মোহাম্মদ আসিফ চৌধুরী
এডওয়ার্ড জুইকের ২০০৬ সালের ব্লাড ডায়মন্ড সিনেমাটি সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধে হীরার ব্যবসার পটভূমিতে নির্মিত যেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী রেভুলেশনারি ইউনাইটেড ফ্রন্ট হীরার খনিগুলো দখল করে, স্থানীয় জনগণকে দাসত্বে বাধ্য করে এবং হীরা বিক্রির অর্থ দিয়ে অস্ত্র কেনে। পরে কিম্বার্লি প্রক্রিয়া চালু হলে রক্তাক্ত হীরার ব্যবসা বন্ধ হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যেটি সরকার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে রক্তাক্ত হীরার বাণিজ্য বন্ধ করতে কাজ করে। ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হলো হীরার আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে যুদ্ধ ও সহিংসতায় ব্যবহৃত হীরাকে পৃথক করা। এ জন্য সার্টিফিকেশন সিস্টেম চালু কর হয়, যাতে বাংলাদেশসহ ৮৫টি দেশ সদস্য।
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে আহরিত সংঘাত-খনিজ একই ট্র্যাজেডির ভিন্ন রূপ। কিনফ্লিক্ট মিনারেলস বা সংঘাত-খনিজ বা সংক্ষেপে থ্রিটিজি বলতে টিন, ট্যান্টালাম, টাংস্টেন ও সোনাÑএই চারটি খনিজকে নির্দেশ করে এবং এগুলো কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকেই মূলত আহরিত হয়। আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে উত্তোলিত এই খনিজগুলো স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যার পেছনে লুকিয়ে আছে রক্তাক্ত সংঘাত, শিশুশ্রম ও পরিবেশ ধ্বংসের করুণ ইতিহাস। জাতিগত, রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক কারণে কঙ্গো বহুদিন ধরে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর খনি নিয়ন্ত্রণ। এরা স্থানীয়দের জোরপূর্বক খনিতে কাজ করতে বাধ্য করায়, এমনকি শিশু সৈন্যও ব্যবহার করে আসছে। খনিজ বিক্রির লভ্যাংশে কেনা হয় অস্ত্র, যা সংঘাতকে চিরস্থায়ী এক রূপ দিচ্ছে। কঙ্গোর এক এনজিওকর্মীর ভাষায়, ‘এখানে মানুষকে খনিতে খনন করতে ও মরতে বাধ্য করা হয়’। ধারণা করা হয়, এই সম্পদ থেকে লাভবান হয় অ্যাপল, স্যামসাংয়ের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তবে বর্তমানে এই চিত্র পরিবর্তন হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী চাহিদা ও করপোরেট দায় : জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকান কোম্পানিগুলো Conflict-Free Smelter Program চালু করে। ২০১০ সালের ডড-ফ্রাঙ্ক অ্যাক্ট (মার্কিন আইন) ও ২০২১ সালের ইইউ রেগুলেশন সংঘাত-খনিজ ক্রয় ও ব্যবহারের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। ২০২০ সালের অ্যামনেস্টি রিপোর্টে অ্যাপল-স্যামসাংয়ের সরবরাহ শৃঙ্খলে শিশুশ্রমের প্রমাণ মিলেছে। রয়টার্স সূত্রে (১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪) জানা যায়, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে অ্যাপলের স্থানীয় সহায়ক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ করেছে। কঙ্গো সরকারের আইনজীবীদের বরাতে রয়টার্স জানায়, প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল তার সাপ্লাই চেইনে সংঘাত-খনিজ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অ্যাপল এই অভিযোগগুলো জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে যে তারা তাদের সরবরাহকারীদের কঙ্গো বা রুয়ান্ডা থেকে এসব খনিজ ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে। ২০২৩ সালে ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেওয়া তাদের রিপোর্টে অ্যাপল জানিয়েছিল যে তাদের সাপ্লাই চেইনে থাকা তিনটি খনিজ বা সোনার কোনো স্মেল্টার বা রিফাইনারি কঙ্গো বা প্রতিবেশী দেশগুলোয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অর্থায়ন বা সহায়তা করে না।
লন্ডনের বিলাসবহুল রিজেন্ট স্ট্রিট, অ্যাপল স্টোরের সামনে মানবাধিকার কর্মী ও কঙ্গোলীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভের মূল বিষয় হচ্ছে কোলটান (ট্যান্টালাম), যা স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপের ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্টে ব্যবহৃত এই খনিজ কঙ্গোতে রক্তাক্ত সংঘাতের মূল কারণ। অ্যাপল, মাইক্রোসফট ও স্যামসাংয়ের সাপ্লাই চেইনে সংঘাতপূর্ণ কোলটান ব্যবহারের অভিযোগ করেছে তারা। গবেষণায় দেখা গেছে, ভোক্তারা ‘Conflict Minerals’ সম্পর্কে অবগত নন। এতে যা যা বিষয় জড়িত তা হলো-শিশুশ্রম : DRC-তে প্রায় ৪০ হাজার শিশু খনিতে কাজ করে।
সশস্ত্র গোষ্ঠীর অর্থায়ন : খনিজ বিক্রির লভ্যাংশ স্থানীয় মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধে ব্যবহার করে; পরিবেশ বিপর্যয় : কোবাল্ট উত্তোলনে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে কঙ্গোর নদী ও মাটি দূষিত হচ্ছে।
দেখা যায়, সংঘাত-খনিজ ব্যবহার না করা সেরা কোম্পানি হচ্ছে অ্যাপল, গুগল, এইচপি, মাইক্রোসফট ও ইন্টেল। সংঘাত-খনিজ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা খারাপ কোম্পানিগুলো হচ্ছে ওয়াল-মার্ট, সিয়ার্স ও নিম্যান মার্কাস। বর্তমানে মানবাধিকার ও মার্কিন গ্রাহকদের শঙ্কার কথা বিবেচনায় নীতি পাল্টে অ্যাপল সংঘাতমুক্ত খনিজ বাণিজ্যে স্পষ্ট নেতৃত্ব দিচ্ছে। এপ্রিল ২০১৭ নাগাদ, কঙ্গোর ৪২০টি খনি সংঘাতমুক্ত হিসেবে যাচাই করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কঙ্গোর একটি ‘সমালোচনামূলক খনিজ’ চুক্তির আলোচনা ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারিতেই হয়, যেখানে সামরিক সহায়তার বিনিময়ে খনিজ প্রবেশাধিকার পাবে যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র পাবে ইলেকট্রিক যানবাহন, সোলার প্যানেল ও ডিফেন্স টেকনোলজিতে ব্যবহৃত কোবাল্ট, তামা, লিথিয়ামসহ কঙ্গোর সংঘাত-খনিজের আইনি ও সরকারি প্রবেশাধিকার। অন্যদিকে, কঙ্গো পাবে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা সহায়তা ও সামরিক সরঞ্জাম তথা অস্ত্র।
তাহলে আমরা, বাংলাদেশি নাগরিক ও বিশ্ব ভোক্তা হিসেবে, কী করতে পারি? আমরা হয়তো এই জটিল বৈশ্বিক সমস্যার বিরুদ্ধে নিজেদের অসহায় মনে করতে পারি, কিন্তু সম্মিলিত পদক্ষেপ সত্যিই পরিবর্তন আনতে পারে। আমরা যে পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে পারি, তাহল নিজে সচেতন হওয়া ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। আমাদের স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা গহনায় ব্যবহৃত খনিজ কীভাবে সংঘাতের সঙ্গে যুক্ত তা জানানো।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে স্বচ্ছতা দাবি করা, যাতে তাদের খনিজ উৎস সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ হতে উৎসাহিত করতে পারি। আমরা প্রযুক্তি ভোগ সম্পর্কে আরো সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের কি সবসময় সর্বশেষ গ্যাজেটের প্রয়োজন আছে? আমরা কি আমাদের বর্তমান ডিভাইসের আয়ু বাড়াতে পারি? চাহিদা হ্রাস করা শেষ পর্যন্ত খনিজসম্পদের ওপর চাপ কমাতে পারে।
প্রযুক্তি শিল্প মুনাফাকেন্দ্রিক। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর আরো ভারসাম্যপূর্ণ ও লোভহীন ভূমিকা আশা করে পৃথিবীবাসী। শুধু তখনই এই সংঘাত-খনিজ আর সংঘাতময় থাকবে না। সংঘাত-খনিজের পরিবর্তে টেকসই বিকল্প কী হতে পারেÑএই দিকটি গবেষণামূলকভাবে ব্যাখ্যা করা দরকার। সহজ সমাধান সবসময় শান্তিপূর্ণ হয় না। সংঘাত-খনিজের ব্যবহার বন্ধ করা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়—এটি নৈতিক দায়িত্বেরও প্রশ্ন। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের ভূমিকা হতে পারে সচেতনতা প্রসার ও নৈতিক ভোক্তাবাদে উদ্বুদ্ধ করা। প্রফেসর ইউনূসের কথায়, ‘ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়, মানুষের জন্য’—এই দর্শনই হোক আমাদের পথচলার।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
এডওয়ার্ড জুইকের ২০০৬ সালের ব্লাড ডায়মন্ড সিনেমাটি সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধে হীরার ব্যবসার পটভূমিতে নির্মিত যেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী রেভুলেশনারি ইউনাইটেড ফ্রন্ট হীরার খনিগুলো দখল করে, স্থানীয় জনগণকে দাসত্বে বাধ্য করে এবং হীরা বিক্রির অর্থ দিয়ে অস্ত্র কেনে। পরে কিম্বার্লি প্রক্রিয়া চালু হলে রক্তাক্ত হীরার ব্যবসা বন্ধ হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যেটি সরকার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে রক্তাক্ত হীরার বাণিজ্য বন্ধ করতে কাজ করে। ২০০৩ সালে চালু হওয়া এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হলো হীরার আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে যুদ্ধ ও সহিংসতায় ব্যবহৃত হীরাকে পৃথক করা। এ জন্য সার্টিফিকেশন সিস্টেম চালু কর হয়, যাতে বাংলাদেশসহ ৮৫টি দেশ সদস্য।
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে আহরিত সংঘাত-খনিজ একই ট্র্যাজেডির ভিন্ন রূপ। কিনফ্লিক্ট মিনারেলস বা সংঘাত-খনিজ বা সংক্ষেপে থ্রিটিজি বলতে টিন, ট্যান্টালাম, টাংস্টেন ও সোনাÑএই চারটি খনিজকে নির্দেশ করে এবং এগুলো কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকেই মূলত আহরিত হয়। আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল কঙ্গো প্রজাতন্ত্র থেকে উত্তোলিত এই খনিজগুলো স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যার পেছনে লুকিয়ে আছে রক্তাক্ত সংঘাত, শিশুশ্রম ও পরিবেশ ধ্বংসের করুণ ইতিহাস। জাতিগত, রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক কারণে কঙ্গো বহুদিন ধরে সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর খনি নিয়ন্ত্রণ। এরা স্থানীয়দের জোরপূর্বক খনিতে কাজ করতে বাধ্য করায়, এমনকি শিশু সৈন্যও ব্যবহার করে আসছে। খনিজ বিক্রির লভ্যাংশে কেনা হয় অস্ত্র, যা সংঘাতকে চিরস্থায়ী এক রূপ দিচ্ছে। কঙ্গোর এক এনজিওকর্মীর ভাষায়, ‘এখানে মানুষকে খনিতে খনন করতে ও মরতে বাধ্য করা হয়’। ধারণা করা হয়, এই সম্পদ থেকে লাভবান হয় অ্যাপল, স্যামসাংয়ের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তবে বর্তমানে এই চিত্র পরিবর্তন হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী চাহিদা ও করপোরেট দায় : জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকান কোম্পানিগুলো Conflict-Free Smelter Program চালু করে। ২০১০ সালের ডড-ফ্রাঙ্ক অ্যাক্ট (মার্কিন আইন) ও ২০২১ সালের ইইউ রেগুলেশন সংঘাত-খনিজ ক্রয় ও ব্যবহারের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। ২০২০ সালের অ্যামনেস্টি রিপোর্টে অ্যাপল-স্যামসাংয়ের সরবরাহ শৃঙ্খলে শিশুশ্রমের প্রমাণ মিলেছে। রয়টার্স সূত্রে (১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪) জানা যায়, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে অ্যাপলের স্থানীয় সহায়ক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ করেছে। কঙ্গো সরকারের আইনজীবীদের বরাতে রয়টার্স জানায়, প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল তার সাপ্লাই চেইনে সংঘাত-খনিজ ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অ্যাপল এই অভিযোগগুলো জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে যে তারা তাদের সরবরাহকারীদের কঙ্গো বা রুয়ান্ডা থেকে এসব খনিজ ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে। ২০২৩ সালে ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেওয়া তাদের রিপোর্টে অ্যাপল জানিয়েছিল যে তাদের সাপ্লাই চেইনে থাকা তিনটি খনিজ বা সোনার কোনো স্মেল্টার বা রিফাইনারি কঙ্গো বা প্রতিবেশী দেশগুলোয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অর্থায়ন বা সহায়তা করে না।
লন্ডনের বিলাসবহুল রিজেন্ট স্ট্রিট, অ্যাপল স্টোরের সামনে মানবাধিকার কর্মী ও কঙ্গোলীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভের মূল বিষয় হচ্ছে কোলটান (ট্যান্টালাম), যা স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপের ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্টে ব্যবহৃত এই খনিজ কঙ্গোতে রক্তাক্ত সংঘাতের মূল কারণ। অ্যাপল, মাইক্রোসফট ও স্যামসাংয়ের সাপ্লাই চেইনে সংঘাতপূর্ণ কোলটান ব্যবহারের অভিযোগ করেছে তারা। গবেষণায় দেখা গেছে, ভোক্তারা ‘Conflict Minerals’ সম্পর্কে অবগত নন। এতে যা যা বিষয় জড়িত তা হলো-শিশুশ্রম : DRC-তে প্রায় ৪০ হাজার শিশু খনিতে কাজ করে।
সশস্ত্র গোষ্ঠীর অর্থায়ন : খনিজ বিক্রির লভ্যাংশ স্থানীয় মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধে ব্যবহার করে; পরিবেশ বিপর্যয় : কোবাল্ট উত্তোলনে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে কঙ্গোর নদী ও মাটি দূষিত হচ্ছে।
দেখা যায়, সংঘাত-খনিজ ব্যবহার না করা সেরা কোম্পানি হচ্ছে অ্যাপল, গুগল, এইচপি, মাইক্রোসফট ও ইন্টেল। সংঘাত-খনিজ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা খারাপ কোম্পানিগুলো হচ্ছে ওয়াল-মার্ট, সিয়ার্স ও নিম্যান মার্কাস। বর্তমানে মানবাধিকার ও মার্কিন গ্রাহকদের শঙ্কার কথা বিবেচনায় নীতি পাল্টে অ্যাপল সংঘাতমুক্ত খনিজ বাণিজ্যে স্পষ্ট নেতৃত্ব দিচ্ছে। এপ্রিল ২০১৭ নাগাদ, কঙ্গোর ৪২০টি খনি সংঘাতমুক্ত হিসেবে যাচাই করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কঙ্গোর একটি ‘সমালোচনামূলক খনিজ’ চুক্তির আলোচনা ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারিতেই হয়, যেখানে সামরিক সহায়তার বিনিময়ে খনিজ প্রবেশাধিকার পাবে যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র পাবে ইলেকট্রিক যানবাহন, সোলার প্যানেল ও ডিফেন্স টেকনোলজিতে ব্যবহৃত কোবাল্ট, তামা, লিথিয়ামসহ কঙ্গোর সংঘাত-খনিজের আইনি ও সরকারি প্রবেশাধিকার। অন্যদিকে, কঙ্গো পাবে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক প্রশিক্ষণ, গোয়েন্দা সহায়তা ও সামরিক সরঞ্জাম তথা অস্ত্র।
তাহলে আমরা, বাংলাদেশি নাগরিক ও বিশ্ব ভোক্তা হিসেবে, কী করতে পারি? আমরা হয়তো এই জটিল বৈশ্বিক সমস্যার বিরুদ্ধে নিজেদের অসহায় মনে করতে পারি, কিন্তু সম্মিলিত পদক্ষেপ সত্যিই পরিবর্তন আনতে পারে। আমরা যে পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে পারি, তাহল নিজে সচেতন হওয়া ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। আমাদের স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা গহনায় ব্যবহৃত খনিজ কীভাবে সংঘাতের সঙ্গে যুক্ত তা জানানো।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে স্বচ্ছতা দাবি করা, যাতে তাদের খনিজ উৎস সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ হতে উৎসাহিত করতে পারি। আমরা প্রযুক্তি ভোগ সম্পর্কে আরো সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের কি সবসময় সর্বশেষ গ্যাজেটের প্রয়োজন আছে? আমরা কি আমাদের বর্তমান ডিভাইসের আয়ু বাড়াতে পারি? চাহিদা হ্রাস করা শেষ পর্যন্ত খনিজসম্পদের ওপর চাপ কমাতে পারে।
প্রযুক্তি শিল্প মুনাফাকেন্দ্রিক। চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর আরো ভারসাম্যপূর্ণ ও লোভহীন ভূমিকা আশা করে পৃথিবীবাসী। শুধু তখনই এই সংঘাত-খনিজ আর সংঘাতময় থাকবে না। সংঘাত-খনিজের পরিবর্তে টেকসই বিকল্প কী হতে পারেÑএই দিকটি গবেষণামূলকভাবে ব্যাখ্যা করা দরকার। সহজ সমাধান সবসময় শান্তিপূর্ণ হয় না। সংঘাত-খনিজের ব্যবহার বন্ধ করা শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়—এটি নৈতিক দায়িত্বেরও প্রশ্ন। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের ভূমিকা হতে পারে সচেতনতা প্রসার ও নৈতিক ভোক্তাবাদে উদ্বুদ্ধ করা। প্রফেসর ইউনূসের কথায়, ‘ব্যবসা শুধু মুনাফার জন্য নয়, মানুষের জন্য’—এই দর্শনই হোক আমাদের পথচলার।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
এই বছর অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে উদ্ভাবন ও সৃজনশীল ধ্বংসের প্রক্রিয়া (creative destruction) কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে সেই গবেষণার ওপর। নতুন প্রযুক্তি ও ধারণা পুরোনো ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে সমাজ যখন পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকে, তখনই টেক
২১ ঘণ্টা আগে‘মনের তালা খুলল কে, চাবিওয়ালা, চাবিওয়ালা!’ প্রখ্যাত শিল্পী রুনা লায়লার সেই সুরেলা প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে বেড়াচ্ছি! তবে ব্যক্তিগত জীবনে নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনে। এই রাষ্ট্রের জীবনেও একটা বিশেষ তালা আছে, আর তার নাম আর্টিকেল ৭০! এই তালা লাগানো হয়েছিল সেই সব মাননীয়র জন্য, যাদের মধ্যে ‘ছাগলীয়’ প্রবৃত্তি রয়ে
২১ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রায়ই তার পরম বন্ধু বলে বেশ গৌরবের সঙ্গে প্রচার করে থাকেন। ভিন্ন দেশের এ দুই রাজনীতিবিদের প্রগাঢ় বন্ধুত্বের মূল সূত্র হলো মুসলমানদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা। বর্তমান বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত শীর্ষ দুটি
২১ ঘণ্টা আগেগাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন হতাশা চরমে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এক নতুন ‘২০ দফার শান্তি পরিকল্পনা’। সেখানে তিনি নিজেকে বসিয়েছেন একটি তথাকথিত ‘বোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান হিসেবে।
২ দিন আগে