এফএও’র ডব্লিউএফএফের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

ক্ষুধা দূরীকরণ ও খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ৬ প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ২৪

বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা দূরীকরণে প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার ইতালির রোমে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।

প্রস্তাবগুলো হলো— ক্ষুধা ও সংঘাতের চক্র ভাঙতে হবে, যুদ্ধ বন্ধ করুন, সংলাপ শুরু করুন, সংঘাত-পূর্ণ অঞ্চলে খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করুন; এসডিজি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ, জলবায়ু কর্মে আন্তরিকতা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর স্থিতিশীলতা গড়ে তোলার অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করতে হবে; সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল ও ধাক্কা মোকাবিলায় সক্ষম করার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করতে হবে; বিশেষ করে তরুণ ও নারী উদ্যোক্তা, কৃষি ও প্রযুক্তি খাতে, উপযুক্ত অর্থায়ন ও অবকাঠামোসহ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে; বৈশ্বিক বাণিজ্য যেন খাদ্য নিরাপত্তাকে সমর্থন করে, বাধা না দেয়—সেজন্য রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বন্ধ করতে হবে এবং গ্লোবাল সাউথ ও গ্রামীণ তরুণদের জন্য, ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ ছোট ভূমির দেশ। আয়তনে ইতালির অর্ধেক। কিন্তু আমরা ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছি, পাশাপাশি আশ্রয় দিচ্ছি ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে, যারা মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, আমরা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, যা আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। আমরা বিশ্বের শীর্ষ ধান, শাকসবজি ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। আমাদের কৃষকেরা ফসল চাষের ঘনত্ব ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন। আমরা ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা কৃষক মেকানাইজেশনে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়েছি। শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। শিশুদের খর্বতা কমেছে, খাদ্যতালিকা বৈচিত্র্যময় হয়েছে মাটি, পানি ও জীব-বৈচিত্র্য সুরক্ষার মাধ্যমে। কৃষি আরও সবুজ হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি আনন্দিত যে ‘ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালাচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও)’ কর্তৃক ২০১৬ সালে গঠিত ‘নোবেল পিস লরিয়েটস অ্যালায়েন্স ফর ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড পিস’, যার একজন সদস্য আমি; সেটি এখন এফএও’র একটি মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমি আশা করি এটি আরও নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করবে।

এর আগে ইতালির রাজধানী রোমে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, এফএও সদর দপ্তরে পৌঁছালে প্রফেসর ইউনূসকে স্বাগত জানান জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক কু ডংইউ। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা রোমে এফএও সদর দপ্তরে ব্রাজিলের কৃষিবিদ এবং লেখক হোসে গ্রাজিয়ানো দা সিলভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের (ডব্লিউএফএফ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন। এরপর গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের অফিস পরিদর্শন করার কথা তার। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে তাঁর বৈঠক ছাড়াও রোমের মেয়র রবার্তো গুয়ালতিয়েরির সঙ্গে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে এবং জিবুতির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর দিনশেষের কর্মসূচি অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে এফএও মহাপরিচালক ড. কু দোংইউ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত