উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়া হচ্ছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে। সূত্র বলছে, জুলাইয়ের অন্যতম এই বিপ্লবীকে সিঙ্গাপুর অথবা থাইল্যান্ডে নেয়া হবে। তবে এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না- তাকে কোথায় নেয়া হবে।
যদিও এর আগে জানা যায়, সিঙ্গাপুর নয় উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামীকাল সোমবার থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে হাদিকে। তবে হাদিকে যেখানেই নেয়া হোক, সরকার এ ব্যাপারে তার পরিবারকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে বলে জানা গেছে।
পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার সকালেই হাদিকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে নিয়ে যেতে চান তারা। এজন্য এরই মধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এজন্য ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর আগেই সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, হাদির চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে। তবে এর সবকিছুই হবে চিকিৎসকের অনুমোদন সাপেক্ষে। তবে কেউ কেউ বলছেন, থাইল্যান্ডের চেয়ে সিঙ্গাপুরে হাদির চিকিৎসা ভাল হবে। এমন পরিস্থিতিতে তাকে কোন দেশে নেয়া হবে- সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আগামীকাল সোমবার সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। রোববার সকালে হাদির পরিবার ও একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মূলত সরকার হাদিকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে নেয়ার জন্য আজকে সকালেই সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে। তবে পরে হাদির পরিবারের ইচ্ছায় তাকে ব্যাংককে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
অন্যদিকে, তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল ভর্তি কার হতে পারে বলে জানা গেছে। ঢাকা থেকে একটি বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে।
হাদির গুরুতর অসুস্থতার কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আশ্বাস দিয়েছেন চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে বিদেশে পাঠানো হবে। সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, যার জন্য তার পরিবার ও 'ইনকিলাব মঞ্চ' সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আগে এর আজ দুপুরে ওসমান হাদির চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা ঢাকা মেডিকেল কলেজ নিউরোসার্জারি বিভাগের অস্ত্রোপচার দলের অন্যতম সদস্য ও নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আব্দুল আহাদ গণমাধ্যমকে জানান, ওসমান হাদি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন। তাকে বিদেশে নেয়ার আলোচনা চলছে।
ক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শরিফ ওসমান হাদির প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। অপারেশন-পরবর্তী উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। রোববার চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে মেডিকেল বোর্ড পুনরায় তার শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করেছেন চিকিৎসকরা।
বোরবার সকালে পুনরায় করা সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ফোলা (Cerebral Edema) পূর্বের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি নির্দেশ করে।
রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা ও মেকানিক্যাল ভেন্টিলেটরের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল (Stable) রয়েছে। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি বা অবনতি পরিলক্ষিত হয়নি। চেস্ট ড্রেইন টিউব সচল রয়েছে।
হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা বর্তমানে বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পূর্বের তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরের কিছু হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। এ কারণে এসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেক্ট্রোলাইট অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা করা হচ্ছে। রক্ত জমাট বাধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা বর্তমানে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, হাদির ব্রেন স্টেমে আঘাত ও মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ফোলাজনিত চাপের কারণে রক্তচাপে ওঠানামা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজ তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট চলমান রয়েছে। রোগীর ব্লাড সুগার নিবিড়ভাবে মনিটর করা হচ্ছে। এ ধরনের জটিল ও সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থায় ব্লাড সুগারের ওঠানামা একটি পরিচিত ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ, যা মেডিকেল টিম সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখছে।

