বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনি

আবদুল লতিফ মাসুম
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ১৮

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক দিন। একটি রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয়েছিল এই দিনে। শুধু রক্ত ও অশ্রুর মাঝে সীমিত ছিল না এই দুর্ভাগ্যের সময়টি। সময়ের প্রবাহে ধীরে ধীরে মিথ্যা অপসৃত হয়েছে আর সত্য হয়েছে উদ্ভাসিত। এখন এটা স্পষ্টতই প্রমাণিত, এটা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে একটি সু-পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছিল। আর সেটি ছিল ভারতের দীর্ঘ দিনের শত্রু, পাকিস্তানকে নিঃশেষ করে দেওয়ার নীলনকশার অংশ।

১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তি ছিল অখণ্ড ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা পুরুষদের স্বপ্নের বিপরীত চিত্র। মহাভারতের কথা শুধু তাদের ধর্মগ্রন্থেই ছিল না, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ধ্যানধারণায়ও ছিল। অনিবার্যভাবে যখন পাকিস্তানকে মেনে নিতে তারা বাধ্য হয়েছিল, তখন থেকেই পাকিস্তানবিরোধী রণকৌশলেরও জন্ম হয়েছিল। পাকিস্তান ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় এক অসম্ভব রাষ্ট্র (Impossible State)। হাজার মাইলের ব্যবধানে শুধু ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে যে রাষ্ট্রটির সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ভ্রাতৃত্বকেই তারা করেছে অপমান। দীর্ঘ ২৩ বছরে অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্য দ্বারা তারা যখন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে অগ্রাহ্য করেছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিরোধীরা তার সুযোগ নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিস্ময়ের ব্যাপার, ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হলো, শিগগিরই তা ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের জাঁতাকলে নিপতিত হলো। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্টের ঘটনাবলি ভারতের সৃষ্ট রাজনৈতিক সমীকরণের বাইরে নিক্ষেপ করে বাংলাদেশকে। সেখান থেকেই দিল্লির শাসকরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করেন। বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর একটি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়। শান্তির নামে অশান্তি বাহিনী সৃষ্টি করা হয়। অবশেষে এ দেশের স্বাধীনতা স্বাতন্ত্র্যের প্রবক্তা পুরুষ জিয়াউর রহমানকে প্রাণ দিতে হয়।

১৯৯৬ সালে ভ্রাতৃত্বের দ্বন্দ্ব ভারতের মিত্রদের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে। ১/১১-এর ঘটনাবলি ঘটে তাদেরই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের পথ বেয়ে। অনেক ষড়যন্ত্র অনেক নীলনকশার পরও যখন তারা নিশ্চিত হয়, সেনাবাহিনী এবং সেনাবাহিনীই তখনো নিরঙ্কুশভাবে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ধারক ও বাহক। তখন তারা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেওয়ার সুদূরপ্রসারী নীলনকশা প্রণয়ন করে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেওয়ার সামরিক ষড়যন্ত্র এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র সমানতালে এগিয়ে চলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তথাকথিত বিজয় ছিল পূর্বনির্ধারিত এবং অভিনব।

মাহমুদুর রহমান ও ইয়াহইয়া আক্তারের পৃথক পৃথক গবেষণায় এবং গ্রন্থনায় এটি প্রমাণিত হয়েছে। লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্টের ভাষায় এটি ছিল ‘বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা ও পরিকল্পিত কৌশলের বিজয়’। সরকারে আসীন হওয়ার পর তাদের চোখ নিপতিত হয় সেনাবাহিনীর দিকে। আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীতে শুদ্ধাচার চালিয়ে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি শক্তির প্রতি আনুগত্যশীল অফিসারদের প্রাথমিকভাবে বিডিআরে পদায়ন করে। পরে সেখানে জমায়েত দেশপ্রেমিক অফিসারদের সমূলে নির্মূল করার পরিকল্পনা নেয়। এত দিনে ঘটনাবলি প্রকাশিত হচ্ছে প্রামাণ্য প্রতিবেদনে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান তথা শেখ হাসিনার পলায়নের পর অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

একটি অনুসন্ধানে ২৫ ফেব্রুয়ারির আনুপূর্বিক ঘটনার বিবরণ জানা যায়। এতে বলা হয়, ভারতীয় কিলার গ্রুপের একটি অংশকে খেলোয়াড় বেশে বিডিআরের একটি পিকআপে করে এবং আরেকটি অংশকে রোগী সাজিয়ে নম্বরবিহীন অ্যাম্বুলেন্সে করে পিলখানায় ঢোকানো হয়। রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা পিলখানা ত্যাগও করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা, ভারতীয় কিলার গ্রুপটিকে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিমানের দুবাইগামী ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়।

এ জন্য ফ্লাইটটি দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে। আরো জানা গেছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর লোকজন ও কিলার গ্রুপের সদস্যরা ফার্মগেটে অবস্থিত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের হোটেল ইম্পেরিয়াল ব্যবহার করেছে। নাম-পরিচয় গোপন রেখে ইম্পেরিয়াল হোটেলে তারা অবস্থান নিয়েছিলেন। পিলখানায় সংঘটিত ঘটনা ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ হিসেবে চালানো হলেও এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সেনাপ্রধান হিসেবে বিডিআর হত্যা মোকাবিলা তথা সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন জেনারেল মঈন উ আহমেদ।

হত্যাকাণ্ডের দায় তিনি এড়াতে পারেন না। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে পিলখানার সিসি টিভি ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস করে দেন ঘটনার পরপর দায়িত্ব পাওয়া বিডিআর ডিজি লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটি ও জাতীয় তদন্ত কমিটির তদন্ত অসম্পূর্ণ রাখা হয়। ওই তদন্ত কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতার নাম এলেও শেখ হাসিনা তাদের রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করতে দেননি এবং কমিটিতে এদের জিজ্ঞাসাবাদও করতে দেওয়া হয়নি।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাত সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক এএলএম ফজলুর রহমানকে। এই সেই ফজলুর রহমান যিনি বিডিআরের মহাপরিচালক থাকাকালে বড়াইবাড়ীর বীরত্বব্যঞ্জক ঘটনাটি ঘটে। রাষ্ট্র তাকে পুরস্কৃত না করে তিরস্কৃত করে। তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহী জওয়ানদের হামলায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে ১৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। মঈন উ আহমেদ পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাপ্রধান ছিলেন।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় ও হত্যাকাণ্ডের আগে–পরে হওয়া অপরাধের স্বরূপ উদ্‌ঘাটন, ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা বা ঘটনার সহায়তাকারী দেশি–বিদেশি ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও দোষীদের চিহ্নিত করবে তদন্ত কমিশন। এই কমিশন বাংলাদেশের যেকোনো স্থান পরিদর্শন এবং সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে কমিশনে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। কমিশন প্রয়োজনে যেকোনো ব্যক্তিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।

বিডিআর বিদ্রোহটি এমন সময় ঘটানো হয়, যখন শেখ হাসিনা সবেমাত্র মসনদে আরোহণ করেছেন। পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, সে সময় সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ না থাকলে অথবা ঘটনাটি আরো দু-এক মাস পরে ঘটলে হাসিনা সরকারের পতন হতে পারত। একজন মঈন উ আহমেদ দিল্লির সঙ্গে বোঝাপড়ার পর দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া অসম্ভব ছিল। স্মরণ করা যেতে পারে, ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তিনি মঈন উ আহমেদকে নিশ্চিত করেছিলেন যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তার কিছু হবে না।

১/১১-এর লেখক মহিউদ্দিন আহমদ তাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি মনে করতে পারছেন না বলে কথাটি এড়িয়ে যান। গৌরবময় জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পর তিনি সুবিধা পেয়ে মুখ খুলেছেন। সেই নাটকীয় কায়দায় তিনি এখন বলছেন, ‘যাহা এত দিন বলিতে পারি নাই’। মঈন উ আহমেদ এখন স্বীকার করছেন, বিডিআর গেটে সেনাবাহিনী পাঠানোর পরও শেখ হাসিনার অনুমতি পাওয়া যায়নি। তার ভাষায় ‘ক্যাপ্টেন শফিক তার নেতৃত্বে ৩৫৫ জন র‍্যাব সদস্য নিয়ে পিলখানায় পৌঁছান ১০টার আগেই।

এ সময় তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পিলখানায় প্রবেশের অনুমতি চাইলেও তা পাননি। তিনি অনুমতি পেলে হয়তো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সুবিধা হতো এবং এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।’ সাবেক সেনাপ্রধান জানান, ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে পিএসও এএফডি (প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার–সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ) তাকে জানান, সরকার রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। বিদ্রোহীরা দাবি করেছে, কোনো আলোচনার আগে সেনাবাহিনীকে এই এলাকা থেকে চলে যেতে হবে। তাই সরকার আদেশ করেছিল, সেনাবাহিনীর সদস্যদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতে হবে। অন্তত দুই কিলোমিটার উত্তরে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়। সমঝোতা না হলে তখন সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হবে।

তার এই সাফাই গ্রহণযোগ্য নয়। সত্য এই যে, তিনি ১/১১-এর থেকে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, বিডিআর রক্তপাতে তিনি তার বিশ্বস্ততার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছিলেন মাত্র। এই রক্তক্ষরণের পরে সেনাবাহিনীর মধ্যে যে তীব্র ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়, সেটিকে তার তত্ত্বাবধানে প্রশমিত হতে না দিয়ে, তিনি শেখ হাসিনাকে ক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তাদের সামনে হাজির করেন। শেখ হাসিনা স্বভাবসুলভ ভাষায় মিঠেকথা বলে ভিটে ছাড়ার ব্যবস্থা করেন। ওই অনুষ্ঠানে যে কর্মকর্তারা তাদের রাগ, দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তাদের সবাইকে ধীরে-সুস্থে ক্রমে ক্রমে শাস্তি দেওয়া হয়। চাকরিচ্যুত করা হয়। এমনকি তাদের নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

এভাবে প্রাথমিকভাবে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর বিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক অংশকে নিঃশেষ করা হয়। পরবর্তী কার্যক্রমের মাধ্যমে কৌশলে সেনাবাহিনীকে ভারতবিরোধীমুক্ত করা হয়। ১৫ বছর ধরে যাদের মধ্যে ঈমানের চিহ্ন দেখা গেছে, দেশপ্রেমের চেতনা অবশিষ্ট রয়েছে, এই লোকদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অভ্যুত্থানের পূর্বমুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীতে তাদের বিশ্বস্তরাই নেতৃত্ব দিচ্ছিল। শেষ মুহূর্তে তারা দেশপ্রেম ও মানবিকতার দ্বারা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। সেনাবাহিনীপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অবশেষে উদ্ধারকারী নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অনেক সীমাবদ্ধতা ও পারিপার্শ্বিকতার ঊর্ধ্বে উঠে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা পালন করেছে, সে জন্য তারা জাতির কৃতজ্ঞতা দাবি করতে পারে।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনীর বিশ্বস্ত অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। পরবর্তীকালে বিদ্রোহের অভিযোগে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়; আরো ২৫ জন বিদ্রোহে জড়িত থাকার কারণে তিন থেকে দশ বছরের মধ্যে কারাদণ্ড পেয়েছিল। আদালত অভিযুক্ত ২৭৭ জনকে খালাসও দিয়েছিল। দেশের সব সীমান্তে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল।

তার বিপরীতে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। এর মানে বিডিআর প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। নতুন নামে, নতুন ধামে কাজ শুরু করলেও সেই চেতনা, সেই স্বাধীনতার দৃঢ়তা আর কখনো ফিরে আসেনি। বড়াইবাড়ীর বীরেরা এখন প্রতিদিন বাংলাদেশের নাগরিকদের মৃত্যু দেখে দেখে গুনে গুনে দিনাতিপাত করছে। সব মিলিয়ে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ফলাফল এই যে দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। সে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা আজও সম্ভব হয়নি।

যারা এভাবে সীমান্তে এবং সেনাছাউনিতে রক্ত ঝরিয়েছে, পরদেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের ক্ষমা নেই। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের একটাই দাবি-বিডিআর হত্যাকাণ্ড ২০০৯ থেকে গণহত্যা ২০২৪ পর্যন্ত দেশের যে অগণিত মানুষ হাসিনার অন্যায় আদেশে মৃত্যুবরণ করেছে, তার বিচার করতে হবে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন আদালতে বিভিন্ন পর্যায়ে এই গণহত্যার বিষয়টি স্বীকৃত হয়েছে।

জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও এই গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দাবি উঠেছে আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের। সুতরাং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য দেশে এবং বিদেশে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তার কারণ বিচার স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে। আজ বিচার না করলে কালও বিচার হবে না।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাবেক অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত