• facebook
  • fb_group
  • twitter
  • tiktok
  • whatsapp
  • pinterest
  • youtube
  • linkedin
  • instagram
  • google
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ
জাতীয়
রাজনীতি
বাণিজ্য
সারা দেশ
বিশ্ব
খেলা
আইন-আদালত
ধর্ম ও ইসলাম
বিনোদন
ফিচার
আমার দেশ পরিবার
ইপেপার
আমার দেশযোগাযোগশর্তাবলি ও নীতিমালাগোপনীয়তা নীতিডিএমসিএ
facebookfb_grouptwittertiktokwhatsapppinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার দেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক, মাহমুদুর রহমান 
মাহমুদুর রহমান কর্তৃক ঢাকা ট্রেড সেন্টার (৮ম ফ্লোর), ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫ থেকে প্রকাশিত এবং আমার দেশ পাবলিকেশন লিমিটেড প্রেস, ৪৪৬/সি ও ৪৪৬/ডি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্য বিভাগ: ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।ফোন: ০২-৫৫০১২২৫০। ই-মেইল: info@dailyamardesh.comবার্তা: ফোন: ০৯৬৬৬-৭৪৭৪০০। ই-মেইল: news@dailyamardesh.comবিজ্ঞাপন: ফোন: +৮৮০-১৭১৫-০২৫৪৩৪ । ই-মেইল: ad@dailyamardesh.comসার্কুলেশন: ফোন: +৮৮০-০১৮১৯-৮৭৮৬৮৭ । ই-মেইল: circulation@dailyamardesh.com
ওয়েব মেইল
কনভার্টারআর্কাইভবিজ্ঞাপনসাইটম্যাপ
> জাতীয়

ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের প্রভাব

তিস্তা এখন ধু-ধু মরুভূমি, সংকটে লাখো মানুষের জীবিকা

কর্মহীন হাজারো শ্রমিক-জেলে

# জেগেছে অসংখ্য চর

# পানি না থাকায় নদীতে মাছও পাওয়া যায় না

# সামান্য যেটুকু পানি রয়েছে, তাও প্রবাহিত হয় ছোট ছোট চ্যানেলে

হাসান উল আজিজ, লালমনিরহাট
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬: ২৯
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬: ৪১
logo
তিস্তা এখন ধু-ধু মরুভূমি, সংকটে লাখো মানুষের জীবিকা

হাসান উল আজিজ, লালমনিরহাট

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬: ২৯
ছবি: সংগৃহীত

বর্ষাকালে খরস্রোতা তিস্তাকে শুষ্ক মৌসুমে চেনাই যায় না। শুকিয়ে যেন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। ফলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে পড়েছে। জীববৈচিত্র্য প্রায় বিলীন। জেলে আর মাঝিদের নেই কর্মব্যস্ততা। থমকে গেছে লাখ লাখ পরিবারের উপার্জন। জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। পানির অভাবে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকার রাজপুর, খুনিয়াগাছ, গোবর্ধন, মহিষখোঁচা, কালমাটি, চরবৈরাতি, ভোটমারী, সানিয়াজান, সিন্দুর্না, ডালিয়াসহ অন্তত শতাধিক চরাঞ্চলের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীতে পানি নেই, নেই মাছও। যতটুকু পানি আছে, তাতে মাছের ছোট ছোট পোনা আর ব্যাঙের ছানা ছাড়া কিছুই থাকার কথা নয়। তাই জেলেরা নদীতীরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিস্তার উজানে ভারতের একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আর গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে এ নদীর উচ্ছ্বল গতিকে রোধ করে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের শুরুতেই তিস্তায় নাব্য সংকট তীব্র হওয়ায় মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাপারের লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও পলি জমে ভরে গেছে নদী। খনন, সংস্কার, শাসন ও সংরক্ষণ না করায় একসময়ের খরস্রোতা নদীটি এখন অনেক স্থানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখন তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন ও নদী খনন করে চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি হলে লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা অনেকটা লাঘব হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তিস্তার নাব্য সংকটে ২০ রুটে নৌচলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় চার হাজার নৌশ্রমিক ও জেলে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। নদীর লালমনিরহাট অংশ এখন মৃতপ্রায়। ফলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে পড়েছে।

তিস্তাপারের বাসিন্দা শহিদার রহমান বলেন, ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে আমাদের এ অঞ্চলে। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরই বাংলাদেশকে পানি দেয় ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা হয়। পক্ষান্তরে শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী পানি মেলে না। এভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত।

তিনি আরো বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হলেও এখনো সুফল মেলেনি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ১২৫ কিলোমিটার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জেলেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে হেঁটেই তিস্তা পার হওয়া যায়, তাই মাঝিদের আর নৌকা বাইতে হয় না। এ কারণে বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। পানির অভাবে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। নদীপারের দুই কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ভয়াবহ হুমকি থেকে রক্ষা করতে দ্রুত তিস্তাচুক্তি সই করতে হবে।

এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাপের মুখে তিস্তা পানিচুক্তি বাস্তবায়ন ২০১১ সালে বাধাগ্রস্ত হয়। সে সময় থেকে বাংলাদেশ সরকার তিস্তা পানিচুক্তি বাস্তবায়নের চিন্তার পাশাপাশি বিকল্প চিন্তা শুরু করে, যার ফলে তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। ২০২১ সালে তিস্তা মহাপরিকল্পনার সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। একই বছরের মার্চে বাংলাদেশকে চীনা প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন জমা দেয়। দ্রুত তিস্তা প্রকল্প শুরু করতে আগ্রহী তারা। বিনিয়োগেরও আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি। তখন নড়েচড়ে বসে ভারত সরকার। ফলে তারা প্রকল্পটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলÑতিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারত এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। ডিসেম্বর থেকে মার্চের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখে ভারত ২০১১ সালে বাংলাদেশকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি। তখন থেকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুদেশের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপাড়ের গোবর্ধন গ্রামের কৃষক দবিয়ার রহমান বলেন, তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে। মাইলের পর মাইল ধু-ধু বালুচর।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীতে বছরে তিন-চার মাস পানিপ্রবাহ থাকে। তিস্তায় সামান্য কিছু পানি থাকলেও তা খণ্ড খণ্ড কয়েকটি চ্যানেলে প্রবাহিত হওয়ায় কোনো কাজে আসছে না। তিস্তায় নির্দিষ্ট একটি চ্যানেল করা হলে এসব পানি উপকারে আসত।

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন’-র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। নদীপাড়ের ২ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ভয়াবহ হুমকি থেকে রক্ষা করতে হলে দ্রুত তিস্তা চুক্তি সই করতে হবে। আর দিল্লির তাঁবেদারি নয়, তিস্তা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে না পারলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করবে ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের লালমনিরহাট জেলা কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তিস্তা মেগা প্রকল্প ও চুক্তি বাস্তবায়ন এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তার দুই পাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারে একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। একই সঙ্গে পাল্টে যাবে গোটা উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন-চিত্র।

বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে আমাদের এ অঞ্চলে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারপরই বাংলাদেশকে পানি দেয় ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশে দেখা দেয় প্রবল বন্যা । আবার শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী পানি মেলে না। এভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মাহমুদুর রহমান কর্তৃক প্রকাশিত এবং আল-ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস, ৪২৩, এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা-১২১৭ থেকে এবং অস্থায়ীভাবে মিডিয়া প্রিন্টার্স লি. ৪৪৬/এইচ, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে মুদ্রিত। বার্তা, সম্পাদকীয় ও বাণিজ্য বিভাগ : ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ৯৯, কাজী নজরুল ইসলাম এভিণিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। পিএবিএক্স : ০২-৫৫০১২২৫০। ই-মেইল : info@dailyamardesh.com
ছবি: সংগৃহীত

বর্ষাকালে খরস্রোতা তিস্তাকে শুষ্ক মৌসুমে চেনাই যায় না। শুকিয়ে যেন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। ফলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে পড়েছে। জীববৈচিত্র্য প্রায় বিলীন। জেলে আর মাঝিদের নেই কর্মব্যস্ততা। থমকে গেছে লাখ লাখ পরিবারের উপার্জন। জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। পানির অভাবে লালমনিরহাটের তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকার রাজপুর, খুনিয়াগাছ, গোবর্ধন, মহিষখোঁচা, কালমাটি, চরবৈরাতি, ভোটমারী, সানিয়াজান, সিন্দুর্না, ডালিয়াসহ অন্তত শতাধিক চরাঞ্চলের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীতে পানি নেই, নেই মাছও। যতটুকু পানি আছে, তাতে মাছের ছোট ছোট পোনা আর ব্যাঙের ছানা ছাড়া কিছুই থাকার কথা নয়। তাই জেলেরা নদীতীরে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিস্তার উজানে ভারতের একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আর গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে এ নদীর উচ্ছ্বল গতিকে রোধ করে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের শুরুতেই তিস্তায় নাব্য সংকট তীব্র হওয়ায় মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিস্তাপারের লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও পলি জমে ভরে গেছে নদী। খনন, সংস্কার, শাসন ও সংরক্ষণ না করায় একসময়ের খরস্রোতা নদীটি এখন অনেক স্থানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এখন তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন ও নদী খনন করে চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি হলে লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা অনেকটা লাঘব হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তিস্তার নাব্য সংকটে ২০ রুটে নৌচলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় চার হাজার নৌশ্রমিক ও জেলে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না থাকায় উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। নদীর লালমনিরহাট অংশ এখন মৃতপ্রায়। ফলে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে পড়েছে।

তিস্তাপারের বাসিন্দা শহিদার রহমান বলেন, ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে, যার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে আমাদের এ অঞ্চলে। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরই বাংলাদেশকে পানি দেয় ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা হয়। পক্ষান্তরে শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী পানি মেলে না। এভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত।

তিনি আরো বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হলেও এখনো সুফল মেলেনি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশের তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ১২৫ কিলোমিটার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ অকার্যকর হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জেলেরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে হেঁটেই তিস্তা পার হওয়া যায়, তাই মাঝিদের আর নৌকা বাইতে হয় না। এ কারণে বেকার ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। পানির অভাবে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। নদীপারের দুই কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ভয়াবহ হুমকি থেকে রক্ষা করতে দ্রুত তিস্তাচুক্তি সই করতে হবে।

এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাপের মুখে তিস্তা পানিচুক্তি বাস্তবায়ন ২০১১ সালে বাধাগ্রস্ত হয়। সে সময় থেকে বাংলাদেশ সরকার তিস্তা পানিচুক্তি বাস্তবায়নের চিন্তার পাশাপাশি বিকল্প চিন্তা শুরু করে, যার ফলে তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। ২০২১ সালে তিস্তা মহাপরিকল্পনার সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। একই বছরের মার্চে বাংলাদেশকে চীনা প্রতিষ্ঠান প্রতিবেদন জমা দেয়। দ্রুত তিস্তা প্রকল্প শুরু করতে আগ্রহী তারা। বিনিয়োগেরও আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি। তখন নড়েচড়ে বসে ভারত সরকার। ফলে তারা প্রকল্পটির বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলÑতিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারত এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ পাবে। ডিসেম্বর থেকে মার্চের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ পানি ধরে রেখে ভারত ২০১১ সালে বাংলাদেশকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানি দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি হয়নি। তখন থেকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুদেশের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপাড়ের গোবর্ধন গ্রামের কৃষক দবিয়ার রহমান বলেন, তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে। মাইলের পর মাইল ধু-ধু বালুচর।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীতে বছরে তিন-চার মাস পানিপ্রবাহ থাকে। তিস্তায় সামান্য কিছু পানি থাকলেও তা খণ্ড খণ্ড কয়েকটি চ্যানেলে প্রবাহিত হওয়ায় কোনো কাজে আসছে না। তিস্তায় নির্দিষ্ট একটি চ্যানেল করা হলে এসব পানি উপকারে আসত।

‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলন’-র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। নদীপাড়ের ২ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ভয়াবহ হুমকি থেকে রক্ষা করতে হলে দ্রুত তিস্তা চুক্তি সই করতে হবে। আর দিল্লির তাঁবেদারি নয়, তিস্তা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে না পারলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি পালন করবে ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলনের লালমনিরহাট জেলা কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তিস্তা মেগা প্রকল্প ও চুক্তি বাস্তবায়ন এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তার দুই পাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করতে পারে একমাত্র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে তিস্তাপাড়ের মানুষের পানির জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। একই সঙ্গে পাল্টে যাবে গোটা উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন-চিত্র।

বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে আমাদের এ অঞ্চলে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারপরই বাংলাদেশকে পানি দেয় ভারত। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশে দেখা দেয় প্রবল বন্যা । আবার শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী পানি মেলে না। এভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

ভারতআমার দেশতিস্তা
সর্বশেষ
১

হত্যার আগে তাদের হুমকি দিয়েছিলেন রায়হান

২

সব আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে চলতি মাসেই

৩

যুবককে হত্যার ৯৯ দিন পর ব্যাগবন্দি মাথার খুলি উদ্ধার

৪

তিস্তা এখন ধু-ধু মরুভূমি, সংকটে লাখো মানুষের জীবিকা

৫

উখিয়ায় পৃথক ঘটনায় তরুণ-তরুণী মরদেহ উদ্ধার

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে দুই মেরুতে দুই দপ্তর

শনিবার রাতে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক আমার দেশকে বলেন, ‘বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেটে জড়িত; তারা একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগসাজশে চক্র গড়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এ কারণে

৪ ঘণ্টা আগে

মধ্যরাতে হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে বাসে আগুন

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত ১২ টার দিকে রাজধানীর হাজারীবাগ থানার বেড়িবাঁধ রোডে শেখ ফজিলাতুন্নেসা কলেজের সামনে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হাজারীবাগ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বাসটি সম্পূর

৬ ঘণ্টা আগে

বিতর্কিত পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হবে না

বিতর্কিত পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনের দায়িত্বে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। শনিবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) লাইনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

১০ ঘণ্টা আগে

দেশটাকে গুছিয়ে দিয়ে যেতে চাই : অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা আর মাত্র কয়েকটা মাস আছি। এ সময়ের মধ্যে দেশটাকে গুছিয়ে দিয়ে যেতে চাই, যাতে সামনে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

১১ ঘণ্টা আগে
তিস্তা এখন ধু-ধু মরুভূমি, সংকটে লাখো মানুষের জীবিকা

তিস্তা এখন ধু-ধু মরুভূমি, সংকটে লাখো মানুষের জীবিকা

পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে দুই মেরুতে দুই দপ্তর

পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে দুই মেরুতে দুই দপ্তর

মধ্যরাতে হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে বাসে আগুন

মধ্যরাতে হাজারীবাগ বেড়িবাঁধে বাসে আগুন

বিতর্কিত পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হবে না

বিতর্কিত পুলিশ সদস্যদের নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হবে না