অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ করা হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে দাবি আদায়ের জন্য মিছিল-সমাবেশ বা বিক্ষোভ করার অধিকার সবার আছে। অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এসব দাবি আদায়ের কর্মসূচিগুলো দেখছে। অনেকের ন্যায়সংগত ও ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, দাবি আদায়ের নামে এখন সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা হচ্ছে। কথায় কথায় সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশের ডাক দেওয়া হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বুধবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের দাবি আদায়ের জন্য প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে জড়ো হন। পুলিশ অনেক আগেই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে সেখানে তারা সমবেত হন। পুলিশ বাধ্য হয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এরপরও তারা সেখানে অবস্থান নেন। পরে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারের পক্ষ থেকে তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য আসেন। কিন্তু ছাত্ররা তার কথা না শুনেই মারমুখী আচরণ করেন। এমনকি তাকে লক্ষ করে পানির বোতল ছুড়ে মারা হয়। যেটি তার মাথায় আঘাত করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এর আগেও তারা সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছিলেন।
সব প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কমবেশি সমস্যা আছে। সেসব সমস্যার জন্য শিক্ষার্থীরা দাবি জানাতে পারেন। কিন্তু সবাই যদি তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন, তাহলে রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো ব্যাহত হবে। কিন্তু রাষ্ট্রকে জিম্মি করে কিংবা সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত করে কোনো আন্দোলন হতে পারে না। একজন উপদেষ্টাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা এই ছাত্রদের চরম অসহিষ্ণু আচরণের প্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে জাতি এমন আচরণ আশা করে না।
আজকে যারা নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে তৎপরত, বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিস্ট শাসনে তাদের এমন তৎপরতা ছিল না। থাকলেও তা কঠোরভাবে দমন করা হতো। আমরা যেন অধিকারের নামে সীমালঙ্ঘন না করি, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। একই সঙ্গে সরকারের উচিত সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন এলাকায় যাতে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ হতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সভা-সমাবেশের নামে রাষ্ট্রকে জিম্মি করার কোনো অধিকার কারোর নেই।

