ড. তোফায়েল আহমেদ

দলগুলোর সম্মত প্রস্তাব দুই মাসে বাস্তবায়ন করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ১২

রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, সেগুলো আগামী দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা বলেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ। আর যেগুলোতে একমত হওয়া যায়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলমান রাখার কথা বলেছেন তিনি।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই সনদঃ বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন কথা বলেন তিনি। সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (সিআইপিজি)-এর উদ্যোগে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যে সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে সেগুলো আগামী দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর যেগুলোতে একমত হয়নি সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলমান রাখতে হবে।

তিনি প্রবাসীদের ভোটার হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, প্রবাসীরা পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যগত ভুলগুলো শোধরাতে পারবে না। সরকার পাসপোর্টের তথ্যের ভিত্তিতে প্রবাসীদের ভোটার লিস্ট ও পোস্টাল ব্যালট করতে পারে। কেউ চাইলে সরাসরি ভোট দিতে পারবে অথবা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তারা অগ্রিম ভোট দিতে পারবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী দেশের ভিতরেও পোস্টাল ব্যালট উন্মুক্ত করলে সবাই ভোট দিতে পারব। এতে ভোটের সংখ্যা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের উপকারভোগী গোষ্ঠীগুলো প্রতিবিপ্লবের বিষয়ে সচেতন নয়। যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যদি অবহেলায় হারিয়ে ফেলি তাহলে স্বৈরাচার আবার ফিরে আসবে। তাই রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে হবে। শুধু ভোট আয়োজন করাই সংস্কার নয়।

তিনি বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিশেষত জামায়াত বিএনপির ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ইসলামী ও মধ্যপন্থী দলগুলোর ঐক্য মজবুত করতে হবে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে এই অনির্বাচিত সরকারকে। তাই সবাইকে সাবধানে কথা ও কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের অনেক সুবিধা আছে। এই পদ্ধতিতে ভোট হলে সবার ভোট গণনা হয়। সবার ভোটের গুরুত্ব পায়। তবে এই পদ্ধতিতে কোন দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তাই সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা করতে হবে। পিআর হবে, না একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিতে হবে তা রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়া উচিত ছিল। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি না থাকার কারণে মব ভায়োলেন্স হচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচন একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি ও জাতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য উপযোগী যেকোনো পিআর পদ্ধতিতে হতে পারে।

মূল প্রবন্ধে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম জুলাই সনদ নিয়ে বলেন, জুলাই বিপ্লব ছিল অরাজনৈতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, যাতে আপামর সকল শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তাই জুলাই যে আকাঙ্ক্ষায় সংগঠিত হয়েছিল তা এই সনদে উল্লেখ থাকতে হবে। সকল জাতি, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী চাকমা মারমাদের অধিকারও এই সনদের দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা, দুর্নীতিদমন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, সামাজিক সমতা ও ন্যায্যতা, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন আনয়নের জন্য এই সনদকে অবশ্যই আইনি দলিল হিসেবে রাখতে হবে। সংবাদ মাধ্যম, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বিচার বিভাগসহ সকল প্রতিষ্ঠানকে পূর্বের সরকার ধ্বংস করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল যে বিচার বিভাগ রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে রায় দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ক্ষমতার ভারসাম্য ইত্যাদি জুলাই সনদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের রূপরেখা থাকতে হবে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম ওয়ারিসুল করিম বলেন, বর্তমান একক সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচন পদ্ধতিতে ম্যান্ডেটের ক্রাইসিস থাকে। যদি তিনটি প্রধান দল যদি নির্বাচন করে তাহলে মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৫১ টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। আবার ৪ টি দল অংশগ্রহণ করলে ১৩/১৪ শতাংশ ভোট পেয়েও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। এছাড়াও কিছু কিছু আসনে বা জেলায় এককেন্দ্রীক নির্বাচন হয় যা ঠেকানো যায় না। ১৫১ টি দেশে কোন না কোন ভাবে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ইউকে এবং ইউএসএ তে র‌্যাংক ভোটিং চালু হয়েছে যা একটি আনুপাতিক পদ্ধতি।

বর্তমান পদ্ধতির মতোই পিআর পদ্ধতিতেই ভোট হতে পারে যেখানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিতে ৩০০ আসনে নির্বাচন হবে এবং ৩০০ আসনের জন্য আনুপাতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

সিআইপিজি-এর চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মো: মোজাম্মেল হক উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। সাবেক সচিব ড. মো: শরিফুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য সাবেক সচিব মু. আবদুল কাইয়ূম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, এসএফ আহমেদ অ্যান্ড কো.-এর সিনিয়র পার্টনার চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এনামুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (অব:) ও জাতিসংঘ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. ফজলে রাব্বি সাদিক আহমেদ প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত