আজকের বিশ্বে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের সম্পর্ক বোঝার সবচেয়ে সহজ সত্য হলো নৈতিক ক্ষমতার চেয়ে এখন টেকনো-প্লুটোক্রেটিক করপোরেট ক্ষমতাই বেশি প্রভাবশালী, কারণ আধুনিক গণমাধ্যমের পুরো অবকাঠামো—সোশ্যাল মিডিয়া, সার্চ ইঞ্জিন, অ্যালগরিদম ও ডেটা সবই কয়েকটি বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। ফলে গণতন্ত্রে যেসব মূল্যবোধ আগে স্বাধীনভাবে জনমতের মাধ্যমে গড়ে উঠত স্বাধীন মতপ্রকাশ, নৈতিক বিতর্ক, মানবাধিকার, সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতিÑসেগুলো এখন দৃশ্যমান হয় কি নাÑতা নির্ভর করে করপোরেট প্ল্যাটফর্ম কতটা ইজাজত দেয়, তার ওপর।
গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের রিশতাদারি মানবসভ্যতার ইতিহাসে এমন এক অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক-সামাজিক বন্ধন, যা রাষ্ট্র, সমাজ, মানবিক চেতনা ও ক্ষমতার বিন্যাসকে গভীরভাবে রূপ দিয়েছে। গণতন্ত্র যেমন জনগণের ইচ্ছা, অংশগ্রহণ ও বিবেককে রাষ্ট্রের কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করে, তেমনই গণমাধ্যম সেই ইচ্ছাকে ভাষা দেয়, ব্যাখ্যা দেয় এবং কখনো কখনো প্রতিরোধের নতুন পরিসর তৈরি করে। ইতিহাসের অতি প্রাচীন গণব্যবস্থাগুলোতেও তথ্য ছিল ক্ষমতার মূল উপাদান—প্রাচীন এথেন্সে পনিক্সে নাগরিকদের সমাবেশ যেমন গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের ভিত্তি ছিল, তেমনি সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বশর্ত ছিল তথ্যের অবাধপ্রবাহ। প্লেটো ও অ্যারিস্টটল উভয়েই গণতন্ত্রের শক্তি ও দুর্বলতা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উল্লেখ করেছিলেন যে সত্য, আলোচনাশীলতা এবং জ্ঞান না থাকলে গণতন্ত্র দ্রুত জনতাবাদে পতিত হতে পারে। এ কারণেই অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, “মানুষ শুধু রাজনৈতিক প্রাণী নয়; মানুষ এমন প্রাণী, যে ভাষার মাধ্যমে ‘ন্যায় ও অন্যায়’ বিচার করতে শেখে”—অর্থাৎ গণতন্ত্রের কেন্দ্রে আছে তথ্যপ্রবাহ আর তথ্যপ্রবাহের কেন্দ্রে আছে গণমাধ্যম।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে গণমাধ্যমের যাত্রা শুরু হয় মৌখিক সংস্কৃতি থেকে, যেখানে গল্প, কিংবদন্তি, ঘোষণাপত্র ও বার্তাবাহক ছিল তথ্য পরিবহনের প্রধান বাহন। মধ্যযুগীয় সমাজে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করত রাজা, সম্রাট ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান; এই তথ্যনিয়ন্ত্রণ ছিল ক্ষমতার প্রধান কৌশল। ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো যেমন বলেছেন, ‘Power is not merely repressive; it is productive. Power produces knowledge, and knowledge reinforces power.’—অর্থাৎ ক্ষমতা জ্ঞান তৈরি করে এবং সেই জ্ঞান আবার ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়। তাই মধ্যযুগে তথ্যপ্রবাহ সীমাবদ্ধ ছিল ক্ষমতাশালীদের হাতে; সাধারণ মানুষের কাছে সত্য পৌঁছানো মমকিন ছিল না। এই তথ্য-নিয়ন্ত্রণ ভাঙারে প্রথম বড় বিপ্লব ঘটে গুটেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে। প্রিন্টিং প্রেস হিউম্যান সিভিলাইজেশনের ইতিহাস বদলে দেয়; বই, পুস্তিকা, প্রচারপত্র—সবকিছু দ্রুত ছড়াতে শুরু করে এবং প্রথমবারের মতো সাধারণ মানুষ তথ্যের ওপর নিজের অধিকার দাবি করতে শুরু করে। প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন থেকে শুরু করে ফরাসি বিপ্লব—প্রতিটি জায়গায় গণমাধ্যমই গণতান্ত্রিক চেতনার প্রধান বাহক হিসেবে কাজ করেছে। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার, রুশো, মন্টেস্কুইয়ের মতো চিন্তকদের রচনা মানুষের হাতে পৌঁছে গণতন্ত্রের ধারণা জন্ম দেয়; এই প্রবাহই পরে আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি গড়ে তোলে।
ঊনবিংশ শতকে সংবাদপত্রের বিকাশ গণতন্ত্রের সঙ্গে গণমাধ্যমের সম্পর্ককে আরো গভীর করে। সংবাদপত্র শুধু তথ্য দেয় না, বরং সামাজিক সমালোচনার প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল তার On Liberty গ্রন্থে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মানবমুক্তির সবচেয়ে মৌলিক শর্ত হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। মিল বলেন, কোনো মত যদি ভুলও হয়, তবু তার প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত, কারণ সত্য ও অসত্যের সংঘর্ষেই সামাজিক জ্ঞান পরিশুদ্ধ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদারদের অন্যতম টমাস জেফারসন পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘Were it left to me to decide whether we should have a government without newspapers or newspapers without a government, I should not hesitate to prefer the latter.’—অর্থাৎ সংবাদপত্র ছাড়া সরকার টিকে থাকতে পারে না, কিন্তু সংবাদপত্র ছাড়া গণতন্ত্রের অস্তিত্বই অসম্ভব। এই বক্তব্য আসলে গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের রক্তসঞ্চালন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
কিন্তু গণমাধ্যমের এই মুক্ত ভূমিকা ২০শ শতকে এসে জটিলতর হয়ে ওঠে, যখন রেডিও, টেলিভিশন ও রাষ্ট্রীয় প্রচারণা গণতন্ত্রের শক্তিকে যেমন বৃদ্ধি করেছে, তেমনই এটাকে বিভিন্ন স্বার্থে এস্তেমাল করেছে। বিখ্যাত মিডিয়া তাত্ত্বিক হারবার্ট মারকুস ছিলেন ফ্রাংকফুর্ট স্কুলের সদস্য; তিনি দেখিয়েছিলেন কীভাবে গণমাধ্যম অনেক সময় ‘one-dimensional thought’ তৈরি করে—অর্থাৎ মানুষকে একমুখী করে তোলে। হিটলারের নাৎসি শাসনে গোয়েবলসের প্রচারণা রাষ্ট্রযন্ত্রের সম্প্রসারণে পরিণত হয়েছিল। এখানে গণমাধ্যম জনগণের কণ্ঠ নয়, রাষ্ট্রের কণ্ঠে রূপান্তরিত হয়। আলজেরিয়ান ফরাসি দার্শনিক আলথুসারের মতে, রাষ্ট্র গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে মানুষের চিন্তা-চেতনা ‘interpellate’ করে—অর্থাৎ মানুষকে এমনভাবে তৈরি করে যেন তারা নিজেদের রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে দেখে। এই প্রক্রিয়াকে Thought Manufacture বলা হয়।
অন্যদিকে ওয়াল্টার লিপম্যান গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখলেও, তিনি বলেন যে জনতা প্রায়ই ‘bewildered herd’—যারা জটিল রাজনৈতিক বিষয় বোঝে না, তাই তাদের সামনে তথ্যকে বাছাই করা, সংগঠিত রূপে দিতে হয়। এদিকে নোয়াম চমস্কি তার বিখ্যাত বই Manufacturing Consent-এ দেখিয়েছেন কীভাবে করপোরেট মালিকানাধারী গণমাধ্যম জনগণের মতামত নিয়ন্ত্রণ করে ‘সম্মতি তৈরি’ করে। চমস্কির মতে, রাষ্ট্র ও করপোরেট শক্তির মিলনে গণমাধ্যম অনেক সময় গণতন্ত্রকে ভেতর থেকে ক্ষয় করে। গণতন্ত্র তখন ‘formal’—কাগজে থাকা গণতন্ত্র হয়ে যায়, বাস্তবে নয়।
এই দুই দিকের টানাপোড়েনে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের সম্পর্ক আজও দ্বৈত প্রকৃতির—একদিকে গণমাধ্যম জনতার মুক্তির উপায়, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রিত হলে এটি জনতার শৃঙ্খল। আধুনিক মিডিয়া তত্ত্বে আমরা দেখি, গণমাধ্যম কখনো ক্ষমতার প্রতি প্রতিরোধের ক্ষেত্র, আবার কখনো ক্ষমতার যন্ত্র। হাবারমাস তার Public Sphere ধারণায় বলেন, সত্যিকারের গণমাধ্যম তখনই বিদ্যমান, যখন নাগরিকরা স্বাধীনভাবে আলোচনা করতে পারে, মতপ্রকাশ করতে পারে এবং রাষ্ট্র বা ব্যবসায়িক স্বার্থ তাদের কণ্ঠকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু আজকের বিশ্বে ‘পাবলিক স্ফিয়ার’ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। টেলিভিশন রেটিং, অ্যালগরিদমিক সিলেকশন, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভ্রান্তি ও করপোরেট মালিকানা গণমাধ্যমকে বাণিজ্যিক পণ্য বানিয়ে ফেলেছে। ফলে হাবারমাসের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন বুদ্ধিবিনিময় এখন বহু দেশে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ার আগমন গণতন্ত্রকে আরেকটি নতুন বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখানে জন মতামত প্রচলিত গণমাধ্যমের মধ্যস্থতা ছাড়াই তৈরি হয়। সবাই হয়ে উঠেছে ‘মাইক্রো-মিডিয়া’—এটি গণতন্ত্রকে বিস্তৃত করেছে, কারণ এখানে প্রতিটি মানুষই তার অভিজ্ঞতার সাক্ষী। কিন্তু এর মধ্যেই আছে বিপদ : তথ্যের সত্যতা যাচাই ছাড়া ছড়িয়ে পড়া গুজব, ষড়যন্ত্র, কৃত্রিমতা—যা গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। এই যুগকে বলা হয় ‘post-truth era’—যেখানে অনুভূতি সত্যের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে। হান্না আরেন্ট বলেছিলেন, ‘The ideal subject of totalitarian rule is not the convinced Nazi or the convinced Communist, but people for whom the distinction between fact and fiction no longer exists.’—অর্থাৎ, যখন সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য মুছে যায়, তখন গণতন্ত্র বড় বিপদে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অনেক সমাজই এই বিপদের দিকে এগোচ্ছে। তা ছাড়া সাহিত্যও গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের সম্পর্ক বোঝার এক বিশাল ভান্ডার। অরওয়েলের ১৯৮৪ দেখায় কীভাবে রাষ্ট্র ভাষা, ইতিহাস ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের চেতনাকে দখলে নেয়। ব্র্যাডবেরির Fahrenheit 451 দেখায় কীভাবে বই পোড়ানোর মাধ্যমে স্বাধীন চিন্তার মৃত্যু ঘটে। সালমান রুশদি, নাদিন গর্ডিমার, আরচি ল্যামের মতো লেখকরা তাদের রচনায় তুলে ধরেছেন কীভাবে লেখনী ও গণমাধ্যম সত্য প্রকাশ করে সমাজকে জাগিয়ে তোলে। বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম, আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদ অথবা তলস্তয়ের মতো দার্শনিক-বক্তারা দেখিয়েছেন সত্য বলার শক্তি কীভাবে সমাজের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। সাহিত্য প্রমাণ করেছে, সত্যের ভাষা প্রকাশে গণমাধ্যম যতটা প্রয়োজন, তেমনি গণতন্ত্রও সাহিত্যিকের কণ্ঠের স্বাধীনতা ছাড়া অসম্ভব।
আজকের বিশ্বে গণমাধ্যম শুধু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক ও দার্শনিক শক্তি। গণতন্ত্র এখন তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—যে তথ্য হয় মুক্ত, কিংবা হয় নিয়ন্ত্রিত। মিডিয়া তত্ত্বের সমসাময়িক চিন্তকরা বলছেন, আমরা এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে তথ্যই ক্ষমতার প্রধান উৎস। জিল দেল্যুজ বলেছিলেন, আমরা এখন ‘control society’-তে বাস করি, যেখানে নিয়ন্ত্রণ দৃশ্যমান নয়, বরং অ্যালগরিদম, ডেটা, আচরণগত ভবিষ্যদ্বাণী ও ডিজিটাল নজরদারির মাধ্যমে সমাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। তথ্যই এখন পুঁজি এবং গণমাধ্যম সেই পুঁজির প্রধান প্রবাহ। ফলে গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হয়, যখন তথ্যকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। ইতিহাসে প্রতিবার দেখা গেছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকলে গণতন্ত্র টেকে না। প্রাচীন রোমের পতনের আগে তথ্য দমনের প্রবণতা শুরু হয়েছিল; ১৮০০ শতকে ফ্রান্সে রাজকীয় সেন্সরশিপ মানুষকে বিদ্রোহে ঠেলে দেয়; ঔপনিবেশিক শাসন তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের মনস্তত্ত্বকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছে; ২০শ শতকে একনায়কতন্ত্র গণমাধ্যম দখল করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যম যখনই স্বাধীন হয়েছে, তখনই গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে—বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনÑসবকিছুর পেছনে ছিল নাগরিক কণ্ঠের শক্তি।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা হলো—গণতন্ত্র আবার এক সংকটে। বিশ্বের বহু দেশে মিডিয়া মালিকানা কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, বিজ্ঞাপন ও ব্যবসায়িক স্বার্থ সত্যকে আড়াল করে ফেলেছে, রাজনৈতিক ক্ষমতা সংবাদপত্রকে চাপে ফেলেছে, ভুয়া খবরের আগ্রাসন সত্যের ভিত্তিকে নাড়া দিয়েছে আর জনগণ বিভক্ত হচ্ছে এমনভাবে, যেখানে যুক্তি নয়, আবেগ রাজনীতি চালাচ্ছে। দার্শনিক অন্তনিও গ্রামসি বলেছিলেন, সমাজে প্রকৃত ক্ষমতা আসে ‘cultural hegemony’ থেকে—অর্থাৎ যিনি মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনিই ক্ষমতাধর। আজ গণমাধ্যম সেই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের প্রধান ক্ষেত্র। আর তাই গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হলে এই আধিপত্যকে প্রশ্ন করতে হবে।
গণতন্ত্রের মূল চেতনা হলো—জনগণের স্বাধীন অংশগ্রহণ, ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা। আর গণমাধ্যমের মূল চেতনা হলো—সত্য বলা, ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং জনগণের কণ্ঠকে সুর দেওয়া। তাই গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একে অন্যের পরিপূরক। যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীন, সেখানে জনতা জাগ্রত; যেখানে গণমাধ্যম বন্দি, সেখানে গণতন্ত্র মৃত। এই সম্পর্ককে বোঝা আজকের বিশ্বের জন্য জরুরি, কারণ আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে তথ্যই ভবিষ্যৎ রাজনীতির মুদ্রা। সত্যকে রক্ষা করার লড়াই এখন আর শুধু সাংবাদিকের নয়, এটি জনগণের লড়াই—একটি সভ্যতার অস্তিত্বের লড়াই। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে শুধু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নয়; এটি মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা, সমাজের নৈতিকতার স্বাধীনতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্বের স্বাধীনতা। এ কারণেই গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের সম্পর্ক শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি অস্তিত্বগত সভ্যতার বাঁচা-মরার প্রশ্ন।
পুনশ্চ, শহরের কেন্দ্রে একদিন নতুন স্ক্রিন লাগানো হলো, যেটা সত্য দেখায় না—দেখায় শুধু ক্ষমতার অনুমতিপ্রাপ্ত ছবি, খবর আছে, কিন্তু সত্য নেই।’
কিন্তু রাতে, কর্মীরা সবাই চলে গেলে, স্ক্রিনে হঠাৎ ভেসে উঠল একটি বাক্য : ‘যেখানে সত্য নেই, সেখানে নাগরিকও নেই।’ পরদিন সেই স্ক্রিনটি খুলে ফেলা হলো, কিন্তু বাক্যটি শহরের মানুষের মাথা থেকে আর কখনো মুছে গেল না।
লেখক : সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, ফ্রাই ইউনিভার্সিটি বার্লিন, জার্মানি
যোগাযোগ : sahidkamrul25@gmail.com
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

