বীরের মতো জীবন দিয়েছেন নুরুল ইসলাম

মো.আশরাফুল আলম হান্নান
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০: ৫০

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিন উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছেন নৃশংসভাবে। সেদিন কিছু বিডিআর সদস্য এ হত্যাকাণ্ড সমর্থন না করলেও প্রকাশ্যে কেউ এর প্রতিবাদ করেননি। তবে একজন ছিলেন ব্যতিক্রম, তিনি হলেন বিডিআরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। তিনি এ হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরের মর্যাদা দিয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় দরবারে যোগ দিতে দেরি হয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় নুরুল ইসলাম সকালে নাশতা না খেয়েই বাসা থেকে বের হন। সেদিন উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানরা পরিকল্পিতভাবে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামও ছিলেন। সেনা কর্মকর্তাদের রক্ষা করতে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। নিহত হওয়ার সাত দিন পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশটি গ্রহণ করেন তার ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান। আমার দেশকে তিনি বলেন, এই সাত দিনে ঢাকার এমন কোনো হাসপাতাল নেই যেখানে আমরা বাবাকে খুঁজিনি। কিন্তু কোথাও পাইনি। না পাওয়ার কারণ হলো পিলখানায় নিহত অন্যদের মতো বাবার লাশও গণকবর থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। এরপর ওই বছরের ৪ মার্চ সেখান থেকে লাশ নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরলক্ষ্মী গ্রামের বাড়িতে তার বাবার লাশ দাফন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

আশরাফুল আলম হান্নান বলেন, বাবা ছিলেন খুবই পরহেজগার মানুষ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন এবং কোরআন তেলাওয়াত করতেন নিয়মিত। দরবার হলে জওয়ানেরা হত্যাকাণ্ড শুরু করার পর অনেকে যেখানে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছিলেন, সেখানে তার বাবা এগিয়ে যান সশস্ত্র জওয়ানদের প্রতিরোধ করতে। হত্যাকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় হত্যাকারীরা মশারির লোহার স্ট্যান্ড দিয়ে পিটিয়ে তাকে গুরুতর আহত করার পর ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।

বিডিআর সদর দপ্তরে কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর হিসেবে তিনি ছিলেন বিডিআরের প্রতিনিধি। মহাপরিচালকের সঙ্গে তার ছিল সরাসরি দাপ্তরিক সম্পর্ক। সেদিন ঘটনার শুরুর মুহূর্তে মহাপরিচালকের নির্দেশে তিনি মাইকযোগে জওয়ানদের শান্ত হতে বারবার অনুরোধ জানান, এগিয়ে যান সশস্ত্র জওয়ানদের প্রতিরোধ করতে। হত্যাকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় পরে চার বিডিআর সদস্য তার কাছ থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে তাকে হত্যা করে লাশ গণকবরে রাখে।

পরবর্তী সময়ে তদন্তে বেরিয়ে আসে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিন নুরুল ইসলামের এই বীরত্বের কথা। এ হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পর নুরুল ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের মর্যাদা পান এবং পরে বিজিবির সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদকে ভূষিত হন। কর্মজীবনে তিনি চারবার ডিজি পদক পেয়েছেন এবং অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য সরকার তাকে পবিত্র হজব্রত পালন করায়। নুরুল ইসলাম চাকরিজীবনে একজন সৎ মানুষ হিসেবে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তিনি শ্রেষ্ঠ বিওপি কমান্ডার ও শ্রেষ্ঠ কোম্পানি কমান্ডারের স্বীকৃতি লাভ করেন। চোরাচালান রোধে তিনি পেয়েছেন বিশেষ পুরস্কার। রাইফেলস ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন আট বছর। ২০০১ সালে পাদুয়া যুদ্ধে সংগ্রাম ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন নুরুল ইসলাম।

আশরাফুল আলম হান্নান সঠিক তদন্তের মাধ্যমে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কুশীলব এবং হত্যাকারী ও অপরাধীদের বিচার এবং শহীদদের মূল্যায়ন ও তাদের পরিবারকে সম্মান প্রদানের দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি শহীদ হিসেবে তার পিতাকে বীরত্বসূচক রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের দাবি জানিয়েছেন সরকারের কাছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত