মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা

পীর জুবায়ের
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ০৩

বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। সিন্ডিকেট ও জটিল প্রক্রিয়ায় আটকে থাকা প্রায় ১৭ হাজার শ্রমিকের মধ্যে প্রথম ধাপে সাত হাজার ৮৬৯ জনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও সময়সীমা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সংকট দেখা দিয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতারা এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০০ চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ফলস্বরূপ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় শঙ্কা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত চাহিদাপত্র না পাওয়ায় চাহিদাপত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণপরবর্তী সাক্ষাৎকার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা ইস্যু ও ফ্লাইট নির্ধারণসহ একাধিক ধাপ সম্পন্ন করতে একটু সময় প্রয়োজন।

জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকার নির্মাণ খাতে যেসব কর্মী নিতে চাইছে, তদের জন্য মালয়েশিয়ার নির্মাণ শিল্প উন্নয়ন বোর্ডের (সিআইডিবি) প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রক্রিয়ার ধাপ অনুযায়ী প্রথমে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। এতে নির্বাচিত হলে কর্মীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সনদ দেওয়া হবে। উত্তীর্ণ না হলে কর্মীরা যেতে পারবেন না।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, প্রথম ধাপে মাত্র তিন হাজার আবেদন জমা পড়ে। চার ধাপে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এক হাজার ৬০০ জনের। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ এক হাজার ৬৬ জনকে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের আরেক দফা সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। সেখানে উত্তীর্ণ হলে তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য চূড়ান্ত করা হবে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সাধারণত মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো কর্মী নিয়োগের বিনিময়ে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে নির্ধারিত পরিমাণে টাকা পায়। কিন্তু বোয়েসেল থেকে অর্থ না পাওয়ায় তাদের লোক নিতে গড়িমসি করার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া দুই দেশের অসাধু লোকজনের যোগসাজশে গঠিত সিন্ডিকেটও এখানে উদ্বেগ তৈরি করছে। অনেক এজেন্সি সরাসরি সরকারি উদ্যোগে কর্মী পাঠাতে দিতে চাইছে না। তারা চাইছে পুরো প্রক্রিয়া এজেন্সির মাধ্যমে হোক। এ কারণে যাওয়ার খরচও বেড়েছে।

এদিকে স্বল্প সময়, তুলনার চেয়ে কম চাহিদাপত্র, বাড়তি খরচ, ভুক্তভোগীদের আগের ঋণের দায় এবং একটির পর একটি প্রক্রিয়া অনুসরণে মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের পাঠানোর এমন ধীরগতির প্রস্তুতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আগ্রহীরা ।

জানা গেছে, বর্তমানে একজন শ্রমিককে ধাপে ধাপে এক লাখ ৬২ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি আগে ছিল ছয় হাজার ৫০০ টাকা, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার টাকা। ৩৭ হাজার ৫০০ টাকার সার্ভিস চার্জ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া সিআইডিবি প্রশিক্ষণ ফি ২২ হাজার ৫০০ টাকা, সাক্ষাৎকার ফি ১০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এর বাইরে বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেঁধে দেওয়া সময়ের মাত্র দুই মাস আছে। এরপর প্রথম ধাপের লোক প্রেরণের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ মাত্র ৫০০ চাহিদাপত্র হতাশাজনক। অবাক করা বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত কাউকে পাঠানো হয়নি। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এখনো আটকে আছে শ্রমিক পাঠানোর কাজ। যদি সবাই অর্থাৎ আট হাজার জনের সবাই আগ্রহ দেখাতেন, তাহলে পরিস্থিতি কী হতো তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

এ অবস্থায় শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে বাংলাদেশ সরকার ও মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে আবার এসব শ্রমিক প্রবাসযাত্রার সুযোগ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।

পটুয়াখালীর রাব্বি হোসেন বলেন, গত বছর পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েও যেতে পারিনি। এবারও অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। সরকারের উচিত ছিল আমাদের বিনা খরচে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির আমার দেশকে বলেন, সময়সীমা মাত্র দুই মাস। মাত্র ৫০০ চাহিদাপত্র অত্যন্ত হতাশাজনক। দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ না নিলে বহু শ্রমিক আবার সুযোগ হারাবেন।

খরচের বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, এসব শ্রমিক এমনিতেই হতাশাগ্রস্ত ও ঋণে জর্জরিত। ১৭ হাজার তো আর যাচ্ছেন না। আবেদন করেছেন তুলনামূলক খুবই অল্প। সেজন্য সরকার বা বোয়েসেল তাদের ভর্তুকি দিতেই পারে। এমন নয় যে, তারা চলে গেলে সরকারের লোকসান হবে। বরং রেমিট্যান্স পাবে সরকার। সুতরাং এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বোয়েসেলের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব) শওকত আলী আমার দেশকে বলেন, কিছু এজেন্সি ও মালয়েশিয়ার কিছু নিয়োগদাতা আমাদের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো চায় না। তবুও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত