কমডোর জসীম উদ্দীন ভূঁইয়া (অব.)
সেভেন সিস্টার্স দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি অথবা এক কথায় যদি বলি বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমান সময়ে একটি চাঞ্চল্যকর অধ্যায়। সেভেন সিস্টার্সকে কেন্দ্র করে ভূরাজনীতির পরতে পরতে লুকিয়ে আছে এক গভীর ষড়যন্ত্র। এই গভীর ষড়যন্ত্রের আড়ালে সেভেন সিস্টার্স আসলে কার, তা নিয়েও আলোচনা করতে হবে।
ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ এবং এর প্রভাব : ভারতবর্ষে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের শাসনের নামে শোষণ চলে। ব্রিটিশদের এই অঞ্চলের প্রতি প্রবল আগ্রহের মূল কারণই ছিল এই দেশের সম্পদ। সেভেন সিস্টার্সের মধ্যে আসামকে ব্রিটিশরা বলত বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার। ১৮৩৫ সালের পর থেকে তৎকালীন আসাম, পরে যা ভেঙে আসাম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয় নামকরণ করা হয়, ব্রিটিশরা সেখানে চায়ের চাষ শুরু করেন। সেভেন সিস্টার্সের লুকায়িত সম্পদ আহরণের লক্ষ্য হিসেবে ১৮৪০ সাল থেকে তারা বর্তমান উত্তর-পূর্ব ভারতকে তাদের শাসনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেন। যেহেতু এই এলাকা ছিল দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, আবার এখানে বসবাসরতরা ছিল পাহাড়ি উপজাতি এবং পূর্ব থেকেই এসব অঞ্চল শাসন করত তৎকালীন আঞ্চলিক রাজারা, তাই ব্রিটিশরা তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব অঞ্চলে উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করতে থাকেন। ১৮৯০ সালে চা চট্টগ্রাম বন্দরে পরিবহন, তথা এ অঞ্চলে যোগাযোগের সুবিধার্থে তারা চট্টগ্রামকে সদর দপ্তর করে আসাম রেলওয়ে কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেন। এভাবে ধীরে ধীরে তারা অগ্রসর হয়। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বরাজনীতিতে চীনপন্থি কমিউনিস্ট শক্তির উত্থান ঘটে এবং ১৯২০ সালের পর থেকে ভারতবর্ষে ব্যাপক স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। সার্বিক দিক বিবেচনায়, ব্রিটিশরা ভাবতে শুরু করে ভারতবর্ষে যদি কোনোভাবে চীনপন্থি কমিউনিস্টের উত্থান ঘটে, তাহলে তো ধনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য একঘরে হয়ে পড়বে। তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় নিজ সম্প্রদায় সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ১৯৩০ সাল নাগাদ সেভেন সিস্টার্সে অন্যান্য জাতির সঙ্গে সঙ্গে খ্রিষ্টানের দেখা মিলতে থাকে। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ রেজিল্যান্ড কুপল্যান্ড ১৯৪০-৪২ সাল নাগাদ এদিকটায় খ্রিষ্টান মিশনারির জন্য ব্যাপক কার্যক্রম চালান। কারণ ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকেই ব্রিটিশরা বুঝতে পারে এ অঞ্চলে তাদের শাসনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। অবশেষে ১৯৪৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ঐক্য রক্ষা এবং স্বাধীনতা প্রদানের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনার জন্য ক্যাবিনেট মিশন গঠিত হয়।
ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনায় বঙ্গ ও আসাম প্রদেশকে একই প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত করায় এবং এই গ্রুপে মুসলিম কিঞ্চিৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় কংগ্রেস আশঙ্কা করে আসাম শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে যোগ দিতে পারে। হিন্দু বাঙালি নেতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সঙ্গে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং আসাম কংগ্রেস নেতা গোপিনাথ বরদলৈ, মোহন চাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে আসামকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে। পাকিস্তানের দাবি ছিল মালদা, মুর্শিদাবাদকে অন্তর্ভুক্ত করা কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। স্যার রেডক্লিফ পরে এমনভাবে ম্যাপটি জমা দেন, যাতে করে বর্তমান সেভেন সিস্টার্সও ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে এমনভাবে বিচ্যুত হয়, যেখানে স্থলপথে ভারতের সঙ্গে এই অংশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয় শিলিগুড়ি করিডোর, তথা চিকেন নেক। আবার ত্রিপুরার একটি অংশ কেটে ফেনী করিডোর করে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে। পূর্ববাংলা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়, যা পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রেডক্লিফের ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে পড়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব এবং শুরু হয় নতুন এক ষড়যন্ত্রের অধ্যায়।
এ অঞ্চলে ধর্মীয় রূপান্তর ও জাতিসত্তার প্রশ্ন : বেনেই মেনাশে হলো ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী রাজ্য মণিপুর এবং মিজোরামের একটি ছোট গোষ্ঠী। মিজোরাম এবং ইসরাইলের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয় ১৯৮০-এর দশকে যখন একজন সিনিয়র রাব্বি, এলিয়াহু আভিচাইল এই অঞ্চলটি পরিদর্শন করেন। তিনিই এই উপজাতিকে ‘বেনেই মেনাশে’ উপাধি দিয়েছিলেন, যার অর্থ মেনাসের পুত্র। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে তারা ইসরাইলের হারিয়ে যাওয়া উপজাতিদের একটির বংশধর বলে দাবি করে এবং ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করে আসছে। দুই দশক আগে, ডেপুটেশনে কাজ করার সময়, আমি জানতে পারি যে ইসরাইল সেভেন সিস্টার্সে কিছু করার গোপন পরিকল্পনা করছে। ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মিজোরামের বেনি মেনাশেকে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছিলেন : ‘আমাদের মধ্যে একটি জীবন্ত সেতুবন্ধ রয়েছে; অসাধারণ বেনি মেনাশে, যার সদস্যরা ভারত থেকে ইসরাইলে আলিয়া (ইহুদিদের অভিবাসন) তৈরি করেছেন এবং করছেন।’ কয়েক দশক ধরে, জনসংখ্যার পরিবর্তন সেভেন সিস্টার্সের পরিচয়কে আরো ভিন্ন আকার দিয়েছে। মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডের মতো কিছু রাজ্য খ্রিষ্টান-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার দিকে ঝুঁকছে। এই ধর্মীয় রূপান্তর নিছক বিশ্বাসের নয়, বরং এক সুদূরপ্রসারী কৌশলের অংশ।
নাগাল্যান্ডে খ্রিষ্টান ৮৭ শতাংশ, হিন্দু ৯ শতাংশ এবং মিজোরামে খ্রিষ্টান : ৮৭ শতাংশ, বৌদ্ধ ৮ শতাংশ। মণিপুরে হিন্দু ও খ্রিষ্টান প্রায় সমান। অরুণাচলে খ্রিষ্টান ৩০, হিন্দু ২৯ ও বৌদ্ধ ১১ শতাংশ। অন্যদিকে আসামে রয়েছে হিন্দু ও মুসলিমবিরোধ। আলাদা ভূখণ্ডের দাবিতে ইতোমধ্যেই আন্দোলন শুরু হয়েছে ভারত অধিক্কৃত অরুণাচল প্রদেশে। অরুণাচলের ইতানগর নামক স্থানে সহস্রাধিক ক্রিশ্চিয়ান জমায়েত হওয়ার মাধ্যমে সম্প্রতি স্বাধীনতার দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে অরুণাচল ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম―এসিএফ।
রাজনৈতিক প্রভাব : দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে সেভেন সিস্টার্সের গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাধর দেশের মধ্যে একক আধিপত্য বিস্তারে চীনের একমাত্র অন্তরায় ভারত। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিতে চীন হচ্ছে সবার ওপরে তথা আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। দক্ষিণ এশিয়ায় পুরো আমেরিকাপন্থি কোনো দেশ এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। ইতোমধ্যেই অরুণাচলে ক্রিশ্চিয়ান ফোরামের নেতৃত্বে আলাদা রাষ্ট্রের দাবির আন্দোলন শুরু কী, তবে সেই ইঙ্গিতই প্রদান করছে, যার মাধ্যমে ইসরাইল ও আমেরিকা তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের নিজ সম্প্রদায়ের বন্ধুরাষ্ট্র পেতে যাচ্ছে?
অন্যদিকে শিলিগুড়ি করিডোর ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী চীনের খুবই কাছাকাছি। এই করিডোর হাতছাড়া হলে উত্তর-পূর্ব ভারত তথা সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে দেশটির বাকি অংশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ২০১৭ সালে ডুগলাম সীমান্তে চীন কর্তৃক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর শিলিগুড়ি করিডোরে ভারত বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করে। একইভাবে চীনও সিকিমের কাছাকাছি তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। অরুণাচল নিয়েও ১৯৬২ সালে প্রায় মাসব্যাপী যুদ্ধ চলে ভারত ও চীনের মধ্যে। ২০১৩ সালেও চীনা সৈন্যরা অন্তত ৪০ বার সীমান্ত অতিক্রম করে। অরুণাচলে খ্রিষ্টানরা আলাদা রাষ্ট্র চাচ্ছে। আবার অরুণাচল প্রদেশের ওপর চীনের দাবি এখনো অব্যাহত রয়েছে, যা এই অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক জটিলতার আরেকটি স্তর যুক্ত করেছে। কোনোভাবে চীন যদি এই করিডোর ভাঙতে পারে অথবা আমেরিকা ও ইসরাইল যদি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফল হয়, তাহলে বিশ্ব রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন আরেক ইতিহাসের সৃষ্টি হবে, বিশ্বরাজনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন : পুরোনো দাবির নতুন জাগরণ : এই অঞ্চলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন নয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নাগারা নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে, কিন্তু ভারত তা মানেনি। এরপর ১৯৫১ সালে গণভোটে নাগারা স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। ত্রিপুরা রাজ্যটি তিনদিক থেকে বাংলাদেশবেষ্টিত, যা এটিকে ভৌগোলিকভাবে পূর্ববাংলার পেটের মধ্যে অবস্থিত একটি ভূখণ্ডে পরিণত করেছে। দেশভাগের সময় ত্রিপুরা রাজ্যের ভারত না পাকিস্তানে যুক্ত হবে, তা নিয়ে রাজপরিবারে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, বিশেষ করে রাজার মা ও অন্য সদস্যদের মধ্যে কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ভারতে যোগ দেন। ইতিমধ্যে সেভেন সিস্টার্সের অঞ্চলগুলোয় বহুবার জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। যেমন : মণিপুরে এমএনএলএফ, নাগাল্যান্ডে এমএনএসটি, ত্রিপুরায় টিএনভি, আসামে কেএলও। এর মধ্যে উলফার ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে মাঝরাতে জেটিঘাটে অসংখ্য অস্ত্র জব্দ করা হয়েছিল, যা পরিবহন করতে ১০টি ট্রাক লেগেছিল, পরে যা ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা নামে পরিচিত হয়। আর এভাবেই সেভেন সিস্টার্সের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন ভূরাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজ্যে প্রভাব ফেলছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও করিডোরের যুদ্ধ : শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের জন্য একটি জীবনরেখা। ২০১৭ সালে ডোকলাম ইস্যুতে চীন-ভারত উত্তেজনা চরমে ওঠে, এই করিডোরে ভারত বিপুল সেনা মোতায়েন করে। চীনও পাল্টা প্রস্তুতি নেয়। ১৯৬২ সালে অরুণাচল নিয়ে এক মাসের যুদ্ধ, ২০১৩-১৪ সালে চীনের একাধিক অনুপ্রবেশ প্রমাণ করে এই অঞ্চল শান্ত নয়। চীন অরুণাচলকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে দাবি করে আসছে। চীন যদি কোনোভাবে এই করিডোরে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারে কিংবা পশ্চিমা শক্তি যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অসন্তোষকে পুঁজি করে বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেয়—তাহলে ভারত তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ হারাতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে ভয়াবহ।
বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা ও সম্ভাবনা : ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক কিংবা ভৌগোলিক সব দিক থেকেই সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাচীন বাংলা, সুবে বাঙ্গলাহ, অবিভক্ত বাংলা, পূর্ববাংলা, পূর্ব পাকিস্তানÑ সর্বোপরি আজকের এই বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার থাকার ফলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলগুলোর জন্য একমাত্র সমুদ্রপথের ভরসা। রিজিওনাল কানেকটিভিটি, ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে, রেলপথ—সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট কৌশলগত সুযোগ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দীর্ঘদিন ধরেই উপযুক্ত নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে বাংলাদেশ এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি।
রাজনৈতিক অবস্থান যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলগুলোর প্রতি অটুট। ভারত ও চীন এবং ইসরাইল-আমেরিকাও যখন ভূরাজনৈতিক কৌশলে ব্যস্ত, বাংলাদেশ তখন এই রাজ্যগুলোর সঙ্গে তার অনন্য সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে—বাংলাদেশ চায় এই অঞ্চলগুলোর জনগণ যেন মর্যাদাসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারে এবং তারা যেন এমন সুযোগের নাগাল পায়, যা কৃত্রিমভাবে চাপানো সীমানার ঊর্ধ্বে উঠে আসে।
শেষ পর্যন্ত, ‘সেভেন সিস্টার্স কার’—এই প্রশ্নটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা কী ধরনের সহায়তা ও সহযোগিতা পাচ্ছে। ইতিহাস আমাদের মধ্যে সীমানা তৈরি করেছে ঠিকই, কিন্তু সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন আজও টিকে আছে—অটুট ও চিরস্থায়ীভাবে।
লেখক : সাবেক সহকারী নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-উপাচার্য বিইউপি
সেভেন সিস্টার্স দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি অথবা এক কথায় যদি বলি বিশ্ব রাজনীতিতে বর্তমান সময়ে একটি চাঞ্চল্যকর অধ্যায়। সেভেন সিস্টার্সকে কেন্দ্র করে ভূরাজনীতির পরতে পরতে লুকিয়ে আছে এক গভীর ষড়যন্ত্র। এই গভীর ষড়যন্ত্রের আড়ালে সেভেন সিস্টার্স আসলে কার, তা নিয়েও আলোচনা করতে হবে।
ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ এবং এর প্রভাব : ভারতবর্ষে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের শাসনের নামে শোষণ চলে। ব্রিটিশদের এই অঞ্চলের প্রতি প্রবল আগ্রহের মূল কারণই ছিল এই দেশের সম্পদ। সেভেন সিস্টার্সের মধ্যে আসামকে ব্রিটিশরা বলত বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার। ১৮৩৫ সালের পর থেকে তৎকালীন আসাম, পরে যা ভেঙে আসাম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয় নামকরণ করা হয়, ব্রিটিশরা সেখানে চায়ের চাষ শুরু করেন। সেভেন সিস্টার্সের লুকায়িত সম্পদ আহরণের লক্ষ্য হিসেবে ১৮৪০ সাল থেকে তারা বর্তমান উত্তর-পূর্ব ভারতকে তাদের শাসনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করেন। যেহেতু এই এলাকা ছিল দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল, আবার এখানে বসবাসরতরা ছিল পাহাড়ি উপজাতি এবং পূর্ব থেকেই এসব অঞ্চল শাসন করত তৎকালীন আঞ্চলিক রাজারা, তাই ব্রিটিশরা তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব অঞ্চলে উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করতে থাকেন। ১৮৯০ সালে চা চট্টগ্রাম বন্দরে পরিবহন, তথা এ অঞ্চলে যোগাযোগের সুবিধার্থে তারা চট্টগ্রামকে সদর দপ্তর করে আসাম রেলওয়ে কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেন। এভাবে ধীরে ধীরে তারা অগ্রসর হয়। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বরাজনীতিতে চীনপন্থি কমিউনিস্ট শক্তির উত্থান ঘটে এবং ১৯২০ সালের পর থেকে ভারতবর্ষে ব্যাপক স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। সার্বিক দিক বিবেচনায়, ব্রিটিশরা ভাবতে শুরু করে ভারতবর্ষে যদি কোনোভাবে চীনপন্থি কমিউনিস্টের উত্থান ঘটে, তাহলে তো ধনতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য একঘরে হয়ে পড়বে। তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় নিজ সম্প্রদায় সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে ১৯৩০ সাল নাগাদ সেভেন সিস্টার্সে অন্যান্য জাতির সঙ্গে সঙ্গে খ্রিষ্টানের দেখা মিলতে থাকে। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ রেজিল্যান্ড কুপল্যান্ড ১৯৪০-৪২ সাল নাগাদ এদিকটায় খ্রিষ্টান মিশনারির জন্য ব্যাপক কার্যক্রম চালান। কারণ ত্রিশ থেকে চল্লিশের দশকেই ব্রিটিশরা বুঝতে পারে এ অঞ্চলে তাদের শাসনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। অবশেষে ১৯৪৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ঐক্য রক্ষা এবং স্বাধীনতা প্রদানের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনার জন্য ক্যাবিনেট মিশন গঠিত হয়।
ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনায় বঙ্গ ও আসাম প্রদেশকে একই প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত করায় এবং এই গ্রুপে মুসলিম কিঞ্চিৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় কংগ্রেস আশঙ্কা করে আসাম শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে যোগ দিতে পারে। হিন্দু বাঙালি নেতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সঙ্গে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং আসাম কংগ্রেস নেতা গোপিনাথ বরদলৈ, মোহন চাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে আসামকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে। পাকিস্তানের দাবি ছিল মালদা, মুর্শিদাবাদকে অন্তর্ভুক্ত করা কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। স্যার রেডক্লিফ পরে এমনভাবে ম্যাপটি জমা দেন, যাতে করে বর্তমান সেভেন সিস্টার্সও ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে এমনভাবে বিচ্যুত হয়, যেখানে স্থলপথে ভারতের সঙ্গে এই অংশের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয় শিলিগুড়ি করিডোর, তথা চিকেন নেক। আবার ত্রিপুরার একটি অংশ কেটে ফেনী করিডোর করে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে। পূর্ববাংলা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়, যা পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রেডক্লিফের ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে পড়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব এবং শুরু হয় নতুন এক ষড়যন্ত্রের অধ্যায়।
এ অঞ্চলে ধর্মীয় রূপান্তর ও জাতিসত্তার প্রশ্ন : বেনেই মেনাশে হলো ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী রাজ্য মণিপুর এবং মিজোরামের একটি ছোট গোষ্ঠী। মিজোরাম এবং ইসরাইলের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয় ১৯৮০-এর দশকে যখন একজন সিনিয়র রাব্বি, এলিয়াহু আভিচাইল এই অঞ্চলটি পরিদর্শন করেন। তিনিই এই উপজাতিকে ‘বেনেই মেনাশে’ উপাধি দিয়েছিলেন, যার অর্থ মেনাসের পুত্র। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে তারা ইসরাইলের হারিয়ে যাওয়া উপজাতিদের একটির বংশধর বলে দাবি করে এবং ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করে আসছে। দুই দশক আগে, ডেপুটেশনে কাজ করার সময়, আমি জানতে পারি যে ইসরাইল সেভেন সিস্টার্সে কিছু করার গোপন পরিকল্পনা করছে। ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মিজোরামের বেনি মেনাশেকে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছিলেন : ‘আমাদের মধ্যে একটি জীবন্ত সেতুবন্ধ রয়েছে; অসাধারণ বেনি মেনাশে, যার সদস্যরা ভারত থেকে ইসরাইলে আলিয়া (ইহুদিদের অভিবাসন) তৈরি করেছেন এবং করছেন।’ কয়েক দশক ধরে, জনসংখ্যার পরিবর্তন সেভেন সিস্টার্সের পরিচয়কে আরো ভিন্ন আকার দিয়েছে। মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডের মতো কিছু রাজ্য খ্রিষ্টান-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার দিকে ঝুঁকছে। এই ধর্মীয় রূপান্তর নিছক বিশ্বাসের নয়, বরং এক সুদূরপ্রসারী কৌশলের অংশ।
নাগাল্যান্ডে খ্রিষ্টান ৮৭ শতাংশ, হিন্দু ৯ শতাংশ এবং মিজোরামে খ্রিষ্টান : ৮৭ শতাংশ, বৌদ্ধ ৮ শতাংশ। মণিপুরে হিন্দু ও খ্রিষ্টান প্রায় সমান। অরুণাচলে খ্রিষ্টান ৩০, হিন্দু ২৯ ও বৌদ্ধ ১১ শতাংশ। অন্যদিকে আসামে রয়েছে হিন্দু ও মুসলিমবিরোধ। আলাদা ভূখণ্ডের দাবিতে ইতোমধ্যেই আন্দোলন শুরু হয়েছে ভারত অধিক্কৃত অরুণাচল প্রদেশে। অরুণাচলের ইতানগর নামক স্থানে সহস্রাধিক ক্রিশ্চিয়ান জমায়েত হওয়ার মাধ্যমে সম্প্রতি স্বাধীনতার দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে অরুণাচল ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম―এসিএফ।
রাজনৈতিক প্রভাব : দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে সেভেন সিস্টার্সের গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাধর দেশের মধ্যে একক আধিপত্য বিস্তারে চীনের একমাত্র অন্তরায় ভারত। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিতে চীন হচ্ছে সবার ওপরে তথা আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। দক্ষিণ এশিয়ায় পুরো আমেরিকাপন্থি কোনো দেশ এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। ইতোমধ্যেই অরুণাচলে ক্রিশ্চিয়ান ফোরামের নেতৃত্বে আলাদা রাষ্ট্রের দাবির আন্দোলন শুরু কী, তবে সেই ইঙ্গিতই প্রদান করছে, যার মাধ্যমে ইসরাইল ও আমেরিকা তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের নিজ সম্প্রদায়ের বন্ধুরাষ্ট্র পেতে যাচ্ছে?
অন্যদিকে শিলিগুড়ি করিডোর ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী চীনের খুবই কাছাকাছি। এই করিডোর হাতছাড়া হলে উত্তর-পূর্ব ভারত তথা সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে দেশটির বাকি অংশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ২০১৭ সালে ডুগলাম সীমান্তে চীন কর্তৃক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর শিলিগুড়ি করিডোরে ভারত বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করে। একইভাবে চীনও সিকিমের কাছাকাছি তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। অরুণাচল নিয়েও ১৯৬২ সালে প্রায় মাসব্যাপী যুদ্ধ চলে ভারত ও চীনের মধ্যে। ২০১৩ সালেও চীনা সৈন্যরা অন্তত ৪০ বার সীমান্ত অতিক্রম করে। অরুণাচলে খ্রিষ্টানরা আলাদা রাষ্ট্র চাচ্ছে। আবার অরুণাচল প্রদেশের ওপর চীনের দাবি এখনো অব্যাহত রয়েছে, যা এই অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক জটিলতার আরেকটি স্তর যুক্ত করেছে। কোনোভাবে চীন যদি এই করিডোর ভাঙতে পারে অথবা আমেরিকা ও ইসরাইল যদি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফল হয়, তাহলে বিশ্ব রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন আরেক ইতিহাসের সৃষ্টি হবে, বিশ্বরাজনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন : পুরোনো দাবির নতুন জাগরণ : এই অঞ্চলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নতুন নয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নাগারা নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে, কিন্তু ভারত তা মানেনি। এরপর ১৯৫১ সালে গণভোটে নাগারা স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়। ত্রিপুরা রাজ্যটি তিনদিক থেকে বাংলাদেশবেষ্টিত, যা এটিকে ভৌগোলিকভাবে পূর্ববাংলার পেটের মধ্যে অবস্থিত একটি ভূখণ্ডে পরিণত করেছে। দেশভাগের সময় ত্রিপুরা রাজ্যের ভারত না পাকিস্তানে যুক্ত হবে, তা নিয়ে রাজপরিবারে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, বিশেষ করে রাজার মা ও অন্য সদস্যদের মধ্যে কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ভারতে যোগ দেন। ইতিমধ্যে সেভেন সিস্টার্সের অঞ্চলগুলোয় বহুবার জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। যেমন : মণিপুরে এমএনএলএফ, নাগাল্যান্ডে এমএনএসটি, ত্রিপুরায় টিএনভি, আসামে কেএলও। এর মধ্যে উলফার ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে মাঝরাতে জেটিঘাটে অসংখ্য অস্ত্র জব্দ করা হয়েছিল, যা পরিবহন করতে ১০টি ট্রাক লেগেছিল, পরে যা ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা নামে পরিচিত হয়। আর এভাবেই সেভেন সিস্টার্সের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন ভূরাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজ্যে প্রভাব ফেলছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও করিডোরের যুদ্ধ : শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের জন্য একটি জীবনরেখা। ২০১৭ সালে ডোকলাম ইস্যুতে চীন-ভারত উত্তেজনা চরমে ওঠে, এই করিডোরে ভারত বিপুল সেনা মোতায়েন করে। চীনও পাল্টা প্রস্তুতি নেয়। ১৯৬২ সালে অরুণাচল নিয়ে এক মাসের যুদ্ধ, ২০১৩-১৪ সালে চীনের একাধিক অনুপ্রবেশ প্রমাণ করে এই অঞ্চল শান্ত নয়। চীন অরুণাচলকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ বলে দাবি করে আসছে। চীন যদি কোনোভাবে এই করিডোরে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারে কিংবা পশ্চিমা শক্তি যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অসন্তোষকে পুঁজি করে বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেয়—তাহলে ভারত তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ হারাতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে ভয়াবহ।
বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা ও সম্ভাবনা : ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক কিংবা ভৌগোলিক সব দিক থেকেই সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রাচীন বাংলা, সুবে বাঙ্গলাহ, অবিভক্ত বাংলা, পূর্ববাংলা, পূর্ব পাকিস্তানÑ সর্বোপরি আজকের এই বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার থাকার ফলে বাংলাদেশ এই অঞ্চলগুলোর জন্য একমাত্র সমুদ্রপথের ভরসা। রিজিওনাল কানেকটিভিটি, ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে, রেলপথ—সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট কৌশলগত সুযোগ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দীর্ঘদিন ধরেই উপযুক্ত নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে বাংলাদেশ এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি।
রাজনৈতিক অবস্থান যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলগুলোর প্রতি অটুট। ভারত ও চীন এবং ইসরাইল-আমেরিকাও যখন ভূরাজনৈতিক কৌশলে ব্যস্ত, বাংলাদেশ তখন এই রাজ্যগুলোর সঙ্গে তার অনন্য সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে—বাংলাদেশ চায় এই অঞ্চলগুলোর জনগণ যেন মর্যাদাসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারে এবং তারা যেন এমন সুযোগের নাগাল পায়, যা কৃত্রিমভাবে চাপানো সীমানার ঊর্ধ্বে উঠে আসে।
শেষ পর্যন্ত, ‘সেভেন সিস্টার্স কার’—এই প্রশ্নটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা কী ধরনের সহায়তা ও সহযোগিতা পাচ্ছে। ইতিহাস আমাদের মধ্যে সীমানা তৈরি করেছে ঠিকই, কিন্তু সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন আজও টিকে আছে—অটুট ও চিরস্থায়ীভাবে।
লেখক : সাবেক সহকারী নৌবাহিনী প্রধান ও উপ-উপাচার্য বিইউপি
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
১৬ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
১৬ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
১৭ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে