আদর্শ দেশ গড়াই হোক আমাদের অঙ্গীকার

মহাম্মদ লুৎফর রহমান
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ০৩

মুসলমানের জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর তরিকা মেনে চলাই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ইবাদত। অথচ বাংলাদেশের মুসলমানরা আজ সব দিক দিয়ে ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ। সেই ষড়যন্ত্রের বাস্তব রূপদানের লক্ষ্যে এ দেশেরই কিছু মুসলমান নামধারী নাস্তিক, অর্থলিপ্সু ও জ্ঞানপাপী মানুষ ঠান্ডা মাথায় বাঙালি সংস্কৃতির নামে অনৈসলামিক কার্যকলাপ করে চলছে। বর্তমানে বিজাতীয় সংস্কৃতি আমাদের তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করে ফেলছে। নারী-পুরুষের অশালীন পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান, মেলামেশা এমনকি বৈধ বিয়েশাদি ছাড়াই লিভ টুগেদারের মতো অবৈধ ও ঘৃণ্য দাম্পত্য জীবনযাপনও বেড়ে চলেছে এদেশে। ইউরোপ ও আমেরিকার ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে আমরা সভ্য জাতি হিসেবে গণ্য করে তাদের আইনকানুনকে অনুসরণ করছি। এর ফলে দেশে দেশে সুদভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য, অবিচার, অন্যায়, অশান্তি ও হানাহানি বেড়ে চলেছে।

বিজ্ঞাপন

একটি ইমারতের জন্য মজবুত ভিত যেমন প্রয়োজন, তেমনি কোনো মানবিক গুণাবলিবিশিষ্ট ঈমানদার মুসলমান হওয়ার জন্য বাল্যকাল ও কৈশোরেই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি যথোপযুক্ত ইসলামি শিক্ষার মাধ্যমে অন্তরকে আলোকিত করার ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। এ দায়িত্ব এদেশের প্রতিটি মুসলমান নাগরিকের ওপরই বর্তায়। কারণ তারাই ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি পাঠাবে ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও জাতীয় পরিষদে। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই মানুষের রচিত আইনের পরিবর্তে আল্লাহর নির্দেশিত ও রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে প্রেরিত আইন বাস্তবায়ন করবে। আমরা যদি ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে বা অর্থের লোভে সুশিক্ষিত, সৎ, ঈমানদার যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে অসৎ লোককে বিভিন্ন স্তরে নেতা বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করি, তা হলে সর্বস্তরে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, অবিচার ও অনাচারের বিস্তার ঘটবে।

কিছু ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। এদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশি এবং শতকরা ৯০ ভাগই মুসলমান। সেদিক থেকে দেশের অমুসলমান নাগরিকদের জানমাল এবং তাদের সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালনে নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টি মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য। প্রকৃত মুসলমান বা ইসলামপন্থি কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো ব্যক্তি কখনোই কোনো অমুসলমানের ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাদের ধনসম্পদ লুট, উপাসনালয়ে ঢুকে মূর্তি ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ করতে পারে না। যদি কখনো কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তাহলে বুঝতে হবে হীন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্যই এমন কাজ করছে ইসলামের দুশমনরা।

ভারতে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় জঙ্গি মিছিল করে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে রামমন্দির নির্মাণ করলেও এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের মুসলমানরা কোনো সহিংস আচরণ করেনি। এদেশে যুগ যুগ ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অর্থাৎ অমুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলেমিশে মুসলমানদের শান্তিতে সহাবস্থানের বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না কুচক্রীরা। বিদেশি প্রভুদের পদলেহী কুচক্রীরা রাতের অন্ধকারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত অরক্ষিত মন্দির, গির্জা ও বৌদ্ধ উপাসনালয়ে ভাঙচুর করে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের পথ তৈরি করে দিচ্ছে। কোনো প্রকৃত মুসলমান এ ধরনের এ ধরনের অনৈতিক ও ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক ভারত নামের বিশাল রাষ্ট্রের কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের (বিজেপি, শিবসেনা ও আরএসএস) সদস্যদের মুসলমান নিধনের কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে। ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তারা পরিকল্পিতভাবে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা সৃষ্টি করে পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় নারী-শিশু নির্বিশেষে কয়েক হাজার মুসলমানকে হত্যা করে। এই দাঙ্গায় মুসলমানদের নিরাপত্তা প্রদান দূরের কথা, তাদের নির্বিচারে হত্যায় অনুমোদন ও উসকানি দেন মোদি। পরবর্তী সময়ে সরকারি তদন্তে দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির সংশ্লিষ্টতার তথ্যপ্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু এর পরও তার কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারেনি, বরং হিন্দুদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। সেজন্য পরে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন।

২০১৩ সালের ১২ জুলাই রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদি গুজরাটে নিহত মুসলমানদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘গাড়ির সামনে কুকুর চলে এলে তার মৃত্যু হবেই, সেখানে চালকের কিছু করার থাকে না।’ আত্মস্বীকৃত এই খুনি আরো বলেছেন, ‘তিনি কিছুমাত্র ভুল করেননি এবং যা করেছেন ঠিক করেছেন।’ ওই সাক্ষাৎকারটি ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে ভারতের জনগণ ও কোনো রাজনৈতিক দলকে ছি-ছি করতে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিকভাবেও বিষয়টি নিয়ে ধিক্কার জানানো হয়নি।

এক শ্রেনীর বুদ্ধিজীবী দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ আর অশান্তি সৃষ্টি করছে। ইসলামি অনুশাসন অনুসরণ করে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি গ্রহণ করাকে মধ্যযুগীয় পশ্চাৎপদতা এবং নারীর স্বাধীনতার পরিপন্থী বলে প্রচার করে মানুষকে বিশেষভাবে যুবক-যুবতীদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক হিসেবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও তারা চালাচ্ছে। অতএব দেরি না করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের অশ্লীলতা, অনাচার, মিথ্যাচার, পাপাচার, ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। মুনাফালোভী, খাদ্যদ্রব্যে ভেজালকারী, কালোবাজারি, চাঁদাবাজ, মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারী এবং সব ধরনের অন্যায় কাজ ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। আল্লাহর হুকুম এবং রাসুল (সা.)-এর প্রদর্শিত পথে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ভার দিতে হবে সৎ, যোগ্য ও সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত দলকে। আর এভাবেই বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত