মানুষ ক্ষমতায় থাকলে আর হুঁশ থাকে না: আহমদ রফিক

ইমরান মাহফুজ
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ২৪

আহমদ রফিক ছিলেন ভাষা সংগ্রামী ও লেখক। তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন, লিখেছেন বিজ্ঞান ও শিল্পকলা বিষয়ে। করেছেন অনুবাদ ও সম্পাদনা। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ বহু সম্মাননা।

জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিঃসন্তান আহমদ রফিক থাকতেন একাকী। অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। মারা যান এ বছর ২ অক্টোবর।

বিজ্ঞাপন

২০ ফেব্রুয়ারি এক দুপুরে ঘরোয়া আড্ডায় ব্যক্তিজীবন ও গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সমাজ-রাষ্ট্র নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন কবি

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন সরকার। তারা মানুষের জীবনের প্রতি কতটা দরদি বলে মনে করেন?

মানুষ যখন ক্ষমতায় ডুবে যায়, তখন আর হুঁশ থাকে না; বেহুঁশ হয়ে যায়।

এটা কি অন্যদের জন্য শিক্ষা?

এটা ঐতিহাসিক সত্য, ইতিহাসের শিক্ষা।

মানুষ কি ইতিহাস থেকে শেখে?

মানুষ ইতিহাস থেকে শেখে, আবার শেখে না।

আপনি বলেছিলেন, আমার বংশে এত দীর্ঘজীবন কেউ পায়নি। এই দীর্ঘজীবন কি আপনাকে পীড়া দেয়? চলে যাওয়ার জন্য কী প্রস্তুতি?

দীর্ঘজীবন তো পীড়াদায়কই। বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তি নানাভাবে বলেছেন, দীর্ঘজীবনের বিড়ম্বনা নিয়ে বেঁচে আছি।

আপনি কি বিড়ম্বনা মনে করেন?

আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি, দীর্ঘজীবন মানুষের এক বিরাট প্রাপ্তি।

আপনার দীর্ঘজীবন শেষে বইপত্র-লেখালেখির উত্তরাধিকার কে হবে?

উত্তরাধিকার তো… এটা একটা মুশকিল হয়ে গেছে… বুঝতে পেরেছ… উত্তরাধিকার তো তোমরা। তোমাদের পরে অন্যরা। তারপরে অন্যরা। তারপরে অন্যরা। এই যে তিনবার বললাম, এই তো তিন সত্য। … তোমরা আমাকে নিয়ে চিন্তা করো, ভাবো—এটা ভুলি কেমন করে? ভুলি না, ভুলতে পারি না।

তরুণদের প্রতি আপনি খুব আশাবাদী?

অবশ্যই।

একটা ঐতিহাসিক বিষয়ে জিজ্ঞাসা—প্রভাতফেরি তো প্রভাতে ছিল। সেটা মধ্যরাতে কীভাবে গেল?

মধ্যরাতে গেল খ্রিষ্টীয় (খ্রিষ্টাব্দের) নিয়ম অনুযায়ী। যেহেতু শাসকশ্রেণি তাদের ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী চলে, সেজন্য তারা এটাকে ওভাবে নিয়েছে। যেহেতু শাসকশ্রেণি নিয়েছে, আমরাও সেই ধারায় চলেছি।

আপনারা যে খালি পায়ে সকালবেলা প্রভাতফেরি করেছেন, সেই আবেগ কি এতে রক্ষিত হলো, নাকি হাইজ্যাক হয়ে গেল?

হাইজ্যাক হয়ে গেল। এ নিয়ে আমি একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম—‘আমার সেই প্রভাতফেরীটা ফিরিয়ে দাও’।

আমরা শুনেছিলাম, এরশাদ নাকি প্রভাতফেরিতে যাওয়ার পর ছাত্রদের ধাওয়ার শিকার হন। তার পর থেকে মধ্যরাতে নিয়ে যাওয়া হয়?

নাহ, একেবারেই ভুল।

তাহলে কখন থেকে এটা মধ্যরাতে গেল?

এটা একটু দেখে-শুনে বলতে হবে।

স্বাধীনতার পরে, না আগে?

স্বাধীনতার পরে।

স্বাধীনতা আমাদের কী দিয়েছে, আর কী নিয়েছে?

স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে, আবার নিয়েছেও। দুটোই ঠিক আছে। দেওয়াটাও ঠিক আছে। নেওয়াটাও ঠিক আছে।

আমাদের দুঃখ-বৈষম্য কি নিতে পেরেছে?

এই বেদনা-বৈষম্য তো বাদ দিতে পারেনি। এর প্রেক্ষাপট খুব ব্যাপক। এটা চট করেই পরিবর্তন করা যায় না।

আপনি সবশেষ বইমেলায় কবে গেছেন মনে পড়ে?

বহু আগে, বহু।

আপনার কোন সময়ের বন্ধুদের কথা বেশি মনে পড়ে?

স্কুল-কলেজের বন্ধুদের কথাই বেশি মনে পড়ে।

আপনার মা-বাবার কবর কোথায় আছে?

গ্রামের বাড়িতে।

আপনার শেষ ঠিকানা কোথায় হবে?

এটা একটা সাংঘাতিক প্রশ্ন করলে! আমার শেষ ঠিকানা যে কোথায় হবে, এটা কে বলতে পারবে?

আপনার কোনো অছিয়ত বা সিদ্ধান্ত কি আছে?

নাহ। আমি এসব বিষয়ে নির্বিকার।

তবু আপনার একটা মতামত?

আমার মতামত… আমার মতামত… আমার মতামত…

আপনাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাব?

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত টানার দরকার নেই। এই কালাম! (দীর্ঘদিনের সাহায্যকারী কালামকে ডাকলেন। কালাম বললেন, স্যারকে কোথাও নিতে পারব না। স্যারের দেহ তো দান করে দিয়েছেন।) এখানেই তো আমার সব নিকটজন, প্রিয়জন। তোমাদের ফেলে যাব কোথায়!

জীবন নিয়ে আপনার কী উপলব্ধি? জীবন মানে কী আপনার কাছে?

জীবন তো একটা বায়োলজিক্যাল ব্যাপার। আর জীবন বললে তো আমি শুধু মানুষের ব্যাপার বুঝি না, জীবন বলতে আমি অনেক কিছু বুঝি। মানুষ মানুষকে নিয়ে থাকবে, মানুষকে নিয়ে চলবে। তুমি আছ আমি আছি; এই তুমি আছ আমি আছি—এটা তো মানুষের জীবনের… কী বলব…এক বিরাট প্রাপ্তি। এর তো কোনো শেষ নেই, সীমানা নেই, সীমানাহীন।

এই যে শাসক বদলায়, এ যায় ও আসে; কিন্তু মানুষের জীবন বদলায় না কেন?

মানুষের জীবন বদলায় না কে বলল?

শাসক তো বদলিয়েছে… অভ্যুত্থান হয়… মানুষের দুঃখ কমে না কেন?

গণঅভ্যুত্থান হয়। শাসক বদল হয়। শাসক বদল হয়ে ভালোর দিকেও যায়, আবার অন্য দিকেও যায়। শাসক বদল হলেই ভালো কিছু, এমন তো কোনো কথা নেই। …তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না, একসময় এ ভাবনা আমাকে খুব ভাবিয়েছে যে, আমি তো নিঃসন্তান। আমার পরবর্তী যারা, তারা কি আমাকে মনে রাখবে? রবীন্দ্রনাথের সেই কথা—‘তবুও মনে রেখো।’ এ ব্যাপারগুলো বড় দার্শনিক, বড় বেদনাদায়ক।

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের নেয়া হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের অস্থায়ী কারাগারে

গাজায় স্বাস্থ্য সংকট কয়েক প্রজন্ম থাকবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত