মোদাসসের হোসেন খান, বীরপ্রতীক
‘যারা অতীতকে মনে রাখে না, তারা অভিশপ্ত হয়ে থাকে তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে’—বলেছিলেন জর্জ সানতায়ানা নামের একজন প্রখ্যাত আমেরিকান দার্শনিক। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, চেঙ্গিস খান, নেপোলিয়ন দ্য গ্রেট, প্রমুখের যুগ বহু আগেই সমাপ্তি ঘটেছে। আজকের দিনে একটি সাম্রাজ্য রক্ষা ও সংরক্ষণ করা, তা গড়ে তোলার চেয়েও অনেক বেশি জটিল ও কঠিন। অর্থনৈতিক শক্তি এবং সামরিক ক্ষমতা যদিও এখনো এই প্রতিযোগিতায় মূল নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে, তবু আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর একে অন্যের ওপর নির্ভরতা আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে শুধু ভয়-ভীতি বা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজ দেশের অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক বা কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই সাম্রাজ্য গড়ার ধারণা আজ শুধু অচিন্তনীয় ও অসাধ্যই নয়, বিলুপ্তিরও পথে বটে।
আমেরিকার সাম্রাজ্যে রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি ছিল সম্ভবত ন্যাটোর (North Atlantic Treaty Organization) সৃষ্টি এবং তা সংরক্ষণ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তির পর, ১৯৪৫ সালের পর থেকে ইতিহাসের সফল জোট হিসেবে এই সংস্থাটি ইউরোপকে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে আমেরিকার কক্ষপথে ধরে রাখতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কয়েকটি দেশকে তার অধীনে নয়; বরং সমতা এবং সম্মানিত সমান অংশীদারের ভিত্তিতে তার বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করে আমেরিকা তার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছিল।
পরিতাপের বিষয়, উপরোক্ত বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রীতি-নীতির প্রায় সবটুকুই এখন পরিত্যক্ত। ‘আমেরিকা প্রথম’ (America First) ধ্বনির তাণ্ডব নৃত্যে, সহনশীলতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং ভিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে ওঠা আমেরিকার অপ্রতিরোধ্য সাম্রাজ্য আজ বিলুপ্তির পথে। দুর্ভাগ্যবশত, এককালের সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী সর্ববৃহৎ শক্তির দীর্ঘকালীন অংশীদারদের নিজেদের মতামত প্রয়োগ ও সম-অধিকারপ্রাপ্তি গত কয়েক দশকে ক্রমেই ক্ষয় হতে হতে ইদানীংকালে প্রায় পুরোপুরিই কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে আমেরিকার আচরণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র ও জাতিসত্তার ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সুপরিকল্পিত ও মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বহু দেশ আমেরিকার ওপর থেকে তাদের আস্থা উঠিয়ে নিয়েছে। এছাড়া ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলকারী ইসরাইলকে আমেরিকার লজ্জাজনক এবং ধারাবাহিক সমর্থন এবং সেই ভূখণ্ডের প্রকৃত মালিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার নিষ্ঠুর অভিযান অব্যাহত রাখা এবং অতিসম্প্রতি কাতারের মতো বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত এক নিরপেক্ষ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীর বিরুদ্ধে জায়নবাদীদের সর্বশেষ আক্রমণে আমেরিকার নীরব সমর্থনই ছিল আমেরিকার সাম্রাজ্যের কফিনে শেষ পেরেক।
বাস্তবতার নিরিখে বলা বাহুল্য, আজ অসংখ্য দেশ শুধু আমেরিকাকে ভয় পায় না, বরং তাদের অনেকেরই ধারণা, আমেরিকার আর তাদের প্রয়োজন নেই। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে আজকের আমেরিকার সাদৃশ্য বিস্ময়কর; চূড়ান্ত পতনের আগে উভয় সাম্রাজ্যের উপসর্গগুলো ছিল প্রায় অভিন্ন। একমাত্র পার্থক্য হলো—আমেরিকা তার মাত্র ২৫০ বছরের অস্তিত্বের মধ্যে শেষ ৫০ বছরেরও কম সময়ে পতনের পথে হাঁটছে, ধ্বংস করছে তার এককালের সর্বজনস্বীকৃত আদর্শ নীতি ও অসাধারণ মানবিক মূল্যবোধ। অথচ রোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্ত হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০০০ বছর, যদিও এর আগেই তার পতনের একই ধরনের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
‘যারা অতীতকে মনে রাখে না, তারা অভিশপ্ত হয়ে থাকে তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে’—বলেছিলেন জর্জ সানতায়ানা নামের একজন প্রখ্যাত আমেরিকান দার্শনিক। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, চেঙ্গিস খান, নেপোলিয়ন দ্য গ্রেট, প্রমুখের যুগ বহু আগেই সমাপ্তি ঘটেছে। আজকের দিনে একটি সাম্রাজ্য রক্ষা ও সংরক্ষণ করা, তা গড়ে তোলার চেয়েও অনেক বেশি জটিল ও কঠিন। অর্থনৈতিক শক্তি এবং সামরিক ক্ষমতা যদিও এখনো এই প্রতিযোগিতায় মূল নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে, তবু আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর একে অন্যের ওপর নির্ভরতা আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে শুধু ভয়-ভীতি বা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজ দেশের অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক বা কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই সাম্রাজ্য গড়ার ধারণা আজ শুধু অচিন্তনীয় ও অসাধ্যই নয়, বিলুপ্তিরও পথে বটে।
আমেরিকার সাম্রাজ্যে রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি ছিল সম্ভবত ন্যাটোর (North Atlantic Treaty Organization) সৃষ্টি এবং তা সংরক্ষণ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তির পর, ১৯৪৫ সালের পর থেকে ইতিহাসের সফল জোট হিসেবে এই সংস্থাটি ইউরোপকে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে আমেরিকার কক্ষপথে ধরে রাখতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কয়েকটি দেশকে তার অধীনে নয়; বরং সমতা এবং সম্মানিত সমান অংশীদারের ভিত্তিতে তার বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করে আমেরিকা তার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সাফল্য এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছিল।
পরিতাপের বিষয়, উপরোক্ত বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রীতি-নীতির প্রায় সবটুকুই এখন পরিত্যক্ত। ‘আমেরিকা প্রথম’ (America First) ধ্বনির তাণ্ডব নৃত্যে, সহনশীলতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং ভিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে ওঠা আমেরিকার অপ্রতিরোধ্য সাম্রাজ্য আজ বিলুপ্তির পথে। দুর্ভাগ্যবশত, এককালের সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী সর্ববৃহৎ শক্তির দীর্ঘকালীন অংশীদারদের নিজেদের মতামত প্রয়োগ ও সম-অধিকারপ্রাপ্তি গত কয়েক দশকে ক্রমেই ক্ষয় হতে হতে ইদানীংকালে প্রায় পুরোপুরিই কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে আমেরিকার আচরণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র ও জাতিসত্তার ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সুপরিকল্পিত ও মিথ্যা অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বহু দেশ আমেরিকার ওপর থেকে তাদের আস্থা উঠিয়ে নিয়েছে। এছাড়া ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলকারী ইসরাইলকে আমেরিকার লজ্জাজনক এবং ধারাবাহিক সমর্থন এবং সেই ভূখণ্ডের প্রকৃত মালিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার নিষ্ঠুর অভিযান অব্যাহত রাখা এবং অতিসম্প্রতি কাতারের মতো বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত এক নিরপেক্ষ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীর বিরুদ্ধে জায়নবাদীদের সর্বশেষ আক্রমণে আমেরিকার নীরব সমর্থনই ছিল আমেরিকার সাম্রাজ্যের কফিনে শেষ পেরেক।
বাস্তবতার নিরিখে বলা বাহুল্য, আজ অসংখ্য দেশ শুধু আমেরিকাকে ভয় পায় না, বরং তাদের অনেকেরই ধারণা, আমেরিকার আর তাদের প্রয়োজন নেই। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে আজকের আমেরিকার সাদৃশ্য বিস্ময়কর; চূড়ান্ত পতনের আগে উভয় সাম্রাজ্যের উপসর্গগুলো ছিল প্রায় অভিন্ন। একমাত্র পার্থক্য হলো—আমেরিকা তার মাত্র ২৫০ বছরের অস্তিত্বের মধ্যে শেষ ৫০ বছরেরও কম সময়ে পতনের পথে হাঁটছে, ধ্বংস করছে তার এককালের সর্বজনস্বীকৃত আদর্শ নীতি ও অসাধারণ মানবিক মূল্যবোধ। অথচ রোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্ত হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০০০ বছর, যদিও এর আগেই তার পতনের একই ধরনের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৭ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৮ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে