে বেড়ায় ‘ট্রেজার’ খোঁজার অভূতপূর্ব অভিযানে। ভাষা, রূপক, যুক্তি ও সংস্কৃতির নিখুঁত মিশেলে তৈরি করা প্রতিটি ক্লুতেই ছিল নতুন চমক।

এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত ছিল মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের প্রথম বর্ষের একটি দলের চূড়ান্ত ধাঁধার সমাধান করে বিজয়ী হওয়ার দৃশ্য। নবীন শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী চিন্তা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও চমৎকার দলগত সমন্বয় পুরো আয়োজনে এনে দেয় প্রাণচাঞ্চল্য ও উচ্ছ্বাস। এটি অনেকের কাছেই হয়ে ওঠে উৎসাহের অনুপ্রেরণা।

এর পরের সেগমেন্টে ছিল ‘স্পেলিং বি’, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২টি দলের ৩৬ জন। একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় এককভিত্তিক ‘উপস্থিত বক্তৃতা’ ও ‘এক্সটেম্পোর স্পিচ’। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই সেগমেন্টগুলো হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।

দ্বিতীয় দিনে শুরু হয় একক সেগমেন্ট ‘মেমোরি বুস্টার’ দিয়ে। যেখানে প্রতিযোগীরা শুধু স্মৃতিশক্তিকে ভরসা করেই লড়াই করেন। ছিল আরো দুটি ভিন্নধর্মী সেগমেন্ট ‘প্রবাদ প্রলাপ’ এবং বাংলা ক্লাসিক সিনেমা ঘিরে তৈরি ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’র প্রিলিমিনারি রাউন্ড।

পরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় বাকি চূড়ান্ত সেগমেন্টগুলো। শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ‘ওয়ার্ড চেইন’ ছিল উল্লেখযোগ্য। এরপর একে একে অনুষ্ঠিত হয় ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’, ‘প্রবাদ প্রলাপ’ ও ‘স্পেলিং বি’র ফাইনাল। স্পেলিং বির চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি হয় কৃষি অনুষদ এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের দল। বিজয়ী হয় কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ দলটি।

‘প্রবাদ প্রলাপ’-এ জয়ী হয় কৃষি অনুষদ। অন্যদিকে ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’র শিরোপা ছিনিয়ে নেয় কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ। প্রতিটি সেগমেন্টেই শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স আর দর্শকদের আগ্রহ আয়োজনে এনে দেয় বাড়তি প্রাণ।

পুরস্কার বিতরণ ও বিজয়ী ঘোষণার সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শহীদুল হক। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. সোনিয়া সেহেলী, অধ্যাপক ড. রোস্তম আলী, অধ্যাপক ড. আখতারুল আলম, অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. কাজী কামরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. মাহবুবুল প্রতীক সিদ্দীকসহ অনেকে। তাদের অভিজ্ঞতা ও মূল্যবান বক্তব্য শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে।

দুদিনব্যাপী এই আয়োজনে সম্মিলিত পয়েন্টের ভিত্তিতে গতবারের মতো এবারও বিজয়ী অনুষদ নির্বাচিত হয় কৃষি অনুষদ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছিল যথাক্রমে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ।

এই আয়োজন শুধু ভাষার প্রতিযোগিতা ছিল না। ছিল নেতৃত্ব, দলীয় মনোভাব, যুক্তি, স্মরণশক্তি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক প্রাণবন্ত উৎসব। ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মাহাবুব রাফি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করা, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা, বুদ্ধিমত্তা ও সংস্কৃতি নিয়ে একসঙ্গে চিন্তা করবে। যুক্তি ও চিন্তার জোরে নিজেদের মেলে ধরবে। অংশগ্রহণকারী, স্বেচ্ছাসেবক ও দর্শকদের অভূতপূর্ব সাড়া প্রমাণ করেছে, এই আয়োজন শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। ‘আমরাও পারি’Ñ এই আত্মবিশ্বাসই ছিল ইন্টার ফ্যাকাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ লিগ-২০২-এর সবচেয়ে বড় সাফল্য।’

বিষয়:

ভাষা
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত