ড. মো. শহিদুল ইসলাম
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি। এটি খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং সম্পদের দক্ষ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। আধুনিক কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে কৃষি খাত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তাই গবেষণার মাধ্যমে এমন ফসলের জাত উন্নয়ন করতে হবে, যা প্রতিকূল আবহাওয়া সহ্য করতে সক্ষম হবে। এ ধরনের ফসলের মধ্যে রয়েছে খরা-সহনশীল ধান, গম ও ভুট্টার জাত উন্নয়ন; উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য লবণ-সহনশীল ফসলের উন্নয়ন; বন্যা-সহনশীল ধানের জাত, যা দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকলেও ফলন দিতে পারবে । এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রা-সহনশীল ফসল উদ্ভাবন; রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন; টিস্যু কালচার প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদন; দ্রুত বর্ধনশীল ও পুষ্টিকর ফসল উন্নয়ন এবং ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত ফসল ব্যবস্থাপনা অন্যতম ।
উন্নত কৃষিপ্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিকে আরো কার্যকর ও টেকসই করা সম্ভব। প্রযুক্তিগুলো হলো—রিমোট সেন্সিং ও জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমির অবস্থা বিশ্লেষণ; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি; স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থা ও ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম; রোবোটিক কৃষিপ্রযুক্তির উন্নয়ন, যা শ্রমঘন কৃষিব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে। স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। পাশপাশি জোরদার করা উচিত কৃষি অটোমেশন ও নির্ভুল চাষাবাদ পদ্ধতির উদ্ভাবন; ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিপণ্যের ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করা; স্মার্ট সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিক সেচ ও সার প্রয়োগ এবং হাইড্রোপনিক্স ও অ্যাকুয়াপনিক্স চাষের প্রসার।
মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে ও টেকসই কৃষি নিশ্চিত করতে নিম্নোক্ত বিষয়ে গবেষণা জোরদার করতে হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে জৈব ও ন্যানো সার ব্যবহারের প্রসার; ফসল চক্র পদ্ধতি ও সবুজ সার ব্যবহারের উদ্যোগ; পুনর্জনন কৃষি প্রযুক্তি, যা মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করবে। এছাড়া মাইক্রোবিয়াল সার ও মাটির জৈব বৈচিত্র সংরক্ষণ; কার্বন কৃষিপ্রযুক্তির প্রসার, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক। একই সাথে ভার্মি কম্পোস্ট ও অন্যান্য জৈবসারের উন্নয়ন ও ব্যবহার; অরগানিক ফার্মিং ও রাসায়নিক দ্রব্যমুক্ত কৃষির প্রসার; ন্যানো ফার্টিলাইজার ও বায়োস্টিমুল্যান্ট ব্যবহারের উন্নয়ন এবং টেকসই কৃষির জন্য কভার ক্রপিং কৌশল অন্যতম।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির সংকট বাড়ছে। তাই দক্ষ পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ড্রিপ ও স্প্রিংকলার সেচ প্রযুক্তি ব্যবহার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও খাল পুনরুদ্ধার এবং জলাশয় সংরক্ষণ কর্মসূচী গ্রহণ করা অপরিহার্য। সেচ কার্যক্রমের জন্য সৌরশক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ, স্মার্ট ইরিগেশন প্রযুক্তির উন্নয়ন; বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ব্যবহার এবং কৃষিবর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে পানি পরিশোধন কৌশলের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।
পশুপালন ও মৎস্য খাত বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই উচ্চ উৎপাদনশীল গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধী প্রাণিসম্পদ জাত ও টিকা উন্নয়ননের দিকে নজর দিতে হবে। আধুনিক মৎস্যচাষ পদ্ধতির ব্যবহার যেমন বায়োফ্লক ও কেজ ফার্মিং, পরিবেশবান্ধব পশু খাদ্য উৎপাদন, বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন, জলজ প্রাণীর জন্য উন্নত পুষ্টির খাদ্য তৈরি, পরিবেশসম্মত প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনার কৌশল, উন্নত দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন প্রযুক্তি, প্রাণিসম্পদ বীমা ব্যবস্থা এবং জিনগত উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চ গুণগত মানের দুগ্ধ উৎপাদন কার্যক্রমের কৌশল উদ্ভাবনে মনোযোগী হতে হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষকদের উৎপাদন, বাজার প্রবাহ ও আয় বৃদ্ধি করতে সহায়ক। কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে কৃষকরা সরাসরি বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেন, যার মাধ্যমে তারা তাদের লাভ বাড়াতে পারবেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, পোকামাকড় দমন ও রোগ প্রতিকারের বিষয়ে কৃষকদের জন্য মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন। কৃষিপণ্যের ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করতে ব্লকচেইন ব্যবহৃত হতে পারে। কৃষকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যেন সহজে ঋণ ও বীমা সুবিধা পেতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ, কোর্স ও সেমিনার আয়োজন করা; অ্যাক্সেসযোগ্য ডিজিটাল বাজার: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন, যা মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাবে।
কৃষি গবেষণাকে এগিয়ে নিতে নীতি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে কৃষি খাতের উন্নয়ন ও কৃষকদের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। নীতি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সহায়ক হবে। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সরকারি তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধি করা জরুরি, বিশেষ করে ব্রি, বারি, বিনা ও বিডব্লিউএমআরআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য। এই তহবিল কৃষি গবেষণা, উদ্ভাবন ও কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি প্রদান করতে সহায়ক হবে।
উন্নত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথ গবেষণায় কৃষিপ্রযুক্তি স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রযুক্তি উন্নয়ন ও বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়া বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন ও সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রযুক্তি দ্রুত মাঠে পৌঁছাতে সহায়ক হবে। গবেষণায় কৃষকের চাহিদা, উচ্চ ফলন, রোগ প্রতিরোধ ও পরিবেশগত সহনশীলতা গুরুত্ব পাবে। কৃষি সম্প্রসারণ সেবার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে পৌঁছানো জরুরি। তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দরকার, যাতে তারা কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব পদক্ষেপ কৃষি গবেষণাকে শক্তিশালী করবে এবং কৃষকদের সাফল্যে সহায়ক হবে। তরুন শিক্ষিত শ্রেণিকে কৃষিতে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষিতে প্রদত্ত ভতুর্কি যেন প্রকৃত কৃষকরা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে করতে হবে ফসল সংরক্ষন ও বিতরনের উন্নত ব্যবস্থা। কৃষক ও সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে পন্যমূল্যের আকাশ-পাতাল ব্যবধান কমিয়ে আনতে না পারলে কৃষিখাতের বিকাশ সম্ভব নয়।
উন্নয়নমূলক গবেষণার পরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, যা কৃষি খাতের সঠিক উন্নয়ন ও টেকসই বৃদ্ধির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। এসব চ্যালেঞ্জ সমাধান করা জরুরি। কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কৃষকদের প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানানো সম্ভব হবে শুধু সঠিক আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষিতে প্রভাব ফেলছে, তাই জলবায়ু অভিযোজন কৌশল ও প্রযুক্তি উন্নয়ন করা জরুরি। খরা, বন্যা, লবণাক্ততা ও অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলায় নতুন প্রযুক্তি প্রয়োজন। অনেক কৃষক উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণে অনিচ্ছুক। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়।
গ্রামীণ এলাকায় কৃষকদের বাজারে প্রবেশে অবকাঠামোর অভাব এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের স্বল্পতা রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকদের বাজারে প্রবেশ সহজ করা যাবে, যা তাদের আয় বৃদ্ধি করবে। কৃষিনীতির বাস্তবায়ন প্রায়ই সঠিকভাবে হয় না। কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সুদৃঢ় মনিটরিং ব্যবস্থা প্রয়োজন, যাতে কৃষকরা সঠিক সুবিধা পায় এবং কৃষি খাতের উন্নয়ন হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করলে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সফল হবে, যা কৃষি খাতকে শক্তিশালী ও টেকসই করবে।
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন সম্ভাবনাময়। জলবায়ু-সহনশীল কৃষি, স্মার্ট ফার্মিং, জৈব প্রযুক্তি ও ডিজিটাল বাজার সংযোগের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব। কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা হবে। কৃষি খাতে উন্নতির জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা অপরিহার্য। টেকসই কৃষিপ্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও কৃষকদের জীবনমান উন্নত করবে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ক্ষমতায়ন ও নতুন ব্যবসায়িক মডেল জরুরি, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীবিকা উন্নয়নে সহায়ক হবে।
লেখক : কৃষি বিজ্ঞানী ও সাবেক মহাপরিচালক, বিএআরআই
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি। এটি খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং সম্পদের দক্ষ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। আধুনিক কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে কৃষি খাত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তাই গবেষণার মাধ্যমে এমন ফসলের জাত উন্নয়ন করতে হবে, যা প্রতিকূল আবহাওয়া সহ্য করতে সক্ষম হবে। এ ধরনের ফসলের মধ্যে রয়েছে খরা-সহনশীল ধান, গম ও ভুট্টার জাত উন্নয়ন; উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য লবণ-সহনশীল ফসলের উন্নয়ন; বন্যা-সহনশীল ধানের জাত, যা দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকলেও ফলন দিতে পারবে । এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রা-সহনশীল ফসল উদ্ভাবন; রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন; টিস্যু কালচার প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদন; দ্রুত বর্ধনশীল ও পুষ্টিকর ফসল উন্নয়ন এবং ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত ফসল ব্যবস্থাপনা অন্যতম ।
উন্নত কৃষিপ্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিকে আরো কার্যকর ও টেকসই করা সম্ভব। প্রযুক্তিগুলো হলো—রিমোট সেন্সিং ও জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমির অবস্থা বিশ্লেষণ; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি; স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থা ও ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম; রোবোটিক কৃষিপ্রযুক্তির উন্নয়ন, যা শ্রমঘন কৃষিব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে। স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। পাশপাশি জোরদার করা উচিত কৃষি অটোমেশন ও নির্ভুল চাষাবাদ পদ্ধতির উদ্ভাবন; ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিপণ্যের ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করা; স্মার্ট সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে সঠিক সেচ ও সার প্রয়োগ এবং হাইড্রোপনিক্স ও অ্যাকুয়াপনিক্স চাষের প্রসার।
মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে ও টেকসই কৃষি নিশ্চিত করতে নিম্নোক্ত বিষয়ে গবেষণা জোরদার করতে হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে জৈব ও ন্যানো সার ব্যবহারের প্রসার; ফসল চক্র পদ্ধতি ও সবুজ সার ব্যবহারের উদ্যোগ; পুনর্জনন কৃষি প্রযুক্তি, যা মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করবে। এছাড়া মাইক্রোবিয়াল সার ও মাটির জৈব বৈচিত্র সংরক্ষণ; কার্বন কৃষিপ্রযুক্তির প্রসার, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক। একই সাথে ভার্মি কম্পোস্ট ও অন্যান্য জৈবসারের উন্নয়ন ও ব্যবহার; অরগানিক ফার্মিং ও রাসায়নিক দ্রব্যমুক্ত কৃষির প্রসার; ন্যানো ফার্টিলাইজার ও বায়োস্টিমুল্যান্ট ব্যবহারের উন্নয়ন এবং টেকসই কৃষির জন্য কভার ক্রপিং কৌশল অন্যতম।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির সংকট বাড়ছে। তাই দক্ষ পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ড্রিপ ও স্প্রিংকলার সেচ প্রযুক্তি ব্যবহার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও খাল পুনরুদ্ধার এবং জলাশয় সংরক্ষণ কর্মসূচী গ্রহণ করা অপরিহার্য। সেচ কার্যক্রমের জন্য সৌরশক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ, স্মার্ট ইরিগেশন প্রযুক্তির উন্নয়ন; বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ব্যবহার এবং কৃষিবর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে পানি পরিশোধন কৌশলের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।
পশুপালন ও মৎস্য খাত বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই উচ্চ উৎপাদনশীল গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধী প্রাণিসম্পদ জাত ও টিকা উন্নয়ননের দিকে নজর দিতে হবে। আধুনিক মৎস্যচাষ পদ্ধতির ব্যবহার যেমন বায়োফ্লক ও কেজ ফার্মিং, পরিবেশবান্ধব পশু খাদ্য উৎপাদন, বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন, জলজ প্রাণীর জন্য উন্নত পুষ্টির খাদ্য তৈরি, পরিবেশসম্মত প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনার কৌশল, উন্নত দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন প্রযুক্তি, প্রাণিসম্পদ বীমা ব্যবস্থা এবং জিনগত উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চ গুণগত মানের দুগ্ধ উৎপাদন কার্যক্রমের কৌশল উদ্ভাবনে মনোযোগী হতে হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষকদের উৎপাদন, বাজার প্রবাহ ও আয় বৃদ্ধি করতে সহায়ক। কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে কৃষকরা সরাসরি বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেন, যার মাধ্যমে তারা তাদের লাভ বাড়াতে পারবেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, পোকামাকড় দমন ও রোগ প্রতিকারের বিষয়ে কৃষকদের জন্য মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন। কৃষিপণ্যের ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করতে ব্লকচেইন ব্যবহৃত হতে পারে। কৃষকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যেন সহজে ঋণ ও বীমা সুবিধা পেতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ, কোর্স ও সেমিনার আয়োজন করা; অ্যাক্সেসযোগ্য ডিজিটাল বাজার: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন, যা মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাবে।
কৃষি গবেষণাকে এগিয়ে নিতে নীতি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে কৃষি খাতের উন্নয়ন ও কৃষকদের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। নীতি সহায়তা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সহায়ক হবে। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সরকারি তহবিল বরাদ্দ বৃদ্ধি করা জরুরি, বিশেষ করে ব্রি, বারি, বিনা ও বিডব্লিউএমআরআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য। এই তহবিল কৃষি গবেষণা, উদ্ভাবন ও কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তি প্রদান করতে সহায়ক হবে।
উন্নত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যৌথ গবেষণায় কৃষিপ্রযুক্তি স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করা যাবে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা প্রযুক্তি উন্নয়ন ও বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ ছাড়া বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন ও সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রযুক্তি দ্রুত মাঠে পৌঁছাতে সহায়ক হবে। গবেষণায় কৃষকের চাহিদা, উচ্চ ফলন, রোগ প্রতিরোধ ও পরিবেশগত সহনশীলতা গুরুত্ব পাবে। কৃষি সম্প্রসারণ সেবার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে পৌঁছানো জরুরি। তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দরকার, যাতে তারা কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব পদক্ষেপ কৃষি গবেষণাকে শক্তিশালী করবে এবং কৃষকদের সাফল্যে সহায়ক হবে। তরুন শিক্ষিত শ্রেণিকে কৃষিতে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষিতে প্রদত্ত ভতুর্কি যেন প্রকৃত কৃষকরা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে করতে হবে ফসল সংরক্ষন ও বিতরনের উন্নত ব্যবস্থা। কৃষক ও সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে পন্যমূল্যের আকাশ-পাতাল ব্যবধান কমিয়ে আনতে না পারলে কৃষিখাতের বিকাশ সম্ভব নয়।
উন্নয়নমূলক গবেষণার পরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, যা কৃষি খাতের সঠিক উন্নয়ন ও টেকসই বৃদ্ধির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। এসব চ্যালেঞ্জ সমাধান করা জরুরি। কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন এবং কৃষকদের প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানানো সম্ভব হবে শুধু সঠিক আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষিতে প্রভাব ফেলছে, তাই জলবায়ু অভিযোজন কৌশল ও প্রযুক্তি উন্নয়ন করা জরুরি। খরা, বন্যা, লবণাক্ততা ও অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলায় নতুন প্রযুক্তি প্রয়োজন। অনেক কৃষক উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণে অনিচ্ছুক। এজন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়।
গ্রামীণ এলাকায় কৃষকদের বাজারে প্রবেশে অবকাঠামোর অভাব এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের স্বল্পতা রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকদের বাজারে প্রবেশ সহজ করা যাবে, যা তাদের আয় বৃদ্ধি করবে। কৃষিনীতির বাস্তবায়ন প্রায়ই সঠিকভাবে হয় না। কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সুদৃঢ় মনিটরিং ব্যবস্থা প্রয়োজন, যাতে কৃষকরা সঠিক সুবিধা পায় এবং কৃষি খাতের উন্নয়ন হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করলে কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা সফল হবে, যা কৃষি খাতকে শক্তিশালী ও টেকসই করবে।
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন সম্ভাবনাময়। জলবায়ু-সহনশীল কৃষি, স্মার্ট ফার্মিং, জৈব প্রযুক্তি ও ডিজিটাল বাজার সংযোগের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব। কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা হবে। কৃষি খাতে উন্নতির জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা অপরিহার্য। টেকসই কৃষিপ্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও কৃষকদের জীবনমান উন্নত করবে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, ক্ষমতায়ন ও নতুন ব্যবসায়িক মডেল জরুরি, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং জীবিকা উন্নয়নে সহায়ক হবে।
লেখক : কৃষি বিজ্ঞানী ও সাবেক মহাপরিচালক, বিএআরআই
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৩ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৩ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৪ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে