সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারায়নি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ২৫

দেশের মানুষ খবরের পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইলের ওপর বেশি নির্ভর করে। পাঠকদের ৭৩ শতাংশ ছাপা পত্রিকা পড়েন না। তবে তাদের ৫৯ শতাংশ পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংষ্করণ মোবাইল ফোনে দেখেন। তারা সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারাননি, তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসাবে দেখছেন।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের এক জরিপ প্রতিবেদনে এমন চিত্র ওঠে এসেছে। কমিশন সরকারি জরিপ সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিসিএস) মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করেছে। কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গণমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক এ ধরণের জরিপ দেশে এটিই প্রথম।

বিজ্ঞাপন

বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক কামাল আহমেদকে প্রধান করে গত বছরের ১৮ অক্টোবর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ২১ নভেম্বর কমিশন কার্যক্রম শুরু হবে। ৯০ দিন মেয়াদী এ কমিশনের আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট প্রতিবেদনের সময় নির্ধারিত রয়েছে।

জরিপের বিষয়ে কমিশনের সভাপতি কামাল আহমেদ আমার দেশকে বলেন, জরিপের সবধরনের শর্ত মেনে জরিপ পরিচালনা হয়েছে। জরিপ পারিচালনার ক্ষেত্রে বিবিএস সরকারি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। তার মাধ্যমে আমরা জরিপটি সম্পন্ন করেছি।

জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজ্ঞানসন্মতভাবে জরিপটি পারিচালিত হয়েছে। এখানে অবিশ্বাস করার কোন সুযোগ নেই। মাঠ পর্যায়ে যেসব তথ্য সংগ্রহকারী গিয়েছিলেন তাদেরকে জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আমরা পরিসংখ্যান ব্যুরোতে বসে বড় স্ক্রিনে সেটা মনিটর করেছি।

এদিকে জরিপের বলা হয়েছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীগণ সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারাননি, তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসাবে দেখছেন।

জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী মানুষ মুদ্রিত খবরের কাগজ কম পড়লেও মোবাইলে অনলাইন সংষ্করণ পড়ছেন। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটে তথ্য খোঁজার জন্য এখনো টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ চোখ রাখেন।

তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসাবে রেডিও’র প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে বলে জরিপে উঠে এসেছে। ৯৪% ভাগ জানিয়েছেন তারা রেডিও শোনেন না। তাদের ৫৪% বলেছেন তারা প্রয়োজন মনে করেন না। প্রায় ৩৫% অংশগ্রহণকারী রেডিও সেটের অপ্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।

জরিপে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দেখার আকাঙ্খা ব্যক্ত হয়েছে। তবে বেশিরভাগ উত্তরদাতাই মনে করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।

গণমাধ্যম বিষয়ক জাতীয় এ জনমত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন না। কারণ হিসাবে ৪৬ ভাগ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন মনে করেন না তারা। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এ হার ৫৩ শতাংশের বেশি। তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন তারা টেলিভিশন দেখেন।

জানুয়ারি ১-৭ দেশের ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার খানা (হাউজহোল্ড) থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সের সদস্য থেকে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের বিস্তার, মানুষের সংবাদ গ্রহণের অভ্যাসের পরিবর্তন, গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে।

এতে দেখা গেছে মুদ্রিত খবরের কাগজ না পড়লেও ৫৯ ভাগ উত্তরদাতা মোবাইল ফোনে অনলাইন সংষ্করণ দেখেন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব-এ পত্রিকার অনলাইন সংষ্করণ দেখেন বলে জানিয়েছেন আড়াই শতাংশ উত্তরদাতা।

জরিপে বলা হয়েছে- সামগ্রিকভাবে ৮৮% উত্তরদাতা জানান তারা গণমাধ্যমের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের হার ৭%।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে খবরের জন্য ৩১% উত্তরদাতার আস্থা রয়েছে ফেসবুকে। এরপর ইউটিউব, ১৬.৫%। কোন কিছু শিখা বা জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে শিক্ষকের ওপরই ভরসা বেশি। এক্ষেত্রে ৪২% উত্তরদাতার কাছে শিক্ষকরাই সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তাদের প্রতিবেদন তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। স্টেকহোল্ডারসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাথে প্রায় ৪০টির মত বৈঠক করেছে। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ৪ শতাধিক মানুষের মানুষের মতামত শুনেছে।

জানা গেছে, কমিশন তার সুপরিশে গণমাধ্যম সুরক্ষা সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের সুপারিশ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এছাড়া গণমাধ্যম কর্মীদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, বিজ্ঞাপনের অসম সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া, অসত্য তথ্য দিয়ে ডিএফপিতে প্রচার সংখ্যা বেশি দেখানোর বিদ্যমান প্রবণতা দূরকল্পে সুপারিশ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশন প্রধান বলেন, গণমাধ্যম বিষয়ক সব কিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তবে কোনগুলো সুপারিশে আসবে সেটা এই মুহুর্তে বলা যাবে না।

কমিশনের রিপোর্ট কবে নাগাদ জমা দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে আমরা প্রতিবেদন জমা দেয়ার চেষ্টা করবো। অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন পড়বে কী না সেটা সময় এলে বলা যাবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত