গভীর নিম্নচাপে সারা দেশে ঝরছে বৃষ্টি, ৭ জেলায় বন্যার শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১৭
ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টি ঝরছে। আজ দক্ষিণাঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হলেও আগামীকাল শুক্রবার থেকে উত্তরাঞ্চলেও বৃষ্টির প্রবণতা আরো বাড়তে পারে। এছাড়া ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির প্রভাবে ৭ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

এই নিম্নচাপের অবস্থান বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে হলেও এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ‌এরই মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এবং সেই সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। তবে বৃষ্টি আগামীকাল থেকে আরো বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, গভীর নিম্নচাপটির অবস্থান এখন ভারতের ওড়িশা সংলগ্ন উপকূলে। এটা বাংলাদেশ থেকে অনেকটা দূরে।

নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর এখন উত্তাল। তাই এর মধ্যেই চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গভীর নিম্নচাপটি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগোনোর সম্ভাবনা আছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, নিম্নচাপটির প্রভাবে উপকূলীয় চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হয়ে গেছে। এটি আজ দিনভর থাকতে পারে। শুধু উপকূলীয় অঞ্চল নয় গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের প্রায় সবখানেই কম, বেশি বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানীতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আজ উত্তরের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হতে পারে তবে আগামীকাল তা বাড়তে পারে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৯৫ মিলিমিটার। রাজধানীতে এ সময় ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

এদিকে ভারী বৃষ্টিতে ৭ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার নদনদীর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, সেলোনিয়া ও ফেনী নদীর পানি সমতল বেড়েছে। আগামী দুদিনে এসব নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। এর ফলে মুহুরী, সেলোনিয়া ও ফেনী নদীর পানি ফেনী জেলায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।

এতে বলা হয়, এই সময়ে চট্টগ্রাম জেলায় ফেনী নদীর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে, ফলে নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তৃতীয় দিনে পানি সমতল কমে আসতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ বিভাগের কংস নদীর পানি কমেছে, তবে সোমেশ্বরী ও ভুগাই নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী তিন দিনে এসব নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে সোমেশ্বরী, ভুগাই ও কংস নদীর শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার অংশে পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হয়ে নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, এ ছাড়াও বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় উঁচু জোয়ার দেখা দিচ্ছে। আগামী দুদিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে সন্ধ্যার মধ্যে ১০ জেলার ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. তরিকুল নেওয়াজ কবির স্বাক্ষরিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর (পুনঃ) সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের তিস্তা নদীর পানি সমতল বেড়েছে, তবে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কিছুটা কমেছে। আগামী তিন দিনে এসব নদীর পানি আবারো বাড়তে পারে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত