আলফাজ আনাম
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন জেনারেল এরশাদ। এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর শেখ হাসিনা তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বিবিসিকে জানিয়েছিলেন—‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি।’ এরশাদের ক্ষমতা দখলে শেখ হাসিনার অখুশি না হওয়া, কিংবা খুশি হওয়ার কারণ পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে দেখতে পাই। এরশাদের প্রধান টার্গেট ছিল জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে দল গঠন করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে বিএনপির ওপর যেমন নিপীড়ন চালিয়েছেন, তেমনি এই দলের বহু নেতাকে ভাগিয়ে নিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে দল হিসেবে ভেতর থেকে দুর্বল করে ফেলা। এরশাদ যে ৯ বছর ক্ষমতা দখলে রাখতে পেরেছিলেন, তার কারণ ছিল আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থন এবং জাতীয় পার্টির ভারতপন্থি রূপ আড়াল করে জাতীয়তাবাদী রূপ ধারণ করা। ভারত সবসময় এরশাদকে নীরবে সমর্থন দিয়ে গেছে, কারণ এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের প্রকৃত জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে কোণঠাসা করে রাখা সম্ভব হয়েছে।
পাকিস্তান আমল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের গোপন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যা পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়। শেখ মুজিবুর রহমানের পতন ও সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের উত্থানের পর ভারতের বোধোদয় হয়েছিল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি আরো একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার। এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর ভারত জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলকে সমর্থন দিয়ে গেছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নামকাওয়াস্তে আন্দোলন করলেও এরশাদের প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিয়েছে।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ ছিলেন এরশাদের উপ-রাষ্ট্রপতি। বিএনপি থেকে যেসব নেতাকে এরশাদ ভাগিয়ে নিয়েছিলেন, মওদুদ আহমদ ছিলেন তাদের অন্যতম। যারা পরে আবার বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। মওদুদ আহমদ তার বইয়ে এরশাদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে লিখেছেন, ‘কমপক্ষে দুবার এরশাদ গোপনে হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। একবার তিনি হাসিনাকে লং ড্রাইভে নিয়ে যান এবং তাকে আশ্বস্ত করেন, শেখ মুজিবকে সরকারিভাবে জাতির পিতা হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে, মুজিব হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।’
ভারতের ধারণা ছিল কোনো সময় এরশাদের ক্ষমতার অবসান ঘটলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে এরশাদের পতনের পর ভারতের নীতিনির্ধারকরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে এমন প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু ৯১ সালের নির্বাচনে সব হিসাবনিকাশ পাল্টে যায়। এরপর বিএনপিবিরোধী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে জাতীয় পার্টি। এর প্রতিদান হিসেবে ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রী করা হয়। এ সরকারের নাম দেওয়া হয় ঐকমত্যের সরকার। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ১৪-দলীয় জোটের অংশীদার ছিল জাতীয় পার্টি।
জেনারেল মইনের ছদ্মবেশী সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কথিত সেনাসমর্থিত সরকার গঠন করা হয় ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে। এ সরকারের সময় সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন এরশাদ। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সেনাসমর্থিত সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জেনারেল এরশাদ। এ কারণে আমরা দেখি, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর হাসিনার মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ বাড়ে। দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই নেতা জিএম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ২০০৮ সালের এই মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাবেন, তা নির্ধারণ করেছিল ভারত সরকার। এই নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দু-দলের ওপর দিল্লির পুরো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতীয় পার্টিকে শুরু থেকে ভারতের সমর্থন দেওয়ার প্রধান কারণ ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির ভূমিকা খর্ব করা। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে। এরশাদের ধারণা ছিল বিরোধী দলের আন্দোলন ও পশ্চিমা বিশ্বের চাপে এই নির্বাচন হবে না। ফলে এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দিল্লি এ সময়কে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে। পরিকল্পনা নেওয়া হয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হবে জাতীয় পার্টি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন। দিল্লির সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া এরশাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
২০১৪ সালের নির্বাচনে যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, তার মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও ছিলেন। নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলের আসনে বসেন। সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে হাসিনা-এরশাদ এমন এক সরকার গঠন করেন, যার নজির দুনিয়াতে পাওয়া যাবে না। এরশাদের স্ত্রী, জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদ হন বিরোধী দলের নেতা। জাতীয় পার্টির তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও মশিউর রহমান রাঙ্গা হন মন্ত্রী। আর পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মাদ এরশাদ হন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। কার্যত দিল্লির পরিকল্পনায় হাসিনা-এরশাদ দেশকে পিঠা ভাগের মতো ভাগ করে নেন। এরপর দেশে আরো দুটি একতরফা নির্বাচন হয়েছে।
একটি ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচন, অন্যটি ২০২৪ সালের আমি-ডামি নির্বাচন—এ দুই নির্বাচনে দিল্লির ইচ্ছাপূরণ করেছে জাতীয় পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে। এরপর রওশন ও জিএম কাদের—দেবর-ভাবির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে হাসিনাকে তুষ্ট করার। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে হাসিনার কাছ থেকে দর-কষাকষিতে সুবিধা করতে না পেরে দিল্লি গিয়েছিলেন জিএম কাদের। সেখান থেকে ফেরার পর সাংবাদিকরা বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন দিল্লিতে কার সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছিল, তিনি জানান, উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সাংবাদিকরা এরপর জানতে চান কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে—জিএম কাদেরের জবাব ছিল তাদের অনুমতি ছাড়া তা প্রকাশ করা যাবে না।
সম্প্রতি জিএম কাদেরের আত্মীয় ও জাতীয় পার্টির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা সাকিব রহমান জাতীয় পার্টি নিয়ে তার অভিজ্ঞতার বিবরণ নেত্র নিউজে লিখেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মে মাসে আমি ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনারের বাসভবনে এক নৈশভোজে যোগ দিই। নিমন্ত্রণটি ছিল প্রধানত শিক্ষাবিদ, শিল্পী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের জন্য। আমি একদিকে শিক্ষাবিদ, অন্যদিকে দলীয় নেতা হিসেবে কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আমার দায়িত্ব ছিল। সেদিনের একটি ছবি, যেখানে আমি নিমন্ত্রণকারীর সঙ্গে ছিলাম, ভারতীয় রাষ্ট্রের জন্য সেটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতীয় হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধি সরাসরি দলের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানান। এরপর পাকিস্তান হাইকমিশনে দাওয়াতে যাওয়ার পরিণতি কী হয়েছিল, তাও জানান সাকিব রহমান। তিনি লেখেন, অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন ছিল, ভারত জাতীয় পার্টি ও দলটির চেয়ারম্যানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, বিশেষ করে যখন দলটি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সর্ববৃহৎ জোটসঙ্গী বা সংসদের বিরোধী দল ছিল। কাদের কখনো ভারত সফরে তার সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিদের বৈঠকের বিবরণ আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করেননি। তবু আমি অবাক হলাম, অনিমেষের হস্তক্ষেপে কাদেরের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অনিমেষ তাকে একটি বার্তা পাঠান, যা কাদের আমাকে ফরোয়ার্ড করেন—‘স্যার, ব্যাপারটি আমাদের দেশে গুরুতরভাবে নোট করা হয়েছে। বাকিটা আপনার সিদ্ধান্ত। শুভেচ্ছা।’ কাদের আমাকে জানান, তাকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আমাকে সরাতে হবে। আমাকে শুধু আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ থেকেই নয়, দলের আইটি সিস্টেম ও ওয়েবসাইট থেকেও মুছে ফেলা হয়। আমার সাধারণ সদস্যপদও বাতিল হয়।
জাতীয় পার্টি মূলত ভারতের নিয়ন্ত্রিত একটি রাজনৈতিক দল। যার কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বজায় রাখা। জাতীয় পার্টি তৈরি হয়েছিল দলছুট ও ধূর্ত রাজনীতিকদের নিয়ে। যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে, তখন এরা কোনো না কোনোভাবে দৃশ্যপটে আসে। ৫ আগস্টে হাসিনার পতন ও পলায়নের পর ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতারা ছিলেন ভীত-সন্ত্রস্ত। কিন্তু সেনাভবন ও বঙ্গভবনে ঠিকই তারা আমন্ত্রণ পান। এর প্রধান কারণ, হাসিনার পতনের পর দিল্লি খুব দ্রুত তার ‘বি’ টিমকে সক্রিয় করে তোলে। বঙ্গভবনে জিএম কাদের সেনাশাসন জারির পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত নেতারা তার তীব্র প্রতিবাদ করলে জিএম কাদের চুপ হয়ে যান। কিছুদিন থেকে জাতীয় পার্টি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জিএম কাদের একাধিকবার বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা হচ্ছে অভ্যুত্থানের পর থেকে। এ দাবিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে গণ অধিকারের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সেনা-পুলিশ নুরুর ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এরপর জাতীয় পার্টির নেতারা হুমকি দিচ্ছেন আঘাত এলে প্রত্যাঘাত করা হবে। এমনকি জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিনা ভোটের এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করার দায়িত্ব বিএনপির। তার এই মন্তব্য রাজনীতিতে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অবশ্য বিএনপি নেতা রহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি কেন জাতীয় পার্টির দায়িত্ব নেবে। তিনি আরো বলেছেন, যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়।
বাংলাদেশে দিল্লির অন্যতম রাজনৈতিক এজেন্ডা হলো জাতীয় পার্টিকে সক্রিয় রাখা। আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিরা যাতে বিরোধী দলের আসনে বসতে না পারেন, সে ব্যাপারে পর্দার আড়ালে নানা মেরূকরণের চেষ্টা চলছে। এতে সামনে আসছে জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন দলের মধ্যে থাকা বাম প্রভাবিত এলিট রাজনীতিকরা চান না ইসলামপন্থিরা এই দেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে থাকুক। ভারত কানেকশন ও ক্ষমতার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার কারণে এলিটদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নিবিড় যোগাযোগ আছে। এছাড়া বিভিন্ন দলের মধ্যে থাকা গুপ্ত বাম ও সাবেক বামরা একধরনের ক্রনিক ইসলামফোবিয়ায় ভোগেন। এ কারণে ইসলামপন্থিদের চেয়ে জাতীয় পার্টির প্রতি তারা সহানুভূতিশীল। নিপীড়নকারী জাতীয় পার্টির ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান কী হয়, তার ওপর নির্ভর করছে দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি। ৫ আগস্টের আগে উত্তাল সময়ে শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া এক টেলিফোন আলাপে তিনি জাতীয় পার্টিকে জিন্দা লাশ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এখন এই জিন্দা লাশকে জীবন দেওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব বিএনপি নেবে কি না—তা এখন দেখার বিষয়।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, আমার দেশ
alfaz@dailyamardesh.com
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন জেনারেল এরশাদ। এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর শেখ হাসিনা তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বিবিসিকে জানিয়েছিলেন—‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি।’ এরশাদের ক্ষমতা দখলে শেখ হাসিনার অখুশি না হওয়া, কিংবা খুশি হওয়ার কারণ পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে দেখতে পাই। এরশাদের প্রধান টার্গেট ছিল জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
এরশাদ জাতীয় পার্টি নামে দল গঠন করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে বিএনপির ওপর যেমন নিপীড়ন চালিয়েছেন, তেমনি এই দলের বহু নেতাকে ভাগিয়ে নিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে দল হিসেবে ভেতর থেকে দুর্বল করে ফেলা। এরশাদ যে ৯ বছর ক্ষমতা দখলে রাখতে পেরেছিলেন, তার কারণ ছিল আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থন এবং জাতীয় পার্টির ভারতপন্থি রূপ আড়াল করে জাতীয়তাবাদী রূপ ধারণ করা। ভারত সবসময় এরশাদকে নীরবে সমর্থন দিয়ে গেছে, কারণ এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের প্রকৃত জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে কোণঠাসা করে রাখা সম্ভব হয়েছে।
পাকিস্তান আমল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের গোপন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, যা পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়। শেখ মুজিবুর রহমানের পতন ও সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের উত্থানের পর ভারতের বোধোদয় হয়েছিল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি আরো একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার। এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর ভারত জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলকে সমর্থন দিয়ে গেছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নামকাওয়াস্তে আন্দোলন করলেও এরশাদের প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিয়েছে।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ ছিলেন এরশাদের উপ-রাষ্ট্রপতি। বিএনপি থেকে যেসব নেতাকে এরশাদ ভাগিয়ে নিয়েছিলেন, মওদুদ আহমদ ছিলেন তাদের অন্যতম। যারা পরে আবার বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। মওদুদ আহমদ তার বইয়ে এরশাদ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে লিখেছেন, ‘কমপক্ষে দুবার এরশাদ গোপনে হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। একবার তিনি হাসিনাকে লং ড্রাইভে নিয়ে যান এবং তাকে আশ্বস্ত করেন, শেখ মুজিবকে সরকারিভাবে জাতির পিতা হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে, মুজিব হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।’
ভারতের ধারণা ছিল কোনো সময় এরশাদের ক্ষমতার অবসান ঘটলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। এ কারণে এরশাদের পতনের পর ভারতের নীতিনির্ধারকরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে এমন প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু ৯১ সালের নির্বাচনে সব হিসাবনিকাশ পাল্টে যায়। এরপর বিএনপিবিরোধী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে জাতীয় পার্টি। এর প্রতিদান হিসেবে ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রী করা হয়। এ সরকারের নাম দেওয়া হয় ঐকমত্যের সরকার। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ১৪-দলীয় জোটের অংশীদার ছিল জাতীয় পার্টি।
জেনারেল মইনের ছদ্মবেশী সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কথিত সেনাসমর্থিত সরকার গঠন করা হয় ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে। এ সরকারের সময় সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন এরশাদ। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সেনাসমর্থিত সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জেনারেল এরশাদ। এ কারণে আমরা দেখি, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর হাসিনার মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ বাড়ে। দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই নেতা জিএম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ২০০৮ সালের এই মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাবেন, তা নির্ধারণ করেছিল ভারত সরকার। এই নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দু-দলের ওপর দিল্লির পুরো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতীয় পার্টিকে শুরু থেকে ভারতের সমর্থন দেওয়ার প্রধান কারণ ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির ভূমিকা খর্ব করা। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে। এরশাদের ধারণা ছিল বিরোধী দলের আন্দোলন ও পশ্চিমা বিশ্বের চাপে এই নির্বাচন হবে না। ফলে এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দিল্লি এ সময়কে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে। পরিকল্পনা নেওয়া হয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল হবে জাতীয় পার্টি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন। দিল্লির সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া এরশাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
২০১৪ সালের নির্বাচনে যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, তার মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও ছিলেন। নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলের আসনে বসেন। সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে হাসিনা-এরশাদ এমন এক সরকার গঠন করেন, যার নজির দুনিয়াতে পাওয়া যাবে না। এরশাদের স্ত্রী, জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদ হন বিরোধী দলের নেতা। জাতীয় পার্টির তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও মশিউর রহমান রাঙ্গা হন মন্ত্রী। আর পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মাদ এরশাদ হন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। কার্যত দিল্লির পরিকল্পনায় হাসিনা-এরশাদ দেশকে পিঠা ভাগের মতো ভাগ করে নেন। এরপর দেশে আরো দুটি একতরফা নির্বাচন হয়েছে।
একটি ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচন, অন্যটি ২০২৪ সালের আমি-ডামি নির্বাচন—এ দুই নির্বাচনে দিল্লির ইচ্ছাপূরণ করেছে জাতীয় পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে। এরপর রওশন ও জিএম কাদের—দেবর-ভাবির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে হাসিনাকে তুষ্ট করার। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে হাসিনার কাছ থেকে দর-কষাকষিতে সুবিধা করতে না পেরে দিল্লি গিয়েছিলেন জিএম কাদের। সেখান থেকে ফেরার পর সাংবাদিকরা বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন দিল্লিতে কার সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছিল, তিনি জানান, উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সাংবাদিকরা এরপর জানতে চান কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে—জিএম কাদেরের জবাব ছিল তাদের অনুমতি ছাড়া তা প্রকাশ করা যাবে না।
সম্প্রতি জিএম কাদেরের আত্মীয় ও জাতীয় পার্টির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা সাকিব রহমান জাতীয় পার্টি নিয়ে তার অভিজ্ঞতার বিবরণ নেত্র নিউজে লিখেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মে মাসে আমি ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনারের বাসভবনে এক নৈশভোজে যোগ দিই। নিমন্ত্রণটি ছিল প্রধানত শিক্ষাবিদ, শিল্পী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের জন্য। আমি একদিকে শিক্ষাবিদ, অন্যদিকে দলীয় নেতা হিসেবে কূটনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আমার দায়িত্ব ছিল। সেদিনের একটি ছবি, যেখানে আমি নিমন্ত্রণকারীর সঙ্গে ছিলাম, ভারতীয় রাষ্ট্রের জন্য সেটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতীয় হাইকমিশনের একজন প্রতিনিধি সরাসরি দলের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানান। এরপর পাকিস্তান হাইকমিশনে দাওয়াতে যাওয়ার পরিণতি কী হয়েছিল, তাও জানান সাকিব রহমান। তিনি লেখেন, অনেক দিন ধরেই গুঞ্জন ছিল, ভারত জাতীয় পার্টি ও দলটির চেয়ারম্যানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, বিশেষ করে যখন দলটি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সর্ববৃহৎ জোটসঙ্গী বা সংসদের বিরোধী দল ছিল। কাদের কখনো ভারত সফরে তার সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিদের বৈঠকের বিবরণ আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করেননি। তবু আমি অবাক হলাম, অনিমেষের হস্তক্ষেপে কাদেরের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অনিমেষ তাকে একটি বার্তা পাঠান, যা কাদের আমাকে ফরোয়ার্ড করেন—‘স্যার, ব্যাপারটি আমাদের দেশে গুরুতরভাবে নোট করা হয়েছে। বাকিটা আপনার সিদ্ধান্ত। শুভেচ্ছা।’ কাদের আমাকে জানান, তাকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আমাকে সরাতে হবে। আমাকে শুধু আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ থেকেই নয়, দলের আইটি সিস্টেম ও ওয়েবসাইট থেকেও মুছে ফেলা হয়। আমার সাধারণ সদস্যপদও বাতিল হয়।
জাতীয় পার্টি মূলত ভারতের নিয়ন্ত্রিত একটি রাজনৈতিক দল। যার কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বজায় রাখা। জাতীয় পার্টি তৈরি হয়েছিল দলছুট ও ধূর্ত রাজনীতিকদের নিয়ে। যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে, তখন এরা কোনো না কোনোভাবে দৃশ্যপটে আসে। ৫ আগস্টে হাসিনার পতন ও পলায়নের পর ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতারা ছিলেন ভীত-সন্ত্রস্ত। কিন্তু সেনাভবন ও বঙ্গভবনে ঠিকই তারা আমন্ত্রণ পান। এর প্রধান কারণ, হাসিনার পতনের পর দিল্লি খুব দ্রুত তার ‘বি’ টিমকে সক্রিয় করে তোলে। বঙ্গভবনে জিএম কাদের সেনাশাসন জারির পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত নেতারা তার তীব্র প্রতিবাদ করলে জিএম কাদের চুপ হয়ে যান। কিছুদিন থেকে জাতীয় পার্টি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জিএম কাদের একাধিকবার বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা হচ্ছে অভ্যুত্থানের পর থেকে। এ দাবিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে গণ অধিকারের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি সেনা-পুলিশ নুরুর ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এরপর জাতীয় পার্টির নেতারা হুমকি দিচ্ছেন আঘাত এলে প্রত্যাঘাত করা হবে। এমনকি জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিনা ভোটের এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করার দায়িত্ব বিএনপির। তার এই মন্তব্য রাজনীতিতে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অবশ্য বিএনপি নেতা রহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপি কেন জাতীয় পার্টির দায়িত্ব নেবে। তিনি আরো বলেছেন, যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়।
বাংলাদেশে দিল্লির অন্যতম রাজনৈতিক এজেন্ডা হলো জাতীয় পার্টিকে সক্রিয় রাখা। আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থিরা যাতে বিরোধী দলের আসনে বসতে না পারেন, সে ব্যাপারে পর্দার আড়ালে নানা মেরূকরণের চেষ্টা চলছে। এতে সামনে আসছে জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন দলের মধ্যে থাকা বাম প্রভাবিত এলিট রাজনীতিকরা চান না ইসলামপন্থিরা এই দেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে থাকুক। ভারত কানেকশন ও ক্ষমতার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার কারণে এলিটদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নিবিড় যোগাযোগ আছে। এছাড়া বিভিন্ন দলের মধ্যে থাকা গুপ্ত বাম ও সাবেক বামরা একধরনের ক্রনিক ইসলামফোবিয়ায় ভোগেন। এ কারণে ইসলামপন্থিদের চেয়ে জাতীয় পার্টির প্রতি তারা সহানুভূতিশীল। নিপীড়নকারী জাতীয় পার্টির ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান কী হয়, তার ওপর নির্ভর করছে দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি। ৫ আগস্টের আগে উত্তাল সময়ে শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া এক টেলিফোন আলাপে তিনি জাতীয় পার্টিকে জিন্দা লাশ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এখন এই জিন্দা লাশকে জীবন দেওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব বিএনপি নেবে কি না—তা এখন দেখার বিষয়।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, আমার দেশ
alfaz@dailyamardesh.com
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
৮ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
১ দিন আগে