ভয়াবহ ভূমিকম্পে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নরসিংদী জেলা সদর ও পলাশ উপজেলায় ৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এছাড়া আরো ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানিয়েছে নরসিংদী জেলা প্রশাসন। শুক্রবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদী জেলার সদর ও পলাশ উপজেলার মধ্যবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রাথমিক তথ্যমতে ভূমিকম্পে আতংকিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে উঁচু ভবন থেকে নামতে গিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত হয়েছেন।
সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলি নামক স্থানে নির্মাণাধীন ভবনের মালামাল নিচে পড়ে ৪ জন আহত হন। তন্মধ্যে মারাত্মকভাবে মাথায় আহত ২ (দুই) জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়। প্রেরিত দুই জনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু হাফেজ ওমরকে (৮ বছর) মৃত ঘোষণা করেন এবং তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়।
অন্যদিকে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫) নামক এক বৃদ্ধ মাটির ঘরের নিচে চাপা পড়েন এবং পরবর্তীতে তাকে জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নাসিরউদ্দিন (৬০), পিতা: সিরু মিয়া, ভূমিকম্পের সময় ফসলি জমি থেকে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে আসার পথে রাস্তা থেকে নিচে লাফ দিয়ে পড়ে মারা যান বলে স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করায় নিকটাত্মীয়গণ তার মরদেহ হাসপাতালে নেননি।
এদিকে শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা (পূর্বপাড়া) গ্রামে ফোরকান (আনুমানিক ৪০) ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে যান। এরপর তাকে তাৎক্ষণিক নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিলে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করে। সেখানে নেওয়ার পথে রাস্তায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
হতাহত ছাড়াও ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও সাবস্টেশনের বিপুল পরিমাণ পিটি (প্রডাকশন ট্রান্সফরমার) ভূ-কম্পনের ফলে ভেঙে পড়ে।
এদিকে ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার কারখানার ইউরিয়া প্রডাকশন ভূমিকম্পের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ভূ-কম্পনের সময় ইঞ্জিন মেশিনারিজ ভাইব্রেশনের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যায় এবং মেশিনারিজ চেকিং অপারেশনে আছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও সার্কিট হাউসহ শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ভূমিকম্প সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট তথ্যের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে কন্ট্রোল রুম খুলে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোজ খবর রাখা হচ্ছে বলেও জানানো হয়।

