বেশির ভাগ নদীর পানি বেড়েছে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ২০: ২৮

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে দেশের বেশির ভাগ নদ–নদীর পানি বেড়েছে। কোনো কোনো এলাকায় নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, আরো তিনদিন সারাদেশেই কমবেশি বর্ষণ অব্যাহত থাকবে। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। আগামী ৫ বা ৬ জুন থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে। সবমিলেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, সিলেটে চারটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি জানান, আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীসমূহের পানি সমতল আগামী দুই দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

অন্যদিকে সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, ধলাই ও সোমেশ্বরী নদীসমূহের পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এই সময়ে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জ জেলার উক্ত নদীসমূহ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পেতে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় মুহুরী, ফেনী, হালদা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।

এছাড়া রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী দুই দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে বলেও বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

এদিকে সিকিমে টানা ভারি বৃষ্টির মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বাড়তে থাকায় 'রেড অ্যালার্ট' জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর।

বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে সিকিম রাজ্যের মাঙন, গ্যালশিং ও সোরেং জেলায়। সিকিম হিমালয়ের চিতামু হ্রদ থেকে সৃষ্টি নদী তিস্তা ভারতের সীমানা পেরিয়ে নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে তিস্তার উজানে বন্যা দেখা দিলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে।

বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, রংপুর বিভাগে তিস্তার সঙ্গে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং তিস্তার পানি বিপৎসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান আজ বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে দেশের প্রায় সব জায়গায় নদ–নদীর পানি বেড়েছে। ৬৭টি পর্যবেক্ষণকারী নদ–নদীর ৫০টিতেই পানি বেড়েছে। এসব নদ–নদীর যে ১১৬টি পয়েন্টে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তার মধ্যে ৮৯টিতেই পানি বেড়েছে।

টানা বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হতে শুরু করেছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশের দেশ ভারতের আসাম এবং মেঘালয়েও হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। ফলে পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রায় সব নদ-নদীতে বাড়ছে পানি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত