যে কন্যা তার বাবাকে জানে

সাদিয়া চৌধুরী পরাগ
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৩৪

১৯০৬ সাল বা খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর যিনি মা-মাটি-দেশ-জাতিকে ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, তিনি দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ। একই সময়ে এবং একই ক্ষণে ধরণিতে আরো মানুষের আবির্ভাব স্বাভাবিক। তবে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ কালে কালে বৈদগ্ধ্যে যুগস্রষ্টা হয়ে উঠেছেন বলেই তিনি আলাদা ও অনন্য।

তিনি এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম দার্শনিকদের শ্রেণিতে অবতীর্ণ ছিলেন, এখনো আছেন এবং থাকবেন। একসময় রাজনীতিতে প্রবলভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। শিক্ষাকে আজীবন আলোকিত রাখার জন্য বহুকাল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, অনেকটা আমরণ। তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের আরেক প্রকার পুরোধা। একাধারে দার্শনিক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক—সর্বোপরি জ্ঞানগর্ভে অতুলনীয় এক মানুষ ছিলেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের লেখক ড. তৃপ্তি ব্রহ্ম বলেছেন, বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ অনেক পণ্ডিতের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। তারা তাদের ধর্ম সম্পর্কে পুঁথিগত শিক্ষা বা নামতা শিখেছেন এবং এর বাইরে যাওয়ার দিক দেখাতে পারেননি। তবে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ যেভাবে প্রতিটি ধর্ম নিয়ে আলোচনা করে শুধু আমাকেই নয়, এক বিশাল সভার মানুষকে হতবাক করে দিয়েছিলেন। কারো মুখে কথা ফোটেনি। এতে অনুধাবিত হয়েছিল ধর্মীয় ব্যাকরণ ডাল থেকে ডালে প্রস্ফুটিত হয়ে।

বিজ্ঞাপন

দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের বাবা দেওয়ান মোহাম্মদ আসফ বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার হাবেলিয়ার অধিবাসী। তিনি অতি অল্প বয়সে পিতৃপুরুষকে হারিয়ে তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি। তবে তার পূর্বপুরুষ সামন্ত রাজ্যের অধিকারী রাজা প্রেমনারায়ণ রায়ের হিস্যা পেয়েই আজীবন জমিদারি করেছেন।

আসফ একসময় সুনামগঞ্জ মহকুমা শহরে রাতের অন্ধকার দূর করতে লাইটপোস্টে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে দেন একের পর এক। এতে কারা যেন গান লেখে—

‘সাহেবে নাম করলা রে

সয়াল জুরিয়া

হাজার হাজার ট্যাকা দিলা

বাত্তি জ্বালাইয়া রে।’

তাছাড়া দেওয়ান মোহাম্মদ আসফ ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সিলেট শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি একাধারে ৩২ বছরকাল ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদী দলেরও সহ-অধিপতি ছিলেন—বলা যায়, আমরণ।

দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ তার বাবা দেওয়ান আসফকে দেখেছেন, আরো দেখেছেন তার প্রাণপ্রিয় নানা দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরীকে। প্রকৃতপক্ষে তার বাবা থেকে নানা দেওয়ান হাসন রাজাকে ভালোভাবেই দেখেছেন বলা যায়।

নানা দেওয়ান হাসন রাজা ও তার বাবা দেওয়ান আসফ দুজনেই মানবমুখী বা মানবদরদি হলেও তিনি কারো গুণাগুণ অর্জন করেননি বলা যায়। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ নিজেকে নিজেই যাচাই করেছেন ভালো-মন্দের পাল্লা দিয়ে এবং ভালোকে ভালোভাবে তুলে নিয়েছেন।

একবার তার ছোট কন্যা বলেছিল, ‘বাবা, তুমি রাজনীতি ছেড়ে দিলে কেন? একসময় মুসলিম লীগে ছিলে না?’ তিনি বললেন, ‘যে মুসলিম লীগের জন্য, পাকিস্তানের জন্য কাজ করেছিলাম, তা সেরকম নেই—হিংসা-বিদ্বেষে পরিপূর্ণ; আমি তা চাই না। ইসলাম তা নিষেধ করে…।’
তার ছোট কন্যা এখন বয়সের ভারে আবদ্ধ, তবে সে এখনো তার বাবাকে জানে ও বোঝে।

লেখক : দেওয়ান আজরফের ছোট মেয়ে

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত