আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি

বদরুদ্দীন উমর
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের পর প্রায় আট মাস পার হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর ৮ আগস্ট বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে। শাসন ক্ষেত্রে যে শূন্যতা ৫ তারিখে সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা ৮ তারিখে পূরণ করেছে এই সরকার।

তৎকালে এর চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আর কিছুই হতে পারত না। কারণ এই সরকার গঠিত না হলে এর একমাত্র বিকল্প ছিল সামরিক সরকার। কাজেই যারা জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় মূল ও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছিল, তারা এই সরকার প্রতিষ্ঠা করায় দেশ এক দারুণ সংকটকালে সামরিক শাসনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দেশে একটা বড় ধরনের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে মানুষ নতুন শাসকদের কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে। আওয়ামী লীগের পতনের পরও জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা মনে করেছেন, শুধু জীবনের নিরাপত্তা ও বাকস্বাধীনতাই তারা ফেরত পাবেন না, একই সঙ্গে তাদের জীবনের অনেক মৌলিক সমস্যার সমাধান এই পরিবর্তনের মাধ্যমে হবে। এই আশা খুব স্বাভাবিক।

কিন্তু প্রত্যাশা স্বাভাবিক হলেও বাস্তব পরিস্থিতি এমন নয় যাতে জনগণের এই প্রত্যাশা তারা যেমনটি চান সেভাবে পূরণ হতে পারে। যার অর্থ এই নয় যে, বর্তমান সরকার তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনস্বার্থে কিছু করেনি বা দেশের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি। একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে শাসনক্ষেত্রে যে শূন্যতা দেখা দিয়েছিল, সেটা এই সরকার পূরণ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা এই দায়িত্ব হাতে না নিলে দেশজুড়ে এক ভয়াবহ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। সরকার ক্ষমতায় থাকার আট মাস পরও দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো একেবারে স্বাভাবিক হয়নি। এখানে যে বিশৃঙ্খলা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তার থেকেই অনুমান করা যায়, বর্তমান সরকার দেশের হাল শক্তহাতে প্রথম থেকেই না ধরলে দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করত। কাজেই এ বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখলে মনে হয় যে, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বর্তমান সরকার এক সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিস্থিতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে।

কোনো সরকার জনগণের জন্য কী করতে পারে, তাদের স্বার্থ কতখানি পূরণ করতে পারে, দেশের ধনসম্পদের গণতান্ত্রিক বণ্টন জনগণের মধ্যে কত দূর ও কীভাবে করতে পারে—এগুলো নির্ভর করে সরকারের শ্রেণিচরিত্রের ওপর। কাজেই এই সরকার জনগণের প্রত্যাশা কতখানি পূরণ করতে পারে, সেটা বিবেচনা করতে হবে এর তৈরি চরিত্রের ধারা। প্রথমেই মনে রাখা দরকার—‘এই সরকার উড়ে এসে জুড়ে বসেনি।’ এদের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে গণসংযোগে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র ও জনগণ। এরা কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। এরা কোনো বিপ্লবী সরকার নয়, দেশে যে শাসকশ্রেণি আছে, এরা তার বাইরে নয়।

১৯৭২ সাল থেকে লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে গঠিত হতে থাকা ব্যবসায়ী শ্রেণির বিকশিত হয়ে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আমলে শাসকশ্রেণি হিসেবে দেশের শাসনব্যবস্থার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিগত নির্বাচনে জাতীয় সংসদে ৮০ শতাংশ সদস্যই ছিল ব্যবসায়ী। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হটিয়ে দিয়ে এভাবে ব্যবসায়ীরা তাদের স্থান অধিকার করেছে। এই ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসেবে শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ শাসন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে এখানে বলা দরকার, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও বাংলাদেশের এই শাসকশ্রেণি পালায়নি, তারা দেশেই আছে। শুধু তা-ই নয়, শাসন ক্ষেত্রে তাদের কব্জা এখনো বহাল আছে। এ কারণে এই শাসকশ্রেণি অর্থাৎ ব্যবসায়ী শ্রেণিকে সামাল দিয়েই কার্যত বর্তমান সরকারকেও বসতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেশে এক প্রকাণ্ড ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনলেও এটা কোনো সামাজিক বিপ্লব নয়। এর মাধ্যমে দেশে উৎপাদন ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, উৎপাদন ও বণ্টন ক্ষেত্রে শ্রেণি সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ সবই আগের মতোই অটুট আছে। এই অনির্বাচিত সরকারের আমলেই নয়, এর পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের আমলেও এই শাসন বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় থাকবে।

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান জনগণের মধ্যে যতটা নতুন আশার সঞ্চার করুক, যতটা তাদের প্রত্যাশার ব্যারোমিটার ওপরের দিকে উঠুক, তার সামান্যই বর্তমান সরকার পূরণ করতে পারে। শ্রমিকদের অবস্থার দিকে তাকালে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যাবে। বাংলাদেশে শ্রমিকদের অবস্থা ভালো নয়। গার্মেন্ট শ্রমিক থেকে শুরু করে কোনো ধরনের শ্রমিকের অবস্থার সামান্যতম উন্নতি এই সরকারের আমলে হয়নি। কারণ শ্রেণিগতভাবে বিগত সরকারের মতো এই সরকার মূলত মালিক শ্রেণির প্রতিনিধি।

এ সবই ঠিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যা করেছে, তাকে ছোট করে দেখা সঠিক নয়। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য শেখ হাসিনার সরকার সৃষ্টি করেছিল, তা উল্লেখযোগ্যভাবে এরা সামাল দিয়েছে। দেশ থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, তা এখন বন্ধ হয়েছে। মোটামুটি একটি স্থিতিশীলতা শাসনক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠার পর প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ এখন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সব থেকে বড় কথা, এদের আমলে জনগণের ওপর নির্যাতন হচ্ছে না। গণতান্ত্রিক একটা পরিবেশে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে এই সরকার শাসনকাজ মোটামুটি শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে পরিচালনা করছে।

সরকার কতগুলো কমিশন গঠন করে দেশের পরিস্থিতির পর্যালোচনার ব্যবস্থা করছে। কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট দাখিল করেছে। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, এসব কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা এই অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, খুব বেশি করাও এদের দিক থেকে সঠিক নয়। কমিশনগুলো যেসব সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে নির্বাচন সম্পর্কিত যে সুপারিশ করেছে, শুধু সেটা কার্যকর করাই এদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। অন্য সুপারিশগুলো একমাত্র একটি নির্বাচিত সরকার বিবেচনা করে কার্যকর করতে পারে। কাজেই এই সরকারের এখন প্রয়োজন বাস্তবত তাদের যা করণীয়, সে কাজগুলো সম্পন্ন করে যথাসময়ে নির্বাচন দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সহায়তায় তিনি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য নানা চক্রান্তমূলক কাজ করছেন। ৫ আগস্ট দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের অবস্থা ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের মতোই হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের কাজ ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। কারণ তাদের জন্য ভারতের মতো রাষ্ট্র ছিল না। তাদের কোনো নরেন্দ্র মোদি ছিলেন না। কিন্তু এখন শেখ হাসিনা ভারত সরকার ও বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির সহায়তার বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা শুধু নন, ভারতের নিজের ভূমিকাও খুব উল্লেখযোগ্য। ভারত বাংলাদেশকে তাদের একটা আশ্রিত রাজ্যে পরিচিতি করেছিল শেখ হাসিনার সহায়তায়। সেই অবস্থা হঠাৎ করে পরিবর্তিত হওয়ায় ভারত এখন ক্ষিপ্ত। তারা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে জনশত্রু ও দেশদ্রোহী শেখ হাসিনার সহায়তায় বাংলাদেশে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের লোক ও তাদের সমর্থকদের সহায়তায় নানা ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা জারি রেখেছে।

দেশে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা শুধু যে বাধা সৃষ্টি করছে তা-ই নয়, তারা এদেশে আওয়ামী লীগের লোকজনদের মাধ্যমে নানা অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে তাদের লোকেরা এই পরিস্থিতির জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করে দোষারোপের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি ঠিকমতো সামাল দেওয়া বর্তমান অনির্বাচিত দুর্বল সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কাজ একটি নির্বাচিত সরকারের। তারাই এই পরিস্থিতি মোটামুটি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে।

যে ছাত্ররা জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাদের একটা বড় অংশ এখন একটি রাজনৈতিক দল খাড়া করেছে। অনেক ধুমধাম করে তাদের এই দল আত্মপ্রকাশ করেছে। এটা স্বাভাবিক যে গণঅভ্যুত্থানে তারা যে ভূমিকা পালন করেছে, তারপর তারা নিজেদের উদ্যোগ বন্ধ করে নিশ্চুপ থাকতে পারে না। সাধারণভাবে জনগণের একটা অংশ আশা করেছে, রাজনীতির ক্ষেত্রে তারা গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে, একটা গতিশীল শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

এদিক দিয়ে কোনো আশার আলো বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। প্রথমত, ছাত্রদের এই রাজনৈতিক দল কোন আদর্শ বা নীতির ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা এখনো নেই। তারা বলছে, তারা বামপন্থি বা দক্ষিণপন্থি নয়, মধ্যপন্থি। এ ধরনের বক্তব্য অর্থহীন। শুধু মধ্যপন্থি বলতে কিছুই বোঝায় না। এর থেকে কোন রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শ কী, তা বোঝার উপায় নেই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে তারা তাদের দল খাড়া করেছে, কিন্তু বৈষম্যবিরোধী বলতে কী বোঝায়, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।

চাকরি ক্ষেত্রে কোটাবৈষম্য ও সামাজিক বৈষম্য এক জিনিস নয়। যেমন বৈষম্য হলো একই সুবিধাভোগী শ্রেণির মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য। কিন্তু সামাজিক বৈষম্য ভিন্ন জিনিস। সামাজিক বৈষম্যের অর্থ হলো শ্রেণিবৈষম্য, শোষকশ্রেণির বৈষম্য, শ্রমিক-মালিকের সম্পর্কের বৈষম্য। এ বিষয়ে ছাত্রদের দলটির কোনো বক্তব্য নেই। এদের এ পর্যন্ত নানা ঘোষণায় শ্রমিক-কৃষকের ও নিম্নবিত্ত পেশাজীবীদের সমস্যার কোনো কথা এখনো শোনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে তারা এ পর্যন্ত যেসব কাজ করেছে, তার মধ্যে এদিক দিয়ে আশার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।

বিশাল ব্যয়বহুল এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের আবির্ভাবের ঘোষণা করেছে। এরপর তারা যেসব কাজ করবে বলেছে, তার সঙ্গে গরিবদের, শ্রমিকদের ও নিম্নবিত্ত পেশাজীবীদের সমস্যার কোনো সম্পর্ক নেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপুল অর্থ ব্যয় করে তারা ইফতারির ব্যবস্থা করেছে। তারা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ইফতারির ব্যবস্থা করেছে। এসব কাজ জনগণের বা গরিবদের সপক্ষ পার্টির কাজ নয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তারা কোনো জনসমাবেশের আয়োজনও করেনি। সাধারণ মানুষের সমাবেশ ও ব্যয়বহুল ইফতার পার্টি এক জিনিস নয়।

এ ছাড়া এদের বক্তব্য ও কার্যকলাপের অন্য একটি দিকই উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এরা বলছে নির্বাচনে যাওয়ার কথা। একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের যেতেই পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠার পরই নির্বাচনের কথা সব থেকে জোরেশোরে বলছে একটি সদ্যগঠিত রাজনৈতিক দল, যেটি একটি ব্যতিক্রমী ব্যাপার। শুধু তা-ই নয়, কয়েক দিন আগে দলটির আহ্বায়ক বরিশালে তাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচন করার জন্যই তারা দল গঠন করেছেন।

এ ধরনের বক্তব্য বিস্ময়কর। নির্বাচন সম্পর্কে এই দলটির নেতারা যেভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে মনে হয় তারা মনে করেন যেহেতু তারা অভ্যুত্থান নেতৃত্ব দিয়েছেন, সে কারণে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতাসীন করবে। এর মধ্যে বাস্তব বুদ্ধির কোনো পরিচয় নেই। তা ছাড়া প্রথম থেকেই ক্ষমতায় যাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তারা কোনো রাখঢাক না করেন ঘোষণা করেছেন, এটা উদ্বেগজনক। ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার মতো বাস্তব পরিস্থিতি এক জিনিস নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তারা খুব জোর দু-চারটে আসন পেতে পারেন। এদিক দিয়ে ছাত্রদের নতুন দলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, তাদের কাছে জনগণের আশা করার মতো বিশেষ কিছু নেই।

দেশের বামপন্থি দলগুলোর অবস্থা বর্তমান পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য নয়। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এখন তাদের বিশেষ কোনো নড়াচড়া নেই। মনে হয় না যে, এদেশে এখন বামপন্থি কোনো রাজনৈতিক দল সক্রিয় আছে। এই পরিস্থিতিতে এখন বাংলাদেশে রঙবেরঙের ফ্যাসিবাদী দলেরই তৎপরতা চলছে।

এত প্রকাণ্ড দেশকাঁপানো এক গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে বামপন্থিদের এই করুণ অবস্থা আপাতদৃষ্টিতে বিস্ময়কর।

কিন্তু দেশে দক্ষিণপন্থিদের এই জয়জয়কারপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা ভালো নয়। এদেশে শ্রমিকদের অবস্থা দুনিয়ার যেকোনো দেশের শ্রমিকদের তুলনায় করুণ। শুধু কারখানা শ্রমিক নয়, সব ধরনের শ্রমিক ও কৃষিজীবী থেকে নানা ধরনের শ্রমিক এখন শোষণের জালে আটকে আছে। সাধারণভাবে এদিক দিয়ে জনগণের অন্যান্য স্তরের মানুষের অবস্থাও ভালো নয়।

কাজেই এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণপন্থিদের শাসন ও রাজনৈতিক জয়জয়কার সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী জনগণের আন্দোলন অদূর ভবিষ্যতেই নতুনভাবে দানা বাঁধার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই আন্দোলন পরিচালনা বর্তমান মৃতপ্রায় বামপন্থি দলগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য বাস্তব প্রয়োজনের তাগিদে বাংলাদেশে নতুন বামপন্থি রাজনৈতিক শক্তির আবির্ভাব ও উত্থান অবশ্যম্ভাবী। আগামী কালই এটা না ঘটলেও অদূর ভবিষ্যতে এটা অপ্রতিরোধ্য। জনগণের সংগ্রাম চলবেই।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন