রাজধানীর বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে শুক্রবার, ছুটির দিন পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেলেও ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তার ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার পুরাতন পেঁয়াজ কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা এবং নতুন পেঁয়াজ ২০ টাকার মতো কমে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় আগের দিনের তুলনায় দাম পড়ে গেছে। যেহারে নতুন পেঁয়াজ বাজারে ঢুকছে তাতে ৩-৪দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম একশো টাকার নীচে নামতে পারে।
শনিবার কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন আমার দেশকে বলেন, বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় আগের দিনের তুলনায় পাইকারি বাজারে পুরাতন পেঁয়াজ কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছে। কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমে ৭০ টাকায় নামতে পারে।
একই বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোহন বলেন, মেহেরপুর জেলা থেকে হাইব্রিড ও দেশি জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় আগের দিনের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে পুরাতন পেঁয়াজের দামেও। পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বগামী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই; এখন দিন দিন কমবে। তিনি জানান, গতকাল দেশি জাতের নতুন পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি এবং হাইব্রিড ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আর নতুন পেঁয়াজের প্রভাবে পুরাতন পেঁয়াজের দামও কমে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়েছে।
শাখাওয়াত হোসেন নামের অপর ব্যবসায়ী বলেন, নতুন পেঁয়াজের প্রভাবে আগের দিনের তুলনায় পুরাতন পেঁয়াজের দামও কমে টাকা কমে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল নতুন পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, গত দুইদিনে বাজারে পেঁয়াজের যে সংকট দেখা গিয়েছিল তা কেটে গেছে। ফলে পেঁয়াজের দাম আর উঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। রাজধানীর সবচেয় বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজের বাজারে আসায় পেঁয়াজের দাম আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
খুচরাবাজারেও এর প্রভাবে আগের দিনের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পুরাতন পেঁয়াজ গতকাল কারওয়ান বাজার ও নয়াবাজারে ১৪০ থেকে ১৫০টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা আগের দিন ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম নামের খুচরা বিক্রেতা বলেন, আগের দিনের তুলনায় পেঁয়াজের চাহিদা কমে দামও পড়ে গেছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কমেছে। দাম আরো কমতে পারে।
শনিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে এসেছি দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতির জন্য সিন্ডিকেট করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছিল। কিন্তু কৃষকের হাতের পুরাতন পেঁয়াজ ও মেহেরপুর অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় পড়ে গেছে। যেহারে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসছে, আর কৃষকের হাতেও এক লাখ টনের বেশি পুরোনো পেঁয়াজ, তা ছেড়ে দিলে দুয়েক দিনের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কয়েকদিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম ৬০-৭০ টাকায় নেমে আসতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু অসৎ ব্যবসায়ী যারা দীর্ঘদিন থেকে সিন্ডিকেট ব্যবসা করে আসছে তারা এ কারসাজির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এবার আমরা সিন্ডিকেট চক্রের চাপের মুখে নতি স্বীকার করিনি। সবকিছুর ওপর আমাদের দেশ ও কৃষকের স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা প্রথম থেকে আমদানির বিপক্ষে ছিলাম। এখনো কৃষকের হাতে পর্যাপ্ত পুরাতন পেঁয়াজ রয়েছে। এছাড়া মেহেরপুরের বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে আরো আড়াই লাখ টন নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। ফলে পেঁয়াজ আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই।
এছাড়াও তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ আতঙ্কে অনেক কিছু করে। শুক্রবার ছিল ছুটির দিন; এ দিন এমনিতেই বাজারে পণ্যের চাহিদা একটু বেশি থাকে। এরপর আবার গুজবে কেউ কেউ ৫-১০ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে দেখেছি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগেই ঘোষণা দিয়েছে পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা অতিক্রম করলে আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। এজন্য সিন্ডিকেট করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছিল। বাস্তবে কোনো ঘাটতি নেই। তবে যেহারে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসছে, কৃষকের হাতেও এক লাখ টনের বেশি পুরোনো পেঁয়াজ, দুয়েক দিনের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এদিকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। কিন্তু গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দাম বেশি দেখে অনেক কৃষক জমিতে থাকা অপুষ্ট মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে বাজারে এনেছেন। এসব পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসায় সরবরাহ বেড়েছে। এটিও পুরোনো পেঁয়াজের দাম কমার আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
ড. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ায় অনেক কৃষক জমিতে থাকা অপুষ্ট মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে বাজারে এনেছেন। এতে উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে।
এদিকে প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা তৈরি করেছে ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির মতে, চার কারণে প্রতিবছর পেঁয়াজের দাম বাড়ে। প্রথমত, উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য; দ্বিতীয়ত, পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব; তৃতীয়ত, মৌসুমের শেষ পর্যায়; চতুর্থত, বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে গত মওসুমে উৎপাদন হয়েছে ৪৪ লাখ টন। এখনো একলাখ ২০ হাজার টনের মতো পুরাতন পেঁয়াজ কৃষকের হাতে রয়েছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই আরো আড়াই লাখ টন নতুন পেঁয়াজ আসবে। ফলে এ সংকট কৃত্রিম।

