
মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম

সমকালীন আরবি সাহিত্যে যেসব নারী সাহিত্যিক নিজেদের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, তাদের অন্যতম মিসরের সাহিত্যিক ও সাংবাদিক নাদিয়া কিলানি (জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৫০)। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, শিশুসাহিত্য—প্রায় সব ধারাতেই তিনি রেখেছেন স্বাক্ষর।
তার লেখায় সামাজিক সমস্যা, জাতীয় মূল্যবোধ, মানবিক সম্পর্ক, শিশুশিক্ষা ও বিনোদন এবং সমকালীন চ্যালেঞ্জগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। তিনি মিসরীয় লেখক সংঘ, কথাসাহিত্যিক ক্লাব, ইসলামি সাহিত্য সংঘসহ বিভিন্ন সাহিত্যিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। একসময় গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত থাকলেও পরবর্তীকালে তিনি মনোনিবেশ করেন কবিতায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বাইনাল গুয়ুমি ওয়াল কামার’ (মেঘ আর চাঁদের মাঝে) আধুনিক আরবি কবিতায় এক সতেজ সংযোজন হিসেবে সমাদিত।
মিসরের মাকতাবাতুল আদাব থেকে প্রকাশিত ১৩১ পৃষ্ঠার এই কবিতার বইয়ে আছে মোট ৪৭টি কবিতা। তিনি কবিতাগুলোকে চারটি মৌসুম বা বিভাগে বিন্যস্ত করেছেন। হৃদয়ের মৌসুম (২৩টি কবিতা), ধর্মীয় মৌসুম (৯টি কবিতা), জাতীয় মৌসুম (৯টি কবিতা) এবং জাতীয়তাবাদী মৌসুম (৬টি কবিতা)। এই বিন্যাস শুধু শিরোনামগত বৈচিত্র্য নয়, এতে কাব্যের বিষয়ভিত্তিক ব্যাপ্তি ও অভিজ্ঞতার পরিধি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রেম ও বিচ্ছেদের ব্যক্তিগত আবেগ থেকে শুরু করে আধ্যাত্মিক নিবেদন, রাজনৈতিক সংগ্রাম, কিংবা জাতীয় চেতনার প্রকাশ—সবকিছুই এতে স্থান পেয়েছে। কবিতাগুলো কখনো চলিত ছন্দে, আবার কখনো আধুনিক তাফ্ইলা (মুক্ত) ছন্দে রচিত, ফলে পাঠক একদিকে ক্লাসিক আরবি কাব্যের ধ্বনিমাধুর্যের সঙ্গে আধুনিক কাব্যধারার স্বাদ পান। এ দ্বৈত অভিজ্ঞতা বইটিকে দিয়েছে বিশেষত্ব।
হৃদয়ের মৌসুম কবিতাগুলোতে ব্যক্তিগত আবেগ, প্রেম ও কল্পনার বিস্তার লক্ষ করা যায়। ‘অরূসুন নীল’ কবিতায় নদীকে কনেরূপে তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছেন। একই মৌসুমে ‘উহিব্বুকা হুব্বাইন’ (আমি তোমায় ভালোবাসি দুভাবে) কবিতায় সুফি সাধিকা রাবেয়া আল আদাবিয়ার আধ্যাত্মিক কবিতার প্রতিধ্বনি শোনা যায়—
‘একটি প্রেম, যেখানে আমি নিজেকে দিই বিসর্জন
আরেকটি প্রেম, যেখানে কেবল তুমিই হে প্রভু।’
প্রেম এখানে পার্থিব সীমা ছাড়িয়ে খোদায়ি মিলনের আকাঙ্ক্ষায় রূপ নিয়েছে।
আরেকটি কবিতা ‘মাওসুম লিল্গিয়াব’-এ (অনুপস্থিতির মৌসুম) বিচ্ছেদের বেদনা ও বিষণ্ণ সুর ধ্বনিত হয়েছে—
‘তুমি চলে গেলে, কেবল প্রতিধ্বনি রয়ে গেল
আজ তোমার ছায়া আমার পাশে শুয়ে থাকে ।’
ধর্মীয় মৌসুমের কবিতাগুলোয় আধ্যাত্মিক অনুভব, আত্মসমর্পণ ও ভক্তির আবহ প্রাধান্য পেয়েছে । এখানে জটিল প্রতীকের বদলে সরল অথচ গভীর ভাষা ব্যবহার করেন তিনি। একটি কবিতায় লেখেন—
‘আমার কপাল নত
তোমার দরজায়
যেমন ভোরের সূর্য নত হয়
সমুদ্রের দিকে।’
এই সরল অথচ কাব্যিক চিত্রকল্প পাঠককে আধ্যাত্মিকতার সৌন্দর্যে ভাসায়।
জাতীয় মৌসুম কবিতাগুলোয় উঠে এসেছে মিসরের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি। বিশেষত ২৫ জানুয়ারির বিপ্লবের আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে ‘হাইয়ু আশ্ শাবাব’ (যুবকদের অভিনন্দন জানাও) কবিতায়—
‘যুবকেরা রাস্তায় নামে
বুকভরা স্লোগানে ভোরকে জাগায়
শহীদদের রক্তে লাল হয় নতুন সূর্য।’
স্লোগানধর্মী উচ্চারণ থাকা সত্ত্বেও এতে নতুন প্রজন্মের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান আর শ্রদ্ধা পাঠককে স্পর্শ করে।
জাতীয়তাবাদী মৌসুমে তিনি আরব বিশ্বের দুঃখ ও সংগ্রামের কণ্ঠস্বর হয়েছেন। ইরাক-সম্পর্কিত কবিতাগুলোয় বিদেশি আগ্রাসনের নির্মম অভিজ্ঞতা ধরা দিয়েছে। এ মৌসুমের শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘ক্বালা আবদুল্লাহ’, যেখানে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের শাহাদাত এবং তার মা আসমা বিনতে আবি বকরের দৃঢ়তার কাহিনি অমর হয়ে উঠেছে।
কবিতায় তিনি প্রেম, আধ্যাত্মিকতা, দেশাত্মবোধ ও আরব জাতীয় চেতনার সমন্বয়ে তৈরি করেছেন বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ ভুবন। ‘বাইনাল গুয়ুমি ওয়াল কামার’ নিছক একটি আত্মপ্রকাশমূলক কবিতার বই নয়, এটি নাদিয়া কিলানির বহুমুখী শক্তির ঘোষণা। প্রথম গ্রন্থেই তিনি প্রমাণ করেছেন, সমকালীন আরবি সাহিত্যের অগ্রভাগে জায়গা করে নেওয়ার জন্য তার পদক্ষেপ।

সমকালীন আরবি সাহিত্যে যেসব নারী সাহিত্যিক নিজেদের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, তাদের অন্যতম মিসরের সাহিত্যিক ও সাংবাদিক নাদিয়া কিলানি (জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৫০)। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, শিশুসাহিত্য—প্রায় সব ধারাতেই তিনি রেখেছেন স্বাক্ষর।
তার লেখায় সামাজিক সমস্যা, জাতীয় মূল্যবোধ, মানবিক সম্পর্ক, শিশুশিক্ষা ও বিনোদন এবং সমকালীন চ্যালেঞ্জগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। তিনি মিসরীয় লেখক সংঘ, কথাসাহিত্যিক ক্লাব, ইসলামি সাহিত্য সংঘসহ বিভিন্ন সাহিত্যিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। একসময় গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত থাকলেও পরবর্তীকালে তিনি মনোনিবেশ করেন কবিতায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বাইনাল গুয়ুমি ওয়াল কামার’ (মেঘ আর চাঁদের মাঝে) আধুনিক আরবি কবিতায় এক সতেজ সংযোজন হিসেবে সমাদিত।
মিসরের মাকতাবাতুল আদাব থেকে প্রকাশিত ১৩১ পৃষ্ঠার এই কবিতার বইয়ে আছে মোট ৪৭টি কবিতা। তিনি কবিতাগুলোকে চারটি মৌসুম বা বিভাগে বিন্যস্ত করেছেন। হৃদয়ের মৌসুম (২৩টি কবিতা), ধর্মীয় মৌসুম (৯টি কবিতা), জাতীয় মৌসুম (৯টি কবিতা) এবং জাতীয়তাবাদী মৌসুম (৬টি কবিতা)। এই বিন্যাস শুধু শিরোনামগত বৈচিত্র্য নয়, এতে কাব্যের বিষয়ভিত্তিক ব্যাপ্তি ও অভিজ্ঞতার পরিধি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রেম ও বিচ্ছেদের ব্যক্তিগত আবেগ থেকে শুরু করে আধ্যাত্মিক নিবেদন, রাজনৈতিক সংগ্রাম, কিংবা জাতীয় চেতনার প্রকাশ—সবকিছুই এতে স্থান পেয়েছে। কবিতাগুলো কখনো চলিত ছন্দে, আবার কখনো আধুনিক তাফ্ইলা (মুক্ত) ছন্দে রচিত, ফলে পাঠক একদিকে ক্লাসিক আরবি কাব্যের ধ্বনিমাধুর্যের সঙ্গে আধুনিক কাব্যধারার স্বাদ পান। এ দ্বৈত অভিজ্ঞতা বইটিকে দিয়েছে বিশেষত্ব।
হৃদয়ের মৌসুম কবিতাগুলোতে ব্যক্তিগত আবেগ, প্রেম ও কল্পনার বিস্তার লক্ষ করা যায়। ‘অরূসুন নীল’ কবিতায় নদীকে কনেরূপে তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছেন। একই মৌসুমে ‘উহিব্বুকা হুব্বাইন’ (আমি তোমায় ভালোবাসি দুভাবে) কবিতায় সুফি সাধিকা রাবেয়া আল আদাবিয়ার আধ্যাত্মিক কবিতার প্রতিধ্বনি শোনা যায়—
‘একটি প্রেম, যেখানে আমি নিজেকে দিই বিসর্জন
আরেকটি প্রেম, যেখানে কেবল তুমিই হে প্রভু।’
প্রেম এখানে পার্থিব সীমা ছাড়িয়ে খোদায়ি মিলনের আকাঙ্ক্ষায় রূপ নিয়েছে।
আরেকটি কবিতা ‘মাওসুম লিল্গিয়াব’-এ (অনুপস্থিতির মৌসুম) বিচ্ছেদের বেদনা ও বিষণ্ণ সুর ধ্বনিত হয়েছে—
‘তুমি চলে গেলে, কেবল প্রতিধ্বনি রয়ে গেল
আজ তোমার ছায়া আমার পাশে শুয়ে থাকে ।’
ধর্মীয় মৌসুমের কবিতাগুলোয় আধ্যাত্মিক অনুভব, আত্মসমর্পণ ও ভক্তির আবহ প্রাধান্য পেয়েছে । এখানে জটিল প্রতীকের বদলে সরল অথচ গভীর ভাষা ব্যবহার করেন তিনি। একটি কবিতায় লেখেন—
‘আমার কপাল নত
তোমার দরজায়
যেমন ভোরের সূর্য নত হয়
সমুদ্রের দিকে।’
এই সরল অথচ কাব্যিক চিত্রকল্প পাঠককে আধ্যাত্মিকতার সৌন্দর্যে ভাসায়।
জাতীয় মৌসুম কবিতাগুলোয় উঠে এসেছে মিসরের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি। বিশেষত ২৫ জানুয়ারির বিপ্লবের আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে ‘হাইয়ু আশ্ শাবাব’ (যুবকদের অভিনন্দন জানাও) কবিতায়—
‘যুবকেরা রাস্তায় নামে
বুকভরা স্লোগানে ভোরকে জাগায়
শহীদদের রক্তে লাল হয় নতুন সূর্য।’
স্লোগানধর্মী উচ্চারণ থাকা সত্ত্বেও এতে নতুন প্রজন্মের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান আর শ্রদ্ধা পাঠককে স্পর্শ করে।
জাতীয়তাবাদী মৌসুমে তিনি আরব বিশ্বের দুঃখ ও সংগ্রামের কণ্ঠস্বর হয়েছেন। ইরাক-সম্পর্কিত কবিতাগুলোয় বিদেশি আগ্রাসনের নির্মম অভিজ্ঞতা ধরা দিয়েছে। এ মৌসুমের শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘ক্বালা আবদুল্লাহ’, যেখানে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের শাহাদাত এবং তার মা আসমা বিনতে আবি বকরের দৃঢ়তার কাহিনি অমর হয়ে উঠেছে।
কবিতায় তিনি প্রেম, আধ্যাত্মিকতা, দেশাত্মবোধ ও আরব জাতীয় চেতনার সমন্বয়ে তৈরি করেছেন বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ ভুবন। ‘বাইনাল গুয়ুমি ওয়াল কামার’ নিছক একটি আত্মপ্রকাশমূলক কবিতার বই নয়, এটি নাদিয়া কিলানির বহুমুখী শক্তির ঘোষণা। প্রথম গ্রন্থেই তিনি প্রমাণ করেছেন, সমকালীন আরবি সাহিত্যের অগ্রভাগে জায়গা করে নেওয়ার জন্য তার পদক্ষেপ।

ছবিটা পড়ে ছিল বাতিল জিনিসের স্তূপে। ঘরের জঞ্জাল পরিষ্কার করতে গিয়ে শিহাব সাহেব ছবিটা পেয়েছিলেন। কতদিন পর তিনি ছবিটা দেখলেন। তারর এত প্রিয় ছিল ছবিটা! এটার সঙ্গে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আর সেই ছবিটাই কিনা অবহেলায় পড়ে আছে গারবেজ হয়ে!
১ ঘণ্টা আগে
কর্ণফুলী থেকে নাফ দুই নদীর মধ্যবর্তী চট্টগ্রামের এলাকা জীববৈচিত্র্যে যেমন অনন্য, রাজনীতিক বৈশিষ্ট্যেও অনন্য। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হলো এ অঞ্চল অরণ্যসংকুল, সমুদ্রউপকূলবর্তী ও পর্বতবেষ্টিত। এত বৈচিত্র্য বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। মধ্যযুগব্যাপী এ অঞ্চল ছিল আরাকানের অংশ।
৩ ঘণ্টা আগে
হাঙ্গেরীয় নিরীক্ষাপ্রেমী ঔপন্যাসিক ও চিত্রনাট্যকার লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ২০২৫ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পান। ভয়, বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়, চূড়ান্ত হতাশা ও বিভীষিকাময় সময়ের মাঝেও শিল্পের শক্তিকে তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মে পুনরুদ্ধার করেছেন।
৪ ঘণ্টা আগে
১৯০৬ সাল বা খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর যিনি মা-মাটি-দেশ-জাতিকে ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, তিনি দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ। একই সময়ে এবং একই ক্ষণে ধরণিতে আরো মানুষের আবির্ভাব স্বাভাবিক। তবে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ কালে কালে বৈদগ্ধ্যে যুগস্রষ্টা হয়ে উঠেছেন বলেই তিনি আলাদা ও অনন্য।
৪ ঘণ্টা আগে